কাজের জন্য বৈধভাবে গিয়েছিলেন রাশিয়ায়, এখন ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন, এমন ১০ বাংলাদেশির পরিবার তাঁদের ফেরত পেতে চাইছে।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির এক প্রতিবেদনে এই ১০ জনের তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, এমন বাংলাদেশির সংখ্যা আরও আছে, তবে কতজন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গত সোমবার ব্র্যাকের ‘প্রমিসেস রিটেন ইন ব্লাড: হাউ লিগ্যাল মাইগ্রেশন টার্ন্ড ইনটু ফোর্সড রিক্রুটমেন্ট ইন দ্য রাশিয়া-ইউক্রেন ওয়ার’শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ইউক্রেন থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের বিবরণ, পরিবারের সাক্ষ্য ও নথিপত্র যাচাইয়ের ভিত্তিতে।

প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, কীভাবে দালালেরা উচ্চ বেতনে কাজের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের প্রলুব্ধ করেন। অনেকে তেল, নির্মাণ বা লজিস্টিকস খাতে কাজের আশায় রাশিয়া গেছেন। রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়।

গত বছরের শেষ দিক থেকে শুরু করে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি পরিবারগুলোর কাছ থেকে বহু আবেদন পায়, যেখানে প্রায় একই রকমের বর্ণনা ছিল। ব্র্যাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের উদ্ধারের আবেদন জমা দিয়েছে এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) মামলার নথিও দিয়েছে। পাশাপাশি পরিবারগুলোকে আইনি ও মানসিক সহায়তা দিচ্ছে।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (অভিবাসন ও যুব) শরিফুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত ১০টি পরিবার ব্র্যাকের কাছে তাদের স্বজনদের রাশিয়া থেকে ফেরত আনার আবেদন জানিয়েছে। এসব ব্যক্তি বৈধ ভিসায় কাজ করতে রাশিয়া গিয়েছিলেন।

বাংলাদেশিরা সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ করে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন কাজ করতে। তাঁদের ফাঁদে ফেলার এমন প্রক্রিয়ায় শুধু স্থানীয় দালাল নয়, এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহায়তাকারীরাও জড়িত।

শরিফুল হাসান আরও বলেন, ‘রাশিয়ায় কত শ্রমিক এভাবে যুদ্ধে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, কতজন দেশে ফিরতে পারলেন, মারা গেছেন কতজন—এসব তথ্য এখনো জানা সম্ভব হয়নি। এসব তথ্য জানার জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এর পাশাপাশি রাশিয়ায় গিয়ে কেউ যাতে প্রতারণার শিকার না হন, কাউকে যাতে যুদ্ধ করতে বাধ্য করা না হয়, সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমডি সোহেল নামের এক বাংলাদেশি রাশিয়ায় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করলে কী কী সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, তা নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। এ কারণে অনেকে নতুন করে প্রলুব্ধ হচ্ছেন রাশিয়ায় যুদ্ধ করার জন্য যেতে।’

ব্র্যাকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের ফাঁদে ফেলার এমন প্রক্রিয়ায় শুধু স্থানীয় দালাল নন, এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহায়তাকারীরাও জড়িত। বাংলাদেশিরা সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ করে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন।

প্রতিবেদনে বাগেরহাটের অয়ন মণ্ডলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বৈধ ভিসায় রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। তাঁর পাঠানো শেষ বার্তা অনুযায়ী, তাঁকে ইউক্রেনীয় সীমান্তের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তার পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি।

কুমিল্লার অমিত বড়ুয়াসহ আরও কয়েকজনের তথ্যও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অমিত বড়ুয়ার একটি ছবিতে দেখা যায়, তিনি রুশ সামরিক পোশাক পরে আছেন। এর পর থেকেই তিনি নিখোঁজ।

রাশিয়ায় কত শ্রমিক যুদ্ধে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, মারা গেছেন কতজন, এই তথ্যগুলো জানার জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।শরিফুল হাসান, সহযোগী পরিচালক (অভিবাসন ও যুব), ব্র্যাক

তরুণ আফজাল হোসেন মেরাজ ট্রাভেল এজেন্সি ফ্রেন্ডশিপ অ্যান্ড কো–অপারেটিভ রিক্রুটমেন্টের মাধ্যমে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন গত বছরের ১০ আগস্ট। তাঁর বাবা আলী হোসেন চলতি বছরের গত ২২ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আবেদনে ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার আবেদন জানান। চিঠিতে তিনি তাঁর ছেলেকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর কাছে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ জানান। ছেলে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তখন যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করছিলেন।

ময়মনসিংহের আলী হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে দুই মাস আগে মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় দেশে ফিরতে পেরেছেন। তিনি জানালেন, ছেলেকে প্রথমে যে কোম্পানির চাকরির কথা বলে নেওয়া হয়, সেখানে চার মাস চাকরি করেন। পরে সেখান থেকে তাঁকে ছাঁটাই করা হয়। এরপর ছেলে একটি চক্রের মাধ্যমে যুদ্ধ করতে চলে যান। সেখানে মাইন বিস্ফোরণে আহত হন। ২৫ দিন হাসপাতালেও থাকতে হয়েছিল।

