নাফ নদী আর সীমান্ত দেখতে কক্সবাজারের যে দুটি স্থানে পর্যটকের ভিড়
Published: 11th, June 2025 GMT
ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে এসেছেন কয়েক লাখ পর্যটক। সাগর, নদী, পাহাড় আর ঝরনা ঘুরে দেখার পর অনেকে ৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ হয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন নাফ নদীর তীরে। পাঁচ কিলোমিটার চওড়া নাফ নদীর ওপারে (পূর্ব দিকে) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। বর্তমানে এ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির হাতে।
টেকনাফ সীমান্তের অন্তত ৮০ কিলোমিটারজুড়ে যেকোনো জায়গা থেকে নাফ নদী ও মিয়ানমার সীমান্ত দেখা যায়। তবে সবচেয়ে ভালো দেখা যায় চারটি পয়েন্ট থেকে—হ্নীলা ইউনিয়নের পাহাড়চূড়ার জাদিমুরা, টেকনাফ পৌরসভার নেটং বা দেবতার পাহাড়, চৌধুরীপাড়ার ট্রানজিট জেটি এবং শাহপরীর দ্বীপ জেটি। এর মধ্যে শাহপরীর দ্বীপ এবং ট্রানজিট জেটিতে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের সমাগম হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও সেখানে ভিড় করছেন। জেটিতে উঠে নাফ নদী, প্যারা বন, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য এবং ওপারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর দেখার সুযোগ মিলছে।
গত সোমবার বিকেলে শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক শ নারী-পুরুষের ভিড়। বেশির ভাগই পর্যটক। তাঁরা ৫৫০ মিটার দীর্ঘ জেটির শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে রাখাইন রাজ্যের ছবি তুলছেন। জেটির এক-তৃতীয়াংশ নদীর পানিতে বিস্তৃত। সেখানে দাঁড়ালে মনে হয় সাগরের বুকে দাঁড়িয়ে আছেন।
কেউ সিঁড়িতে, কেউবা রেলিংয়ের পাশে বসে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। এই জেটি দিয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা ট্রলার ও স্পিডবোটে সেন্ট মার্টিন যাতায়াত করেন।
জেটিতে কথা হয় ঢাকার মিরপুরের ব্যবসায়ী আকমল হোসেনের সঙ্গে। স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ছয়জন সদস্য নিয়ে এসেছেন তিনি। ঢাকায় একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন। শুক্রবার ঢাকা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছে শাহপরীর দ্বীপ ঘুরতে এসে জেটির খোঁজ পান।
আকমল হোসেন (৫২) বলেন, ‘নাফ নদীর এই সীমান্তটা এতই সুন্দর যে না এলে বুঝতাম না। পাশাপাশি শাহপরীর দ্বীপের ইতিহাসটাও জানা হলো। সম্রাট শাহ সুজা ও তাঁর স্ত্রী পরীবানুর নামের সঙ্গে মিলিয়ে দ্বীপের নামকরণ—বেশ চমকপ্রদ।’
কুমিল্লার মতিউল ইসলাম বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দেখতে চেয়েছিলাম; কিন্তু পর্যটকদের এখন ট্রলার ও স্পিডবোটে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। পত্রপত্রিকায় এত দিন রাখাইন রাজ্য দখল, মর্টার শেল পড়ার খবর পড়েছি। আজ সীমান্তটা চোখে দেখলাম।’
ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে জেটিতে আসেন আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘২৫ বছর আগে টেকনাফ এসেছিলাম। তখন এই জেটি ছিল না। এখন জেটিতে দাঁড়িয়ে মিয়ানমারের জলসীমা আর নাফ নদীর সৌন্দর্য দেখা যায়।’
কয়েকজন পর্যটক অভিযোগ করেন, জেটিতে উঠতে ১০ টাকার টিকিট কাটতে হলেও শৌচাগার নেই। এতে নারী ও শিশুদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
জেটির ইজারাদারের পক্ষে আদায়কারী নুরুল ইসলাম বলেন, জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়ে জেটি পরিচালনা করা হচ্ছে। সেন্ট মার্টিনগামী যাত্রী ও পর্যটকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা, ইজিবাইক, টমটম, মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার জন্য ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে ভিড় বাড়ছে। প্রথম দিন ৮০০ দর্শনার্থীর কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় হয়েছে। এখন দ্বিগুণ আদায় হচ্ছে।
টেকনাফের নাফনদীর শাহপরীর দ্বীপ জেটি। নাফনদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। সোমবার দুপুরে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ হপর র দ ব প র খ ইন র জ য ন ফ নদ র
এছাড়াও পড়ুন:
সৈকতে নারী পর্যটকদের গোসলের ভিডিও ধারণ, কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কারাদণ্ড
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গোসলরত নারী পর্যটকদের ভিডিও ধারণ করার দায়ে রুবেল (৩০) নামে এক কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসিন সাদীক। এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
রুবেল বরগুনা সদর উপজেলার বাসিন্দা। তিনি মুদি দোকানের ব্যবসার পাশাপাশি কনটেন্ট তৈরি করেন।
সৈকতের ফটোগ্রাফার আরিফ মিয়া বলেন, ‘‘রুবেল নারীদের গোসলের ভিডিও করছিলেন। প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। বিষয়টি দেখত পেয়ে তাকে আটক করি।’’
অপর ফটোগ্রাফার রাসেল বলেন, “রুবেলের মোবাইল চেক করে দেখি, অনেক ভিডিও। সঙ্গে সঙ্গে ট্যুরিস্ট পুলিশকে খবর দেই। পরে তাদের কাছে সোপর্দ করি।’’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসিন সাদেক বলেন, “অনুমতি ছাড়া নারী পর্যটকদের ভিডিও ধারণের দায়ে রুবেলকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’’
ঢাকা/ইমরান/রাজীব