সিলেট সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশি তরুণের ঝুলন্ত লাশ ১০ ঘণ্টা পর উদ্ধার
Published: 20th, June 2025 GMT
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় জাকারিয়া আহমদ (২৫) নামের এক তরুণের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভারতের পিনারসালা থানা-পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।
ভারতে মরদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হবে।
জাকারিয়া আহমদ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের লামা গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে জাকারিয়া দ্বিতীয়। তিনি বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকের কাজ করতেন। বয়স্ক বাবা কাজ করতে পারেন না। জাকারিয়ার আয়েই সংসার চলত। মৃত্যুর তিন দিন আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কোম্পানীগঞ্জের উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের লামা গ্রামের পার্শ্ববর্তী ভারত সীমান্তের অভ্যন্তরে লাশটি গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। পরে তাঁরা বিষয়টি বিজিবি ও পুলিশকে জানায়। এ ঘটনায় জাকারিয়ার চাচা গিয়াস উদ্দিন কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
এ বিষয়ে গতকাল রাতে বিজিবির সিলেট ৪৮ ব্যাটালিয়নের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে জাকারিয়া আহমদ পারিবারিক সমস্যার কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
ওই ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, লাশ উদ্ধারের বিষয়টি পুলিশের হওয়ায় ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীও সেটি করেনি। ভারতের অভ্যন্তরে হওয়ায় বাংলাদেশের পুলিশ ও বিজিবি সেখানে যেতে পারেনি। ঘটনাস্থলটি ভারতের পিনারসালা থানার অন্তর্ভুক্ত। সেখান থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব বেশ। আবার ভারতে বৃষ্টি হওয়ায় পিনারসালা থানার পুলিশের ঘটনাস্থলে যেতে বিলম্ব হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হক জানান, ভারতে মরদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করা হবে। বিএসএফের সহায়তায় আজ শুক্রবার সকালে মরদেহ হস্তান্তরের কথা রয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জের উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের লামা গ্রাম ভারত সীমান্ত এলাকায়। লামা গ্রাম কোম্পানীগঞ্জের উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্র–সংলগ্ন। উৎমাছড়ার পূর্ব পাশে ভারত সীমান্তের ১২৫৭ খুঁটির পাশে একটি টিলায় গাছের ডালের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল জাকারিয়ার মরদেহ। ঘটনাস্থলটি জাকারিয়াদের বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে।
জাকারিয়া আহমদের বাবা আলাউদ্দিন জানান, গত সোমবার জাকারিয়ার বিয়ে হয়েছিল। পরিবারের কারও সঙ্গে তাঁর সমস্যা ছিল না। বুধবার রাতে তাঁরা সবাই একসঙ্গে খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছিলেন। গতকাল সকাল ছয়টার দিকে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। বেলা ১১টার দিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে তাঁর ছেলে ভারত সীমান্তের অভ্যন্তরে গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় আছেন বলে খবর পান আলাউদ্দিন।
আরও পড়ুনসিলেটে ভারত সীমান্তের অভ্যন্তরে গাছে ঝুলছিল বাংলাদেশি যুবকের লাশ১৪ ঘণ্টা আগেউত্তর রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান জাকারিয়ার চাচাতো ভাই। তিনি বলেন, জাকারিয়ার সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না। গতকাল সকাল থেকে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের বিষয়টি জানানো হয়। তাঁদের গ্রাম–সংলগ্ন বিজিবি উৎমা ক্যাম্পের কর্মকর্তাদের জানালেও তাঁরা তেমন কোনো সহযোগিতা করেননি।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উজায়ের আল মাহমুদ বলেন, ভারত সীমান্তের অভ্যন্তরে হওয়ায় পুলিশের পক্ষ থেকে লাশ উদ্ধার তৎপরতা চালানো যায়নি। সীমান্ত এলাকার বিষয়ে বিজিবির সহায়তা নেওয়া হয়। বিজিবির কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী নিহত জাকারিয়ার বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গতক ল মরদ হ ঘটন স হওয় য়
এছাড়াও পড়ুন:
আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় কর্মসূচি দেওয়া স্ববিরোধিতা মনে করছে বিএনপি
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণাকে স্ববিরোধিতা বলে মনে করছে বিএনপি।
জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনসহ কয়েকটি দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ চারটি রাজনৈতিক দল। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।
এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত আছে। এ অবস্থায় রাস্তায় কর্মসূচি দেওয়া অনেকটা স্ববিরোধিতা। তবে অবশ্যই যেকোনো দলের কর্মসূচি দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। তারা কর্মসূচি দিতে পারে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদজামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের দাবির মধ্যে জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষেও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা বলেন, জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি কখনো ঐকমত্য কমিশনে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল না। এখন কোনো দল তাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে এটি নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে চাইলে দিতে পারে। কিন্তু জনগণের নামে এক দলের আদর্শ বা দাবি অন্যদের ওপর আরোপ করা কতটা সঠিক, সেটা দেখতে হবে।
জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করার দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা বলেছি, শুধু প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা আমরা সমর্থন করি না। আগে আইন ছিল না, এখন আইন হয়েছে। কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত। এখন ঢালাওভাবে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে চাইলে তা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটা জনগণ বিবেচনা করবে।’
শুরু থেকেই আমরা বলেছি, শুধু প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা আমরা সমর্থন করি না। আগে আইন ছিল না, এখন আইন হয়েছে। কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত। সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপি নেতাসালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, এই আন্দোলন কাদের বিরুদ্ধে, সেটা দেখতে হবে। এটা কি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে, নাকি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে, নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে? এটা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার কোনো কৌশল কি না, সেটাও দেখতে হবে। যারা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করার অধিকার আছে। তারা যদি রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে কর্মসূচি দেয়, তাদের মাঠের রাজনৈতিক বক্তব্যের জবাব বিএনপি মাঠের বক্তৃতার মাধ্যমেই দেবে।