ইরানে গত বছর ইসরায়েলের দুই দফা হামলার তুলনায় এবারকার অভিযান শুধু তীব্র ও বিস্তৃতই নয়; বরং এতে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে গত নভেম্বরে ইসরায়েলের হামলার কিছু কৌশলও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।

ইরানের পাল্টা আঘাতের ক্ষমতা কমাতে শুধু ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতেই নয়, এবার তাদের শীর্ষ নেতাদের ওপরও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইরানের নেতৃত্বে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি করতে এসব হামলা চালানো হচ্ছে।

লেবাননে ইসরায়েলের এই ‘ডিক্যাপিটেশন স্ট্র্যাটেজি’; অর্থাৎ শীর্ষ নেতাদের টার্গেট করে হত্যার কৌশল হিজবুল্লাহর জন্য ছিল বড় ধাক্কা। এর ফলে সংগঠনটির পক্ষে টেকসই প্রতিরোধ গড়া কঠিন হয়ে পড়ে।

তেহরান থেকে পাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু ভবনে হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলার ধরন বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর ওপর চালানো ইসরায়েলের আগের হামলার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ এমন এক হামলায় নিহত হয়েছিলেন।

তবে ইরানে এখনো শীর্ষপর্যায়ের কোনো নেতা নিহত হয়েছেন বলে জানা যায়নি। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে—তারও কোনো প্রমাণ মেলেনি।

ইসরায়েলের এবারের অভিযানের শুরুতেই ইরানের সেনাবাহিনী প্রধান, শক্তিশালী রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং কয়েকজন শীর্ষ পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগে থেকে বলে রেখেছেন, এই অভিযান হয়তো কয়েক দিন পর্যন্ত চলতে পারে। এ ধরনের হামলা ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর এক বিরল ও বড় ধাক্কা।

বলা বাহুল্য, এ হামলার পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের পক্ষ থেকে গত বছরের দুই হামলার তুলনায় অনেক বেশি তীব্র জবাব আসার কথা। অবশ্য ইতিমধ্যে ইরানও পাল্টা হামলা শুরু করেছে।

তবে এই আঘাত তেহরানের শক্তিশালী জবাব দেওয়ার সক্ষমতা অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, উগ্রপন্থী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই সামরিক উত্তেজনা বাড়ানোর আগে এটাই বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ভবনে উদ্ধার কাজ করছেন ইরানি রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা। ১৪ জুন, তেহরান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