দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশের সবচেয়ে বড় নিদর্শন সুন্দরবন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনবসতি রক্ষার ঢাল বলা হয় এ বনকে। কিন্তু বন ঘেঁষে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবে প্রাকৃতিকভাবে বনের বিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক। সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া নদীর তীরে গরান, গেওয়া, খলিশা, সুন্দরী, পশুর, বাইনসহ নানা গাছের বাহারি ফল এসে জমা হয়। এই ফলগুলো আসলে নতুন চারা হয়ে বনভূমিকে আবার বাঁচিয়ে তোলার স্বপ্ন বয়ে আনে; কিন্তু সে স্বপ্ন তীরে এসেই ভেঙে যায়। কারণ, নদীর পাড়ে অপেক্ষায় থাকা গ্রামের অভাবী মানুষ দল বেঁধে ভেসে আসা ফলগুলো কুড়িয়ে নিয়ে যান চুলার জ্বালানি বানাতে। কয়রার শাকবাড়িয়া নদীর পারে এ দৃশ্য দেখা যায়।

শুধু শাকবাড়িয়া নদীর তীর নয়, কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী থেকে মহেশ্বরীপুর পর্যন্ত কপোতাক্ষ ও কয়রা নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোতেও একই চিত্র। জোয়ারের সময় নারী-পুরুষ ও শিশুরা দল বেঁধে নদীতে নামেন। কেউ জাল টেনে, কেউ ঝুড়ি ভরে ফল সংগ্রহ করেন। একেকজন এক থেকে দেড় মণ ফল তুলে নিয়ে আসেন। তারপর রাস্তার ধারে সারি সারি বিছিয়ে ফল শুকানো হয়। এ ফলগুলো রোদে শুকালেই তবে চুলায় আগুন জ্বলে। গবাদিপশুর খাবার হিসেবে কিছু ব্যবহৃত হয়। কেউ কেউ আবার তা বিক্রি করে সামান্য দু-চার টাকা আয় করেন। কয়রার কপোতাক্ষ কলেজের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা আক্ষেপ করে বলেন, ‘এই ফলগুলো যদি নদীর চরে পড়ে থাকত, তাহলে নতুন বন তৈরি হতো। গরান ও গেওয়ার সবুজ বেষ্টনী হলে নদীর পাড় ভাঙত না; কিন্তু সেই ফল চুলার আগুনেই শেষ।’

যাঁরা ফল কুড়িয়ে আনেন, তাঁরাও বোঝেন এ ক্ষতির বিষয়টি; কিন্তু বাস্তবতার কাছে তাঁরা যেন অসহায়। কয়রার মঠবাড়ী গ্রামের হালিমা বেগম বলেন, ‘চরে গাছ হলে ভালোই হতো, নদী ভাঙত না। কিন্তু কয়েকটা দিন কীভাবে চুলা বন্ধ রেখে থাকব বলেন?’ সুন্দরবন ও উপকূল সংরক্ষণ আন্দোলনের সদস্যসচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, লোকেরা বলে চুলার জন্য কাঠ নেই, তাই এই ভাসমান ফলই ভরসা; কিন্তু এ ভরসাই আবার চরে নতুন গাছ হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছে। সচেতন করতে করতে গলা শুকায়; কিন্তু কথা তো কেউ শোনে না।

বন বিভাগের কর্মকর্তারাও বিষয়টি জানেন। তাঁরাও সুন্দরবন রক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে বন বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে। বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করে অভাবী মানুষদের কীভাবে এ কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। তাদের দারিদ্র্যমুক্ত করতে এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন ফলগ ল কয়র র

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী

অবৈধভাবে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের উত্তাল নদীতে দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে তাদের আটক করা হয়।  ধৃত মৎসজীবীরা বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার পুরালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মাছ ধরার ট্রলার ও জালসহ তাদেরকে আটক করা হয়। 

আরো পড়ুন:

কলকাতায় সম্মিলিত সেনা সম্মেলন উদ্বোধন নরেন্দ্র মোদির

অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি নরম হওয়ার দিন শেষ: ট্রাম্প

বিএসএফ জানায়, রবিবার সীমান্তের সুন্দরবন অংশে রুটিন টহল দেয়ার সময় গোসাবা রেঞ্জের বাঘমারি জঙ্গল এলাকায় বাংলাদেশি অবৈধ ট্রলারের উপস্থিতি নজরে আসে বিএসএফ জওয়ানদের। বিএসএফ জওয়ানদের পেট্রোল বোট ট্রলারটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ট্রলারটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দ্রুততার সঙ্গে ট্রলারের পিছু ধাওয়া করা হয়। দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে পরবর্তীতে পাকড়াও করা হয় বাংলাদেশি ট্রলারটিকে। অবৈধ অনুপ্রবেশ এর অভিযোগে আটক করা হয় এতে থাকা ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ট্রলারটি।

বিএসএফ আরো জানায়, আটকের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগের বিপরীতে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারেনি। ফলে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাদের স্থানীয় সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজ সোমবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হবে।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ছুটে গিয়ে দেখি, একটি হরিণ ঝুলছে শিকারির ফাঁদে’
  • সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী