বিকট শব্দ শুনে ঘুমটা ভেঙে গেল। কিসের শব্দ বুঝতে পারলাম না। মুঠোফোনে দেখি, রাত সাড়ে তিনটা। একটু আগে ফজরের আজান হয়েছে, তেহরানে এ সময় ফজরের আজান হয়ে যায়। হোস্টেলের অন্য কক্ষগুলোয় অনেকে উঠেও গেছে। এর মধ্যেই আবার কানফাটানো আওয়াজ। এ কি মেঘের গর্জন? বারান্দায় গিয়ে দেখি, আকাশ পরিষ্কার, একবিন্দু মেঘও নেই। তাহলে কিসের শব্দ?

ততক্ষণে হইচই, চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেছে। চারতলার বারান্দা থেকে নিচে তাকিয়ে দেখি, অনেকেই মাঠে বেরিয়ে এসেছেন। তখনই তৃতীয়বারের মতো আবার শব্দ। এবার পরিষ্কার; এটা বিস্ফোরণের শব্দ। দূরে তাকিয়ে দেখি, আগুন জ্বলছে। যে এলাকায় আগুন জ্বলছে, সেটা আবাসিক এলাকা। অনেকটা আমাদের গুলশানের মতো ভিআইপি এলাকা। সামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকসহ নানা পেশার শীর্ষ পদের মানুষদের বসবাস। দিনের আলো পরিষ্কার হওয়ার পর সেখান থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেল।

এর মধ্যে চারতলা থেকে নিচে নেমে এসেছি। হোস্টেলের লোকজন বললেন, ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও পরে ইসরায়েলি হামলার কথা জানানো হলো। সেই ভোরে কেউ আর ঘুমাতে পারলাম না।

ইরানে ইসরায়েলি হামলার খবর আমাদের রাজশাহীর বাড়িতেও পৌঁছে গেছে। তটস্থ হয়ে কল দিলেন মা, তাঁর কণ্ঠে উদ্বেগ। সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তেহরানের তিন নম্বর অঞ্চলে। এখানে রাষ্ট্রীয় টিভি স্টেশন, বিভিন্ন দেশের দূতাবাসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে। হোস্টেলের পাশেই কোরীয় দূতাবাস। তাই এখানে হামলার আশঙ্কা নেই।

১৩ জুন দিনটা এভাবেই শুরু হলো।

ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে তেহরানের একটি তেল শোধনাগার, ১৫ জুন ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

নরসিংদীতে অবৈধ গ্যাস সংযোগের লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ড, গৃহবধু নিহত

নরসিংদীতে অবৈধ তিতাস গ্যাস সংযোগের পাইপলাইনের লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এক গৃহবধু নিহত হয়েছেন। ঘটনার সময় দগ্ধ তার ২ শিশু সন্তান গুরুতর আহতবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন।

নিহত গৃহবধু আকলিমা বেগম (৩০) নরসিংদীর মাধবদী নুরালাপুর ইউনিয়নের আলগী গ্রামের এমআর এমরানের স্ত্রী। তিনি স্থানীয় একটি টেক্সটাইল মিলে চাকরি করতেন। 

অভিযোগ রয়েছে, নরসিংদী তিতাস গ্যাসের ব্যাবস্থাপক মাকসুদুর রহমানের পরোক্ষ মদদে তার নিজ এলাকা নুরালাপুর ও আলগী গ্রামে অবৈধ গ্যাস সংযোগের ছড়াছড়ি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নেই কোনো পদক্ষেপ।

আরো পড়ুন:

দায়বদ্ধতা থেকে সাজিদের ভিসেরা রিপোর্ট দ্রুত নেওয়ার চেষ্টা করেছি: এআইজি আশরাফ

জুলাই গণঅভ্যুত্থান: সিরাজগঞ্জে ৪ আগস্ট নিহত হয় ২৯ জন

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুরে ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে ওই গৃহবধুর মৃত্যু হয়।

এর আগে, সোমবার (৪ আগস্ট) রাত ১১টায় নরসিংদীর মাধবদী নুরালাপুর ইউনিয়নের আলগী গ্রামের নিজ বসতঘরে গ্যাসের চুলা জ্বালানোর সময় লিকেজ থেকে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে গৃহবধু আকলিমা বেগম ও তার দুই সন্তানে সিয়াম (১২) ও সামিয়া (১৪) দগ্ধ হয়। 

স্থানয়ীরা জানিয়েছেন, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আকলিমা বেগম রাতের খাবার গরম করার জন্য চুলা জ্বালানোর চেষ্টা করেন। সে সেময় দিয়াশলাই জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে ঘরে আগুন লেগে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দুই সন্তানসহ আকলিমা আগুনে দগ্ধ হন।

পরে স্থানয়ীরা তাদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতাল নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাদের রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুরে আকলিমার মৃত্যু হয়। 

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ নরসিংদী তিতাস গ্যাসের ব্যাবস্থাপক মাকসুদুর রহমানের পরোক্ষ মদদে তার নিজ এলাকা নরসিংদীর মাধবদী নুরালাপুর ও আলগী এলাকায় অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে আসছে একটি চক্র। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এলাকাবাসী কয়েকবার নরসিংদী তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানায়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আর সঠিক সময় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে, সোমবার (৪ জুলাই) ভোর ৫টার দিকে তিতাস গ্যাসের পাইপলাইন ফেটে আগুন লাগায় শহর ও আশেপাশে এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সারাদিন গ্যাস সরবরাহ না থাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ জেলার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার গ্রাহক চরম দুর্ভোগে পড়েন।

এ বিষয়ে কথা বলতে নরসিংদী তিতাস গ্যাসের ব্যাবস্থাপক মাকসুদুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।  

এ ব্যাপারে মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “অগ্নিদগ্ধে নিহত আকলিমার লাশ এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। খোঁজ খবর নিচ্ছি। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/হৃদয়/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