পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত দাসকে পুলিশি হেফাজত থেকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সদর দপ্তর ঘেরাও করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে তারা কেএমপি সদর দপ্তরের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকাল ৫টা) কেএমপির সামনে খানজাহান আলী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে তারা।

মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর ইস্টার্ন গেট এলাকা থেকে এসআই সুকান্ত দাসকে মারধর করে খানজাহান আলী থানা পুলিশের কাছে তুলে দেয় স্থানীয়রা। এসআই সুকান্তের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর নিপীড়ন ও গণগ্রেপ্তার চালানোর অভিযোগ ছিল। অভ্যুত্থানের পর তার বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা হয়। এছাড়া মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুর মামলার ১ নং আসামি তিনি।

কেএমপি থেকে জানা গেছে, গতবছর গণঅভ্যুত্থানের পর সুকান্ত দাসকে প্রথমে তাকে ঢাকায়, পরে চুয়াডাঙ্গায় বদলি করা হয়। তিনি বর্তমানে আলমডাঙ্গা থানায় কর্মরত রয়েছেন। একটি মামলার সাক্ষী দিতে মঙ্গলবার সুকান্ত খুলনায় যান। সাক্ষ্য দিয়ে ফেরার পথে তাকে মারধর করে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।

খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবীর হোসেন বলেন, নিরাপত্তার জন্য এস আই সুকান্ত দাসকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে খানজাহান আলী থানায় কোনো অভিযোগ ছিল না। এজন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর তিনি চলে গেছেন।

সুকান্ত দাসকে ছেড়ে দেওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বুধবার বেলা ১২টায় কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয়। নির্ধারিত সময়ে তারা কেএমপির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে খুলনা মহানগর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সেখানে যোগ নেয়। তারা সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে একপর্যায়ে কেএমপির প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কদরুল হাসান বলেন, একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও একজন আসামিকে পুলিশ কেন ছেড়ে দিল; সেই জবাব আমরা পাইনি। মামলা থাকা সত্ত্বেও স্বৈরাচারের দোসরদের থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া ছাত্র-জনতার রক্তের সঙ্গে বেঈমানি। সুকান্তকে পুনরায় গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত কর ম ক এমপ

এছাড়াও পড়ুন:

দুজনকে পিটিয়ে হত্যা : ‘এ্যালা মুই কেমন করি বাঁচিম, কার কাছোত বিচার চাইম’

১০ বছর বয়সী মেয়ে রুপা দাস ও ১৩ বছর বয়সী ছেলে জয় দাসকে জড়িয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ভারতী দাস। বুক ভেঙে কান্না আর বিলাপে তিনি বলছিলেন, ‘এ্যালা মুই কেমন করি বাঁচিম? ছোট ছাওয়া দুইটাক কায় খাওয়াইবে পড়াইবে? মোর নির্দোষ স্বামীক কেন মারিল, বেটিটার বিয়ার কী হইবে? মুই কোনটে যাইম, কী করিম? কার কাছোত বিচার চাইম?’

বড় মেয়ে নুপুর দাস (১৮) মায়ের গলা ধরে কাঁদছিলেন। তাঁর কণ্ঠেও অসহায়ত্বের হাহাকার, ‘এ্যালা কয় হামাক দ্যাখপে, কায় মাও কয়া দাকপে, হামরা যে এতিম হয়া গেইনো।’

ছেলে হারিয়ে বৃদ্ধ লালিচা দাস (রুপলালের মা) কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রতিবেশীরা তাঁর মুখ ও মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরান। তারপরও কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলতে থাকেন, ‘মোর ছেলেটার দোষ কী? কেন ওক দাংগে মারিল? মোর বাবা তো কারও ক্ষতি করত না। হামাক দ্যাখপার যে আর কায়ও থাকিল না। যায় মোর ব্যাটাক মারছে, তাঁর বিচার চাও।’

রুপলাল দাসের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামে। গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে সয়ার ইউনিয়নের বটতলা এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন তিনি। একই ঘটনায় নিহত হন তাঁর ভাগনির স্বামী প্রদীপ দাস।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রুপলাল দাস (৪০) স্থানীয় বাজারে জুতা সেলাই করতেন। ছোট্ট একটি টিনের ঘরে তিনি মা, স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ থাকতেন। অল্প আয়ে ছয়জনের সংসার চালাতেন। সহায় সম্বল বলতে চার শতক জমি। প্রদীপ দাস (৩৫) মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়াভাটা গ্রামের বাসিন্দা। জীবিকা নির্বাহ করতেন ভ্যান চালিয়ে।
আজ রোববার সকালে ঘনিরামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রুপলালের বাড়িতে চলছে আহাজারি, শোক। স্বজনেরা বলছেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তাঁরা দিশাহারা।

নিহত ব্যক্তিদের পরিবার, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিঠাপুকুর উপজেলার শ্যামপুর এলাকার এক তরুণের সঙ্গে রুপলাল দাসের মেয়ে নুপুর দাসের বিয়ে কথাবার্তা চলছিল। আজ বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার কথা ছিল। এ জন্য মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে আত্মীয় রুপলাল দাসের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন প্রদীপ দাস। কিন্তু গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা না চেনায় প্রদীপ দাস সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকায় এসে রুপলালকে ফোন করেন। রুপলাল সেখানে যান। তাঁরা দুজনে ভ্যানে চড়ে রুপলালের বাড়ি ঘনিরামপুর গ্রামের দিকে রওনা হন। রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছলে ভ্যানচোর সন্দেহে তাঁদের দুজনকে থামান স্থানীয় কয়েকজন। এরপর সেখানে লোক জড়ো হতে থাকে।

পরিবার, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ২৮ জুলাই ওই এলাকায় এক শিশুকে হত্যা করে একটি ভ্যান চুরি করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ ছিলেন। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন প্রদীপ দাসের ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে চারটি প্লাস্টিকের ছোট বোতল বের করেন। সেগুলোতে চোলাই মদ ছিল বলে পরিবারের ভাষ্য। একটি বোতল খুললে ভেতরে থাকা তরলের ঘ্রাণে সেখানকার দুই ব্যক্তি অসুস্থ বোধ করেন বলে জানান। এ ঘটনায় লোকজনের সন্দেহ আরও বাড়ে। অজ্ঞান করে ভ্যান চুরি সন্দেহে তাঁদের মারধর শুরু করেন। বটতলা থেকে মারতে মারতে বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয় তাঁদের। মারধরের একপর্যায়ে অচেতন হলে সেখানে ফেলে রাখা হয়। পরে রাত ১১টার দিকে তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক রুপলাল দাসকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রদীপ দাসকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে আজ ভোরে তিনিও মারা যান বলেন নিশ্চিত করেছেন নিহত রুপলাল দাসের ভাই খোকন দাস।

নিহত রুপলাল দাসের বাড়িতে প্রতিবেশী ও স্বজনেরা। আজ রোববার সকালে তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুজনকে পিটিয়ে হত্যা : ‘এ্যালা মুই কেমন করি বাঁচিম, কার কাছোত বিচার চাইম’
  • অটোরিকশা বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্ব, স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ
  • সারাদিন মোটরসাইকেলে ঘুরিয়ে রাতে ছেলেকে পুকুরে ফেলে দিলেন বাবা
  • জয়পুরহাটে রিমান্ডে নিয়ে আসামিকে নির্যাতন, এসআইকে থানা থেকে প্রত্যাহার
  • বাগেরহাটে ভূমি কার্যালয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে তিন ভুয়া সাংবাদিক আটক