‘জেনারেল উইন্টার’ ঘিরে পুতিনের নতুন কৌশল
Published: 8th, November 2025 GMT
শীতকাল যতই জাঁকালো হচ্ছে, ইউক্রেনে ততই উৎকণ্ঠা বাড়ছে। গত মাসে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে গঠিত মিত্রদের তথাকথিত জোট ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ এ ব্যাপারে একমত হয়েছে যে তারা ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্য বিপুল পরিমাণ সম্পদ জোগাড় করবে, যাতে বড় শহরগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়, ঘরবাড়ি উষ্ণ রাখা যায়। এ উদ্যোগ কিছুটা ফলও দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে! কেননা, এ বছর শীতের মৌসুম স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অল্প কিছুটা দেরিতে (২৮ অক্টোবর) শুরু হয়েছে।
আগামী মাসগুলোয় ইউক্রেনের ঘরবাড়ি উষ্ণ থাকবে, এখন পর্যন্ত সে ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। রাশিয়ার সেনারা এখনো ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের উদ্দেশ্যে শীত পুরোপুরি নেমে আসার আগেই ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা অকেজো করে দেওয়া।
‘জেনারেল উইন্টার’ বা শীতকাল ছিল নেপোলিয়ন ও হিটলারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাশিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত্র মিত্র। সাম্প্রতিক যুদ্ধেও জেনারেল উইন্টার রাশিয়ার হয়ে লড়ছে। আর সেটা শুধু ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নয়, ইউরোপের বিরুদ্ধেও।
আরও পড়ুনপুতিন একটা মহাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন?২৬ এপ্রিল ২০২৫যুদ্ধে সরাসরি জয়লাভে ব্যর্থ হয়ে এবং আলটিমেটাম দিয়েও কিয়েভকে নতিস্বীকারে ব্যর্থ হওয়ার পর ভ্লাদিমির পুতিন এখন যুদ্ধের ভারকেন্দ্র ইউক্রেনের জ্বালানি ও সরবরাহ অবকাঠামোর দিকে স্থানান্তর করেছেন। প্রথম দৃষ্টিতে এবারও গত দুই শীতকালের পুনরাবৃত্তি হবে বলে মনে হতে পারে; কিন্তু এবার কৌশলটা পাল্টেছে।
২০২২ ও ২০২৩ সালে রাশিয়া ইউক্রেনকে ‘ঠান্ডায় জমিয়ে আত্মসমর্পণ করাতে’ চেয়েছিল। এই কৌশল ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু ইউক্রেনীয়দের মনোবল অক্ষুণ্ন ছিল, অন্ধকার পেরিয়ে আলো ফিরে এসেছিল। এবার পুতিনের হিসাব আলাদা। এবার শুধু ইউক্রেনকে শাস্তি দেওয়া নয়, বরং শীত ও অন্ধকারে মানবিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে ইউরোপকেও অস্থিতিশীল করে তোলা তাঁর লক্ষ্য।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু হলে লাখ লাখ ইউক্রেনীয় ট্রেন, ব্যক্তিগত গাড়িতে ও হেঁটে পশ্চিমে পালিয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটিই ছিল ইউরোপের সবচেয়ে বড় শরণার্থীস্রোত। যদি ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো পুরোপুরি ভেঙে পড়ে, তাহলে নতুন করে আরও বিধ্বংসী হয়ে শরণার্থীঢেউ ফিরে আসতে পারে। এটাই শীতকালকে অস্ত্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে ক্রেমলিনের সবচেয়ে নৃশংস পরিকল্পনা।
বর্তমানে ইউরোপে প্রায় ৫০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে জার্মানি ১২ লাখ ও পোল্যান্ড ৯ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। দুটি দেশের নাগরিকেরা শুরু থেকেই ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের প্রতি উদার ছিলেন, কিন্তু যুদ্ধক্লান্তি ধীরে ধীরে জেঁকে বসেছে, জনমতও বদলে যাচ্ছে।ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমাদের সমস্ত সংহতি থাকা সত্ত্বেও আরেকটি শরণার্থীঢেউ ইউরোপকে ভয়াবহভাবে নাড়া দিতে পারে। সাহায্যের তহবিল যেখানে আগে থেকেই টান ধরেছে, সেখানে ইউরোপের সামনে শুধু অর্থনৈতিক নয়, নৈতিক পরীক্ষাও আসবে। তীব্র শীত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে আসা অসহায় লোকদের ইউরোপীয়রা সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দেবে, নাকি নিজেদের দেশে দেশে বাড়তে থাকা জন–অসন্তোষের মুখে মানবিক দায়িত্ব পালন করবে?
