ইসলামের একটি সৌন্দর্য হচ্ছে সব মুসলমানের মধ্যে ভাইয়ের সম্পর্ক তৈরি করে দেওয়া, একজন অপরজনের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া। মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট থাকেই, তবু এর মধ্যে কেউ যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে জীবন গতিশীল হয়ে ওঠে।
সাহায্য মানে কেবল টাকাপয়সা দেওয়া নয়, সাহায্য অনেকভাবেই হতে পারে, এমনকি কথা দিয়েও সাহায্য করা যায়। কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে যদি বলেন, ‘দোয়া করি আল্লাহ আপনাকে বিপদমুক্ত করুন’, এটাও কিন্তু সাহায্য। কোনো ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির দাতাকে গিয়ে যদি অনুরোধ করেন, ‘তাকে আর কয়েকটা দিন সময় দিন, সে ঋণের টাকা জোগাড় করতে পারেনি’, এটাও তাকে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুনহাসান ও হোসাইন নবীজির দুই নাতি০৬ জুলাই ২০২৫সাহায্য মানে কেবল টাকাপয়সা দেওয়া নয়, সাহায্য অনেকভাবেই হতে পারে, এমনকি কথা দিয়েও সাহায্য করা যায়।নবীজি (সা.
যে লোক দুনিয়ায় কোনো মুসলিমের দোষক্রটিকে গোপন রাখে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন। যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য-সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তাআলাও তার সাহায্য-সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকেন।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস: ১৯৩০)
হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) এক ইহুদির কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। কথা ছিল খেজুর তোলার মৌসুমে ঋণ ফেরত দেবেন। রুমা নামের জায়গায় তাঁর ছোট্ট একটা খেজুরের বাগান ছিল, সেখানে খুব বেশি খেজুর ধরত না। এত কম খেজুর দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল।
এ জন্য তিনি ইহুদির কাছে বলে-কয়ে এক বছর সময় বাড়িয়ে নেন, মানে পরের বছর ঋণ পরিশোধ করবেন। কিন্তু পরের বছরও তিনি সুবিধা করতে পারেননি, ঋণ পরিশোধ করলে তাঁর হাত একদম খালি হয়ে যাবে। তিনি ইহুদিকে আরও এক বছর সময় দেওয়ার অনুরোধ করলেন, কিন্তু ইহুদি আর ছাড় দিতে রাজি নয়।
নবীজি (সা.) এ খবর শুনে সাহাবিদের বললেন, ‘চলো, জাবিরের জন্য ইহুদির কাছ থেকে সময় চেয়ে নিই।’
আরও পড়ুনমরিয়ম (আ.)-এর অলৌকিক ঘটনা০৯ মে ২০২৫যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য-সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তাআলাও তার সাহায্য-সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকেন।জামে তিরমিজি, হাদিস: ১৯৩০সাহাবিদের নিয়ে নবীজি (সা.) জাবির (রা.)-এর বাগানে এলেন। ইহুদির সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা হলো। ইহুদি বলল, ‘আবুল কাসেম, আমি তাকে আর সময় দেব না।’ [নবীজির (সা.) প্রথম সন্তানের নাম ছিল কাসেম, যিনি অল্প বয়সেই ইন্তেকাল করেন। এ জন্য আরব দেশের রীতি অনুযায়ী তাকে ‘আবুল কাসেম’ বা ‘কাসেমের বাবা’ বলা হতো।]
নবীজি (সা.) একবার বাগানটাকে ঘুরে দেখলেন, এরপর আবার ইহুদিকে অনুরোধ করলেন। কিন্তু ইহুদি কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। জাবির (রা.) নবীজিকে (সা.) কিছু খেজুর খেতে দিলেন। নবীজি (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘জাবির, তোমার ছাপরা ঘরটা কোন দিকে?’
জাবির (রা.) দেখিয়ে দিলে নবীজি (সা.) বললেন, ‘আমার জন্য বিছানা বিছিয়ে দাও।’ জাবির (রা.) তা-ই করলেন। নবীজি (সা.) সেখানে ঘুমালেন। ঘুম থেকে ওঠার পর জাবির (রা.) আবার খেজুর সামনে রাখলেন। তিনি সেগুলো খেলেন। এরপর আবার ইহুদিকে ছাড় দিতে বললেন, কিন্তু কিছুতেই ইহুদির মন গলল না। নবীজি (সা.) আবার বাগানটাকে ঘুরে দেখলেন। তারপর জাবির (রা.)-কে বললেন, ‘তুমি তার পাওনা খেজুর দিতে থাকো।’
এই বলে তিনি খেজুর পাড়ার স্থানে বসলেন।
জাবির (রা.) ইহুদির প্রাপ্য সব খেজুর দিয়ে দেওয়ার পরও দেখলেন অনেক খেজুর বেঁচে আছে। আসলে এটি ছিল নবীজির (সা.) একটি মোজেজা। জাবির (রা.) নবীজিকে (সা.) সুসংবাদ দিলেন। নবীজি (সা.) তখন বললেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমি আল্লাহর রসুল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৪৪৩)
[email protected]
মওলবি আশরাফ: আলেম, লেখক ও অনুবাদক
আরও পড়ুনসত্যবাদী রাখালের কাহিনি২০ জুলাই ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স হ য য সহয গ ত য আল ল হ ত আল করল ন বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় ব্যবসায়ী নিহত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে সন্ত্রাসীদের হামলায় মোস্তফা কামাল নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামে তার ওপর হামলা হয়। নিহত মোস্তফা কামাল একই গ্রামের মৃত মমিন মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মোস্তফা কামাল রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছে সড়কে একা পেয়ে সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা করে। তারা তার মাথা ও ঘাড়ে কোপ দিয়ে পালিয়ে যায়।
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনই বলছে, ‘গাজায় গণহত্যা চলছে’
বান্দরবানে যুবককে পাথর দিয়ে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার ২
একজন পথচারী মোস্তফা কামালকে সড়কের পাশে পরে থাকতে দেখে পরিবারের লোকদের খবর দেন। তারা তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক মোস্তফা কামালকে মৃত ঘোষণা করেন।
সরাইল থানার ওসি মোরশেদুল আলম চৌধুরী জানান, রাতে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের হামলায় এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মাসুদ