ভারতে দুই দশকে ১ শতাংশ শীর্ষ ধনীর সম্পদ বেড়েছে ৬২%
Published: 5th, November 2025 GMT
সারা পৃথিবীর মতো ভারতেও ধনী–গরিবের ব্যবধান অনেকটাই বেড়েছে। এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর সম্পদ বেড়েছে ৬২ শতাংশ।
ডয়েচে ভেলের সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতের সমাজ ক্রমেই বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। অক্সফামের সূত্রে তারা জানিয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা খরচ কুলাতে না পেরে প্রতিবছর ভারতের ৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। সরকারের দারিদ্র্য বিমোচনমুখী বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা থাকলেও বাস্তবতা হলো তা যথেষ্ট নয়।
অন্যদিকে ভারতে ধনীদের সংখ্যাও বাড়ছে। অক্সফামের সূত্রে ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ভারতে এখন ১১৯ জন শতকোটিপতির বসবাস, ২০০০ সালে যে সংখ্যা ছিল মাত্র ৯। ফোর্বসের সূত্রে জানা যায়, ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি একসময় বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনীর আসন পেয়েছিলেন। তাঁর আগে ছিলেন কেবল ইলন মাস্ক।
এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষ ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ভারতে জাতি-ধর্ম-বর্ণের ভিত্তিতে বৈষম্য অনেক আগে থেকেই ছিল। কিন্তু এখন যেটা দেখা যাচ্ছে, সেটি হলো অর্থনৈতিক অসমতা। বিশেষ করে গত দুই দশকে এ অসমতা আরও বেড়েছে।
বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ও বড় অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি–২০–এর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০০০ সালের পর বিশ্বে নতুন যত সম্পদ সৃষ্টি হয়েছে, তার ৪১ শতাংশ গেছে এই শীর্ষ ১ শতাংশের হাতে।
শীর্ষ ধনীদের সম্পদ এত বেশি হারে বাড়লে নিচের সারির মানুষের সম্পদ সেভাবে বাড়বে না, এটিই স্বাভাবিক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ সালের পর এই নিচের সারির ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদ বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের নিচের সারির ৫০ শতাংশ মানুষের তুলনায় শীর্ষ ১ শতাংশ মানুষের সম্পদ গড়ে ২ হাজার ৬৫৫ গুণ বেড়েছে। ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাবের উপাত্ত ব্যবহার করে এ তথ্য দিয়েছে জি–২০।
এ পরিস্থিতিতে জি–২০–এর টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অসমতাবিষয়ক নতুন প্যানেল গঠনে ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেইঞ্জের মডেল ব্যবহার করা উচিত। এই প্যানেলের কাজ হবে অসমতার কারণ ও প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা, সরকার ও নীতিপ্রণেতাদের পরামর্শ দেওয়া। কেননা অসমতার কারণে গণতন্ত্র ও রাজনীতি বিনষ্ট হয়।
প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, যেসব দেশে উচ্চ অসমতা আছে, সেসব দেশে গণতন্ত্রের পশ্চাৎপসরণ ঘটছে। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ জাসেফ স্টিগলিতস বলেছেন, অসমতা শুধু অন্যায্য বা সে কারণে কেবল সামাজিক সংগতি বিনষ্ট হচ্ছে বিষয়টি তেমন নয়, বরং অসমতা আমাদের রাজনীতি ও অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর। বৈশ্বিক অসমতা নিয়ে জোসেফ স্টিগলিতস বরাবরই উচ্চকণ্ঠ।
বর্তমানে জি–২০ জোটের সভাপতি দক্ষিণ আফ্রিকার সভাপতি সিরিল রামাফোসা। তিনি স্টিগলিতসের নেতৃত্বে এক্সট্রা–অর্ডিনারি কমিটি অব ইন্ডিপেনডেন্ট এক্সপার্টস অন গ্লোবাল ইনইকুয়ালিটি গঠন করেছেন। চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত রামাফোসা জি–২০–এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর সভাপতিত্বের ভার যাবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে।
প্রতিবেদনে কোভিড–১৯, ইউক্রেন যুদ্ধ ও বাণিজ্যবিরোধের মতো বিষয়গুলোকে প্রকৃত অর্থেই ‘ঝড়ের’ সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ ধরনের ঝড় এলে দারিদ্র্য ও অসমতা পরিস্থিতির কেবল অবনতিই ঘটবে।
আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের শতকোটিপতিদের সম্পদ ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে, কিন্তু একই সঙ্গে প্রতি চারজনে একজন মানুষ নিয়মিতভাবেই কম খাবে।
২০২০ সালের পর থেকেই বিশ্বে দারিদ্র্য হ্রাসের গতি কমে গেছে। এতটা কমে গেছে যে দারিদ্র্য হ্রাসের বিষয়টি একরকম স্থবির হয়ে পড়েছে। ২০১৯ সালে যেখানে ৩৩ কোটি ৫০ লাখ মাঝারি থেকে তীব্র মাত্রায় খাদ্যসংকটের মুখে ছিল, এখন তা বেড়ে ২৩০ কোটিতে উঠেছে।
মার্কিন ধনীদের সম্পদ বেড়েছেএদিকে ভারতের মতো মার্কিন শীর্ষ ধনীদের সম্পদ গত এক বছরে অনেকটাই বেড়েছে। অঙ্কটা দেখলে অনেকেরই চোখ কপালে উঠতে পারে। সম্পদবৈষম্য নিয়ে অক্সফামের নতুন প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর শীর্ষ ১০ মার্কিন শতকোটিপতির সম্পদ বেড়েছে ৬৯৮ বিলিয়ন বা ৬৯ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। খবর দ্য গার্ডিয়ান
বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৮৫ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারের বাজেট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ বাংলাদেশের বাজেটের প্রায় ১০ দশমিক ৮ গুণ সম্পদ বেড়েছে এই ধনীদের।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নীতি গ্রহণ করেছেন, তার জেরে মার্কিন সমাজের অসমতা নতুন উচ্চতায় উঠেছে। তবে তাঁরা শুধু ট্রাম্প প্রশাসন নয়, এ ক্রমবর্ধমান অসমতার জন্য ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—উভয় গোষ্ঠীকেই দায়ী করেছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শুল্কের বিরোধীরা ‘মূর্খ’, রাজস্ব থেকে মার্কিনদের ২০০০ ডলার ‘লভ্যাংশ’ দেওয়া দেওয়া হবে: ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও তাঁর শুল্ক আরোপের নীতির পক্ষে সাফাই গাইলেন। দাবি করলেন, এই কঠোর শুল্ক আরোপের ফলেই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের ‘সবচেয়ে ধনী’ এবং ‘সবচেয়ে সম্মানিত’ দেশে পরিণত হয়েছে।
বিরোধীদের ‘মূর্খ’ আখ্যা দিয়ে প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, ধনী ব্যক্তিরা ছাড়া প্রত্যেক মার্কিন নাগরিক শিগগিরই তাঁর প্রশাসনের সংগৃহীত শুল্ক রাজস্ব থেকে কমপক্ষে ২ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা) করে পাবেন।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন কয়েক দিন আগেই মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের ব্যাপক শুল্কনীতির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই মামলার ফলাফল বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং এটি ট্রাম্পের ক্ষমতাকে এক বড় পরীক্ষায় ফেলতে পারে।
কী বললেন ট্রাম্পট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘যারা শুল্কের বিপক্ষে তারা মূর্খ। আমরা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী, সবচেয়ে সম্মানিত দেশ, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি প্রায় নেই। পুঁজিবাজারের মূল্য রেকর্ড পর্যায়ে। ৪০১কে’এস সর্বোচ্চ। আমরা লাখ লাখ ডলার নিচ্ছি এবং খুব শিগগির আমাদের বিশাল ঋণ ৩৭ লাখ কোটি ডলার পরিশোধ শুরু করব।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে, সর্বত্র নতুন নতুন প্ল্যান্ট ও কারখানা তৈরি হচ্ছে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে (উচ্চ আয়ের মানুষ বাদে) কমপক্ষে ২ হাজার ডলার লভ্যাংশ দেওয়া হবে।’
ট্রাম্প আরও দাবি করেন, তার শুল্কনীতির কারণে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু শুল্কের কারণেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ভিড় করছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর এমন কাজের ন্যায্যতা প্রমাণেরও চেষ্টা করেন। পাশাপাশি তিনি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পরিধি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘তাহলে আসুন ব্যাপারটা পরিষ্কার করা যাক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে একটি দেশের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করার (যা শুল্কের চেয়ে অনেক বেশি কঠোর) এবং একটি দেশকে লাইসেন্স দেওয়ার অনুমতি দেওয়া আছে (যা কংগ্রেসের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে অনুমোদিত)। অথচ জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে একটি দেশের ওপর প্রেসিডেন্টের সাধারণ শুল্ক আরোপের অনুমতি দেওয়া হয়নি।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও লিখেছেন, ‘আমাদের মহান প্রতিষ্ঠাতাদের মনে এমনটা ছিল না। পুরো বিষয়ই হাস্যকর। অন্যান্য দেশ আমাদের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারে। কিন্তু আমরা তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারি না। এটি তাদের স্বপ্ন। শুধু শুল্কের কারণেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রে আসছে।’ তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টকে কি এটা জানানো হয়নি? কী হচ্ছে এসব?’
ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টগত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের রক্ষণশীল ও উদারপন্থী বিচারপতিরা ট্রাম্পের প্রশাসনের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীকে তীব্রভাবে প্রশ্ন করে জানতে চান, জাতীয় জরুরি অবস্থার সময় ব্যবহারের জন্য তৈরি করা ১৯৭৭ সালের আইনের অধীন শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের ক্ষমতাকে অতিক্রম করেছেন কি না।
বিচারপতিদের এ প্রশ্নের পর ট্রাম্প এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
তবে কিছু রক্ষণশীল বিচারপতিও ইঙ্গিত দেন, তাঁরা অন্য দেশের সঙ্গে লেনদেনে প্রেসিডেন্টের অন্তর্নিহিত ক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথাও ভাবছেন। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, মামলার ফলাফলে আদালত তীব্রভাবে বিভক্ত হতে পারে। আদালতে ৬-৩ ব্যবধানে রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
শুনানি চলাকালে বিচারপতিরা মার্কিন সলিসিটর জেনারেল ডি জন সাউয়ারকে প্রশ্ন করেন, সময়সীমা ছাড়া শুল্ক আরোপে ট্রাম্পের এই আইনের প্রয়োগ নির্বাহী বিভাগের বড় কোনো পদক্ষেপ ছিল কি না। এর জন্য কংগ্রেসের স্পষ্ট অনুমোদন প্রয়োজন কি না।
এই শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প আইনের নির্দিষ্ট ক্ষমতাকে অতিক্রম করেছেন বলে নিম্ন আদালত রায় দেন। এরপরই প্রশাসনের আপিলের ভিত্তিতে এই বিতর্ক শুরু হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী এবং ১২টি রাজ্য এই শুল্ককে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। এসব রাজ্যের বেশির ভাগই ডেমোক্র্যাট–শাসিত।