জুলাই শহীদদের স্মরণে ঢাবিতে গাছ বিতরণ
Published: 9th, July 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে গাছের চারা বিতরণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের দুই শিক্ষার্থী।
‘শহিদ স্মৃতি বৃক্ষায়ন’ নামে নিজস্ব উদ্যোগে এ অভিনব কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাবির সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মো: আব্দুল আহাদ ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তৌফিকুল ইসলাম প্রতিক।
বুধবার (৯ জুলাই) বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে এই গাছের চারা বিতরণ করেন তারা।
আরো পড়ুন:
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, কিন্তু আমার লক্ষ্য কি?
গবিতে ছাত্রদলের কমিটি: ‘রাজনীতি মুক্ত’ নীতির কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক
এ কর্মসূচির আওতায় হলের প্রতিটি কক্ষে একটি করে মোট ১৩০টি গাছের চারা বিতরণ করেন তারা। প্রতিটা গাছের নাম একজন জুলাই শহীদের নামে নামকরণ করা হয়েছে।
এ কর্মসূচির উদ্যোক্তা মো.
তিনি আরো বলেন, “জুলাইয়ে ২ হাজারের বেশি শহিদ হয়েছেন। আমরা যেহেতু মোট ১৩০ গাছ বিতরণ করছি, আমাদের পক্ষে সব শহীদের নামে গাছ দেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য আমরা চেষ্টা করেছি, এখানে সব পর্যায়ের শহীদদের তুলে ধরতে। এখানে শহীদ আবু সাইদ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা শহীদ নুর মোস্তফার নামও রয়েছে।”
আরেক উদ্যোক্তা তৌফিকুল ইসলাম প্রতিক বলেন, “আমরা প্রথম পর্যায়ে শুধু হলে গাছ বিতরণের কথা চিন্তা করছিলাম। পরে ভাবলাম জুলাইয়ের শহীদদের স্মৃতিকে জীবন্ত রাখতে তাদের নামে গাছের নামকরণ করি। এখানে প্রতিটা গাছ জুলাই স্মৃতির স্মারক হয়ে থাকবে। আমরা চাই, এর মাধ্যমে আমাদের কাছে শহীদদের অবদান চিরজীবী হয়ে থাকুক।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব তরণ কর স মরণ
এছাড়াও পড়ুন:
আগুন পুরোপুরি নিভল ২৬ ঘণ্টায়
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন ২৬ ঘণ্টা পর পুরোপুরি নিভেছে। আগুন নেভাতে এত দীর্ঘ সময় কেন লাগল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ী ও ঢাকা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুতই ঘটনাস্থলে পৌঁছান। কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় এক ঘণ্টার বেশি সময় তাঁরা বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো কমপ্লেক্স ভবনে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, অগ্নিনির্বাপণের জন্য বিমানবন্দরের ভেতরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তিনটি ইউনিট রয়েছে। সেই ইউনিটগুলো ঘটনাস্থলে এলেও আগুন নেভাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।
ঢাকা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিমানবন্দর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই)। তাই বলে আগুন নেভাতে ভেতরে প্রবেশের জন্য এক ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করতে হবে? তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলোকে যদি আটকে রাখা না হতো, তাহলে আগুনে এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
সবকিছু আমলে নিয়েই অনুসন্ধান চালানো হবে। যত ধরনের অভিযোগ আছে, প্রতিটি অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে। শেখ বশিরউদ্দীন, বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টাবিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের সময়মতো ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সমন্বয়হীনতার কারণে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো ভেতরে ঢুকতে দেরি হয়েছে। একটি কুরিয়ার সার্ভিসের মালামাল রাখার ছোট্ট স্থান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন।
ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় গতকাল রোববার সরেজমিনে গিয়ে কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনের চারপাশে সকালেও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিস দুই পাশ থেকে পানি দিচ্ছিল সেখানে। বিমানবন্দরের সামনে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলের বিপরীত পাশের একাধিক দোকানের ব্যবসায়ীরা বলেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেতে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে বেসরকারি বিমান, পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিমানবন্দর হলো কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই) এলাকা। এখানে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা আছে। আগুন লাগার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে আমাদের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ সংস্থা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবু যত ধরনের অভিযোগ এসেছে, তা আমলে নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত হবেগতকাল আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেছেন বেসরকারি বিমান, পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা। আগুন নিয়ন্ত্রণ, ক্ষয়ক্ষতি ও যাত্রীদের ভোগান্তি নিয়ে কথা বলেন তিনি।
এই অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সবকিছু আমলে নিয়েই অনুসন্ধান চালানো হবে। যত ধরনের অভিযোগ আছে, প্রতিটি অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আগুনের যে লেলিহান শিখা দেখেছেন, যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছিল; এই ধূম্রজালের ভেতর দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছার মতো অবস্থা ছিল না। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২১টি ফ্লাইট অন্য কোথাও নামতে হয়েছে বা বাতিল করতে হয়েছে। যাত্রীদের কষ্ট লাঘব করার জন্য আদেশ জারি হয়েছে যে আগামী তিন দিন যত অতিরিক্ত ফ্লাইট (নন-শিডিউল এক্সট্রা ফ্লাইট) আসবে, এর সব মাশুল ও খরচ মওকুফ করা হয়েছে।’
খোপ খোপ স্টিলের কাঠামোর জন্য আগুন নেভাতে সময় লেগেছেপুরোপুরি আগুন নেভানোর পর গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শনিবার আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একে একে ৩৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। অক্লান্ত পরিশ্রম করে শনিবার রাত ৯টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুন পুরোপুরি নিভেছে গতকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে।
তাজুল ইসলাম বলেন, কার্গো ভিলেজের যে অংশে আগুন লেগেছিল, প্রতিটা জায়গাতেই আসলে খোপ খোপ করে ভাগ করা ছিল এবং ভেতরে অনেকগুলো অংশ স্টিলের তৈরি। স্টিলের স্ট্রাকচার দিয়ে একতলা থেকে দোতলা পর্যন্ত আছে; যেটার জন্য আগুন নেভাতে এত সময় লেগেছে। তিনি বলেন, ‘এখানে যদি অ্যাকটিভ অথবা প্যাসিভ মানে আমাদের যেকোনো ধরনের ডিটেকশন সিস্টেম থাকত এবং তার সঙ্গে প্রোটেকশন সিস্টেম থাকত, তাহলে হয়তো এতটা দুর্ঘটনা ঘটতই না। আমাদেরও তদন্ত করে বের করতে হবে আসলে কখন, কীভাবে এই আগুনটা ধরে।’
গত শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগে। আগুন নেভাতে ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি কাজ করে। প্রায় সাত ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। রাত ৯টার দিকে বিমানবন্দর চালু হয়।