বছর ঘুরলেই আগামী বছর ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) থেকে পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে ভোটার তালিকায় ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ বা এসআইআর।

আর এই দিনেই এসআইআর-এর বিরোধিতা করে সরাসরি পথে নামলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তারই নেতৃত্বে এক পদযাত্রা বের হয়, যাতে সামিল হন মমতার ভাতিজা ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম মন্ত্রী, অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, সুজিত বসু, দলের সাংসদ জুন মালিয়া, রচনা ব্যানার্জি, শতাব্দী রায়, সায়নী ঘোষ, বিধায়ক দেবাশীষ কুমার, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়সহ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা-নেত্রী, অসংখ্য দলীয় কর্মী, সমর্থক ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতা, সিনেমা ও টিভি সিরিয়ালের একাধিক অভিনেতা-অভিনেত্রী। 

আরো পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন আতঙ্কে ফের মৃত্যুর অভিযোগ

সুন্দর ঝড়ে সিরিজে সমতা ফেরাল ভারত

এই মিছিল কলকাতার রেড রোডে অবস্থিত সংবিধানের প্রণেতা ড.

 ভি আর আম্বেদকরের ভাস্কর্য থেকে থেকে শুরু হয়ে ধর্মতলা রানী রাসমণি এভিনিউ, চিত্তরঞ্জন এভিনিউ হয়ে শেষ হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। মিছিল শুরুর আগে আম্বেদকরের মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মমতা মমতা। মিছিলের একেবারে সম্মুখভাগে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবিধান হাতে নিয়েই প্রায় ৪ কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটে তিনি পৌঁছন জোড়াসাঁকো। এরপর এসআইআর আতঙ্কে যাদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ, তাদের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান মমতা ও অভিষেক। 

পরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যারা মারা গেছে খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আপনারা বিজেপির চক্রান্তে মূল্যবান প্রাণ নষ্ট করবেন না। কারণ একটা মানবিক প্রাণ অনেক কষ্টে তৈরি হয়।” 

ভোটারদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা থালা বাটি বেঁচেও আপনাদের সাহায্য করব, মন প্রাণ দিয়ে সাহায্য করবো। আপনাদের যদি কোনো কাগজ না থাকে আপনারা আমাদের শিবিরে যোগাযোগ করুন। চিন্তার কোনো কারণ নেই, আতঙ্কিত হবেন না। আমরা সেগুলো করে দেব। আমরা চাই আপনাদের সবার নাম ভোটার তালিকায় থাকুক, যাতে আপনারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। আমাদের লড়াই রাস্তাতেও জারি থাকবে, আদালতেও জারি থাকবে।” 

মতুয়াদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “বাংলায় কাউকে গায়ে হাত দিতে দেব না। আপনারা ভয় পাবেন না। আপনাদের দিদি আছে।” 

এসআইআর করার সময়সীমা নিয়ে মমতার প্রশ্ন, “এটি করতে অন্তত তিন বছর সময় লাগে। সেক্ষেত্রে আগামী বছর নির্বাচনের দিন ঘোষণা হবে। তার আগে মাত্র তিন মাস সময় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কিভাবে সম্ভব? তাছাড়া ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে আপনারা (বিজেপি) কাদের ভোটে জিতেছেন? যদি একটা ভোটারও ভুয়া হয়, তাহলে আপনাদের সরকারও ভুয়া। আসলে প্রতিটি নির্বাচনের আগেই তাদের কিছু না কিছু করতে হবে। একবার হঠাৎ করে নোট বাতিল ঘোষণা দিয়ে নোট বাতিল করে দিল। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে কি কালো রূপি দেশে ফিরে এসেছে? উল্টে লাইন দিতে গিয়ে প্রায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরা নির্লজ্জ, এদের লজ্জা হওয়া উচিত।” 

