গোপালগঞ্জ পৌরসভা থেকে বছর দশেক আগে পানির সংযোগ নেন শেখ আসলাম (৪৫)। এতদিন পর্যন্ত দিনে ২ হাজার লিটার পানি পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু চলতি বছরেই দুর্ভোগ শুরু হয়েছে শহরের নবীনবাগের বাসিন্দা আসলামের পরিবারে। তারা দিনে ৫০০-৬০০ লিটারের বেশি পানি পাচ্ছেন না, যা দিয়ে সংসারের দৈনন্দিন কাজ সারা সম্ভব হচ্ছে না। 
আসলামের পরিবারের মতো ভুগছে গোপালগঞ্জ পৌরসভা থেকে পানির সংযোগ নেওয়া অন্য পরিবারগুলোও। তারা জানিয়েছেন, দিনে তারা এক-দুই ঘণ্টার বেশি পানি পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে চাহিদার চার ভাগের এক ভাগ পানিও পান না। পৌরসভার পানি শোধনাগারের (প্লান্ট) সক্ষমতা কমায় এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বলে গ্রাহক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। 
পৌরসভার কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে একই প্লান্টে পানি শোধন করায় ওই এর সক্ষমতা কমেছে। সেটি সংস্কার না হলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। নতুন প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। আর পৌরবাসীর দাবি, দ্রুত সমস্যা সমাধান করে চাহিদা অনুযায়ী সুপেয় পানি সরবরাহ করতে হবে।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার মোট জনসংখ্যা ২ লাখ ৯ হাজার ৪৫০। বর্তমানে পৌর এলাকায় পানির সংযোগ আছে ৯ হাজার ৯০০ পরিবারের। চারটি প্লান্টের মাধ্যমে শোধন করে দিনে গ্রাহকদের মাঝে ১৩-১৪ মিলিয়ন লিটার (এমএলডি) পানি দেওয়া হচ্ছে। অথচ পৌরবাসীর দৈনিক পানির চাহিদা ৬০ মিলিয়ন লিটার। সে হিসাবে পৌরসভা থেকে সরবরাহ পানির পরিমাণ চাহিদার চার ভাগের এক ভাগেরও কম। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর এলাকার প্রধান পানি শোধনাগার দুটি শিশুবন এলাকায় অবস্থিত। ২০০০-০১ অর্থবছরে ৯ একর জমিতে প্রথম শোধনাগারটি স্থাপন করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তারা ২০১৯-২০ অর্থবছরে সেখানেই দ্বিতীয় শোধনাগারটি বসায়। দুটি শোধনাগারেই শুরুতে ঘণ্টায় পানি শোধনের ক্ষমতা ছিল ৫৪০ ঘনমিটার। প্রথম শোধনাগারে সেই ক্ষমতা কমে এখন ঘণ্টায় ২৫০-৩০০ ঘনমিটারে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় শোধনাগারের ক্ষমতা একই থাকায় সেটির ওপরই চাপ পড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। 
এ ছাড়া পৌর এলাকার পাচুরিয়ায় একটি আয়রন রিমুভাল প্লান্ট, সদর উপজেলার কাজুলিয়ার বিলে আছে ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহ প্লান্ট ও মানিকহার এলাকায় মধুমতী নদী থেকে ভূপৃষ্ঠের পানি শোধন করে সরবরাহের প্লান্ট রয়েছে। কিন্তু সেগুলোই সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। যে কারণে এসব প্লান্টও চাহিদা অনুযায়ী পানি শোধন করতে পারছে না। 
এর ফলে ভুগতে হচ্ছে পৌরসভার বাসিন্দাদের। বেদগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ওমর আলী (৫৫) বলেন, ‘আমার সংযোগে প্রতিদিন পানির চাহিদা ১ হাজার লিটার। কিন্তু পাই ২০০ থেকে ৩০০ লিটার।’ 
একই পরিস্থিতির শিকার মধ্যপাড়ার গৃহবধূ তাসলিমা তমা (৩৫)। তিনিও দিনে মাত্র দুই ঘণ্টায় পানি পান ৩০০ লিটারের মতো। তমার ভাষ্য, ‘এ পানি দিয়ে ঘর-গৃহস্থালির কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করছি।’
২০২৪ সালে গোপালগঞ্জ পৌরসভার আয়তন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আগে পৌর এলাকার আয়তন ছিল ১৩ দশমিক ৮২ বর্গকিলোমিটার। এখন তা ৩০ দশমিক ৭০ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে পৌরসভায় সীমানায় আসা মানুষের পানির চাহিদা মিটছে না। এসব বিষয় চিন্তা করে প্রধান পানি সরবরাহ প্লান্টটি মেরামত ও সংস্কারের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠায়। সেটি পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনও পায়। তবে সেটি এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে বলে পৌরসভা সূত্র জানিয়েছে। একই সূত্র জানায়, দুই বছর আগে নতুন একটি প্লান্ট স্থাপনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি প্রতিনিধি দল সেটির জন্য টুঙ্গিপাড়ার বর্ণির বাঁওড়ে সমীক্ষা যাচাই করে। কিন্তু এটি আর আলোর মুখ দেখেনি।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ ও পানি) স্বরূপ বোসের ভাষ্য, পৌর এলাকায় এখন দৈনিক পানির চাহিদা ৬০ মিলিয়ন লিটার। কিন্তু পুরোনো প্লান্ট ২৪ ঘণ্টা পরিচালনা করে মাত্র ১৩ থেকে ১৪ মিলিয়ন লিটার পানি দেওয়া যাচ্ছে। সংস্কার না করে এভাবে চললে সেটি যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। 
গোপালগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক বিশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, প্রতিদিন নতুন নতুন সংযোগের আবেদন বাড়ছে। এর আগে প্লান্টের সক্ষমতা বাড়ানো ও বর্ধিত এলাকায় নতুন সংযোগের জন্য একটি ডিপিপি জমা দেওয়া হয়েছে। সেটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এ ব্যাপারে সেখান থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যেন ওই ডিপিপি দ্রুত ছাড় করে, সে বিষয়ে যোগাযোগ রাখছেন। এটি দ্রুত ছাড় করা গেলেই পানি শোধনাগারের সংস্কার করা যাবে। পৌরবাসীর দুর্ভোগও ঘুচবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প র এল ক সরবর হ এল ক য় পর ব র র জন য এল ক র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আনা হবে

