গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানিকদাহ এলাকায় মধুমতি নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে অনেক পরিবার। উদ্বাস্তু হতে হয়েছে অনেক মানুষকে। এবার ভাঙনকবলিত এলাকায় ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ২০০ মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করায় স্বস্তি ফিরেছে এলাকাবাসীর মনে। আরো ৩০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গোপালগঞ্জ কার্যালয় জানিয়েছে, বরাদ্দ পেলে বাকি অংশের কাজও করা হবে। 

সম্প্রতি মানিকদাহ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা দীর্ঘদিন ধরেই মধুমতি নদীর ভাঙনের শিকার। কয়েক বছরের ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, স্কুল, খেলার মাঠ ও পাকা রাস্তা। খোলা আকাশের নিচে বাস করতে হয়েছে অনেক পরিবারকে।

এলাকাবাসীর দাবির মুখে ওই এলাকায় নদীভাঙন রোধে ১ হাজার ২০০ মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নদীতে তীব্র স্রোত থাকলেও জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলে ভাঙন ঠেকিয়ে নদীর তীরে ব্লক দিয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হলে নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের গোপালগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সরেজমিনে পরিদর্শন ও অনুমোদন সাপেক্ষে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে মানিকদাহে নদীভাঙনকবলিত এলাকায় দুটি প্যাকেজে ৬০০ মিটার করে ১ হাজার ২০০ মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রথমে জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলে ভাঙন ঠেকানো হয়েছে। এর পর ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণকাজের ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ পুরোপুরি সম্পন্ন হবে। 

মানিকদাহ গ্রামের ইনসান মোল্লা বলেছেন, “২০২৪ সালের আগস্ট মাসে মানিকদাহে মধুমতি নদীর ভাঙনকবলিত এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ শুরু করা হয়। এতে আমরা অনেক খুশি। এখন আর আমাদের বাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হতে হবে না। তবে, পুরোপুরি নদীভাঙন ঠেকাতে আরো প্রায় ৩০০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা দরকার।”

চর মানিকদাহ গ্রামের রহমত খান বলেছেন, “আমাদের এই এলাকায় প্রতিবছরই ভাঙন দেখা দিতো। কয়েক বছরের ভাঙনে আমাদের বাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, স্কুল, খেলার মাঠ ও পাকা রাস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে আমাদের এই এলাকায় বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। আমরা এখন এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারব। বিকেলে আমরা পরিবার নিয়ে বাঁধে ঘুরতে আসি। স্থানীয়দের কাছে এটা দর্শনীয় স্থান ও বিনোদনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই এলাকায় আরো ৩০০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করে ভাঙন ঠেকানো প্রয়োজন। আমাদের দাবি, সরকার যেন আরো ৩০০ মিটার বাঁধ দিয়ে আমাদের রক্ষা করে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কাজী হায়াৎ মাসুদ বলেছেন, “প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করায় এখন আর বসতবাড়ি, ফসলি জমি বা কোনো স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হবে না। এতে এ এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। ইতোমধ্যে প্রতিরক্ষা বাঁধের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।”

একই কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রেফাত জামিল বলেছেন, “মানিকদাহ এলাকায় এ প্রতিরক্ষা বাঁধ করা না হলে মধুমতি নদীর ভাঙনে কিছু দিন পরে ওই গ্রামের হাজারো পরিবার এবং মানিকদাহ আশ্রয়ন কেন্দ্রের মানুষ চরম বিপদের সম্মুখীন হতো। আমাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ওই এলাকায় আরো ৩০০ মিটার বাঁধ করা প্রয়োজন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও অনুমোদন সাপেক্ষে তা বাস্তবায়ন করব।”

ঢাকা/বাদল/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ধ ন র ম ণ কর ৩০০ ম ট র ব গ প লগঞ জ এল ক য় পর ব র আম দ র বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগের দুজনকে ছাড়াতে ওসিকে যুবদল নেতার হুমকি, ‘আপনার রিজিক উঠে গেছে’

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ‘আওয়ামী লীগের কর্মী’ দুই ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নিতে এসে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবদলের এক নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ওসির উদ্দেশে যুবদল নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি মানুষ চিনেন নাই। আপনার এখানে রিজিক নাই, রিজিক উঠে গেছে।’

