ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পক্ষগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার জন্য মন্ত্রিপর্যায়ের যোগাযোগ গ্রুপ গঠন করবে, যার উদ্দেশ্য হবে উত্তেজনা প্রশমনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা এবং ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধ করা।

ইস্তাম্বুলে রবিবার (২২ জুন) ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ ঘোষণায় ৫৭ সদস্যের এই সংস্থা ‘ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসনের’ নিন্দা জানিয়েছে এবং ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করার জরুরি প্রয়োজনীয়তা এবং এই বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ওআইসি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে তারা যেন এই আগ্রাসন বন্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং ইসরায়েলের সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী করে।

আরো পড়ুন:

হরমুজ প্রণালি বন্ধের অনুমোদন ইরানের পার্লামেন্টে

ইসরায়েলি হামলার প্রধান প্ররোচনাকারী যুক্তরাষ্ট্র: ইরান

ওআইসি একটি পৃথক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং এটিকে একটি বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধি বলে বর্ণনা করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন উত্তেজনা অঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে আরো হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শনিবার রাতে (মধ্যপ্রাচ্য সময় ভোরে) ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলও হামলা অব্যাহত রেখেছে। জবাবে ইরান ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছে। এর মধ্যে উত্তেজনা প্রশসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে; তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কারো কথা শুনছে না। তাদের মতো বয়ান তৈরি করে তারা ইরানে হামলা অব্যাহত রেখেছে। ইরান বারবার বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। আন্তর্জাতিক আনবিক সংস্থা-আইএইএ বলেছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর কাছাকাছি বা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে; এমন কোনো প্রমাণ তারা পায়নি। তবে এসব ভাষ্য মানতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের দেশের গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যও খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি ইসরায়েলের অভিযোগকে আমলে নিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র হামলা করার পর ইরান এখন কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়, তার ওপর পরিস্থিতির বাঁক কোন দিকে যায়, সেটি নির্ভর করছে। এরই মধ্যে ইরানের পার্লামেন্টে হরমুজ প্রাণালি বন্ধের প্রস্তাব পাশ হয়েছে। মুহুর্তে মুহূতে পরিস্থিতি নতুন বাঁক নিচ্ছে। 

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল য ক তর ষ ট র ইসর য় ল ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিদিনের কাজে লাগবে কোরআন থেকে এমন কিছু

কোরআন সম্পর্কে একটি প্রচলিত ধারণা হলো এটি একটি উচ্চমার্গের ধর্মীয়, নৈতিক, ঐতিহাসিক বই, যাতে বড় বড় জটিল ব্যাপারগুলোই শুধু বলা আছে। দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে এমন সাধারণ ব্যাপারগুলোর জন্য কোরআন নয়। যেমন আমরা কীভাবে কথা বলব, কীভাবে বেড়াতে যাব, কীভাবে বাচ্চাদের বিছানা দেব—এসব খুঁটিনাটি সাধারণ দৈনন্দিন ব্যাপারের জন্য কোরআন নয়।

আসলে কী তা-ই? দেখা যাক মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ্ নিজে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার জন্য কত কিছু শিখিয়েছেন।

কথা বলা

মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় ভদ্র, মার্জিতভাবে উত্তম কথা বলবে। ২: ৮৩।

সত্য কথা বলবে। ভণিতা না করে, ধোঁকা না দিয়ে, স্পষ্ট বলবে। ৩৩: ৭০।

চিৎকার করবে না। কর্কশভাবে কথা বলবে না, নম্রভাবে নিচু স্বরে কথা বলবে। ৩১: ১৯।

সত্যি মনোভাবটা মুখে প্রকাশ করবে। মনে এক, মুখে উল্টো কথা বলবে না। ৩: ১৬৭।

ফালতু কথা বলবে না এবং অন্যের ফালতু কথা শুনবে না। যারা ফালতু কথা বলে, অপ্রয়োজনীয় কাজ করে সময় নষ্ট করে, তাদের কাছ থেকে সরে যাবে। ২৩: ৩।

কাউকে নিয়ে উপহাস, টিটকারি ব্যঙ্গ করবে না। ৪৯: ১১।

অন্যকে নিন্দা করবে না, কারও মানহানি করবে না। ৪৯: ১১।

কাউকে কোনো বাজে নামে ডাকবে না। ৪৯: ১১।

কারও অনুপস্থিতিতে তার নামে কোনো বাজে কথা বলবে না।। ৪৯: ১২।

অন্যকে কিছু সংশোধন করতে বলার আগে অবশ্যই তা নিজে মানবে। কথার চেয়ে কাজের প্রভাব বেশি। ২: ৪৪।

মানুষকে বিচক্ষণভাবে, মার্জিত কথা বলে আল্লাহর পথে ডাকবে। তাদের সঙ্গে অত্যন্ত ভদ্র, শালীনভাবে যুক্তি-তর্ক করবে। ১৬: ১২৫।

