জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বিভাগীয় মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে উপপরিদর্শক (এসআই) পদে অবনমিত হয়েছেন। পুলিশ বিভাগের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা বিভাগীয় মামলার দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে তার এ শাস্তি কার্যকর করা হয়।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে রংপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) শাখায় কর্মরত থাকাকালীন রংপুরের পীরগঞ্জ থানার একটি হত্যা মামলায় মাসুদ রানার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়। তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ওসি (ইন্সপেক্টর) থেকে আগামী তিন বছরের জন্য এসআই পদে অবনতি করা হয়।
এর আগে মাসুদ রানা আক্কেলপুর থানায় গত ২০২৩ সালের ২০ জুলাই ওসি (তদন্ত) হিসেবে এবং পরে ২০২৫ সালের ৮ মার্চ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন।
জয়পুরহাট জেলার পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ২০১৮ সালে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাকে আক্কেলপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এসআই
এছাড়াও পড়ুন:
দুই ছেলের লাশের অপেক্ষায় রোজ নদীর পাড়ে বসে থাকেন মা
ছুঁয়ে দেখা হয়নি দুই সন্তানের মরদেহ। সন্তানকে শেষবারের মতো ‘বাবা’ বলে ডাকার ভাগ্যও হয়নি। বাবা-মায়ের কাছে সন্তানের লাশ পৃথিবীর সবথেকে ভারী হয়। শেষ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সেই ভারটুকুও বহন করতে না-পারার আক্ষেপ নিয়ে নিজের মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন হনুফা বেগম।
হানুফা বেগমের বাড়ি বরগুনার মাঝের চড়ে। তিনি স্বামী পরিত্যক্তা বৃদ্ধা। দুই সন্তান হারিয়ে সাগরের গর্জনের থেকেও ভারী হয়ে উঠেছে তার দীর্ঘশ্বাস। তিনি জানেন না ছেলেরা আর কখনো ফিরবে কিনা। তবুও নিয়ম করে প্রতিদিন নদীর তীরে বসে থাকেন ছেলেদের ফেরার আশা নিয়ে। নিষ্পলক তাকিয়ে থাকেন শূন্যপানে।
২০১১ সালে বড় ছেলে ফোরকান গভীর সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হন। সাত বছর পর ২০১৮ সালে মেজো ছেলে বিল্লালও হয় একই দুর্ভাগ্যের শিকার। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই হারিয়ে যান তিনি সাগরের নীল অতলে।
হনুফা বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘একে একে দুই ছেলে সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হয়েছে। এখনো প্রতিদিন ছেলেদের অপেক্ষায় সাগর পাড়ে বসে থাকি। মানুষ আমাকে ‘পাগল’ বলে, কিন্তু মায়ের মন তো মানে না। আমি জানি ওরা বেঁচে নেই। কিন্তু বিশ্বাস তো হয় না।’’
তিনি আঁচলে চোখ মুছে বলেন, ‘‘মাঝের চড়ের আবাসনে থাকি। এখানে সবাই গরিব। পেটের ক্ষুধা মেটাতে আবাসনের সেই গরিবদের ঘরে কাজ করি। তাদের টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নাই, তাই কাজের বিনিময়ে খাবার দেয়।’’
হনুফা বেগমের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, যে মায়ের মুখে খাবার তুলে দিতে গিয়ে দুই ছেলে ট্রলার ডুবে মারা গেছে, এখন সেই মা ভাঙাচোরা আবাসনে থেকে অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
প্রতিবেশী মিলন হাওলাদার বলেন, ‘‘হনুফা বেগম খুব মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। চারদিকে উন্নয়নের গল্প শুনি কিন্তু আমাদের জীবনের কোন উন্নয়ন নেই। এই চড়ে অন্তত ৩০ জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। সবার পরিবারেই এমন অভাব।’’
২০১৮ সালে সাগরে নিখোঁজ হন খোকন, আলতাফসহ অনেকেই। আলতাফের স্ত্রী খাদিজা বলেন, ‘‘দুই সন্তান রেখে গেছেন স্বামী। ওদের লেখাপড়া তো দূরের কথা, আমরা তিন বেলা খাবার খেতেও পারি না।’’
চড়ের বাসিন্দা ও নিখোঁজ জেলে খোকনের চাচা জলিল সিকদার বলেন, ‘‘অনেকে পরে অর্ধগলিত লাশ পেলেও, আমরা পাইনি। ফলে তাদের জানাজা-দাফনেরও সুযোগ পাইনি।’’
চারদিকে বিষখালী নদীবেষ্টিত মাঝের চড়ের জেলেরা বলছেন, এই চড়ের মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই। তারা সাগরে যান অথচ জেলে কার্ড নেই। তাই সরকারের কোন সুযোগ-সুবিধা তারা পান না।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মহসীন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘হনুফা বেগমের তথ্য আমার জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে আমি তথ্য নিয়ে জানলাম তার দুই ছেলে নিখোঁজ। কিন্তু তাদের জেলে কার্ড ছিল না এবং মৃত্যুসনদ নাই। তাই সরকারের সহায়তার আওতায় আনা কঠিন। তবে, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা চেষ্টা করব হনুফা বেগম ও মাঝের চড়ের নিখোঁজ জেলেদের স্বজনদের পাশে দাঁড়ানোর।’’
ঢাকা/ইমরান//