হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা জামাতার, ধরা পড়ে শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সংঘাত
Published: 22nd, October 2025 GMT
ছেলেকে অপহরণের হুমকি দিয়ে বাবার কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেছিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় এক মাস আগে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরামর্শে হুমকিদাতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন তাঁরা। শেষে ৫ লাখ টাকায় রফা হয়।
রাতে নির্ধারিত জায়গায় টাকার ‘ডামি’ ব্যাগ রেখে সবাই আড়ালে ছিলেন। টাকা নিতে সেখানে আসেন এক ব্যক্তি। তখন হাতেনাতে তাঁকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিকে দেখে তাঁরা হতবাক—তিনি যে তাঁদের জামাতা। এরপর ওই ব্যক্তিকে মারধর করে শ্বশুরবাড়িতে নেওয়া হয়। ১৫ অক্টোবর রাতে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।
আটক ওই ব্যক্তির নাম রাসেল আহাম্মেদ। তিনি উপজেলার দক্ষিণ পাকুরিয়া গ্রামের মোক্তার আলীর ছেলে। তাঁর শ্বশুরবাড়ি উপজেলার একডালা গ্রামে। আটক করার পর রাসেল স্বীকার করেন, শ্যালকের ছেলেকে অপহরণের হুমকি দিয়ে তিনি টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছেন। পরে সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে শ্বশুরবাড়ি থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ঘটনার মোড় পাল্টে যায়। হাসপাতালে ভর্তি হন রাসেল। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি অপহরণের অভিযোগে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। আদালত থানার ওসিকে মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। এতে রাসেলের শ্যালক ও শ্বশুরসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।
অন্যদিকে শাহিদুল ইসলাম তাঁর বোনজামাই রাসেল আহাম্মেদের বিরুদ্ধে থানায় একটি এজাহার দেন। তবে কালাই থানা–পুলিশ দুজনের কারও মামলা নথিভুক্ত করেনি।
থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একডালা গ্রামের শাহিদুল ইসলামের হোয়াটসঅ্যাপে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। এই টাকা না দিলে তাঁর ছেলে শাহরিয়ারকে (৭) অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় শাহিদুল ইসলাম গত ২৭ সেপ্টেম্বর থানায় একটি জিডি করেন। এরপর শাহিদুলকে টাকার জন্য আবারও হুমকি দেওয়া হয়। শাহিদুল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঘটনাটি জানান। শাহিদুলের সঙ্গে হুমকিদাতার শেষমেশ ৫ লাখ টাকায় রফা হয়। শাহিদুলকে ভাবকী গ্রামের ইটাখোলা-নিশ্চিন্তা যাওয়ার রাস্তার তিন মাথা মোড়ে গত বুধবার রাতে টাকা রাখতে বলা হয়। শাহিদুল ও তাঁর স্বজনেরা ঘটনাটি থানা–পুলিশকে জানায় এবং টাকার ‘ডামি’ ব্যাগ রেখে আড়ালে থাকেন। রাত ১০টার দিকে সেখানে এসে ব্যাগ নেওয়ার সময় স্বজনেরা হাতেনাতে রাসেল আহাম্মেদকে ধরে ফেলেন। সেখানে তাঁরা তাঁকে মারধর করেন এবং তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যান।
পরদিন স্থানীয় ইউপি সদস্য হাসান আলীর মধ্যস্থতায় রাসেলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রাসেল জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। গত রোববার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি আদালতে মামলা করেন। এর আগেই রাসেল আহাম্মেদের শ্যালক শাহিদুল কালাই থানায় একটি এজাহার দেন।
রাসেল আহাম্মেদ এখন নিজ বাড়িতে আছেন। আজ বুধবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্ত্রীর সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব চলছিল। টাকা চাওয়ার নাটক সাজিয়ে মায়ের ওষুধ কিনতে ফেরার সময় রাতের বেলায় আমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি এনে হত্যার ভয় দেখিয়ে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে। এ কারণে ঘটনার কথা স্বীকার করেছি। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করেছি। পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হুমকিদাতার সঙ্গে রফাদফা হওয়ার পর আমরা ১৫ অক্টোবর রাতে নির্ধারিত স্থানে টাকা রেখে আড়ালে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি টাকা নিতে ওই স্থানে আসে। আমরা অন্ধকারের ভেতর তাঁকে জাপটে ধরে ফেললে দেখি আমার বোন জামাই রাসেল। গতকাল রাতে আমরা নিজেরাই আপস করেছি।’ তবে রাসেল আহাম্মেদ বলেন, ‘তাঁরা আমার কাছে টাকা চান। এ কারণে আপস করিনি।’
