বান্দরবানের রুমা উপজেলায় দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর পর্যটকদের জন্য ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর থেকেই জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র বগালেক আবারও পর্যটকদের আগমনে মুখর হয়ে উঠেছে।
তবে হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কারণে স্থানীয় হোটেল ও কটেজ ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে পারেননি। এতে পর্যটকদেরও খানিকটা বিপাকে পড়তে হয়েছে।
দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডাং পাহাড়ের ১,৭৩৬ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মনোরম প্রাকৃতিক লেক বগালেক। এটি রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে। একসময় পর্যটকদের ভিড়ে মুখর থাকলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে এই এলাকা অনেকটাই ফাঁকা পড়ে ছিল।
রুমা ও থানচি উপজেলায় সংঘটিত ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার পর পর্যটন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি ৬ জুন জেলা প্রশাসকের এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা আসে। নতুন নির্দেশনায় রুমা উপজেলায় বগালেক পর্যন্ত এবং থানচি উপজেলায় তিন্দু মুখ পর্যন্ত পর্যটন ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বাকলায় সড়কপথে তুমা ও তুঙ্গি পর্যটন কেন্দ্রও এখন উন্মুক্ত।
বগালেকে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন পর্যটকের আগমন ঘটছে, যাদের মধ্যে অধিকাংশই মোটরসাইকেল পর্যটক। দীর্ঘদিন পর পর্যটকদের এমন উপস্থিতিতে স্থানীয় হোটেল ও কটেজ ব্যবসায়ীরা আনন্দিত হলেও প্রস্তুতির অভাবে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়েছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সিয়াম বম জানান, বমদের প্রায় ৩০টি কটেজ রয়েছে বগালেক এলাকায়। তার মধ্যে একটি খাবার হোটেল ও ৮টি কটেজ আছে তার। একটি কটেজ ছাড়া বাকি সাতটিই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এগুলো মেরামত করতে দুই-তিন লাখ টাকা প্রয়োজন। ধারদেনা করে কটেজগুলো মেরামত করবেন কি-না দ্বিধায় আছেন। কারণ, আবারও নিষেধাজ্ঞা এলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাকে।
অপর ব্যবসায়ী লাল টন পই ময় বম জানান, বগালেক এলাকায় তার দুটি কটেজ রয়েছে। হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কারণে কটেজগুলো প্রস্তুত করতে পারেননি। কিছু পর্যটক এসেছেন। তবে তিনি তাদেরকে অন্য যেসব ভালো কটেজ রয়েছে, সেগুলোতে পাঠিয়েছেন।
বগালেক এলাকায় একটি দোকান রয়েছে জিংমুন বমের। তিনি বলেন, “হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আমরা সবাই অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়েছি। কটেজগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেকানে কাউকে থাকতে দিতে পারিনি। ছয়জন পর্যটককে নিজের বাড়িতে থাকতে দিয়েছি। বাড়িতে থাকা মুরগি, আলু, চাল কুমড়া ও ডাল দিয়ে পর্যটকদের আপ্যায়ন করেছি। কটেজগুলো মেরামত করতে সপ্তাহ খানেক লাগবে।”
চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা হাফিজুর রহমান বলেন, “ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় আমরা ঘুরতে এসেছি। এখানে এসে যেটা দেখলাম, লেকের পাশে কয়েকটি ছাড়া বাকি কটেজগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে আছে। দোকানগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার নেই। গুছিয়ে উঠতে একটু সময় লাগবে। আশা করছি পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে তারা কাজ শুরু করেছেন।”
জেলা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন বলেন, “রুমা ও থানচি বান্দরবানের পর্যটনের প্রাণশক্তি। এখানে গড়ে ওঠা কমিউনিটি ট্যুরিজম স্থানীয় পাহাড়িদের আয়ের প্রধান উৎস। পর্যটন চালু হওয়ায় জেলাজুড়ে অর্থনৈতিক গতি বাড়বে।”
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
ঢাকা/চাইমং/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ত উপজ ল য় ব যবস য় র পর য ত করত পর পর ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস