‘গুলি খাই জাগাত মরি গেছে হাঁচজন, আরও কতজন গুলি খাইছে তার ঠিক নাই’
Published: 5th, August 2025 GMT
‘বেলা তিনটা কি সাড়ে তিনটা অইবো। আমি দোকানের সামনে দাঁড়াই ছিলাম। হঠাৎ দেখি দক্ষিণ দিগেত্তুন একটা মিছিল আইতেছে। সবাইর হাতে লাডিসোডা। মিছিলের লোকজন থানার দিকে ঢিল ছুইটতে ছুইটতে আইতেছিল। থানার গেট বন্ধ থাকায় কেউ ডুইকতো হারে ন। এমন সময় থানার দুইতালার ছাদেরত্তুন পুলিশ গুলি শুরু করে। থানার গেটের সামনেই গুলিখাই হড়ি যায় কয়েকজন। রক্তে লাল অই যায় থানার সামনের কালা পাকা রাস্তা।’
গত বছরের ৫ আগস্ট নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানায় হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনার এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী মো.
ইমাম হোসেন বলেন, ‘এলাকায় গুজব ছড়ি হইড়ছিল থানার ভিতরে আমীলীগের (আওয়ামী লীগ) কিছু নেতা হলাই রইছে। হিয়াল্লাই লোকজন খেপি আছিল। হিয়ার মধ্যে থানারত্তুন পুলিশ গুলি কইরলে যন দুই-তিনজন মরি যায়, তন মানুষ আরও খেপি যায়। চারদিকেত্তুন মানুষ যে যা হাতের কাছে হাইছে, হেইডা লই থানার দিকে যায়। তখন পুলিশ আরও মারমুখী হই নির্বিচার গুলি করে। গুলি খাই জাগাত মরি গেছে হাঁচজন, আরও কতজন গুলি খাইছে তার ঠিক নাই। হিয়ার হরে মানুষজন থানার ভিতরে আগুন দেয়।’
গত বছরের ৫ আগস্ট নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানা এলাকায় পুলিশের গুলিতে স্থানীয় পাঁচ বাসিন্দা নিহত হন। একই দিনে নিহত হয়েছেন পুলিশের দুজন। পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তিরা হলেন ইয়াছিন আরাফাত (১৪), মোহাম্মদ হাসান (১৩), মাঈন উদ্দিন (৩৮), তানভির হোসেন (২৫) ও আসিফ হোসেন (২৬)। পুলিশের যে দুজন নিহত হয়েছেন তাঁরা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) বাছির উদ্দিন ও কনস্টেবল মো. ইব্রাহিম।
ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইমাম হোসেন জানান, ৫ আগস্ট সকাল থেকে সোনাইমুড়ী জিরো পয়েন্ট ও বাইপাস এলাকায় ছাত্র-জনতার মিছিল হয়েছে। দুপুরে যখন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের খবর এল, তখনো সবাই বিজয় মিছিল করেছে। সেখানেও অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি; কিন্তু বেলা তিনটার দিকে থানার সামনে আসা মিছিলটি সবকিছু উল্টে পাল্টে দেয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের থানায় আশ্রয় নেওয়ার গুজব ছিল আগুনে ঘি ঢালার মতো।
এলাকায় গুজব ছড়ি হইড়ছিল থানার ভিতরে আমীলীগের (আওয়ামী লীগ) কিছু নেতা হলাই রইছে। হিয়াল্লাই লোকজন খেপি আছিল। হিয়ার মধ্যে থানারত্তুন পুলিশ গুলি কইরলে যন দুই-তিনজন মরি যায়, তন মানুষ আরও খেপি যায়। চারদিকেত্তুন মানুষ যে যা হাতের কাছে হাইছে, হেইডা লই থানার দিকে যায়।—ইমাম হোসেন, প্রত্যক্ষদর্শীস্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই দিন একপর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ সদস্যদের কেউ থানার পেছনের দেয়াল টপকে, কেউ নালার ভেতর দিয়ে, থানা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এসআই বাছির উদ্দিন থানা থেকে দৌড়ে পার্শ্ববর্তী বাসায় গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে যান। সেখানে তাঁকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। থানার পেছন দিয়ে পালানোর সময় ইব্রাহিম নামের কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
সোনাইমুড়ী থানায় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে বেলা সোয়া তিনটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। দোতলাবিশিষ্ট থানা ভবনের পুরোটাই পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। থানার সামনে থাকা সরকারি গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়। হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ থেকে বাদ যায়নি থানার কর্মচারীদের আবাসনের জন্য নির্মিত বাসাবাড়িসহ অন্যান্য ভবনও। চার হাজারের বেশি গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কপিসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক মামলার নথিপত্রও পুড়ে যায়।
ছেলের কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন গত বছরের ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত কিশোর ইয়াছিন আরাফাতের মা পাখি বেগম। সম্প্রতি তোলাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: থ ন র স মন ৫ আগস ট এল ক য় র ভ তর আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
