কমছে শোধনাগারের ক্ষমতা পানি মিলছে এক-চতুর্থাংশ
Published: 19th, June 2025 GMT
গোপালগঞ্জ পৌরসভা থেকে বছর দশেক আগে পানির সংযোগ নেন শেখ আসলাম (৪৫)। এতদিন পর্যন্ত দিনে ২ হাজার লিটার পানি পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু চলতি বছরেই দুর্ভোগ শুরু হয়েছে শহরের নবীনবাগের বাসিন্দা আসলামের পরিবারে। তারা দিনে ৫০০-৬০০ লিটারের বেশি পানি পাচ্ছেন না, যা দিয়ে সংসারের দৈনন্দিন কাজ সারা সম্ভব হচ্ছে না।
আসলামের পরিবারের মতো ভুগছে গোপালগঞ্জ পৌরসভা থেকে পানির সংযোগ নেওয়া অন্য পরিবারগুলোও। তারা জানিয়েছেন, দিনে তারা এক-দুই ঘণ্টার বেশি পানি পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে চাহিদার চার ভাগের এক ভাগ পানিও পান না। পৌরসভার পানি শোধনাগারের (প্লান্ট) সক্ষমতা কমায় এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বলে গ্রাহক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
পৌরসভার কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে একই প্লান্টে পানি শোধন করায় ওই এর সক্ষমতা কমেছে। সেটি সংস্কার না হলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। নতুন প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। আর পৌরবাসীর দাবি, দ্রুত সমস্যা সমাধান করে চাহিদা অনুযায়ী সুপেয় পানি সরবরাহ করতে হবে।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার মোট জনসংখ্যা ২ লাখ ৯ হাজার ৪৫০। বর্তমানে পৌর এলাকায় পানির সংযোগ আছে ৯ হাজার ৯০০ পরিবারের। চারটি প্লান্টের মাধ্যমে শোধন করে দিনে গ্রাহকদের মাঝে ১৩-১৪ মিলিয়ন লিটার (এমএলডি) পানি দেওয়া হচ্ছে। অথচ পৌরবাসীর দৈনিক পানির চাহিদা ৬০ মিলিয়ন লিটার। সে হিসাবে পৌরসভা থেকে সরবরাহ পানির পরিমাণ চাহিদার চার ভাগের এক ভাগেরও কম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর এলাকার প্রধান পানি শোধনাগার দুটি শিশুবন এলাকায় অবস্থিত। ২০০০-০১ অর্থবছরে ৯ একর জমিতে প্রথম শোধনাগারটি স্থাপন করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তারা ২০১৯-২০ অর্থবছরে সেখানেই দ্বিতীয় শোধনাগারটি বসায়। দুটি শোধনাগারেই শুরুতে ঘণ্টায় পানি শোধনের ক্ষমতা ছিল ৫৪০ ঘনমিটার। প্রথম শোধনাগারে সেই ক্ষমতা কমে এখন ঘণ্টায় ২৫০-৩০০ ঘনমিটারে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় শোধনাগারের ক্ষমতা একই থাকায় সেটির ওপরই চাপ পড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
এ ছাড়া পৌর এলাকার পাচুরিয়ায় একটি আয়রন রিমুভাল প্লান্ট, সদর উপজেলার কাজুলিয়ার বিলে আছে ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহ প্লান্ট ও মানিকহার এলাকায় মধুমতী নদী থেকে ভূপৃষ্ঠের পানি শোধন করে সরবরাহের প্লান্ট রয়েছে। কিন্তু সেগুলোই সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। যে কারণে এসব প্লান্টও চাহিদা অনুযায়ী পানি শোধন করতে পারছে না।
এর ফলে ভুগতে হচ্ছে পৌরসভার বাসিন্দাদের। বেদগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ওমর আলী (৫৫) বলেন, ‘আমার সংযোগে প্রতিদিন পানির চাহিদা ১ হাজার লিটার। কিন্তু পাই ২০০ থেকে ৩০০ লিটার।’
একই পরিস্থিতির শিকার মধ্যপাড়ার গৃহবধূ তাসলিমা তমা (৩৫)। তিনিও দিনে মাত্র দুই ঘণ্টায় পানি পান ৩০০ লিটারের মতো। তমার ভাষ্য, ‘এ পানি দিয়ে ঘর-গৃহস্থালির কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করছি।’