মিথ্যা কথা বলবে না। ২২: ৩০।

যদি কোনো ব্যাপারে তোমার সঠিক জ্ঞান না থাকে, তা হলে সে ব্যাপারে মুখ বন্ধ রাখো। তোমার মনে হতে পারে, এসব সামান্য ব্যাপারে সঠিকভাবে না জেনে কথা বললে অত সমস্যা নেই, কিন্তু তুমি জানো না, সেটা হয়তো আল্লাহর কাছে কোনো ভয়ংকর ব্যাপার। ২৪: ১৪-১৬।

আরও পড়ুনকোরআনের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে ‘কোরআন জার্নালিং’২২ জুলাই ২০২৫আচার-ব্যবহার

মার্জিত পোশাক পরবে। ৭: ২৬।

মার্জিত পোশাক পরে প্রার্থনা করবে। ৭: ৩১।

প্রয়োজনের বেশি খাবার খাবে না, পান করবে না। ৭: ৩১।

নিজেই নিজের গুণ জাহির করে অন্যের কাছে ভালো সাজার চেষ্টা করবে না। ২০: ২১।

কারও সঙ্গে ফুটানি করবে না, নিজেকে নিয়ে গর্ব করবে না। ৩১: ১৮।

দেমাগ দেখিয়ে চলাফেরা করবে না। ১৭: ৩৭।

তাড়াহুড়ো করবে না, খুব ধীরতাও নয়; মধ্যম-স্বাভাবিক গতিতে চলাফেরা করবে। ৩১: ১৯।

বিনয়ের সঙ্গে চলাফেরা করবে। ২৫: ৬৩।

বেশি অনুমান করবে না, কিছু অনুমান আছে যেটা করা গুনাহ। আন্দাজে ঢিল মারবে না। একে অন্যের উপর গুপ্তচরগিরি করবে না। ৪৯: ১২।

কারও অনুমতি ছাড়া তার ঘরে কখনো ঢুকে পড়বে না। ২৪: ২৭।

কারও সঙ্গে দেখা হলে তাকে সুন্দরভাবে সম্ভাষণ জানাবে, সালাম দেবে। কেউ তোমাকে সম্ভাষণ জানালে তাকে তার চেয়েও ভালোভাবে উত্তর দেবে। নতুবা অন্তত সে যেভাবে জানিয়েছে, সেভাবে জানাবে। ৪: ৮৬।

যখন তুমি নিজের ঘরে আসবে বা অন্য কারও ঘরে যাবে, ঘরে যারা আছে তাদের সুন্দর সম্ভাষণ জানাবে, সালাম দেবে এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করবে।। ২৪: ৬১।

কেউ ভুলে দোষ করে ক্ষমা চাইলে এবং নিজেকে সংশোধন করলে তাকে আগ্রহ নিয়ে, কোনো রাগ চেপে না রেখে ক্ষমা করে দেবে। ৬: ৫৪, ৩: ১৩৪।

অজ্ঞ, বর্বর, বিপথগামী লোকজন অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, খামোখা যুক্তি-তর্ক করতে গেলে তাদের সালাম/শান্তি বলে সরে যাবে। ২৫: ৬৩।

আল্লাহ যাদের বেশি দিয়েছেন, তাদের হিংসা করবে না। ৪: ৫৪।

নীতি–নৈতিকতা

সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঘোলা করবে না এবং জেনে-শুনে সত্য গোপন করবে না।। ২: ৪২।

নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে আগে ঠিক করো। ৬৬: ৬।

কারও কোনো উপকার করলে, তা তাকে মনে করিয়ে কষ্ট দেবে না।। ২: ২৬২

কারও উপকার করলে তার বিনিময়ে তার কাছ থেকে কোনো উপকার, এমনকি ধন্যবাদও আশা করবে না। ৭৬: ৯।

কাউকে কথা দিলে অবশ্যই কথা রাখবে। তোমার প্রত্যেকটা অঙ্গীকারের ব্যাপারে তোমাকে জিজ্ঞেস করা হবে। ১৭: ৩৪।

যারা ভালো কাজ করছে, তাদের ভালো কাজে সাহায্য করবে, উৎসাহ দেবে, তাদের সঙ্গে ভালো কাজে যোগ দেবে। খারাপ কাজে কাউকে কোনো ধরনের সাহায্য করবে না। ৫: ২।

যারা ফাজলামি, ছ্যাবলামি করে তাদের কাছ থেকে নিজের সম্মান বজায় থাকতে সরে যাবে। ২৫: ৭২।

নোংরামি, অঙ্গীল কাজের ধারে কাছেও যাবে না, সেটা গোপনে হোক, আর প্রকাশ্যে। ৬: ১৫১।

বিপরীত লিঙ্গের প্রতি দৃষ্টি নত রাখো, কামদৃষ্টি নিয়ে তাকাবে না, এক পলকের জন্যও নয়। ২৪: ৩০, ২৪: ৩১।