‘গুলি খাই জাগাত মরি গেছে হাঁচজন, আরও কতজন গুলি খাইছে তার ঠিক নাই’
‘বেলা তিনটা কি সাড়ে তিনটা অইবো। আমি দোকানের সামনে দাঁড়াই ছিলাম। হঠাৎ দেখি দক্ষিণ দিগেত্তুন একটা মিছিল আইতেছে। সবাইর হাতে লাডিসোডা। মিছিলের লোকজন থানার দিকে ঢিল ছুইটতে ছুইটতে আইতেছিল। থানার গেট বন্ধ থাকায় কেউ ডুইকতো হারে ন। এমন সময় থানার দুইতালার ছাদেরত্তুন পুলিশ গুলি শুরু করে। থানার গেটের সামনেই গুলিখাই হড়ি যায় কয়েকজন। রক্তে লাল অই যায় থানার সামনের কালা পাকা রাস্তা।’
গত বছরের ৫ আগস্ট নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানায় হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনার এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী মো. ইমাম হোসেন (৫৫)। থানার সামনের কুমিল্লা-নোয়াখালী বাইপাস সড়কের পশ্চিম পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতাল–সংলগ্ন এলাকায় চা-নাশতার দোকান রয়েছে তাঁর। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়।
ইমাম হোসেন বলেন, ‘এলাকায় গুজব ছড়ি হইড়ছিল থানার ভিতরে আমীলীগের (আওয়ামী লীগ) কিছু নেতা হলাই রইছে। হিয়াল্লাই লোকজন খেপি আছিল। হিয়ার মধ্যে থানারত্তুন পুলিশ গুলি কইরলে যন দুই-তিনজন মরি যায়, তন মানুষ আরও খেপি যায়। চারদিকেত্তুন মানুষ যে যা হাতের কাছে হাইছে, হেইডা লই থানার দিকে যায়। তখন পুলিশ আরও মারমুখী হই নির্বিচার গুলি করে। গুলি খাই জাগাত মরি গেছে হাঁচজন, আরও কতজন গুলি খাইছে তার ঠিক নাই। হিয়ার হরে মানুষজন থানার ভিতরে আগুন দেয়।’
গত বছরের ৫ আগস্ট নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানা এলাকায় পুলিশের গুলিতে স্থানীয় পাঁচ বাসিন্দা নিহত হন। একই দিনে নিহত হয়েছেন পুলিশের দুজন। পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তিরা হলেন ইয়াছিন আরাফাত (১৪), মোহাম্মদ হাসান (১৩), মাঈন উদ্দিন (৩৮), তানভির হোসেন (২৫) ও আসিফ হোসেন (২৬)। পুলিশের যে দুজন নিহত হয়েছেন তাঁরা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) বাছির উদ্দিন ও কনস্টেবল মো. ইব্রাহিম।
ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইমাম হোসেন জানান, ৫ আগস্ট সকাল থেকে সোনাইমুড়ী জিরো পয়েন্ট ও বাইপাস এলাকায় ছাত্র-জনতার মিছিল হয়েছে। দুপুরে যখন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের খবর এল, তখনো সবাই বিজয় মিছিল করেছে। সেখানেও অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি; কিন্তু বেলা তিনটার দিকে থানার সামনে আসা মিছিলটি সবকিছু উল্টে পাল্টে দেয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের থানায় আশ্রয় নেওয়ার গুজব ছিল আগুনে ঘি ঢালার মতো।
এলাকায় গুজব ছড়ি হইড়ছিল থানার ভিতরে আমীলীগের (আওয়ামী লীগ) কিছু নেতা হলাই রইছে। হিয়াল্লাই লোকজন খেপি আছিল। হিয়ার মধ্যে থানারত্তুন পুলিশ গুলি কইরলে যন দুই-তিনজন মরি যায়, তন মানুষ আরও খেপি যায়। চারদিকেত্তুন মানুষ যে যা হাতের কাছে হাইছে, হেইডা লই থানার দিকে যায়।—ইমাম হোসেন, প্রত্যক্ষদর্শীস্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই দিন একপর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ সদস্যদের কেউ থানার পেছনের দেয়াল টপকে, কেউ নালার ভেতর দিয়ে, থানা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এসআই বাছির উদ্দিন থানা থেকে দৌড়ে পার্শ্ববর্তী বাসায় গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে যান। সেখানে তাঁকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। থানার পেছন দিয়ে পালানোর সময় ইব্রাহিম নামের কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
সোনাইমুড়ী থানায় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে বেলা সোয়া তিনটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। দোতলাবিশিষ্ট থানা ভবনের পুরোটাই পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। থানার সামনে থাকা সরকারি গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়। হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ থেকে বাদ যায়নি থানার কর্মচারীদের আবাসনের জন্য নির্মিত বাসাবাড়িসহ অন্যান্য ভবনও। চার হাজারের বেশি গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কপিসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক মামলার নথিপত্রও পুড়ে যায়।
ছেলের কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন গত বছরের ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত কিশোর ইয়াছিন আরাফাতের মা পাখি বেগম। সম্প্রতি তোলা