নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় নিখোঁজের তিন দিন পর গ্রামের একটি পুকুর থেকে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁর নাম কামরুল হুদা (৪০)। স্থানীয় লোকজনের তথ্যের ভিত্তিতে আজ রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সোনাইমুড়ী থানার পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।

পুলিশ জানায়, নিহত ব্যক্তি উপজেলার বারগাঁও ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লা পাড়ার মোস্তফা মেম্বারের ছেলে। উদ্ধারের পর তাঁর লাশ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য সন্ধ্যায় নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কামরুল হুদার সঙ্গে বাড়ির জায়গা-জমি নিয়ে তাঁর চাচাতো ভাই আবদুর রহিমদের বিরোধ ছিল। ওই বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সম্প্রতি মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় উভয় পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে আবদুর রহিমের করা মামলার আসামি আবুল বাসারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে কামরুল হুদাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে আজ দুপুরের পর নিজ বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের একটি পুকুরের কোমরসমান পানির মধ্যে একটি লাশ ভাসতে দেখেন আশপাশের লোকজন। পরে পরিবারের সদস্যরা গিয়ে সেটি কামরুল হুদার বলে শনাক্ত করেন।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

মোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, কামরুল নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর মা মফিজা খাতুন গতকাল শনিবার রাতে থানায় এসে লিখিত অভিযোগ। পরে আজ দুপুরে তাঁরা খবর পান, নিখোঁজ কামরুলের লাশ একই ওয়ার্ডের একটি পুকুরে ভাসছে।

ওসি মোরশেদ আলম জানান, যে পুকুর থেকে কামরুলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেটিতে কোমরপানি। পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, কামরুল ভালোভাবে সাঁতার জানতেন। তাই তিনি পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার কথা নয়। উদ্ধারের পর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় নিহত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন স্থানে লালচে দাগ দেখা গেছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এ বিষয়ে পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ঘুষে চলে যায় বরাদ্দের অর্ধেক

সড়ক পাকাকরণের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। ঠিকাদার মোট বিলের ৮০ শতাংশ তুলে নিয়ে তিন বছর ধরে লাপাত্তা। এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজ থমকে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। 
এ চিত্র দেখা গেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের। ইতোমধ্যে সড়কে বিছানো খোয়া উঠে গেছে। ধুলাবালি জমে সামান্য বৃষ্টিতে কাদাপানিতে একাকার সড়ক। 
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলম হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কল রিসিভ করলেও তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, কার্যাদেশ পাওয়ার মোট বরাদ্দের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকৌশলী,  অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন জনকে দিতে হয়। কাজ চলাকালে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী সাইটে যান, তাদের ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা হাজিরা হিসাবে দিতে হয়। এভাবে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা চলে যায় ঘুষের পেছনে। যে টাকা থাকে, তা দিয়ে মানসম্মত কাজ করা সম্ভব হয় না। এ কারণে অনেক ঠিকাদার কিছুদিন কাজ করার পর বরাদ্দের টাকা তুলে লাপাত্তা হয়ে যান। কর্তারা তাদের কীভাবে বিল ছাড় করেন, তারাই বলতে পারবেন। অবৈধ আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশল অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বীকার করেননি।
২০২১-২২ অর্থবছরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ৩-এর আওতায় নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৬৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৪ টাকা। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ৬৬ লাখ ১১ হাজার ৮৯৯ টাকায় কার্যাদেশ পায় মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজ। ২০২২ সালের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। এর পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তা শেষ হয়নি।
২০২১ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালিন সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ সড়ক পাকাকরণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর পর ঠিকাদার সড়কের উভয় পাশে মাটি খুঁড়ে বালু ফেলে খোয়া বিছিয়ে দেন। এর মধ্যে সড়কের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। কিন্তু ঠিকাদার ৮০ শতাংশ কাজের বিল তুলে লাপাত্তা। তিন বছর ধরে সড়কটি বেহাল পড়ে আছে। 
সড়কের কাজ শেষ করতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিলেও 
সাড়া মেলেনি। নিরুপায় হয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কার্যাদেশ বাতিল করেছে। এখন চলছে পুনঃদরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া। 
সড়কটি দিয়ে নওগাঁয় হজরত শাহ শরিফ জিন্দানী (র.)-এর মাজার, নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজ, নওগাঁ ফাজিল মাদ্রাসা, নওগাঁ হাটবাজার, নওগাঁ সোনালী ব্যাংক, নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ অফিসে যাতায়াত করতে হয়। 
উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, ‘প্রকল্প পরিচালক সড়কটি পরিদর্শন করেছেন। ঠিকাদার প্যালাসাইডিং, সাববেজ, সেন্ট ফিলিং ও ডব্লিউবিএম করেছে। সে অনুযায়ী বিল পাঠিয়েছি। বাকি কাজ না করায় বেশ কয়েকবার তাগাদা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাড়া না পাওয়ায় ঠিকাদারের চুক্তিপত্র বাতিল করা হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