ছিনিয়ে নেওয়ার ৩ দিন পর চরমপন্থী নেতা নাসিম গ্রেপ্তার
Published: 22nd, June 2025 GMT
পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেওয়ার তিন দিনের মাথায় অবশেষে খুলনার পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা মো. নাসিমুল গণি ওরফে নাসিমকে (৫৬) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রবিবার (২২ জুন) ভোরে খুলনার খালিশপুর মুজ্গুনী পার্ক এলাকার একটি চারতলা ভবন থেকে গোয়েন্দা পুলিশের সহযোগিতায় দিঘলিয়া থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ প্রায় এক ডজন মামলা রয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ গত ২০ জুন পুলিশের উপর হামলা এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় তাকে প্রধান আসামি করা হয়। তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এইচ এম শাহীন।
নাসিম দিঘলিয়া উপজেলার ফরমাইশখানা এলাকার বাসিন্দা মৃত আ.
পুলিশ জানায়- নাসিমের বিরুদ্ধে দিঘলিয়া, দৌলতপুর, সোনাডাঙ্গা, বাগেরহাটের ফকিরহাট, হরিণটানাসহ বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে খুলনার আলোচিত গণেশ হত্যা, হুজি শহীদ, মুন্না, ইকবাল হুজুর, ফকিরহাটের জাহিদ চেয়ারম্যান হত্যা মামলাসহ চাঁদাবাজি, অপহরণ, ডাকাতি, অস্ত্র কেনাবেচাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলায় ১৭ বছর এবং অপর একটি হত্যা মামলায় ৩২ বছরের কারাদণ্ডাদেশ রয়েছে।
নাসিম ২০০২ সালে গণেশ হত্যা মামলায় আটক হওয়ার পর আদালত থেকে জামিন নেন। খুলনার বিএল কলেজ গেটে ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ৭নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা রিয়াজ শাহেদ হত্যা প্রচেষ্টা মামলারও আসামি তিনি।
সর্বশেষ গত বুধবার (১৮ জুন) সন্ধ্যার দিকে খুলনার দিঘলিয়া থানার একটি টিম ওসি তদন্ত ও সেকেন্ড অফিসার এসআই তারেকের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও একাধিক হত্যা মামলার আসামি নাসিমকে গ্রেপ্তারের জন্য উপজেলার ফরমাইশখানা ঘোলারঘাট এলাকায় গেলে তার অনুসারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে নাসিমকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসময় পুলিশের তিন জন সদস্য সামান্য আহত হন।
এ ঘটনার পর দিঘলিয়া থানা পুলিশ ও যৌথ বাহিনী গোটা এলাকায় অভিযান শুরু করলেও নাসিমকে আটক করতে পারেনি। তবে রেজাউল ও আল মামুন নামে নাসিম বাহিনীর দুই সদস্যকে আটক করে পুলিশ।
এ বিষয়ে দিঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এইচ এম শাহীন বলেন, “উপজেলা ফরমাইশ খানা গ্রামে চরমপন্থী নেতা নাসিমকে আটক করতে গেলে তার বাহিনী পুলিশের উপর চড়াও হয়ে নাসিমকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসময় নাসিমের বাহিনীর সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ব্যাপারে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় ১৯ জুন মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় নাসিমসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২৫/৩০ জনকে আসামি করা হয়।”
তিনি আরো বলেন, “এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত রেজাউল ও আলামিনকে বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তবে, সর্বশেষ খুলনার খালিশপুর মুজগুন্নি এলাকার একটি চারতলা ভবনের নিচতলায় নাসিমের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে রবিবার ভোরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চরমপন্থী নেতা নাসিম দুই বছর আগে এলাকায় ফিরে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাবেক এমপি আব্দুস সালাম মুর্শিদী এবং শেখ পরিবারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেন। তিনি দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বলেও এলাকায় প্রচার রয়েছে।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত র কর উপজ ল সদস য র একট
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতির উপাত্ত যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য হয়
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে বাংলাদেশে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, সেটার উপাত্তগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য হয়। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সামনের সারিতে থাকলেও এ উপাত্তগুলোকে জলবায়ুর পরিবর্তনের অভিঘাতের সঙ্গে সম্পর্কিত করতে হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে নানামুখী ক্ষয়ক্ষতির পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন এবং সেগুলো সংরক্ষণ করে যেতে হবে।
আজ বুধবার রাজধানীতে অক্সফাম আয়োজিত ‘ফ্রম গ্রাউন্ড টু গ্লোবাল: দ্য লস অ্যান্ড ড্যামেজ ড্যাশবোর্ড ফর ক্লাইমেট ইকুইটি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে যে প্রাণহানি, জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বিলুপ্তিকে লস (অ-আর্থিক ক্ষতি) বলা হয়। আর জলবায়ুর অভিঘাতে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরবাড়ি, অবকাঠামো, ফসলের ক্ষয়ক্ষতিকে ড্যামেজ (আর্থিক ক্ষতি) হিসেবে গণ্য করা হয়।
২০১৩ সালে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলনে লস অ্যান্ড ড্যামেজ প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। ২০২২ সালে মিসরে অনুষ্ঠিত কপ-২৭–এ লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে একটি ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সে ফান্ডে প্রাথমিকভাবে উন্নত বিশ্বের চারটি দেশ ৪০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বিজ্ঞানভিত্তিক উপাত্ত সংগ্রহে অক্সফাম একটি উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে ব্যক্তি পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত যে কেউ ক্ষয়ক্ষতির উপাত্ত দিতে পারবে।
প্রমাণ তৈরিতে উপাত্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এখানে একেক সংস্থা একেকভাবে উপাত্ত তৈরি করে। লস অ্যান্ড ড্যামেজের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে আমাদের মানদণ্ড সাযুজ্যপূর্ণ হচ্ছে কি না, সেটা দেখতে হবেরউফা খানম, সহকারী পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বলেন, বাংলাদেশসহ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করছে। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে পাঁচটি বড় বন্যাসহ ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; দেশের ৩০ শতাংশ ভূমি প্লাবিত হয়েছে।
সুইডিশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং অ-অর্থনৈতিক ক্ষতিও ভয়াবহ—যেমন প্রাণহানি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিলুপ্তি এবং পূর্বপুরুষের ভূমি ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়ার মানসিক আঘাত। এসব ক্ষয়ক্ষতির নানামুখী দিক পর্যবেক্ষণে রাখা, মূল্যায়ন করা এবং সেগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতির ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে উদ্ভাবিত ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ড্যাশবোর্ড’কে সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেন নিকোলাস উইকস। এই ড্যাশবোর্ড ক্ষয়ক্ষতির একটি দালিলিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে বলে জানান তিনি।
নিকোলাস উইকস জানান, সুইডেন ২০২৪ সালে রেকর্ড পরিমাণ ১২০ কোটি ডলার জলবায়ু সহায়তা দিয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া দেশটি গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের সহসভাপতি হিসেবে জলবায়ু অর্থায়নের দক্ষতা ও ফলপ্রসূতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। গত বছর দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত কপ-২৯ সম্মেলনে সুইডেন জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার জন্য গঠিত বৈশ্বিক তহবিলে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার অনুদান দেয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সদস্যসচিব শরীফ জামিল বলেন, আর্থিক ও অ-আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব একই পদ্ধতিতে করলে হবে না। দুটোর ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করতে হবে দুটি ভিন্ন পদ্ধতিতে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বিজ্ঞানভিত্তিক উপাত্ত সংগ্রহে অক্সফাম একটি উদ্যোগ নিয়েছে