আরও পড়ুনরাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ছেলেদের খুঁজছে বাংলাদেশি পরিবারগুলো১২ এপ্রিল ২০২৫

অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক তাসনিম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, রাশিয়ায় সরাসরি কাজের জন্য যাওয়ার পাশাপাশি ট্যুরিস্ট ভিসা, ওমরাহ ভিসায় অনেককে প্রথমে সৌদি আরবে নেওয়া হচ্ছে। পরে চুক্তি করে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রামরুর পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয় দেড় মাস আগে। প্রতিবেদনটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে দেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

গত ১২ এপ্রিল বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ছেলেদের খুঁজছে বাংলাদেশি পরিবারগুলো। রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠিয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে ২২ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যুর খবর সামনে আসায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে।

আরও পড়ুনরাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশিদের, দূতাবাসের কাছে তথ্য চেয়েছে ঢাকা০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সেই প্রতিবেদনে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় বাংলাদেশি দূতাবাসকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়, ডজনখানেক পরিবার তাদের ছেলেদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সবার একই অভিযোগ, রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যুক্ত করে এই ছেলেদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে গত ২৭ মার্চ রুশ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে ২২ বছরের মোহাম্মদ ইয়াসিন শেখের নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম ঢাকায় এক ব্রিফিংয়ে জানান, মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে বাংলাদেশের কয়েকজন নাগরিক বাধ্য হয়ে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে মস্কোতে বাংলাদেশের দূতাবাসের কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

রফিকুল আলম সেদিন বলেছিলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এবং এ ধরনের কাজে জড়িত রিক্রুটিং ও ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। রাশিয়ায় মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত চক্রের একজন গ্রেপ্তারও হয়েছেন।

এ ছাড়া চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকালীন ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় গমনেচ্ছু বাংলাদেশিদের জন্য এবং যাঁদের পাসপোর্টে রাশিয়া ভ্রমণের বৈধ ভিসা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোয় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুনচাকরির নামে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো চক্রের হোতা গ্রেপ্তার১৩ জুন ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন য দ ধ য দ ধ করত য দ ধ কর র জন য স র র জন য পর ব র প রথম সরক র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশি তাঁরা, রাশিয়ায় গিয়েছিলেন চাকরির জন্য, করতে হচ্ছে যুদ্ধ

কাজের জন্য বৈধভাবে গিয়েছিলেন রাশিয়ায়, এখন ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন, এমন ১০ বাংলাদেশির পরিবার তাঁদের ফেরত পেতে চাইছে।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির এক প্রতিবেদনে এই ১০ জনের তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, এমন বাংলাদেশির সংখ্যা আরও আছে, তবে কতজন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গত সোমবার ব্র্যাকের ‘প্রমিসেস রিটেন ইন ব্লাড: হাউ লিগ্যাল মাইগ্রেশন টার্ন্ড ইনটু ফোর্সড রিক্রুটমেন্ট ইন দ্য রাশিয়া-ইউক্রেন ওয়ার’শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ইউক্রেন থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের বিবরণ, পরিবারের সাক্ষ্য ও নথিপত্র যাচাইয়ের ভিত্তিতে।

প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, কীভাবে দালালেরা উচ্চ বেতনে কাজের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের প্রলুব্ধ করেন। অনেকে তেল, নির্মাণ বা লজিস্টিকস খাতে কাজের আশায় রাশিয়া গেছেন। রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়।

গত বছরের শেষ দিক থেকে শুরু করে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি পরিবারগুলোর কাছ থেকে বহু আবেদন পায়, যেখানে প্রায় একই রকমের বর্ণনা ছিল। ব্র্যাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের উদ্ধারের আবেদন জমা দিয়েছে এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) মামলার নথিও দিয়েছে। পাশাপাশি পরিবারগুলোকে আইনি ও মানসিক সহায়তা দিচ্ছে।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (অভিবাসন ও যুব) শরিফুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত ১০টি পরিবার ব্র্যাকের কাছে তাদের স্বজনদের রাশিয়া থেকে ফেরত আনার আবেদন জানিয়েছে। এসব ব্যক্তি বৈধ ভিসায় কাজ করতে রাশিয়া গিয়েছিলেন।

বাংলাদেশিরা সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ করে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন কাজ করতে। তাঁদের ফাঁদে ফেলার এমন প্রক্রিয়ায় শুধু স্থানীয় দালাল নয়, এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহায়তাকারীরাও জড়িত।

