দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব জাতীয় অগ্রগতির পথে বাধা: আনিসুজ্জামান চৌধুরী
Published: 23rd, June 2025 GMT
বাংলাদেশে বাজেট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তার অভাব এবং নীতির সমন্বয়হীনতা জাতীয় অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। বাজেট তৈরি হয়, কিন্তু যথাযথ উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয় না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বাজেট নিয়ে এক আলোচনায় এমন মত দিয়েছেন।
সোমবার মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা (এমসিসিআই) এবং গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘বাজেট বিষয়ক উপলব্ধি: চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ’ শীর্ষক এ আলোচনায় তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।
ড.
রাজধানীর গুলশানে পুলিশ প্লাজায় এমসিসিআইর নিজস্ব কার্যালয়ে আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি কামরান টি. রহমান। পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার সূচনা বক্তব্য দেন। পিআরআইর গবেষণা পরিচালক ড. বজলুল হক খন্দকার এবং এমসিসিআইয়ের শুল্ক ও কর বিষয়ক কমিটির সদস্য আদীব এইচ খান আলাদা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ড. আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী বিশাল। কিন্তু তাদের জন্য সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা নেই। ১৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী মানুষ দেশের ৩০ শতাংশ। জাতীয় নেতৃত্বের গড় বয়স ৭৫ বছর। তারা তরুণদের আকাঙ্ক্ষা ঠিকমতো অনুধাবন করতে পারেন?
তিনি তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য একক জাতীয় সেবা চালুর ধারণা দেন। যেখানে তরুণদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ, আইটি প্রশিক্ষণ এবং সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক হবে। এতে মাদকাসক্তি কমবে, শ্রম উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং জাতীয় বাজেটের ওপর চাপও তুলনামূলকভাবে কমবে।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, দেশের ছেলেমেয়েরা যখন আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার বানাতে পারে, তখন বিদেশি সফটওয়্যার কেন লাগবে? সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহারের শর্ত থাকে, যার ফলে দেশীয় সক্ষমতা উপেক্ষিত হয়। আত্মনির্ভর হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়। জাতীয় তথ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ে।
তিনি বলেন, কোরিয়ার অর্থনৈতিক সংকটের সময় তাদের সাধারণ মানুষ স্বর্ণ দান করেছে। কারণ তারা বিশ্বাস করতো যে, জাতি আগে। আমাদের সমস্যা হলো, আমরা আশা হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের কোনো লক্ষ্য নেই, ঐক্য নেই। নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা না করে বিদেশে চিকিৎসা, শিক্ষা এবং টাকা পাচারকেই সমাধান ভাবী। অথচ থাইল্যান্ডের রাজা বিদেশে চিকিৎসা না নিয়ে নিজ দেশে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল গড়েছেন, যার ফল তারা পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিকল্পনা কমিশন, এনবিআর– সবার গবেষণা বিভাগ আছে। কিন্তু কেউ কারও সঙ্গে সমন্বয় করে না। এক মন্ত্রণালয় যে রাস্তা বানায়, পরদিন আরেক মন্ত্রণালয় তা কেটে ফেলে। এতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হয়। নীতির সংহতি ও সমন্বয় ছাড়া কোনো কার্যকর পরিকল্পনা সম্ভব নয়।
আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, এটি নিখুঁত না হলেও ব্যবসাবান্ধব। সবাই কর ছাড় চায়। কিন্তু নিজে থেকে কর দিতে চায় না। অনেকে মনে করেন, বিদেশিরা ঋণ দিয়ে আমাদের উন্নয়ন করবে। কিন্তু প্রকৃত অংশীদারিত্ব তখনই হয়, যখন কেউ এসে বিনিয়োগ করে এবং প্রযুক্তি দেয়। বিদেশি সহায়তা নয়, বিদেশি বিনিয়োগ চাইতে হবে।
এমসিসিআই সভাপতি বলেন, বাজেটে টার্নওভার কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করায় যেসব প্রতিষ্ঠানের মুনাফার হার কম, তাদের টিকে থাকা কঠিন হবে।
পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার বলেন, আমাদের যথাযথ ট্যারিফ নীতি নেই। তাহলে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা কী করে হবে?
বজলুল হক খন্দকার বলেন, কম রাজস্ব দুর্বল বাস্তবায়ন- এই হলো দেশের বাজেটের চরিত্র। এমন বাজেট দিয়ে বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান হয় না।
আদিব এইচ খান বলেন, অতিরিক্ত কর পরিশোধ করলে পরের বছরে তা সমন্বয়ের সুযোগ এবারের বাজেটে রাখা হয়েছে। তবে কম মুনাফার কোম্পানি এ সুবিধা নিতে পারবে বলে মনে হয় না।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এআই টুল ব্যবহার করে বিভিন্ন সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ত্রুটি শনাক্ত করল গুগল
নিজেদের তৈরি ‘বিগ স্লিপ’ এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) টুল ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো বিভিন্ন ওপেন সোর্স সফটওয়্যারে থাকা ২০টি নিরাপত্তা ত্রুটি সফলভাবে শনাক্ত করেছে গুগল। প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তাবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট হিদার অ্যাডকিনস জানিয়েছেন, গুগলের তৈরি বিগ স্লিপ এআই টুলটি মূলত লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম)–নির্ভর একটি স্বয়ংক্রিয় ত্রুটি শনাক্তকারী ব্যবস্থা। প্রথম দফায় টুলটির মাধ্যমে বিভিন্ন ওপেন সোর্স সফটওয়্যারে থাকা ত্রুটির খোঁজ পাওয়া গেছে। তবে এখনো ত্রুটিগুলোর সমাধান না হওয়ায় বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
গুগলের তথ্যমতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সফটওয়্যারে বাস্তব ত্রুটি শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি প্রযুক্তির অগ্রগতিতে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এ বিষয়ে গুগলের মুখপাত্র কিম্বারলি সামরা এক বিবৃতিতে জানান, প্রতিটি ত্রুটি মানুষের সহায়তা ছাড়াই এআই টুল নিজেই শনাক্ত করেছে। তবে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে গুগলের এক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ত্রুটিগুলো যাচাই করে দেখেছেন, যাতে প্রতিবেদনটি যথার্থ হয়। গুগলের প্রকৌশল বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট রয়্যাল হ্যানসেন এক্সে লিখেছেন, ‘এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিরাপত্তা ত্রুটি শনাক্ত করার এই চেষ্টা এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।’
গুগলের তৈরি বিগ স্লিপ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি এআই টুল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফটওয়্যারের ত্রুটি শনাক্ত করতে পারে, যার মধ্যে রানসিবিল ও এক্সবা অন্যতম। তবে এসব টুল এখনো পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় হয়ে ওঠেনি। এমনকি গুগলের বিগ স্লিপেও নিরাপত্তা ত্রুটি শনাক্তের পর তা যাচাইয়ের জন্য একজন বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিতে হয়।
এআই টুল ব্যবহার করে বিভিন্ন সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ত্রুটি শনাক্তে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ডেভেলপার অভিযোগ করেছেন, অনেক সময় এআই টুলগুলো থেকে যেসব ত্রুটির কথা বলা হয়, সেগুলোর সব কটি সত্য নয়। এ বিষয়ে ডেভেলপার ভ্লাদ আয়োনেস্কু বলেন, ‘এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক রিপোর্ট প্রথম দেখায় খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, কিন্তু বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেগুলোর পেছনে আসলে কোনো বাস্তব ত্রুটি নেই।’
সূত্র: টেক ক্রাঞ্চ