আটক এসআইকে ছেড়ে দিল পুলিশ, কেএমপি সদর দপ্তরে শিক্ষার্থীদের তালা
Published: 25th, June 2025 GMT
পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত দাসকে পুলিশি হেফাজত থেকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সদর দপ্তর ঘেরাও করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে তারা কেএমপি সদর দপ্তরের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকাল ৫টা) কেএমপির সামনে খানজাহান আলী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে তারা।
মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর ইস্টার্ন গেট এলাকা থেকে এসআই সুকান্ত দাসকে মারধর করে খানজাহান আলী থানা পুলিশের কাছে তুলে দেয় স্থানীয়রা। এসআই সুকান্তের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর নিপীড়ন ও গণগ্রেপ্তার চালানোর অভিযোগ ছিল। অভ্যুত্থানের পর তার বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা হয়। এছাড়া মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুর মামলার ১ নং আসামি তিনি।
কেএমপি থেকে জানা গেছে, গতবছর গণঅভ্যুত্থানের পর সুকান্ত দাসকে প্রথমে তাকে ঢাকায়, পরে চুয়াডাঙ্গায় বদলি করা হয়। তিনি বর্তমানে আলমডাঙ্গা থানায় কর্মরত রয়েছেন। একটি মামলার সাক্ষী দিতে মঙ্গলবার সুকান্ত খুলনায় যান। সাক্ষ্য দিয়ে ফেরার পথে তাকে মারধর করে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।
খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবীর হোসেন বলেন, নিরাপত্তার জন্য এস আই সুকান্ত দাসকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে খানজাহান আলী থানায় কোনো অভিযোগ ছিল না। এজন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর তিনি চলে গেছেন।
সুকান্ত দাসকে ছেড়ে দেওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বুধবার বেলা ১২টায় কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয়। নির্ধারিত সময়ে তারা কেএমপির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে খুলনা মহানগর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সেখানে যোগ নেয়। তারা সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে একপর্যায়ে কেএমপির প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কদরুল হাসান বলেন, একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও একজন আসামিকে পুলিশ কেন ছেড়ে দিল; সেই জবাব আমরা পাইনি। মামলা থাকা সত্ত্বেও স্বৈরাচারের দোসরদের থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া ছাত্র-জনতার রক্তের সঙ্গে বেঈমানি। সুকান্তকে পুনরায় গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পরকীয়া ও ছিনতাইয়ের জালে প্রাণ গেল সায়েদুরের
ঢাকার ধামরাইয়ে অটোরিকশা চালক সায়েদুর রহমান হত্যা ও অটোরিকশা ছিনতাইয়ের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা (পিবিআই)। দুই বছর আগে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় সদর আলী ও আলমগীর নামে দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পিবিআই ঢাকা জেলা কার্যালয়ে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরকীয়া সম্পর্ক ও অর্থসংকটের জটিল টানাপোড়েন থেকেই এ হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামিরা হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
গত ২০২৩ সালে ২৮ নভেম্বর সকালে ধামরাইয়ের বাইশাকান্দার কেষ্টখালী গ্রামের জনৈক ফজলে মাহবুবের ধানক্ষেতের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাতনামা এক পুরুষের লাশ। এই ঘটনায় ধামরাই থানার এসআই আব্দুল জব্বার বাদী হয়ে ধামরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় এসআই পাভেল মোল্লাকে।
তদন্তে সনাক্ত হয় অজ্ঞাত লাশের পরিচয়। তার নাম সায়েদুর রহমান। পেশায় অটোরিকশা চালক। পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পিবিআইতে ন্যস্ত হয় এবং এসআই আনিসুর রহমান মামলাটি তদন্ত করেন।
পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা জানান, তথ্য-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের হত্যা ও অটো ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সদর আলী ওরফে সোহরাবকে (৪৭) গ্রেপ্তার করে আদালতে মাধ্যমে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আসামি সদর আলী ওরফে সোহরাবের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঘটনার মূল আসামি আলমগীরকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন তারা।
পিবিআই বলছে, আসামিদের জবানবন্দি পর্যালোচনায় জানা যায় যে, আসামি সদর আলী ওরফে সোহরাব (৪৭) ও আলমগীর (২৫) এবং আসামি জুয়েল একই বাসায় পাশাপাশি রুমে বসবাস করতো। আলমগীর এবং জুয়েল অবিবাহিত ছিল। পরবর্তীতে সদর আলী ওরফে সোহরাব (৪৭) এর স্ত্রী ও আসামি জুয়েলের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয় এবং জুয়েল, আলমগীরের সহায়তায় সদর আলীর স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে যায়।
পরে আসামি সদর আলী ভিকটিম সায়েদুর রহমানের স্ত্রীর সাথে পরকীয়ার সম্পর্কের চেষ্টা করে এবং আলমগীরও ভিকটিম সায়েদুর রহমানের স্ত্রীর সাথে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়াতে চায়। সদর আলীর স্ত্রী জুয়েলের সাথে ছয় মাস থাকার পর আবার সদর আলীর কাছে ফিরে আসে।
নগদ টাকার প্রয়োজন হলে সদর আলী সদর আলী, আলমগীর ও জুয়েল অটোরিকশা চালক সায়েদুর রহমানের অটোরিকশা ছিনতাই করে বিক্রির পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সায়েদুর রহমানকে ফুসলিয়ে গান শোনার অজুহাতে বাইরে নিয়ে যায়। ফেরার পথে ধামরাই থানাধীন কেষ্টখালি গ্রামের নির্জন স্থানে গামছা দিয়ে মুখ, হাত ও পায়ে রশি বেঁধে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা নিশ্চিত করে মৃতদেহ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
হত্যাকাণ্ডের পর তারা সায়েদুর রহমানের অটোরিকশা ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে এবং উক্ত টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে।
এ বিষয়ে পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা, পিপিএম-সেবা বলেন, “দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা ঘটনার বিষয়ে প্রকাশ্য ও গোপনে তদন্ত শুরু করি। এক পর্যায়ে তথ্য-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আসামী সদর আলী ও আলমগীদ্বয়কে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করি। আসামীদ্বয় বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। নগদ টাকার প্রয়োজনে পরিকল্পিতভাবে আসামীদ্বয় ভিকটিমকে হত্যা করে তার অটোরিকশা ছিনতাই করে বিক্রি করেছে।”
ঢাকা/সাব্বির/এস