শরিফুল হাসান আরও বলেন, ‘রাশিয়ায় কত শ্রমিক এভাবে যুদ্ধে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, কতজন দেশে ফিরতে পারলেন, মারা গেছেন কতজন—এসব তথ্য এখনো জানা সম্ভব হয়নি। এসব তথ্য জানার জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এর পাশাপাশি রাশিয়ায় গিয়ে কেউ যাতে প্রতারণার শিকার না হন, কাউকে যাতে যুদ্ধ করতে বাধ্য করা না হয়, সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমডি সোহেল নামের এক বাংলাদেশি রাশিয়ায় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করলে কী কী সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, তা নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। এ কারণে অনেকে নতুন করে প্রলুব্ধ হচ্ছেন রাশিয়ায় যুদ্ধ করার জন্য যেতে।’

ব্র্যাকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের ফাঁদে ফেলার এমন প্রক্রিয়ায় শুধু স্থানীয় দালাল নন, এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহায়তাকারীরাও জড়িত। বাংলাদেশিরা সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ করে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন।

প্রতিবেদনে বাগেরহাটের অয়ন মণ্ডলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বৈধ ভিসায় রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। তাঁর পাঠানো শেষ বার্তা অনুযায়ী, তাঁকে ইউক্রেনীয় সীমান্তের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তার পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি।

কুমিল্লার অমিত বড়ুয়াসহ আরও কয়েকজনের তথ্যও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অমিত বড়ুয়ার একটি ছবিতে দেখা যায়, তিনি রুশ সামরিক পোশাক পরে আছেন। এর পর থেকেই তিনি নিখোঁজ।

রাশিয়ায় কত শ্রমিক যুদ্ধে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, মারা গেছেন কতজন, এই তথ্যগুলো জানার জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।শরিফুল হাসান, সহযোগী পরিচালক (অভিবাসন ও যুব), ব্র্যাক

তরুণ আফজাল হোসেন মেরাজ ট্রাভেল এজেন্সি ফ্রেন্ডশিপ অ্যান্ড কো–অপারেটিভ রিক্রুটমেন্টের মাধ্যমে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন গত বছরের ১০ আগস্ট। তাঁর বাবা আলী হোসেন চলতি বছরের গত ২২ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আবেদনে ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার আবেদন জানান। চিঠিতে তিনি তাঁর ছেলেকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর কাছে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ জানান। ছেলে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তখন যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করছিলেন।

ময়মনসিংহের আলী হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে দুই মাস আগে মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় দেশে ফিরতে পেরেছেন। তিনি জানালেন, ছেলেকে প্রথমে যে কোম্পানির চাকরির কথা বলে নেওয়া হয়, সেখানে চার মাস চাকরি করেন। পরে সেখান থেকে তাঁকে ছাঁটাই করা হয়। এরপর ছেলে একটি চক্রের মাধ্যমে যুদ্ধ করতে চলে যান। সেখানে মাইন বিস্ফোরণে আহত হন। ২৫ দিন হাসপাতালেও থাকতে হয়েছিল।

আরও পড়ুনরাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ছেলেদের খুঁজছে বাংলাদেশি পরিবারগুলো১২ এপ্রিল ২০২৫

অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক তাসনিম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, রাশিয়ায় সরাসরি কাজের জন্য যাওয়ার পাশাপাশি ট্যুরিস্ট ভিসা, ওমরাহ ভিসায় অনেককে প্রথমে সৌদি আরবে নেওয়া হচ্ছে। পরে চুক্তি করে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রামরুর পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয় দেড় মাস আগে। প্রতিবেদনটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে দেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

গত ১২ এপ্রিল বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ছেলেদের খুঁজছে বাংলাদেশি পরিবারগুলো। রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠিয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে ২২ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যুর খবর সামনে আসায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে।

আরও পড়ুনরাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশিদের, দূতাবাসের কাছে তথ্য চেয়েছে ঢাকা০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সেই প্রতিবেদনে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় বাংলাদেশি দূতাবাসকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়, ডজনখানেক পরিবার তাদের ছেলেদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সবার একই অভিযোগ, রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যুক্ত করে এই ছেলেদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে গত ২৭ মার্চ রুশ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে ২২ বছরের মোহাম্মদ ইয়াসিন শেখের নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম ঢাকায় এক ব্রিফিংয়ে জানান, মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে বাংলাদেশের কয়েকজন নাগরিক বাধ্য হয়ে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে মস্কোতে বাংলাদেশের দূতাবাসের কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

রফিকুল আলম সেদিন বলেছিলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এবং এ ধরনের কাজে জড়িত রিক্রুটিং ও ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। রাশিয়ায় মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত চক্রের একজন গ্রেপ্তারও হয়েছেন।

এ ছাড়া চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকালীন ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় গমনেচ্ছু বাংলাদেশিদের জন্য এবং যাঁদের পাসপোর্টে রাশিয়া ভ্রমণের বৈধ ভিসা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোয় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুনচাকরির নামে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো চক্রের হোতা গ্রেপ্তার১৩ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