জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। এ ম্যাচকে কেন্দ্র করে পল্টন, গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকা উৎসবের রঙে সজ্জিত হয়ে উঠেছে। মাঠে প্রবেশের জন্য দর্শকদের উৎসুক ভিড় অপেক্ষায় রয়েছে। কেউ কেউ এরই মধ্যে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেছেন। বেলা আড়াইটায় গেট খোলার পর থেকেই মানুষের সমাগম অবিরাম চলছে। প্রবেশ পথে লম্বা লাইন, অধিকাংশই তরুণ তরুণী।

পুরো জাতীয় স্টেডিয়াম এলাকা সরগরম। অনেক দর্শক বাংলাদেশের ফুটবল দলের প্রিয় ফুটবলারদের ‘কাটআউট’ সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। বিশেষ করে হামজা চৌধুরী, ফাহামিদুল ইসলামদের ‘কাট আউটের’ সামনে ফুটবলপ্রেমীদের ব্যাপক ভিড়।

অনেকের হাতে প্ল্যাকার্ড, ‘হামজা ইউ লাভ ইউ’সহ বিভিন্ন ধরনের লেখা দিয়ে ভরা। ছোট ছোট জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে, বাংলাদেশের জার্সি পরে ভক্তরা মাঠে প্রবেশের জন্য অধীর অপেক্ষায়। বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে দেখা গেল 'ফুটবল আলট্রাস বাংলাদেশ' ঢাকঢোল পিটিয়ে মিছিল করছে। স্টেডিয়াম চত্বরে যা অতীতে স্মরণকালে দেখা যায়নি।

বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এমন উত্তেজনা বহুদিন দেখা যায়নি। আশির ও নব্বই দশকে ফুটবল ছিল দেশের অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদন। এখন সেই দিন নেই, তবে মাঝে মাঝে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ম্যাচে আগ্রহ আকাশ ছোঁয়। গত কয়েক বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, কাতার ম্যাচ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। তবে সেসব ম্যাচে বাংলাদেশ দল হারবে ধরে নিয়েই মাঠে এসেছিলেন সমর্থকেরা। ফলে উৎসব হয়নি সেভাবে।

২০১১ সালের ৬ আগস্ট আবাহনী-মোহামেডান সুপার কাপ ফাইনালে স্টেডিয়ামের বাইরেই ৫০ হাজারের বেশি দর্শক ছিল, যারা ভেতরে ঢুকতে পারেননি। সে দিন জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দর্শকের এত চাপ ছিল যে, স্টেডিয়াম ভেঙে পড়ার শঙ্কাও তৈরি হয়েছিল।

আজকের পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। কারণ, স্টেডিয়ামে এখন ধারণক্ষমতা সীমিত, চেয়ার বসানো হয়েছে। তা ছাড়া আগেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে টিকিট না পাওয়া অনেকে স্টেডিয়ামে আসছেন না। তবু ২১ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়ামে ভিড় হওয়ার ইঙ্গিত খেলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই।

এই ম্যাচের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি হওয়ার মূল কারণ বাংলাদেশের জয়-প্রত্যাশা। দেশের জার্সিতে খেলছেন প্রবাসী ফুটবল তারকা—হামজা, ফাহামিদুল, শমিত সোমরা। তাদের খেলা দেখার জন্য ফুটবল ভক্তরা উন্মুখ।

আরেকটি নতুন দিক হচ্ছে, বাফুফে ফুটবলকে করপোরেট পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। স্টেডিয়ামে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বোর্ড রয়েছে, যা পরিবেশ রঙিন করে তুলেছে। মাঠের বাইরে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও চোখে পড়ছে। সব মিলিয়ে 'ডিজিটাল যুগে' ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার এক ম্যাচই হচ্ছে জাতীয় স্টেডিয়ামে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব শ ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।

সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।

ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’

হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’

কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।

এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৬ কোটি টাকায় সারা দেশে ফুটবলের তিন টুর্নামেন্ট
  • দুদিনের সফরে কলকাতায় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু
  • ভৌতিক গল্প নিয়ে কানাডায় নুহাশ
  • তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
  • সিডনিতে ড্র অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কেউ না থাকায় হতাশ প্রবাসীরা
  • ‘মুক্তির উৎসব’ করতে সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাবেক সমন্বয়কের আবেদন
  • এবার পরিবার নিয়ে ঘরে বসেই ‘উৎসব’
  • খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