কারও সম্পর্কে খারাপ কিছু শুনলে তার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখো, যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি তার সম্পর্কে সঠিক তথ্য না পাচ্ছ। অন্যদের নির্দোষ হিসেবে নেবে, যতক্ষণ না তার দোষ প্রমাণিত হয়। ২৪: ১২ ।

পবিত্র, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। ৯১: ০৮, ৪: ৪৩, ৫: ৬।

খারাপ কেউ তোমাকে কোনো খবর দিলে সেটা ভালো করে যাচাই করে নিশ্চিত হও, যাতে করে তুমি এমন কিছু করে না ফেলো, যার জন্য তোমাকে পরে পস্তাতে হয়। ৪৯: ৬।

তোমার যা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই, তার অন্ধ অনুসরণ করবে না; কারণ, আল্লাহর আদালতে তোমার দৃষ্টি, শ্রবণ এবং হৃদয়- এই সবকিছুর বিচার করা হবে। ১৭: ৩৬।

আরও পড়ুনকোরআন থেকে ইতিহাস ও বাস্তবতার নিয়ম বোঝা২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যারা আল্লাহর বাণীকে গুরুত্ব দেয় না, তা নিয়ে অবহেলা করে, হাসি-ঠাট্টা করে তাদের কাছ থেকে সরে যাবে। ৬: ৭০। যতক্ষণ তারা অন্য প্রসঙ্গে কথা না বলে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে বসবে না। ৪: ১৪০।

ঘুষ খাবে না এবং ঘুষ দেবে না। ২১: ৮৮।

অন্যের টাকা-পয়সা, সম্পত্তি জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে দখল করবে না। ২: ১৮৮

অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান সংস্থানের জন্য যাদের আনুগত্য করছ, তাদের কোনো ক্ষমতাই নেই তোমাকে কিছু দেবার শুধু আল্লাহর কাছে চাও। ২৯: ১৭।

জাতি-বর্ণ-ভাষা-যোগ্যতা ইত্যাদির বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও মানুষকে সম্মান করবে। ১৭: ৭০।

জাতীয়তা-বর্ণ-ভাষা-যোগ্যতা নির্বিশেষে বিশ্বাসীরা সবাই ভাই-ভাই, বোন-বোন। তোমরা সবাই একই পরিবারের সদস্যের মতো একে অন্যের ভাই-বোন হিসেবে থাকবে। ৪৯: ১০।

পারিবারিক ও আত্মীয়তার সম্পর্ক

খাবারের দাওয়াত পেলে যখন যেতে বলেছে, তখনই যাবে, বেশি আগে যাবে না। খাওয়া হয়ে গেলে দেরি না করে চলে আসবে—যাতে তাদের অসুবিধা না হয়।। ৩৩: ৫৩।

কথা বলার সময় কারও পক্ষপাতিত্ব করবে না, সেটা যদি নিকট আত্মীয়ের বিরুদ্ধেও হয়। ৬: ১৫২।

বাবা-মার সব ব্যাপারে সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবস্থা নেবে।। ২:৮৩।

বাবা-মার সঙ্গে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক রাখবে, ভালো ব্যবহার করবে। ৪: ৩৬।

কাছের আত্মীয়দের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখবে। ২: ৮৩, ৪: ৩৬।

এতিম এবং অভাবী মানুষদের সাহায্য করবে। ২: ৮৩, ৪: ৩৬।

বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক রাখবে। ৪: ৩৬।

বিপদে পড়া পথিক-যাত্রীদের সাহায্য করবে। ৪: ৩৬।

যারা তোমার অধীন বা দাস-দাসী, তাদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করবে। ৪: ৩৬।

সুতরাং শুরুর প্রশ্নটি, আমার কাজে লাগবে এমন কিছু কোরআনে আছে কি? এর উত্তরে কোরআনের এই আয়াতটি যথেষ্ট: ‘আমি তোমাকে (মুহাম্মাদ) কিতাবটি পাঠিয়েছি সবকিছু পরিষ্কার করে বর্ণনা করে; যারা আল্লাহর প্রতি অনুগত (মুসলিম) তাদের জন্য পথ প্রদর্শক, অনুগ্রহ ও সুসংবাদ হিসেবে।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৮৯)

ওপরের উপদেশগুলো সংশ্লিষ্ট আয়াতের সরাসরি অনুবাদ নয়। বরং যেই আয়াতগুলোর অংশবিশেষ থেকে উপদেশগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে, তা দেওয়া হয়েছে। অনেক সময় আয়াতের অর্থ পড়ে বোঝা যায় না উপদেশটার সঙ্গে মিল কোথায়। চিন্তা করুন, তাফসির পড়ুন, বুঝতে পারবেন।

আরও পড়ুনকোরআন তিলাওয়াতের ১১টি আদব০৯ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