বিজেপিকে নিশানা করে মমতা বলেন, “বাংলার উপর ওদের খুব রাগ। তার কারণ ওরা জানে সব রাজ্যকে কব্জা করতে পারলেও বা বোকা বানাতে পারলেও বাংলাকে পারবে না। তার কারণ ব্রিটিশ আমলে কলকাতা ভারতের রাজধানী ছিল। তারা বাংলার সঙ্গে পেরে না উঠতে পারে দিল্লিতে রাজধানী ছড়িয়ে নিয়ে যায়। কারণ বাংলার মানুষ বেশি আন্দোলন করে, প্রতিবাদ করে। আসলে কেন্দ্রের এই সরকার যেনতেনভাবে দুই কোটি মানুষের নাম বাদ দিতে চাইছে, পড়ে ওদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিয়ে না হয়, বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়ে কোনো রকম ক্ষমতা দখল করবে। কিন্তু আমরা তা হতে দেবো না। একজন ভোটারের নাম বাদ গেলেও বিজেপি সরকারকে ভেঙে দেব।” 

তার অভিমত, “বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি হয় না, যেমন উর্দু ভাষায় কথা বললেই সবাই পাকিস্তানি হয়ে যায় না। ভারতে একটা পাঞ্জাব আছে, পাকিস্তানেও একটা পাঞ্জাব আছে। ভারতে যারা পাঞ্জাব বলে লেখে আপনি কি তাদের পাকিস্তানি বলে তাড়িয়ে দেবেন? পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা ভারতের অন্য যেসব রাজ্যে কাজের সন্ধানে যাচ্ছে, সবাইকে বাংলাদেশি হিসাবে তকমা লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। এই মূর্খ ও অর্ধশিক্ষিতরা জানেই না যে,  ১৯৪৭ সালের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত- একসাথে ছিল। যখন দেশ স্বাধীন হলো তখন যাদের বাংলাদেশে যাবার ইচ্ছে তারা সে দেশে চলে গেল। পাকিস্তানে যাদের ইচ্ছে তারা সেখানে চলে গেল। আবার যাদের ভারতে আসার ইচ্ছে, তারা আবার ভারতে চলে এলেন।”  

অন্যদিকে এদিনই রাজ্যটির বিরোধী দলনেতা শ্রী শুভেন্দু অধিকারীর সক্রিয় উপস্থিতিতে ‘পরিবর্তন মিছিল’ এর আয়োজন করা হয়। দলের কলকাতা উত্তর শহরতলী জেলার তরফে আয়োজিত এই মিছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পানিহাটি ট্রাফিক মোড় থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় আগরতলা তেতুলতলা মোড়। শুভেন্দু ছাড়াও দলের সাবেক সাবেক সাংসদ অর্জুন সিং সহ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

সব মিলিয়ে নির্বাচনের মাত্র কয় মাস আগেই এসআইআর নিয়ে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বন দ য প ধ য য আপন দ র আপন র কলক ত আতঙ ক সরক র ন মমত

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন আতঙ্কে ফের মৃত্যুর অভিযোগ

ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর আতঙ্কে ফের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে। এবারের ঘটনাস্থল হুগলি জেলার ডানকুনি এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর। 

ডানকুনিতে মৃত ওই নারীর নাম হাসিনা বেগম। ৬০ বছর বয়সী ওই নারী ডানকুনি পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, এসআইআর আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। গোটা ঘটনায় সরগরম ডানকুনি। 

আরো পড়ুন:

সুন্দর ঝড়ে সিরিজে সমতা ফেরাল ভারত

৩১ দিনে ‘কানতারা টু’ সিনেমার আয় ১১৪৯ কোটি টাকা

স্থানীয় সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে তাদের এলাকায় এসআইআর নিয়ে একটি বৈঠক হয়। তারপর থেকেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন হাসিনা বেগম। তার কাছে বৈধ কাগজপত্র থাকলেও ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাকি তার নাম ছিল না। সেই কারণেই নানাবিধ দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। গতকাল সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালের দিকে রাস্তায় বেরিয়ে তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যান। স্থানীয়রা তৎক্ষণাৎ তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। 