বর্তমানে ইউরোপে প্রায় ৫০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে জার্মানি ১২ লাখ ও পোল্যান্ড ৯ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। দুটি দেশের নাগরিকেরা শুরু থেকেই ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের প্রতি উদার ছিলেন, কিন্তু যুদ্ধক্লান্তি ধীরে ধীরে জেঁকে বসেছে, জনমতও বদলে যাচ্ছে।
এ বছরের শুরুতে ইউক্রেন যখন তরুণদের জন্য সীমান্ত পার হওয়ার বিধিনিষেধ শিথিল করেছিল, তখন প্রায় এক লাখ ইউক্রেনীয় পুরুষ পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই জার্মানিতে চলে যান। এতে জনমনে অসন্তোষ তৈরি হয়। অক্টোবরের একটি জরিপে দেখা গেছে, জার্মানদের ৬২ শতাংশ চান, সামরিক বাহিনীতে কাজ করার সক্ষমতা আছে—এমন ইউক্রেনীয় পুরুষদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। ৬৬ শতাংশ চান না যে ইউক্রেনীয়রা কোনো সুবিধা পাক। গত বছর জার্মানিতে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য খরচ হয়েছে ছয় বিলিয়ন ইউরো। জার্মানির নতুন রক্ষণশীল সরকার বাজেট কাটছাঁট করার কথা বারবার বলছে।
আরও পড়ুনপুতিন সম্ভবত ইউক্রেন থেকে যা চাইছেন, তা–ই পাবেন ২০ মার্চ ২০২৫পোল্যান্ডেও পালিয়ে আসা তরুণ ইউক্রেনীয় পুরুষদের নিয়ে জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, পোল্যান্ডের ২৫ শতাংশ মানুষ ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের ইতিবাচকভাবে দেখছেন, ৩০ শতাংশ নেতিবাচকভাবে এবং ৪১ শতাংশ নিরপেক্ষ। ৫১ শতাংশ মনে করছেন, সরকার তাঁদের জন্য খুব বেশি সহায়তা দিচ্ছে। এক বছর পরও এই নেতিবাচক প্রবণতা সম্ভবত বজায় আছে।
পুতিন এবং তাঁর মিত্র বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কা ভালো করেই জানেন, মরিয়া লোকদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তের দিকে ঠেলে দেওয়াটা কার্যকর কৌশল। ২০২১ সালে তাঁরা দুজন এ ধরনের ‘হাইব্রিড যুদ্ধের’ পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। বেলারুশ তখন মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার আশ্রয়প্রার্থীদের পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে ঠেলে পাঠিয়েছিল।
আরও পড়ুনপুতিন যে দুই জায়গায় ট্রাম্পকে পাত্তা দেন না২৯ মে ২০২৫সে সময় এই সীমান্তগুলোয় হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়েছিলেন। সেটি মানবিক সংকট সৃষ্টি ও মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছিল। এই শীতে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো যদি ধ্বংস হয়, তাহলে লাখ লাখ মানুষ পোল্যান্ড কিংবা রোমানিয়া ও হাঙ্গেরির দিকে ছুটতে থাকবেন। সীমান্ত পেরিয়ে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড বা ড্রোন আক্রমণের মতো ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করতে পারে।
রাশিয়ার সেনারা বিদ্যুৎকেন্দ্র, গ্যাস সংরক্ষণাগার ও রেলওয়ে জংশন বোমা মেরে ধ্বংস করছেন। শুধু অবকাঠামো ধ্বংসের জন্য নয়, ইউক্রেনের বাসিন্দাদের পশ্চিমে ঠেলে দেওয়ার জন্যও। কেননা, আতঙ্ক নিজেই একটি অস্ত্র হয়ে উঠেছে।
সের্গেই মাইডুকভ ইউক্রেনীয় লেখক
আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল খ ইউক র ন য় ইউক র ন র অবক ঠ ম র জন য ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
বালু নিয়ে দ্বন্দ্ব, বাঁধের কাজ বন্ধ
চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধের ৫০৪ কোটি টাকার নির্মাণকাজ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার’ কারণে ছয়টি কাজের মধ্যে তিনটি শুরু হয়নি। দুটি অংশে কাজ শুরু করলেও বালু, সিমেন্টসহ মালামাল সরবরাহ নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে বাধা পেয়ে কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালু, সিমেন্টসহ নির্মাণ উপকরণ সরবরাহ নিয়ে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের কয়েকটি পক্ষ দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। এর জেরে শ্রমিকদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে কাজ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (প্রথম পর্যায়)’ নামে এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৮৭৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। আনোয়ারা অংশে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হলেও বাধা এসেছে বাঁশখালী অংশে।
বাঁশখালী উপজেলায় চারটি এলাকায় নির্মাণকাজের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫০৪ কোটি টাকা। চারটি এলাকাকে (সাধনপুর, খানখানাবাদ, বাহারছড়া ও ছনুয়া) ছয়টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একক ও যৌথভাবে ছয়টি কাজ পেয়েছে। বাঁশখালী অংশে রয়েছে ৬ দশমিক ৪১ কিলোমিটার বাঁধ ও ঢালু এবং ১ দশমিক ১ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ।
গত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে নির্মাণকাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ৫ থেকে ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও কাজের অগ্রগতি ৩ শতাংশের কম।
