আওয়ামী লীগের দুজনকে ছাড়াতে ওসিকে যুবদল নেতার হুমকি, ‘আপনার রিজিক উঠে গেছে’
Published: 13th, November 2025 GMT
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ‘আওয়ামী লীগের কর্মী’ দুই ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নিতে এসে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবদলের এক নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ওসির উদ্দেশে যুবদল নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি মানুষ চিনেন নাই। আপনার এখানে রিজিক নাই, রিজিক উঠে গেছে।’
ওই যুবদল নেতার নাম নাজমুল হুদা ওরফে মিঠু। তিনি পাশের পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি। পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার দুজনকে ছেড়ে দিতে রাজি না হওয়ায় ওসির সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে তিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ। তবে অভিযুক্ত নেতা হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে রানীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের রাজোর গ্রামের সারোয়ার নুর (৩২) ও হামিদুর রহমান (৬০), ভাউলারবস্তি গ্রামের খলিলুর রহমান (৫০) ও ধর্মগড় শালফার্ম এলাকার জিয়াউর রহমানকে (৪২) আটক করে পুলিশ। বাচোর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এবং আটক সারোয়ার ও হামিদুরের বাড়ি একই এলাকায়। ওই দুজনকে আটক করে গাড়িতে তোলার সময় জাহিদুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাঁদের ছেড়ে দিতে পুলিশকে চাপ দেন। পুলিশ রাজি না হলে তিনি বিভিন্নজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। পরে পুলিশ তাঁদের থানায় নিয়ে আসে।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে জাহিদুলের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ জন ব্যক্তি থানায় উপস্থিত হন। পরে পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল হুদা থানায় এসে সারোয়ার ও হামিদুরকে আত্মীয় দাবি করে তাঁদের ছেড়ে দিতে ওসিকে অনুরোধ করেন। আটক ব্যক্তিরা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন বলে দাবি করেন। বেলা দেড়টার দিকে নাজমুল হুদার সঙ্গে জাহিদুল ইসলাম যুক্ত হয়ে তাঁদের ছেড়ে দিতে ওসিকে চাপ দিতে থাকেন। রাজি না হওয়ার এক পর্যায়ে ওসির সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন এলাকার কয়েকজন। এ ঘটনার দুটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, থানা ভবনের সামনে লোকজনের জটলা। এ সময় যুবদল নেতা নাজমুল হুদাকে বলতে শোনা যায়, ‘মামলা করে ফেলেছেন, বলে দেন। কোনো কিছুই বলেন না। তিনটা থেকে ফোন দিচ্ছি, আমি মানুষ না?’ জবাবে ওসি বলেন, ‘আমি তো বলেছি, হবে না।’ এরপর নাজমুল বলেন, ‘ফালতু কথা বলবেন না। হবে না এ কথা বলেন নাই। মিথ্যা কথা বলবেন না।.
১ মিনিট ২০ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, নাজমুল ওসিকে বলছেন, ‘পোশাকের ই দেখাইলেন, আর কি! আর চ্যালেঞ্জ করলেন আমাদের সঙ্গে।’ তখন এক পুলিশ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘এত কথা বলিয়েন না ভাই।’ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজমুল বলেন, ‘কেন কথা বলব না? শোনেন আওয়ামী লীগ আমলের থেকে এখন আরও বেশি ই হচ্ছে।’ তখন ওসি তাঁদের চলে যেতে বললে নাজমুল বলেন, ‘কেন যাব? থানা আমরাও সেভ করছি, বুঝলেন? তিন-চার দিন থানায় বসে ছিলাম। না হলে থানা জ্বালায় দিত। আমরা কথা বলব না তো, কে কথা বলবে?’
