কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় শত কিলোমিটার দূরে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ। বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদীঘেরা এই দ্বীপের জালিয়াপাড়ায় সাত শতাধিক জেলে পরিবারের বসবাস।

ঈদের দ্বিতীয় দিন, গত শনিবার দুপুরে জালিয়াপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, সাধারণ দিনের মতোই কাটছে এখানকার মানুষের জীবন। শিশু-কিশোরেরা বেড়িবাঁধের ওপর খেলায় মেতে আছে। বড়রা কেউ জাল মেরামত করছেন, কেউ শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত। অনেকেই দোকান বা গাছতলায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন। ঈদের সেই চেনা আনন্দ নেই।

কেন এমন অবস্থা, জানতে চাইলে জেলে নুরুল আমিন (৫৫) আঞ্চলিক ভাষায় বললেন, ‘জাইল্যাজীবন বউত হস্টর। ঝড়–তুফানত সাগর-নদীত নামি মাছ ধরন পরে। নৌহা ডুবিলে মানুষ মরে। নিষেধাজ্ঞাত মাছ ধরা বন্ধ তাইলে ন খায় থাহন পরে। বর্মার (মিয়ানমার) আরাকান আর্মি গুলি গরে, ধরি লই যাই জেলত পাঠায়। জাইল্যাঅলর সুখ-শান্তি বউত আগে মরি গিয়ে গই। ঈদর আনন্দ হত্তুন আইব (জেলেজীবনে অনেক কষ্টের। ঝড়-তুফানেও সাগর-নদীতে মাছ ধরতে হয়। নৌকা ডুবে মানুষ মারা যায়। আবার নিষেধাজ্ঞায় মাছ ধরা বন্ধ থাকলে না খেয়ে থাকতে হয়। মিয়ানমারের আরাকান আর্মি গুলি করে, ধরে নিয়ে জেলে পাঠায়। জেলেদের সুখ-শান্তি বহু আগেই মরে গেছে। ঈদের আনন্দ কোত্থকে আসবে)।’

দুই দশক আগেও এই পাড়ার প্রায় প্রতিটি জেলে পরিবার সচ্ছল ছিল। নাফ নদী ও সাগর থেকে প্রচুর মাছ আর মুক্তা পাওয়া যেত। শুঁটকি ও মুক্তার সরবরাহ হতো দেশের বড় বড় শহরে।

কিন্তু গত ১০ বছরে নাফ নদীর ভাঙনে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। এখনো মসজিদ, স্কুল ভবনসহ আরও অনেক স্থাপনা ঝুঁকিতে। গৃহহীন অনেক জেলে পরিবার বেড়িবাঁধের পাশে ক্যাম্প পাড়ায় নতুন করে ঘর তুলেছেন।

জালিয়াপাড়ার ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, পাঁচ বছর আগেও কোরবানির ঈদে ৭০০ পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩০০ গরু কোরবানি হতো। এবার কোরবানি হয়েছে মাত্র ২৭টি গরু। অনেক পরিবার মাংসের মুখ দেখেনি। ঘরে ঘরে খাদ্যসংকট, ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে।

নিষেধাজ্ঞায় মাছ ধরা বন্ধ

জালিয়াপাড়া ক্ষুদ্র মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল গণি বলেন, নাফ নদী ও সাগরে ৫৮ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলছে, যা থাকবে ১১ জুন পর্যন্ত। নিবন্ধিত প্রতিটি জেলে পরিবারকে ৮৪ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও, শতাধিক পরিবার প্রথম কিস্তির ৫৬ কেজি চাল পেয়েছে, বাকিরা পায়নি। নিষেধাজ্ঞা উঠলেও মাছ ধরার পরিস্থিতি মিয়ানমারের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। নাফ নদীতে মাছ ধরতে গেলে অনেক জেলে অপহৃত হয়েছেন। বিজিবির তৎপরতায় অনেকে ফিরে এলেও এখনো অনেকে সে দেশের কারাগারে আটক।

অনেকে শুঁটকি উৎপাদন করে সংসার চালাচ্ছেন। গত শনিবার দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফের জালিয়াপাড়ায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক রব ন পর ব র ন ফ নদ আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

মামলার তদন্তে দোষী হলে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, মামলার তদন্তে যিনি দোষী প্রমাণিত হবেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজ সোমবার সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানা পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

এক সাংবাদিক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলেন, একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি দেশের বাইরে গেলেন, দেশে ফিরে এলেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন হইল শোনেন, আপনেরাই বলছেন যে অনেক মামলা আছে। কিছু কিছু মামলা ইনভেস্টিগেশন হয় নাই। ইনভেস্টিগেশন হওয়ার পরে যে দোষী হবে, তারে আইনের আওতায় নেওয়া হবে।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘...আপনারা সব সময় বলছেন, নির্দোষরা যেন কোনো অবস্থায় সাজা না পায়। এ জন্য আমাদের ইনভেস্টিগেশনটা করতে দেন। যে–ই দোষী হোক না কেন, তারে আমরা অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘ওইভাবে প্রমাণিত না হলে কেন একজন নির্দোষ লোককে আমি সাজা দেব? দোষী যে হবে, তাকে আমরা শাস্তি দেব। এখন কিশোরগঞ্জের এদের ক্ষেত্রে উপদেষ্টাদের তিনজনের একটি কমিটি হয়েছে। ওনারা একটি রিকমেন্ডেশন দেবেন। ওই রিকমেন্ডেশন পাওয়ার পর তারা যদি দোষী হয়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর দোষী না হলে যার যার জায়গায় ফেরত দেওয়া হবে।’

যাত্রাবাড়ী থানা পরিদর্শনকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা থানার ডিউটি অফিসারের ডেস্ক, নারী ও শিশু ডেস্ক, আসামিদের রাখার হাজতখানাসহ পুরো থানা ঘুরে দেখেন। তিনি থানার ফোর্সের থাকার ব্যবস্থা ও খাবারের মান সম্পর্কে খোঁজ নেন এবং পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদুল আজহার সময় দেশে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি সন্তোষজনক ছিল। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া রাজধানীসহ অন্যান্য স্থানে কোনো উল্লেখযোগ্য অঘটন ঘটেনি।

গতকাল রোববার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশে ফিরেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গত ৭ মে দিবাগত রাতে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে আবদুল হামিদ দেশ ছাড়েন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলি করার ঘটনায় কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১২৪ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ থানায় মামলাটি করা হয়।

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিমানবন্দর দিয়ে কীভাবে বিদেশ গেলেন এবং এ ক্ষেত্রে কারও কোনো গাফিলতি রয়েছে কি না, তা তদন্তের জন্য তিনজন উপদেষ্টার সমন্বয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার।

আরও পড়ুনদেশে ফিরেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