এই বিষয়ে ডানকুনি পৌরসভার প্রধান হাসিনা সাবনাম বলেন, ওই নারী বেশ কিছুদিন যাবত দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। স্থানীয় মানুষদের থেকে তিনি খবর পেয়েছেন, প্রায়শই মানুষদেরকে তিনি জিজ্ঞাসা করতেন- এসআইআর হলে কি তার নাম বাদ যাবে কি না! যদিও তাকে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা আশ্বস্ত করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যতদিন থাকবে ততদিন কারো নাম বাদ যাবে না। 

তিনি জানান, হাসিনা বেগম ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তার নাম নেই। সেই আতঙ্কে তিনি ভুগছিলেন। সোমবার সকালে তার হার্ট অ্যাটাক হয় এবং সেই কারণে মৃত্যু হয়েছে। এর জন্য দায়ী কেন্দ্র সরকার। 

এদিন সন্ধ্যায় মৃত হাসিনা বেগমের বাড়িতে যান শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি। এসময় তার মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করেন কল্যাণ। 

এই বিষয়ে বিজেপির শ্রীরামপুর সংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূল এখন লাশের রাজনীতি করছে। যে কেউ মারা গেলেই এসআইআর আতঙ্ক বলে দাবি করা হচ্ছে। যারা বৈধ ভোটার তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

অন্যদিকে, সোমবার একইদিনে এসআরআই আতঙ্কে পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে শেখ সিরাজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রামনগর ১ ব্লকের কাঁটাবনি গ্রামে বাড়ি তার। পূর্ব পুরুষরা কেউ বাংলাদেশ বা অন্য কোনো জায়গা থেকে আসেননি বলেই দাবি এলাকাবাসীর। বহুদিন বিদেশেও ছিলেন। বর্তমানে দেশের ফিরে দিঘায় একটি হোটেল খুলেছেন। রবিবার (২ নভেম্বর) কাজগপত্র বার করতে গিয়ে বাবার নাম ভুল দেখেন। তার পর থেকেই বেশ চিন্তায় ছিলেন বলে জানা গেছে। আর সেই আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)। যার প্রথম ধাপে মঙ্গলবার থেকে ‘বুথ লেবেল অফিসার’ (বিএলও)- রা প্রত্যেকটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমারেশন ফর্ম দেবেন। বেশ কয়েকটি ধাপে এই প্রক্রিয়া চলার পর আগামী বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত তার ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। 

পশ্চিমবঙ্গের শেষবার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। সে অর্থে নির্বাচন কমিশনের গাইড লাইন অনুযায়ী, ভারতীয় ভোটারদের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু তার আগেই এসআইআর আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসেছে একাধিক মানুষের মনে। তাদের ধারণা ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে হয় ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা হতে পারে, না হয় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। আর এই আশঙ্কা থেকেই গোটা রাজ্যে গত এক সপ্তাহে পাঁচটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি তৃণমূলের। 

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার প্রথম ঘটনাটি ঘটে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আগরপাড়ায়, মৃত্যু হয় ৫৭ বছর বয়সী প্রদীপ করে। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে বীরভূম জেলার ইলামবাজারে, ৯৫ বছর বয়সী ক্ষিতীশ মজুমদারের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কোতোয়ালিতে হলেও নিজের মেয়ের বাসায় গিয়ে বিষপান করেন। তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে পূর্ব বর্ধমান জেলার নবগ্রামে, মৃত্যু হয় বিমল সাঁতরার। এছাড়াও কোচবিহার জেলার দিনহাটায় বিষপান করে নিজের জীবন শেষ করেন ৬৩ বছর বয়সী খাইরুল শেখ নামে এক ব্যক্তি। 

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন আতঙ্কে ফের মৃত্যুর অভিযোগ