ঢাকার সদরঘাটে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনে করেছেন আরিফুর রহমান সাদ্দাম নামে এক তেল ব্যবসায়ী। তার দাবি, একটি চক্র নিয়মিতভাবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা না দিলে হামলার শিকার হতে হচ্ছে।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে জাতীয় প্রেসক্লাবে তিনি সংবাদ সম্মেলন এ অভিযোগ করেন।

সাদ্দাম জানান, তার পরিবার প্রায় ৪০ বছর ধরে সদরঘাটে তেলের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তার বাবা ঘাট ফেডারেশনের সভাপতি এবং একসময় তেল ব্যবসায়ী সমিতিরও সভাপতি ছিলেন।

আরো পড়ুন:

বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের রচনা বিএনপি করেছে: তারেক রহমান

কিছু দল হাসিনার ষড়যন্ত্রে পা দিয়েছে: শামসুজ্জামান দুদু

তিনি বলেন, “৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর যখন দেশজুড়ে সুশাসনের প্রত্যাশা তৈরি হয়। তখনই সদরঘাটে চাঁদাবাজির মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়াতে থাকে একটি চক্র।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “সুমন ভূইয়া, জাকির ও গিয়াস নামে তিন ব্যক্তি নিয়মিত চাঁদা দাবি করেন এবং চাঁদা না দিলে হামলা চালান। আমার তেল ট্যাংকারে হামলা, কর্মচারীদের মারধর এবং বড় ভাইকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। থানায় একাধিকবার অভিযোগ করলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আমি অনুরোধ করবো, আপনারা সত্য তুলে ধরুন। যেন আমরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে পারি।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সুমন ভূঁইয়া অভিযোগগুলো নাকচ করে বলেন, “আমি এসব অভিযোগকে পাত্তাই দিচ্ছি না। যারা এসব বলছে, তারা চায় বিএনপির বদনাম হোক।”

তিনি আরো বলেন, “সদরঘাটে সেনাবাহিনী টহল দেয়। এখানে কারো চাঁদাবাজি করার ক্ষমতা নেই। আমি রাজনৈতিকভাবে সচেতন একজন মানুষ এবং এলাকার মানুষ জানে আমি কেমন। বিএনপির নামে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা হচ্ছে।”

নিজের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে আরিফুর রহমান সাদ্দাম বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যদি যুবলীগের নাম ব্যবহার করে কিছু করার অভিযোগ থাকে, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নিন। আমি একজন ব্যবসায়ী। আমরা কোকো কোম্পানি পরিচালনা করি, যেটি তারেক জিয়ার প্রতিষ্ঠানের আওতায় ছিল। এজন্য এক সময় আমাদের জঙ্গি হিসেবেও দেখা হত।”

তিনি দাবি করেন, “কিছু আওয়ামী লীগপন্থি ব্যক্তি ও স্থানীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে তার ব্যবসায়িক বিরোধ রয়েছে, যারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। আমার ছোট ভাইকে র‌্যাব-ডিবি দিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে। অথচ সে সাদ্দাম নয়, সাব্বির। আমি নিজে এলাকায় আসতে পারিনি, ভয় পালিয়ে থাকতে হয়েছে।”

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

মনিরুজ্জামান বলেন, “আমি ২৮ তারিখে এই থানায় যোগদান করেছি। তাই অভিযোগটি সম্পর্কে আমি অবগত নই।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ অভ য গ ব যবস য় সদরঘ ট

এছাড়াও পড়ুন:

সোনালি সাফল্যের আড়ালে ধূসর বাস্তবতা

দেশের একসময়কার ফুটবল–উন্মাদনা হারিয়ে গেলেও এ খেলায় নতুন এক জোয়ার এনেছেন নারী ফুটবলাররা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একের পর এক সাফল্যের কাব্য লিখে চলেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ধরে রেখে তারা এখন এশিয়ার ফুটবল অঙ্গনে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু এই সোনালি সাফল্যের আড়ালেই লুকিয়ে আছে এক চরম হতাশার গল্প। সাফল্যের বিপরীতে নারী ফুটবলারদের পরিচর্যার ঘাটতি বারবার সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক। 

দেশের হয়ে সম্মান বয়ে আনা নারী ফুটবলারদের সামান্য পাওনাটুকুও মাসের পর মাস আটকে থাকছে। ম্যাচ ফি থেকে শুরু করে বেতন, পুরস্কারের টাকা—সবকিছুই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর দায়িত্বহীনতার বেড়াজালে আটকা পড়ে আছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্যগুলো সত্যিই পীড়াদায়ক। একাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে আসা নারী ফুটবলাররা এখনো তাঁদের প্রাপ্য ম্যাচ ফি পাননি। যেখানে এক মিনিটের জন্য মাঠে নামলেও ১০ হাজার টাকা প্রাপ্য, সেই সামান্য অর্থও সময়মতো না পেয়ে দেশের শীর্ষ ফুটবলাররা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

