‘পুরো রাস্তা শুধু জ্যাম আর জ্যাম, জীবনটাই শেষ!’
Published: 6th, June 2025 GMT
‘গতকাল রাত ১০টায় গাবতলী থেকে আরাফাত পরিবহনের বাসে রওনা দেই। আর ঠাকুরগাঁওয়ে নামলাম বিকেল ৫টায়। পুরো ১৯ ঘণ্টা লেগেছে আসতে। পুরো রাস্তা শুধু জ্যাম আর জ্যাম। জীবনটাই শেষ! ৮ ঘণ্টার রাস্তা আসলাম ১৯ ঘণ্টায়। গাড়ি রংপুর দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও জ্যামের কারণে বগুড়ার শিবগঞ্জ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুর হয়ে ঠাকুরগাঁও আসতে হয়েছে। যমুনা সেতুর আগেই যানজটে আটকে ছিলাম ৮ ঘণ্টা। পরে সিরাজগঞ্জ মোড়, বগুড়া, পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ এলাকাতেও যানজট ছিল। শেষ পর্যন্ত যে বাড়ি আসতে পারছি, এটাই অনেক।’
টানা ১৯ ঘণ্টার যাত্রা শেষে এসব কথা বলেন রূপায়ণ গ্রুপের ব্যবস্থাপক (এডমিন) আসাদুল হক। তিনি বলেন, এতে তো তিনগুন ভাড়া দিতে হচ্ছে। তার ওপর মিলছে রাজ্যের ভোগান্তি। এসব নিরসনে সরকারের উদ্যোগ দরকার।
আসাদুলের মতো উত্তরবঙ্গের হাজারও মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন। তাদের চোখে মুখে আনন্দের ছাপ থাকলেও বিধ্বস্ত তাদের শরীর। জার্নিশেষে ঢাকায় কর্মরত সিরামিক কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক এ.
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিরাজগঞ্জ মোড় এলাকায় গাড়ির খুব ধীরগতি ছিল। তবে ঢাকা অভিমুখের ডানপাশের লেন প্রায় স্বাভাবিক ছিল। এদিকে গোবিন্দগঞ্জ-পলাশবাড়ীতে সওজের সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল কোঅপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের চলমান কাজের কারণে যানজট দেখা যায়। শুক্রবার সকালে যান-চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও দুপুর সাড়ে ১২টার পর দুই পাশের রাস্তায় দীর্ঘ যানজট দেখা যায়।
যমুনা সেতু পশ্চিম থানার অফিসার-ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জামান শুক্রবার দুপুরে বলেন, ‘ঢাকা ও উত্তরাঞ্চল অভিমুখে উভয়দিকেই চাপ রয়েছে। সেতুর ওপর দুর্ঘটনা ও টোল আদায় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ রাখায় মাঝেমধ্যে ঢাকা অভিমুখে যান চলাচলে অসুবিধা হয়েছে।’
যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আসাদউদ্দিন বলেন, যমুনা সেতুর ওপরে ৭ নম্বর পিলারের কাছে গাড়ি হঠাৎ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। যে কারণে উত্তরবঙ্গ-ঢাকাগামী লেনটি বন্ধ হয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।’
তিনি বিকেল পাঁচটার দিকে জানান,‘সাভার, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের এলেঙ্গাতে সমস্যার কারণে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী বাসে বেশি সময় লাগছে। সেতুর পূর্বপাড়ের জ্যামের কারণে পশ্চিমপাড়েও প্রভাব পড়ছে। ঢাকার অভিমুখে সেতুর পশ্চিমপাড়ের সয়দাবাদ গোল চত্বর থেকে মুলিবাড়ি পর্যন্ত তিন কিলোমিটার অংশে দীর্ঘ লাইন রয়েছে।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুর রউফ বেলা সাড়ে ১২ টায় জানান, ‘গত দুদিন থেকে উত্তরাঞ্চল ও ঢাকা অভিমুখে যানবাহনের বিশাল চাপ রয়েছে।’
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজির পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে উত্তরা-দক্ষিণাঞ্চল অভিমুখে প্রায় ৬৪ হাজার ২শ ৮৩টি যানবাহন পারাপার হয়। যা ধারণ ক্ষমতার প্রায় চার গুণ। হঠাৎ করে এত সংখ্যক যানবাহন পারাপার হলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে দুরূহ হয়ে পড়ে।’
হাইওয়ে পুলিশ রংপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাসেক-২ প্রকল্পের কারনে গোবিন্দগঞ্জ-পলাশবাড়ীতে দুই পাশে সিঙ্গেল লাইন দিয়ে বর্তমানে যান চলাচল করছে। উত্তরাঞ্চলগামী চার লাইনের গাড়ি যখন এক লাইনে ঢুকে যায় তখন চালক যাত্রীদের কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই হয়। এর কোন বিকল্প নেই। চারশ গাড়ি আসছে, ঢুকতে পারবে একশ, আর বাকি তিন শো তখন যানজট তৈরি করে।’