জানতে চাইলে রানীশংকৈল থানার ওসি আরশেদুল হক বলেন, মঙ্গলবার রাতে আটক সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক। তাঁদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের ছাড়িয়ে নিতে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি থানায় এসে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তখন পুলিশ সদস্যদের হাড়গোড় ভাঙাসহ থানা জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে যুবদল নেতা নাজমুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে তাঁর ব্যবসার অংশীদার ও তাঁর বাবাকে আটক করে পুলিশ। ওসিকে ফোন করলে তিনি তাঁকে থানায় যেতে বলেন। তিনি রানীশংকৈল থানায় গিয়ে পুলিশকে জানান, তাঁরা কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত না। কিন্তু ওসি কোনো উত্তর না দিয়ে কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। ওসির ওই আচরণের কারণে প্রতিবাদ করেছেন। হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পুলিশকে হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি শুধু বলেছি, ৫ আগস্ট আমরা থানা পাহারা না দিলে উত্তেজিত জনগণ থানা পুড়িয়ে দিত।’
জানতে চাইলে জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মো. জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য বদল ন ত য বদল র বলব ন উপজ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা দেখেননি রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় কোনো অস্বচ্ছতা দেখেননি বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি বলেন, বিচারপ্রক্রিয়ায় কোনো অস্বচ্ছতা দেখেননি তিনি। কারণ, তাঁকে কেউ কোনো রকমের ইন্টারাপ্ট করেনি (বাধা দেয়নি)। এর বাইরে কোনো অস্বচ্ছতা আছে কি না, তা তাঁর জানা নেই।
শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা এ মামলার রায় আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর) নির্ধারণ করার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আমির হোসেন এ কথা বলেন।
এ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন আসামি। এর মধ্যে সাবেক আইজিপি মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী নামে পরিচিত) হয়েছেন।
আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। তাঁদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
সাক্ষ্য গ্রহণসহ সবকিছু সমাপ্ত করে রায়ের দিন ধার্য করায় ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি ও বিচারকদের ধন্যবাদ দেন আইনজীবী আমির হোসেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপন করা সাক্ষীদের কাছ থেকে বিভিন্ন রকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আনতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপন করা দালিলিক সাক্ষ্যে বিতর্ক (কন্ট্রোভার্সি) তৈরি করার চেষ্টা করেছেন এবং বিভিন্ন সময় দালিলিক সাক্ষীর ওপর বিতর্ক তৈরি হয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর মক্কেলদ্বয় (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান) খালাস পাবেন।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যেসব কাগজপত্র ও দলিলাদি পাওয়া গেছে, তার আলোকে এই মামলা পরিচালনা করেছেন জানিয়ে আমির হোসেন বলেন, সে জায়গায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাঁকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। কাগজপত্র যা যা দরকার, যা যা রাষ্ট্রপক্ষের কাছে ছিল, আইন অনুযায়ী যেসব নথিপত্র তাঁর পাওয়া উচিত, সেসবই তাঁকে দেওয়া হয়েছে।
শুধু রাষ্ট্রপক্ষের নথিপত্র দিয়ে মামলা যথাযথভাবে পরিচালনা করতে পেরেছেন, এ–সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী আমির বলেন, তাঁর সীমাবদ্ধতা থেকে তিনি চেষ্টা করেছেন, যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। তাঁর তরফ থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না এবং তাঁর চেষ্টায় কেউ কোনো বাধাও দেয়নি।
আমির হোসেন বলেন, আসামিরা উপস্থিত থাকলে যেসব সুবিধা পাওয়া যায়, যেসব ডকুমেন্টারি এভিডেন্স (প্রামাণ্য নথিপত্র) হয়তো তাঁকে তাঁরা (আসামিরা) দিতে পারতেন, সেসব নিয়ে তিনি লড়াই করতে পারতেন। সেসব তিনি পাচ্ছেন না। রাষ্ট্রপক্ষ এক জায়গায় কোনো একটা ঘটনার যেভাবে বর্ণনা দিয়েছে, সেই বর্ণনার বাইরেও হয়তো কোনো বর্ণনা থাকতে পারে। সেসব তিনি পাননি। এই জায়গায় তাঁর কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। সেই সীমাবদ্ধতা তাঁর মক্কেলরা অনুপস্থিত থাকার কারণে।
এ মামলার আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন নিজে বাঁচার জন্য অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আমির হোসেন। তিনি বলেন, তাঁর মক্কেলদের (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান) ওপর ভর করে সাবেক আইজিপি এটি করেছেন।