২০২৪ সালে গোপালগঞ্জ পৌরসভার আয়তন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আগে পৌর এলাকার আয়তন ছিল ১৩ দশমিক ৮২ বর্গকিলোমিটার। এখন তা ৩০ দশমিক ৭০ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে পৌরসভায় সীমানায় আসা মানুষের পানির চাহিদা মিটছে না। এসব বিষয় চিন্তা করে প্রধান পানি সরবরাহ প্লান্টটি মেরামত ও সংস্কারের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠায়। সেটি পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনও পায়। তবে সেটি এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে বলে পৌরসভা সূত্র জানিয়েছে। একই সূত্র জানায়, দুই বছর আগে নতুন একটি প্লান্ট স্থাপনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি প্রতিনিধি দল সেটির জন্য টুঙ্গিপাড়ার বর্ণির বাঁওড়ে সমীক্ষা যাচাই করে। কিন্তু এটি আর আলোর মুখ দেখেনি।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ ও পানি) স্বরূপ বোসের ভাষ্য, পৌর এলাকায় এখন দৈনিক পানির চাহিদা ৬০ মিলিয়ন লিটার। কিন্তু পুরোনো প্লান্ট ২৪ ঘণ্টা পরিচালনা করে মাত্র ১৩ থেকে ১৪ মিলিয়ন লিটার পানি দেওয়া যাচ্ছে। সংস্কার না করে এভাবে চললে সেটি যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক বিশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, প্রতিদিন নতুন নতুন সংযোগের আবেদন বাড়ছে। এর আগে প্লান্টের সক্ষমতা বাড়ানো ও বর্ধিত এলাকায় নতুন সংযোগের জন্য একটি ডিপিপি জমা দেওয়া হয়েছে। সেটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এ ব্যাপারে সেখান থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যেন ওই ডিপিপি দ্রুত ছাড় করে, সে বিষয়ে যোগাযোগ রাখছেন। এটি দ্রুত ছাড় করা গেলেই পানি শোধনাগারের সংস্কার করা যাবে। পৌরবাসীর দুর্ভোগও ঘুচবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প র এল ক সরবর হ এল ক য় পর ব র র জন য এল ক র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা ওয়াসার আগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল, নতুনটির আবেদন শেষ কাল
ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ঢাকা ওয়াসা) জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চুক্তি ভিত্তিতে একজন কর্মকর্তা নিয়োগে দেবে। এ–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২১/৩/২০২৫ এবং ২৩/৩/২০২৫ তারিখে পত্রিকায় প্রকাশিত পূর্ববর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো বাতিল করা হয়েছে। যেসব প্রার্থী আগে আবেদন করেছিলেন, তাঁরা আবারও আবেদন করতে পারবেন।
পদের নাম: ব্যবস্থাপনা পরিচালকপদসংখ্যা: ১
যোগ্যতা: ন্যূনতম স্নাতকোত্তর বা বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) বা সমমানের ডিগ্রি। সরকারি/আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে কর্মরত আছেন বা ছিলেন, এমন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫–এর ন্যূনপক্ষে তৃতীয় গ্রেড স্কেল বা সমপর্যায়ের স্কেলধারী হতে হবে। অবশ্যই পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সেক্টর অথবা সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় সিনিয়র পর্যায়ে অন্তত ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী হতে হবে।
আরও পড়ুনগণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরে নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ৯৩ জনের০২ আগস্ট ২০২৫বয়স: অনূর্ধ্ব ৬০ বছর হতে হবে।
চাকরির ধরন: তিন বছরের চুক্তিভিত্তিক
বেতন-ভাতা: আলোচনা সাপেক্ষে
সুযোগ-সুবিধা: প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য চালক–জ্বালানিসহ একটি গাড়ি, আবাসিক টেলিফোন, মুঠোফোন ও তার বিল ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ প্রদান করবে।
আরও পড়ুনএ সপ্তাহের সেরা সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি, মোট পদ ১৬৯৫০১ আগস্ট ২০২৫আবেদন যেভাবেআগ্রহী প্রার্থীদের বিস্তারিত বিবরণসংবলিত নিজের জীবনবৃত্তান্তসহ আহ্বায়ক, কর্মসম্পাদন সহায়তা কমিটি, ঢাকা ওয়াসা বরাবর আবেদনপত্র সরাসরি, কুরিয়ার বা ডাকযোগে পাঠাতে হবে।
আবেদনপত্র পাঠানোর ঠিকানা: সদস্যসচিব, কর্মসম্পাদন সহায়তা কমিটি, ঢাকা ওয়াসা, ওয়াসা ভবন, ৯৮ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
আবেদনপত্র পাঠানোর শেষ সময়: ৪ আগস্ট ২০২৫, বেলা ৩টা পর্যন্ত।
আরও পড়ুনফিনল্যান্ড কীভাবে গড়েছে বিশ্বসেরা শিক্ষাব্যবস্থা, সাফল্যের ৬ কারণ৭ ঘণ্টা আগে