আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নিচ্ছেন তো
Published: 22nd, June 2025 GMT
ইসলামে সুস্থতার লক্ষ্য হলো আল্লাহর ইবাদতের পথে অবিচল থাকা। যদি কোনো বাধা এই পথে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, তবে তা দূর করা প্রয়োজন। ইসলাম বলে, মানসিক অসুস্থতা শুধু ক্লিনিক্যাল লক্ষণে সীমাবদ্ধ নয়।
ইসলাম চরিত্রের ত্রুটি, যেমন অহংকার (কিবর), হিংসা (হাসাদ) বা দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা (হুব্বুদ দুনিয়া), যা ক্লিনিক্যাল মাত্রায় না পৌঁছালেও আধ্যাত্মিক অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করে।
নবীজি (সা.
ইসলামি ঐতিহ্যে আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ (রিয়াদাহ আন-নাফস) এবং আধ্যাত্মিক গুরুর সঙ্গে কাজ করা আধ্যাত্মিক স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। এই প্রশিক্ষণ আমাদের দৈনন্দিন চাপ মোকাবিলার জন্য মানসিক ও আধ্যাত্মিক কৌশল শেখায়।
যার হৃদয়ে এক পরমাণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১আরও পড়ুনআয়েশা (রা.) রাগ করলে নবীজি (সা.) কী করতেন১২ জুন ২০২৫যখন কেউ ক্লিনিক্যাল মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন, তখন প্রথমে ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা হয়। এরপর আধ্যাত্মিক ত্রুটিগুলোর চিকিৎসা শুরু হয়, যাতে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি (মারদাতিল্লাহ) অর্জন করতে পারে।
এ জন্য ভালো হলো, কোনো আল্লাহভীরু মানুষের সান্নিধ্য গ্রহণ করা। পবিত্র কোরআন বলছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যপন্থীদের সান্নিধ্য গ্রহণ করো’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১১৯)।
শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো, মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্যও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। আধুনিক সমাজের ক্রমাগত উৎপাদনশীলতার চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জীবনে বিরতি (পজ) আনতে হবে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাচারটি অভ্যাস আমাদের আত্মাকে পুষ্টি দেয় এবং ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে:
১. চিন্তামূলক অভ্যাস: নামাজের আগে বা পরে চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। প্রকৃতির মধ্যে বসে ‘আল্লাহ’ নাম জপ করুন, আল্লাহর প্রতি নিমগ্ন ধ্যান করুন; যাকে ইসলামে মুরাকাবা। এ ছাড়া বই পড়া (বিবলিওথেরাপি) মানসিক চাপ কমায় এবং আত্মসচেতনতা বাড়ায়। যেমন: গাজার মুসলিমদের দুঃখের কথা ভেবে নিজের দুঃখকে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হতে পারে।
২. সৃজনশীল অভ্যাস: ধাঁধা, আসবাব তৈরি বা অঙ্কনের মতো সৃজনশীল উপকারী কাজ মননশীলতা বাড়ায়। এটি ইসলামের ইহসান (শ্রেষ্ঠত্ব) ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা উদ্দেশ্য ও নিয়তের সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করে। এই কাজগুলো মানসিক শান্তি দেয় এবং বার্নআউট প্রতিরোধ করে।
আরও পড়ুননামাজে দাঁড়িয়ে নানা চিন্তার আনাগোনা২২ জানুয়ারি ২০২৩শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো, মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্যও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। আধুনিক সমাজের ক্রমাগত উৎপাদনশীলতার চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জীবনে বিরতি (পজ) আনতে হবে।৩. শারীরিক অভ্যাস: ব্যায়াম, বাগান করা বা তিরন্দাজির মতো কার্যকলাপ আত্মার প্রশিক্ষণ (রিয়াদাহ আন-নাফস) দেয়। নবীজি (সা.) সাঁতার, ঘোড়দৌড়, এবং তিরন্দাজিকে উৎসাহিত করেছেন, কারণ এগুলো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বাড়ায়। প্রকৃতিতে হাঁটা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা জাগায় এবং আধ্যাত্মিক সংযোগ গড়ে।
৪. আধ্যাত্মিক অভ্যাস: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আবশ্যক। এরপর রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ), সোমবার ও বৃহস্পতিবার সুন্নত রোজা রাখা এবং কোরআন তিলাওয়াতের মতো অভ্যাস বাড়ানো যেতে পারে। প্রতিদিন কয়েকটি পয়সা দিয়ে হলেও সামান্য সাদাকা আত্মার পুষ্টি জোগায়। এই অভ্যাসগুলো আমাদের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য বাড়ায়।
প্রতিবেশীদের ভূমিকামহানবী (সা.)-এর জীবন থেকে আমরা শিখি, নির্জনতা নয়, বরং মানুষের সঙ্গে সংযোগ মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। তিনি একজন ব্যক্তির দুঃখ লক্ষ করে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এবং দোয়া শিখিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছেন।
আমাদেরও পরিবার, বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। জুমার নামাজ বা জামাতে নামাজে আমরা একে অপরের খোঁজ নিতে পারি। যদি কেউ দুর্বল মনে হয়, তবে তাদের সমর্থন দিন বা বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠান। এই সহানুভূতি ইসলামের শিক্ষার মূল।
সূত্র: মুসলিম ডটএসজি
আরও পড়ুনহিজরি কালপঞ্জি: ইসলামি পরিচয়ের ধারণা২৩ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ আম দ র র জন য ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
কারাগারে বিয়ে, ধর্ষণ মামলার বাদী ইডেন ছাত্রীকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিলেন নোবেল
চলচ্চিত্রের গান দিয়ে পরিচিতি পাওয়া গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল এবার আলোচনায় এলেন এক ব্যতিক্রমী ঘটনায়। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা ইডেন মহিলা কলেজের এক সাবেক ছাত্রীকে তিনি বিয়ে করেছেন কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে বসেই।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির।
এর আগে বুধবার (১৮ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার আসামিপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে কারাগারে কাবিননামা অনুযায়ী বিয়ের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী উভয়ের সম্মতিতে বিয়ে সম্পাদন করে আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়। বিয়ের সময় ভুক্তভোগী ছাত্রী নিজেও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০২3 সালের নভেম্বর মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে গায়ক নোবেল ও ইডেন কলেজের ওই ছাত্রীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর গত ১২ নভেম্বর স্টুডিও দেখানোর কথা বলে তাকে ডেমরার নিজ বাসায় ডেকে নেন নোবেল। অভিযোগে বলা হয়, সেদিন নোবেল ও তার কয়েকজন সহযোগী ওই ছাত্রীকে সেখানে আটকে রাখেন এবং পরে ধর্ষণ করেন। এমনকি ওই ঘটনার ভিডিওও গোপনে ধারণ করা হয় বলে দাবি করেছেন বাদী।
অভিযোগ আরও রয়েছে, মেয়েটির মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তা ভেঙে ফেলা হয় এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন সময় মারধর এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।
পরে ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ভুক্তভোগীর পরিবার তাকে চিনতে পারে এবং জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চায়। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে নোবেলকে গ্রেপ্তার করে এবং ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে। পরদিন ডেমরা থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে অপহরণ, ধর্ষণ এবং পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করা হয়।
বর্তমানে নোবেল কারাবন্দি অবস্থায় আছেন। আর তাঁর সঙ্গে কাবিন করে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়ালেন যিনি, তিনি তাঁর বিরুদ্ধে মামলার বাদী। ফলে এই ঘটনা আইনি ও সামাজিক পর্যায়ে নানা প্রশ্ন এবং আলোচনার জন্ম দিয়েছে।