কাজল-রানির পর দীপিকার ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি, সমর্থন জানালেন নির্মাতা
Published: 22nd, June 2025 GMT
পরিবার আর পেশার সামঞ্জস্য বজায় রাখতে নতুন পথে হাঁটার কথা ভাবছে বলিউড। ৮ ঘণ্টা কাজ, মাসের বিশেষ বিশেষ দিনে বিশ্রামের মতো মৌলিক বেশ কিছু দাবিতে সম্প্রতি বলিউডে সুর চড়ছে।
দিনে ৮ ঘণ্টা কাজ নিয়ে দীর্ঘদিনের সেই চাপা কণ্ঠ প্রকাশ্যে আনার নেপথ্যে কিন্তু বলতেই হয় বলিউডের ‘মস্তানি’ অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনের কথা। তিনিই নির্দিষ্ট সময় কাজের দাবিতে প্রথম মুখ খোলেন। তার ‘শাস্তি’ স্বরূপ তাকে বিগ বাজেটের সিনেমা থেকে বাদও পড়তে হয়েছে। তাতে কী?
অভিনয় জগতে এই যে নতুন ভাবনার হাওয়া তিনি এনে দিলেন তা তো কম কিছু নয়। এবার দীপিকার সমর্থনে এগিয়ে এলেন বলিউড পরিচালক সিদ্ধার্থ পি মালহোত্রা। আর এ প্রসঙ্গে তিনি বহু বছর আগে কাজল, রানি মুখোপাধ্যায়ের কাজের কথাও বললেন।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সিদ্ধার্থ পি মালহোত্রা ৮ ঘণ্টা কাজ নিয়ে নিজের মতামত ও অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন। একসময়ে কাজল, রানি মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রথম সারির নায়িকারাও শুটিংয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ৮ ঘণ্টা সময় দিতেন বলে জানাচ্ছেন পরিচালক।
তার পরিচালনায় ২০১৮ সালের সিনেমা ‘হিচকি’র শুটিংয়ের উদাহরণ দিয়ে সিদ্ধার্থ পি মালহোত্রা জানান, মাত্র ২৮ দিনে তার শুটিং শেষ হয়েছিল। ঠিকমতো প্রি-প্রোডাকশন, নিয়মানুবর্তিতা, সমন্বয় থাকলে কাজের ক্ষেত্রে ঘণ্টার হিসেব দরকার হয় না বলেই মনে করেন তিনি। খুব কম সময় কাজ করেও তা শেষ করা সম্ভব, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সেদিকেই জোর দিলেন সিদ্ধার্থ পি মালহোত্রা।
তার কথায়, ‘প্রতিটি ছবি তৈরিতে আলাদা সময় থাকে। আমরা ‘হিচকি’ সিনেমার শুটিং করেছিলাম মাত্র ২৮ দিনে। রানি আর বাচ্চারা প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করেই কাজ করেছিল। শুধু তারাই নন, স্পটবয় থেকে অন্যান্য কলাকুশলী কাউকে বেশি সময় কাজ করতে হয়নি। কাজল তো ২০১০ সালেও ৮ ঘণ্টা কাজ করতেন। কাজেই দীপিকা এখন যা বলছেন, তা নতুন কোনও দাবি নয়।
এই নির্মাতা বলেন, ‘কোনও পরিচালক যদি কাউকে নিয়ে সত্যিই কাজ করতে চান, তাহলে ৬ ঘণ্টাতেও সেই কাজ হওয়া সম্ভব। কাজ হবে অভিজ্ঞতা, দক্ষতার ভিত্তিতে। কে কীভাবে সময়কে ম্যানেজ করবেন তার জন্য অভিজ্ঞতা হওয়া খুব জরুরি।’
এসবেরই সূত্রপাত দীপিকা পাড়ুকোনের একটি দাবি ঘিরে। ‘অ্যানিম্যাল’ খ্যাত পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গার সিনেমায় দক্ষিণী তারকা প্রভাসের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে রণবীর-ঘরনির হওয়ার কথা ছিল।
শুটিং শুরুর আগে দীপিকা জানান, তিনি ৮ ঘণ্টার বেশি শুটিং করতে পারবেন না। কারণ হিসেবে জানান, সদ্য মা হয়েছেন, মেয়েকে সময় দেবেন। এছাড়া পারিশ্রমিক নিয়েও বেশ কিছু দাবি ছিল নায়িকার। কিন্তু এসব শর্ত তার পছন্দ হয়নি পরিচালকের। ফলে সিনেমা থেকে বাদ পড়তে হয় দীপিকাকে। তার বদলে সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গার নতুন প্রজেক্টে ‘এন্ট্রি’ হয় তারই আগের সিনেমার অভিনেত্রী তৃপ্তি দিমরির। সূত্র: এনডিটিভি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতির উপাত্ত যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য হয়
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে বাংলাদেশে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, সেটার উপাত্তগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য হয়। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সামনের সারিতে থাকলেও এ উপাত্তগুলোকে জলবায়ুর পরিবর্তনের অভিঘাতের সঙ্গে সম্পর্কিত করতে হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে নানামুখী ক্ষয়ক্ষতির পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন এবং সেগুলো সংরক্ষণ করে যেতে হবে।