কালাই থানার ওসি জাহিদ হোসেন বলেন, ‘শাহিদুলের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। তখন এ ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছিল। আমরা মুঠোফোনের নম্বরটি শনাক্ত করতে পারিনি। নির্ধারিত জায়গায় টাকা নিতে গিয়ে রাসেল আহাম্মেদকে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন ধরে ফেলেন। এ ঘটনায় রাসেল আহাম্মেদ আদালতে মামলা করেছেন। রাসেলের শ্যালক থানায় একটি এজাহার দিয়েছেন। আদালতের আদেশের কপি থানায় পৌঁছেছে। এখনো মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়নি। দ্রুত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স ল আহ ম ম দ শ হ দ ল ইসল ম থ ন য় একট অপহরণ র এ ঘটন য় ক ত কর শ য লক
এছাড়াও পড়ুন:
‘বিত্তশালী’ ভেবে অপহরণ, এরপর যা হলো
চট্টগ্রামে সড়কে গাড়ির গতিরোধ করে ‘বিত্তশালী’ ভেবে এক ব্যক্তিকে অপহরণের পর দাবি করা হয় সাড়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ। কিন্তু যাঁকে অপহরণ করা হয়েছে তাঁর দাবি, তিনি পেশায় দিনমজুর। মুক্তিপণের টাকা দিতে পারছিলেন না। বিষয়টি জানার পর অভিযানে নামে র্যাব।
অবশেষে র্যাবের অভিযানে ধরা পড়ে দুই অপহরণকারী। গতকাল বৃহস্পতিবার জেলার হাটহাজারীর নজুমিয়া হাট এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁরা হলেন মো. আজম ও আবু সামা। উদ্ধার করা হয় অপহরণের শিকার দিনমজুর নাজিম উদ্দিনকে। আজ শুক্রবার বিকেলে র্যাব বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানায়।
র্যাব–৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এ আর এম মোজাফফর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অপহৃতকে অন্যত্র স্থানান্তর করার সময় একটি কারের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় ঘটনায় জড়িত দুজনকে। জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
র্যাব ও পুলিশ সূত্র জানায়, নোয়াখালীর সেনবাগের বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন জীবিকার জন্য নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার মোহাম্মদনগর এলাকায় বসবাস করেন পরিবার নিয়ে। গত রোববার প্রতিদিনের মতো কাজের সন্ধানে বাসা থেকে বেরিয়ে জেলার ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার দরবার শরিফে যান। সেখান থেকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় শহরের বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হন। গাড়িতে তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।
হাটহাজারীর সরকার হাট বাজারে পৌঁছালে গ্রেপ্তার আজম ও তাঁর সহযোগীরা গাড়ি থেকে নামিয়ে তাঁকে অপহরণ করে। এরপর সরকার হাট বাজারের পাশে একটি কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করেন। এগুলোর ছবি নাজিমের স্ত্রীর মুঠোফোনে ইমোতে দেন। সাড়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এ ঘটনায় নাজিমের স্ত্রী নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
বিষয়টি র্যাব জানতে পেরে অপহরণকারীদের খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে গতকাল অপহৃতকে সরকার হাট থেকে নজুমিয়া হাট এলাকা দিয়ে অন্যত্র রাখার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় র্যাব হাতেনাতে ধরে ফেলে। আসামিদের হাটহাজারী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
অপহৃত নাজিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অটোরিকশা থেকে তাঁকে নামানোর সঙ্গে সঙ্গে আমি চিৎকার দিই। তখন অপহরণকারীরা গাড়িচোর বলে আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। প্রথমে আমার কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আমার পেশা দিনমজুর বলা হলেও তারা বিশ্বাস করেনি। দিনমজুর বলার পর মারধরের পরিমাণও বেড়ে যায়। তারা মনে করেছিল আমি ব্যবসায়ী, টাকাওয়ালা।’
র্যাব জানায়, এ ঘটনায় এজাহার মিয়া নামের আরেকজন জড়িত। বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর সহযোগী হিসেবে তিনি পরিচিত। তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।