পাউবোর প্রকল্পের নথিপত্রেও নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে স্থানীয় রাজনৈতিক সমস্যাকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নথিপত্র অনুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্য সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে পণ্য পরিবহনে সমস্যা, বালু উত্তোলনে বাধা ও লবণ চাষের কারণে ব্লক তৈরির মাঠ না পাওয়া।
বালু সরবরাহে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব
বাঁশখালী অংশের ছয়টি কাজের দুটি পেয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (পিডিএল)। এগুলোর মধ্যে উপজেলার খানখানাবাদের ১ হাজার ৩০০ মিটার বাঁধ ও ঢাল সংরক্ষণের কাজ করছে যৌথভাবে ওয়েস্টার্ন-পিডিএল (প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড)। ছনুয়ার ২ হাজার ৮০০ মিটারের কাজ করছে পিডিএল-আরএফএল।
পাউবো ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, দুটি অংশেই বাঁধের নির্মাণকাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিডিএল। ছনুয়ায় ব্লক নির্মাণের জন্য চট্টগ্রামের বাইরে থেকে শ্রমিক নিয়ে আসা হয়েছিল।
কিন্তু রাতের আঁধারে তাঁদের মারধর করা হয়। খানখানাবাদের জন্য আনা শ্রমিকদের হুমকি দেওয়া হয়। এরপর সব শ্রমিক চলে গেছেন। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে এসব ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
নির্মাণকাজে বড় বাধা এসেছে বালু সরবরাহ নিয়ে। এ নিয়ে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দুটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এর জের ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, বালু সরবরাহ নিয়ে স্থানীয় মেসার্স থ্রি পয়েন্টের সঙ্গে তালুকদার ট্রেডিংয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। থ্রি পয়েন্টের অংশীদারেরা হলেন চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আরিফ ও চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম।
অভিযোগ রয়েছে তাঁদের পেছনে আছেন খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সিকদার। জানতে চাইলে থ্রি পয়েন্টের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
অপর পক্ষে তালুকদার ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী হিসেবে আছেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ কাইদুল ওয়াদুদ।
থ্রি পয়েন্টের অংশীদার সাবেক ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম বলেন, বালু সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছেন। কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী বালু সরবরাহ করছেন। কিন্তু কাইদুল ওয়াদুদ, আশরাফ ও শাহেদ নামের কয়েকজন ছেলে কার্যাদেশ না পাওয়ার পরও বালু নিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজি হয়নি। এরপরও তাঁরা প্রভাব খাটিয়ে বালু খালাস করতে চাওয়ায় অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে।
তালুকদার ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী ও ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ কাইদুল ওয়াদুদ বালু সরবরাহে কার্যাদেশ পেয়েছেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক মাস ধরে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বালু নিচ্ছিল, যা লবণপানি দিয়ে খালাস করা হচ্ছিল।
মানহীন পণ্য ব্যবহারের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল। তিনি প্রথম আলোকে লিখিতভাবে জানান, বাঁধ নির্মাণের বালু, পাথর, রড, সিমেন্টসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় মালামাল খালাস করতে গেলে বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় কিছু সরবরাহকারী বালু ও ইট সরবরাহের কাজ নিলেও নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করে। মান উত্তীর্ণ না হওয়ার পরও তা গ্রহণ করতে চাপ দিতে থাকে। এরপর বাইরের সরবরাহকারীদের কাজ দিলে স্থানীয় পক্ষটি আবার পণ্য খালাসে বাধা দিতে থাকে। স্থানীয় কয়েকটি পক্ষের অন্তঃকোন্দলের কারণে কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধান না হলে প্রকল্পটি সময়মতো সম্পন্ন করা কষ্টসাধ্য হবে।
সরেজমিনে খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদম রসুল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বালুর বিশাল স্তূপ রাখা আছে এবং ব্লক তৈরির কাজ বন্ধ রয়েছে।
জানতে চাইলে খানখানাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব লোকমান হাকিম বলেন, বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ প্রাণের দাবি স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ।
পাউবো সূত্র জানায়, বাঁশখালীর ছয়টি কাজের মধ্যে বর্তমানে সাধনপুর অংশে কাজ চলমান রয়েছে। বাকি পাঁচটিতে কাজ হচ্ছে না।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তানজির সাইফ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বাঁশখালী অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণে নিয়ে নানা ধরনের বাধা আসছে। স্থানীয় কয়েকটি পক্ষ বালু, সিমেন্ট, শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। হুমকি দিচ্ছে। এসব কারণে কাজই শুরু করা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে নির্মাণকাজের সময় পিছিয়ে যাবে।