আজ বুধবার রাজধানীতে অক্সফাম আয়োজিত ‘ফ্রম গ্রাউন্ড টু গ্লোবাল: দ্য লস অ্যান্ড ড্যামেজ ড্যাশবোর্ড ফর ক্লাইমেট ইকুইটি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে যে প্রাণহানি, জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বিলুপ্তিকে লস (অ-আর্থিক ক্ষতি) বলা হয়। আর জলবায়ুর অভিঘাতে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরবাড়ি, অবকাঠামো, ফসলের ক্ষয়ক্ষতিকে ড্যামেজ (আর্থিক ক্ষতি) হিসেবে গণ্য করা হয়।
২০১৩ সালে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলনে লস অ্যান্ড ড্যামেজ প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। ২০২২ সালে মিসরে অনুষ্ঠিত কপ-২৭–এ লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে একটি ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সে ফান্ডে প্রাথমিকভাবে উন্নত বিশ্বের চারটি দেশ ৪০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বিজ্ঞানভিত্তিক উপাত্ত সংগ্রহে অক্সফাম একটি উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে ব্যক্তি পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত যে কেউ ক্ষয়ক্ষতির উপাত্ত দিতে পারবে।
প্রমাণ তৈরিতে উপাত্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এখানে একেক সংস্থা একেকভাবে উপাত্ত তৈরি করে। লস অ্যান্ড ড্যামেজের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে আমাদের মানদণ্ড সাযুজ্যপূর্ণ হচ্ছে কি না, সেটা দেখতে হবেরউফা খানম, সহকারী পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বলেন, বাংলাদেশসহ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করছে। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে পাঁচটি বড় বন্যাসহ ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; দেশের ৩০ শতাংশ ভূমি প্লাবিত হয়েছে।
সুইডিশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং অ-অর্থনৈতিক ক্ষতিও ভয়াবহ—যেমন প্রাণহানি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিলুপ্তি এবং পূর্বপুরুষের ভূমি ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়ার মানসিক আঘাত। এসব ক্ষয়ক্ষতির নানামুখী দিক পর্যবেক্ষণে রাখা, মূল্যায়ন করা এবং সেগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতির ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে উদ্ভাবিত ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ড্যাশবোর্ড’কে সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেন নিকোলাস উইকস। এই ড্যাশবোর্ড ক্ষয়ক্ষতির একটি দালিলিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে বলে জানান তিনি।
নিকোলাস উইকস জানান, সুইডেন ২০২৪ সালে রেকর্ড পরিমাণ ১২০ কোটি ডলার জলবায়ু সহায়তা দিয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া দেশটি গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের সহসভাপতি হিসেবে জলবায়ু অর্থায়নের দক্ষতা ও ফলপ্রসূতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। গত বছর দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত কপ-২৯ সম্মেলনে সুইডেন জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার জন্য গঠিত বৈশ্বিক তহবিলে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার অনুদান দেয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সদস্যসচিব শরীফ জামিল বলেন, আর্থিক ও অ-আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব একই পদ্ধতিতে করলে হবে না। দুটোর ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করতে হবে দুটি ভিন্ন পদ্ধতিতে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বিজ্ঞানভিত্তিক উপাত্ত সংগ্রহে অক্সফাম একটি উদ্যোগ নিয়েছে