ওই যুবদল নেতার নাম নাজমুল হুদা ওরফে মিঠু। তিনি পাশের পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি। পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার দুজনকে ছেড়ে দিতে রাজি না হওয়ায় ওসির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে তিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ। তবে অভিযুক্ত নেতা হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে রানীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের রাজোর গ্রামের সারোয়ার নুর (৩২) ও হামিদুর রহমান (৬০), ভাউলারবস্তি গ্রামের খলিলুর রহমান (৫০) ও ধর্মগড় শালফার্ম এলাকার জিয়াউর রহমানকে (৪২) আটক করে পুলিশ। বাচোর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এবং আটক সারোয়ার ও হামিদুরের বাড়ি একই এলাকায়। ওই দুজনকে আটক করে গাড়িতে তোলার সময় জাহিদুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাঁদের ছেড়ে দিতে পুলিশকে চাপ দেন। পুলিশ রাজি না হলে তিনি বিভিন্নজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। পরে পুলিশ তাঁদের থানায় নিয়ে আসে।

গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে জাহিদুলের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ জন ব্যক্তি থানায় উপস্থিত হন। পরে পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল হুদা থানায় এসে সারোয়ার ও হামিদুরকে আত্মীয় দাবি করে তাঁদের ছেড়ে দিতে ওসিকে অনুরোধ করেন। আটক ব্যক্তিরা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন বলে দাবি করেন। বেলা দেড়টার দিকে নাজমুল হুদার সঙ্গে জাহিদুল ইসলাম যুক্ত হয়ে তাঁদের ছেড়ে দিতে ওসিকে চাপ দিতে থাকেন। রাজি না হওয়ার এক পর্যায়ে ওসির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন এলাকার কয়েকজন। এ ঘটনার দুটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, থানা ভবনের সামনে লোকজনের জটলা। এ সময় যুবদল নেতা নাজমুল হুদাকে বলতে শোনা যায়, ‘মামলা করে ফেলেছেন, বলে দেন। কোনো কিছুই বলেন না। তিনটা থেকে ফোন দিচ্ছি, আমি মানুষ না?’ জবাবে ওসি বলেন, ‘আমি তো বলেছি, হবে না।’ এরপর নাজমুল বলেন, ‘ফালতু কথা বলবেন না। হবে না এ কথা বলেন নাই। মিথ্যা কথা বলবেন না।...আপনি মানুষ চিনেন নাই। আপনার এখানে রিজিক নাই, রিজিক উঠে গেছে।’ এ সময় ওসি তাঁদের চলে যেতে বললে আরও অনেকে কথা বলা শুরু করেন।

১ মিনিট ২০ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, নাজমুল ওসিকে বলছেন, ‘পোশাকের ই দেখাইলেন, আর কি! আর চ্যালেঞ্জ করলেন আমাদের সঙ্গে।’ তখন এক পুলিশ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘এত কথা বলিয়েন না ভাই।’ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজমুল বলেন, ‘কেন কথা বলব না? শোনেন আওয়ামী লীগ আমলের থেকে এখন আরও বেশি ই হচ্ছে।’ তখন ওসি তাঁদের চলে যেতে বললে নাজমুল বলেন, ‘কেন যাব? থানা আমরাও সেভ করছি, বুঝলেন? তিন-চার দিন থানায় বসে ছিলাম। না হলে থানা জ্বালায় দিত। আমরা কথা বলব না তো, কে কথা বলবে?’

জানতে চাইলে রানীশংকৈল থানার ওসি আরশেদুল হক বলেন, মঙ্গলবার রাতে আটক সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক। তাঁদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের ছাড়িয়ে নিতে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি থানায় এসে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তখন পুলিশ সদস্যদের হাড়গোড় ভাঙাসহ থানা জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে যুবদল নেতা নাজমুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে তাঁর ব্যবসার অংশীদার ও তাঁর বাবাকে আটক করে পুলিশ। ওসিকে ফোন করলে তিনি তাঁকে থানায় যেতে বলেন। তিনি রানীশংকৈল থানায় গিয়ে পুলিশকে জানান, তাঁরা কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত না। কিন্তু ওসি কোনো উত্তর না দিয়ে কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। ওসির ওই আচরণের কারণে প্রতিবাদ করেছেন। হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পুলিশকে হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি শুধু বলেছি, ৫ আগস্ট আমরা থানা পাহারা না দিলে উত্তেজিত জনগণ থানা পুড়িয়ে দিত।’

জানতে চাইলে জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মো. জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