সওজের সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল কোঅপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. ওয়ালিউর রহমান দুপুরে বলেন, ‘পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের কারণে দুইদিকে নির্মাণাধীন সার্ভিস রাস্তা সরু হয়ে গেছে। এছাড়া সড়কের পাশে যত্রতত্র ঝুপড়ি মুদি দোকান ও শত শত ব্যাটারিচালিত রিকশার অবৈধ দখলও যানজটের অন্যতম কারণ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য নজট স র জগঞ জ গ ব ন দগঞ জ প রকল প র য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত, অংশ নিলেন প্রধান উপদেষ্টা
রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে ৭টায় জামাত শুরু হয়। এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব, প্রখ্যাত আলেমেদীন মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক।
জামাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, বিদেশি কূটনীতিক, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেন। নারীদের জন্য ছিল পৃথক নামাজের আয়োজন, নিরাপত্তা ও প্রবেশ গেট।
৩৫ হাজার মুসল্লির উপস্থিতি
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, এ জামাতে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। সকাল থেকেই রাজধানীর পল্টন মোড়, মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে মুসল্লিদের দীর্ঘ সারি লক্ষ্য করা যায়। প্রবেশপথে ছিল কড়া নিরাপত্তা, তল্লাশি এবং দিকনির্দেশনা।
আরো পড়ুন:
বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত
ঈদুল আজহা শান্তি, ত্যাগ ও সাম্য শেখায়: প্রধান উপদেষ্টা
সিটি করপোরেশনের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের প্রস্তুতির দায়িত্বে ছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রায় ৩ লাখ ২২ হাজার ৮০০ বর্গফুট আয়তনের এই মাঠকে ঘিরে নেওয়া হয় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি। ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা জানান, প্রধান উপদেষ্টা ও কূটনীতিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মুসল্লিদের জন্য প্রস্তুত করা হয় নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ।
মাঠে মুসল্লিদের প্রবেশের জন্য দুইটি গেট এবং নির্বিঘ্ন প্রস্থানের জন্য পাঁচটি গেট চালু রাখা হয়। নারীদের জন্য ছিল আলাদা গেট ও নামাজের জায়গা। গোটা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন। ওজু, টয়লেট, মেডিকেল টিম, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাথমিক চিকিৎসা ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রাখা হয় পর্যাপ্ত হারে মুসল্লিদের জন্য।
স্বাচ্ছন্দ্য ও সেবা নিশ্চিত
ডিএসসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঈদগাহে আগত মুসল্লিদের জন্য আরামদায়ক কার্পেট বিছানো হয়। ফলে আলাদা করে জায়নামাজ বা পানির বোতল নিয়ে আসার প্রয়োজন হয়নি মুসল্লিদের। পুরো জামাতজুড়ে স্বেচ্ছাসেবক দল সুশৃঙ্খলভাবে মুসল্লিদের চলাচল, বসার স্থান এবং প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করে।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জামাত সমাপ্ত
সকাল পৌনে ৮টার আগেই শান্তিপূর্ণভাবে জামাত সম্পন্ন হয়। নামাজ শেষে ইমাম দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন।
জাতীয় ঈদগাহের এই জামাত শুধুমাত্র নামাজের আয়োজন নয়, বরং ধর্মীয় ঐক্য, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও মানুষের সম্মিলিত উৎসবের প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রতিবারের মতো এবারও শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় জামাত সম্পন্ন হওয়ায় আয়োজক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসা করেন মুসল্লিরা।
সেগুনবাগিচার বাসিন্দা আব্দু রাজ্জাক বলেন, “ঈদ মানেই মিলন, শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা। জাতীয় ঈদগাহের এবারের আয়োজন সেই বার্তাকেই নতুন করে তুলে ধরেছে। একসাথে হাজারো মানুষের সেজদাহর এই দৃশ্য শুধু ঈদের নয়, বরং একটি জাতির ঐক্যবদ্ধতার প্রতীক।”
ঢাকা/এএএম/মাসুদ