ফুটবলাররা জানাচ্ছেন, চুক্তি অনুযায়ী বেতনও বাকি। একুশে পদক জেতার পর সরকারের দেওয়া আর্থিক পুরস্কারের ১২ হাজার টাকাও খেলোয়াড়দের হাতে পৌঁছায়নি। এসব আর্থিক পাওনা আটকে থাকার কারণ হিসেবে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে, তা আরও হতাশাজনক। বাফুফের এক কর্মকর্তা বলছেন, ‘ফাইন্যান্স আমার বিষয় নয়’, আরেকজন বলছেন ‘নো কমেন্ট’, এবং সাধারণ সম্পাদক দাবি করছেন যে তথ্য সঠিক নয়। এ ধরনের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতা প্রমাণ করে ফুটবলারদের প্রাপ্য নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

সবচেয়ে বড় হতাশার বিষয় হলো, সাফ শিরোপা জয়ের ৯ মাস পার হয়ে গেলেও বাফুফের ঘোষণা করা দেড় কোটি টাকার পুরস্কার এখনো ফুটবলাররা পাননি। এই পুরস্কারের ঘোষণা ছিল তাঁদের প্রাপ্য সম্মানের প্রতীক, যা এখন এক তিক্ত প্রহসনে পরিণত হয়েছে। একজন খেলোয়াড়ের প্রশ্ন, ‘টাকাই যখন দেবেন না, তখন ঘোষণার কী প্রয়োজন ছিল?’ এই প্রশ্ন কেবল একজন খেলোয়াড়ের নয়, এটি প্রত্যেক নাগরিকের প্রশ্ন। যারা দেশকে সম্মান এনে দিল, তাদের প্রাপ্যটুকুও নিশ্চিত করতে যারা ব্যর্থ, তাদের কর্মকাণ্ডের যৌক্তিকতা কী?

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) যখন ফুটবল তারকা ঋতুপর্ণা চাকমাকে বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কথা বলছে, তখন বাফুফের মতো প্রতিষ্ঠান নারী ফুটবলারদের ন্যূনতম প্রাপ্যটুকুও নিশ্চিত করতে পারছে না। দেশের ফুটবলের অভিভাবক হয়ে বাফুফে কেবল নিজেদের দায় এড়ানোর খেলায় ব্যস্ত। নারী ফুটবল লিগের অনিয়মিত আয়োজন ও দেশের বাইরে গিয়ে খেলতে গিয়ে ভুটানের মতো দেশের মেয়েদের কাছে লজ্জিত হওয়ার ঘটনা আমাদের ফুটবলের অব্যবস্থাপনারই প্রতিফলন। আমরা চাই নিয়মিত লিগ আয়োজন করা হোক এবং সেটি যেন দায়সারাভাবে না হয়। 

মাঠের বাইরের নানা বঞ্চনা নারী ফুটবলারদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে। অথচ তাঁদের কঠোর পরিশ্রম এবং ত্যাগই দেশের জন্য এই সম্মান বয়ে এনেছে। বাফুফের উচিত অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধান করা। খেলোয়াড়দের সব বকেয়া পাওনা দ্রুত মিটিয়ে দেওয়া, পুরস্কারের অর্থ হস্তান্তর করা এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। 

আমাদের দেশের নারী ফুটবলাররা মাঠে নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছেন, আবার মাঠের বাইরে নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে তাঁদের। এটি পেশাদারি ফুটবলের চরম ক্ষতির পথ উন্মোচন করবে। আমরা আমাদের ফুটবলের হারানো গৌরব ফিরে পেতে চাইলে ফুটবলারদের বঞ্চনা–গঞ্জনা থেকে মুক্ত করতে হবে। বাফুফের উচিত শুধু বিজয় উদ্‌যাপন নয়, বরং দেশের এই তারকাদের প্রতি তাদের দায়িত্বটুকুও পালন করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাবির হলে চিকিৎসাহীন মৃত্যুর দায় কার
  • সৌন্দর্য সৃষ্টি করতে থাকুন রফিকুন নবী 
  • মাছের ঘের দখল নিয়ে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে একজন নিহত
  • সোনালি সাফল্যের আড়ালে ধূসর বাস্তবতা
  • সরকার উৎখাতের যড়যন্ত্রের মামলায় আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার
  • খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফুড পয়জনে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল: পিন্টু
  • পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের আগে ‘অনুপ্রবেশ’কে হাতিয়ার করতে চাইছেন মোদি
  • হংকংয়ের কারাবন্দী নেতা জিমি লাইকে ‘রক্ষায়’ জোর চেষ্টা চালাবেন ট্রাম্প
  • ৩১ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার ঘটনায় ডিইউজের উদ্বেগ
  • বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে ফ্যাসিস্ট আ.লীগ ও তাদের দোসররা