বাংলাদেশের তিনটি বড় শিল্পগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বছরে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সয়াবিনবীজ আমদানি করবে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি গ্রুপ ও ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ।

এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) ও ইউএস সয়ের সঙ্গে দেশীয় তিন প্রতিষ্ঠান আগ্রহপত্র (এলওআই) সই করেছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন, ইউএসএসইসির নির্বাহী পরিচালক কেভিন এম রোপকি; মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা; সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হাসান; ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক; স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়সহ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের মান সব সময়ই অন্যদের চেয়ে ভালো থাকে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনবীজের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। আমাদের সামনে আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা চাইলে বাংলাদেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য–ঘাটতি রয়েছে। আমরা এলপিজি, অপরিশোধিত তেল ও সয়াবিন আনতে পারলে দুই দেশের মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হবে।’

মেঘনা গ্রুপের পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা বলেন, ‘আমরা গর্বিত যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য ও পশুখাদ্যের সরবরাহব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার অংশীদারত্বে যুক্ত হতে পেরেছি। গত এক বছরে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছি। এ বছর মেঘনা গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ লাখ টন সয়াবিন আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’

তানজিমা বিনতে মোস্তফা আরও বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। বর্তমানে সয়াবিন আমদানিতে যে শুল্ককাঠামো রয়েছে, তা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করছে। শুল্ককাঠামো ঠিক করা হলে পোলট্রি ও মৎস্য খাতের খাদ্যের দাম সাশ্রয়ী থাকবে।’

আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেতানজিমা বিনতে মোস্তফা, পরিচালক, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।

সিটি গ্রুপের এমডি মো. হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহব্যবস্থায় গুণগত মান বজায় রাখা ও তা টেকসই করে তুলতে আমরা সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা উচ্চমানের মার্কিন সয়াবিনের ব্যবহার বাড়াতে চাই। এতে ভোক্তাদের কাছে উন্নতমানের পণ্য পৌঁছে দেওয়া যাবে। তাতে দেশের ক্রমবর্ধমান প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে। এই এলওআই দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তি বিনিময় এবং কৃষি উদ্ভাবন ও অগ্রগতির নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।’

এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন বলেন, ‘আমরা আসলে দুই দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথা বলছি, যেখানে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ৭৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। আর এ বছর তা এক বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে আশা করছি।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী সয়াবিনবীজ আমদানি হয় মূলত ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৭৮ কোটি ডলারের ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টন সয়াবিন আমদানি হয়েছিল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছিল ৩৫ কোটি ডলারের সয়াবিনবীজ, যা এবার আরও বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আনা হবে
  • মধ্যস্থতা নিয়ে আদানির প্রস্তাবে রাজি নয় পিডিবি
  • বিশ্বকে ১৫০ বার ধ্বংস করার মতো পারমাণবিক অস্ত্র আমাদের আছে: ট্রাম্প
  • দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে
  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
  • জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
  • বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন