সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ইতিহাসবিদ সুমন্ত ব্যানার্জী Economic and political Weekly'র ২০১১ সালের জুন সংখ্যায় 'Rabindranath―A Liberal Humanist Fallen among Bigoted Bhadroloks' শিরোনামে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছিলেন। এই শিরোনামটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাকে উৎসাহ যুগিয়েছে  নাট্যকার বার্নাড শ সম্পর্কে ভি আই লেনিনের তথাকথিত একটি মন্তব্য। A Good Man fallen among Fabians শিরোনামে বার্নাড শ'র যে জীবনীগ্রন্থটি এলিক ওয়েস্ট রচনা করেছেন, তা লেনিনকৃত মন্তব্য হিসেবে প্রচলিত হলেও তার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে এটা সত্য যে, ব্রিটিশ সমাজতান্ত্রিক সংগঠন ‘ফ্যাবিয়ান সোসাইটি’কে লেনিন পছন্দ করতেন না। এদের তিনি সুবিধাবাদী ও সমাজে অরাজকতা সৃষ্টিকারী হিসেবে বিবেচনা করতেন। সেই সংগঠনের সদস্য হিসেবে শ-এর কর্মকাণ্ডকে সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি তার দৃঢ় অঙ্গীকারের খেলাপ বলে লেনিনের কাছে মনে হয়েছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। তিনি তাঁর সাহিত্যজীবনের পুরোটা সময়ই উদারবাদের পক্ষে ও সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেলেও সার্বক্ষণিক তথাকথিত ভদ্রলোকদের নিন্দার নির্যাতনে জর্জরিত থেকেছেন। 

সাহিত্য সমালোচনার নামে ব্যক্তি-আক্রমণ, কুৎসা রটনা, মিথ্যা ছড়ানো থেকে শুরু করে সহিংস আচরণ পর্যন্ত করা হয়েছে। কিন্তু এসব নোংরা কর্মকাণ্ডের মোকাবেলায় তাকে কখনোই উগ্র হতে দেখা যায়নি। চরম ধৈর্য্যের সাথে মার্জিত ও পরিশীলিত আচরণ দিয়ে সব সামলে নিয়েছেন। সাহিত্যস্রষ্টা হিসেবে বিশ্বসাহিত্য মঞ্চে সম্মানের সেরা মুকুট পেলেও নিজের দেশের মানুষ, মূলত বাঙালি জাতির কাছেই তিনি বারংবার অসম্মানিত হয়েছেন। এদের সংকীর্ণতা তাঁকে প্রতিনিয়ত পীড়া দিয়েছে। তাই হয়তো আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘সাত কোটি সন্তানে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করোনি’―এ শুধু তাঁর মনঃকষ্টই ছিল না, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে এদের আচরণ তাঁকে এই আক্ষেপ মনে করিয়ে দিয়েছে।

উনিশ শতকের শেষ পাদে যখন সাহিত্যিক হিসেবে রবীন্দ্রনাথের উত্থান শুরু হলো তখন ঔপনিবেশিক ভারতে মূলত ১৮ শতকের ইংরেজদের দেওয়ান ও জমিদাররাই অভিজাত বাঙালি ভদ্রলোক হিসেবে বিবেচিত ছিল। তারাই সামাজিক-সাংস্কৃতিক আচরণের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করতেন। তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা সমাজের অন্যান্য দুর্বল শ্রেণির ওপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা এনে দিয়েছিল, কিন্তু উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে সেই কর্তৃত্ব ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত পেশাজীবীদের হাতে চলে যায়। তারাই হয়ে ওঠেন সমাজের সর্ববিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী গোষ্ঠী। এদের মধ্য থেকেই বিদ্যাসাগরের মতো সমাজ সংস্কারক, মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো সাহিত্যিকরা উঠে এসেছেন। ব্রাহ্মসমাজ ও বিভিন্ন খ্রিস্টান মিশনারির মাধ্যমে নতুন ভাবনার চর্চা শুরু হয়। ফলে পূর্ববর্তী রক্ষণশীল মানসিকতার বাঙালিদের সাথে নতুন ভাবনার অনুসারীদের বুদ্ধিবৃত্তিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। কিন্তু সেই বিরোধ যতটা তীব্র হয়ে উঠবে বলে মনে হয়েছিল তা কিন্তু হলো না, বরং উভয় শ্রেণির মাঝে রক্ষণশীলতার প্রশ্নে কিছু মিল দেখা গেল। ইংরেজি শিক্ষার বদৌলতে এরা ধোপদুরস্ত পোশাক পরতেন, ইংরেজদের আদব-কায়দা রপ্ত করার পাশাপশি হিন্দু ধর্মীয় রীতিনীতির প্রতিও অনুগত ছিলেন। তারা আধুনিক ও রক্ষণশীল চিন্তাধারার মধ্যে চমৎকার সমন্বয় করে চলতে পারতেন। 

আরো পড়ুন:

স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে মহাসড়কে রবি শিক্ষার্থীদের শেকল ভাঙার গান

রবীন্দ্রনাথ-নজরুল জীবনঘনিষ্ঠ কবি: শিক্ষা উপদেষ্টা

১৯ শতকের বিখ্যাত পণ্ডিত প্রদীপ সিনহা এই বিষয়টিকে জেমস মিল ও মনুর মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জেমস মিলের পুত্র জন স্টুয়ার্ট মিলও পিতার মতো একজন উদারনৈতিক চিন্তাবিদ ছিলেন যার লেখায় প্রভাবিত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই আইসিএস সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি তাঁর ‘আমার বাল্যকথা ও আমার বোম্বাই প্রবাস’ গ্রন্থে লিখছেন, ‘John Stuart Mill-এর Subjugation of Women গ্রন্থ আমার সাধের পাঠ্যপুস্তক ছিল; আর তাই পড়ে স্ত্রী-স্বাধীনতা নামে এক Pamphlet বের করেছিলুম। বিলেত গিয়ে আমি দেখতুম স্ত্রী পুরুষ কেমন স্বাধীনভাবে সামাজিক ক্ষেত্রে মেলামেশা করছে। গার্হস্থ্য জীবনে তাদের মেয়েদের কি মোহন সুন্দর প্রভাব! কত বিবাহিতা অবিবাহিতা রমণী সমাজের বিবিধ মঙ্গলব্রতে জীবন উৎসর্গ করে স্বাধীনভাবে বিচরণ করছেন। .

.. তাদের তুলনায় আমাদের স্ত্রীরা পর্দার অন্ধকারে কি খর্ব্বীকৃত বদ্ধ জীবন যাপন করেন। উপযুক্ত ক্ষেত্রের অভাবে তাদের মন কি সঙ্কীর্ণ, তাদের স্বাভাবিক জ্ঞানবল-ক্রীয়া কিছুই স্ফূর্ত্তি পায় না। বিলেত থেকে ফিরে এসে এই বিষয়ে পূর্ব্ব-পশ্চিমের পরস্পর বিপরীত ভাব আমাদের মনে স্পষ্ট প্রতিভাত হল... পর্দ্দা উচ্ছেদ স্পৃহা আরও জেগে উঠল।‘ কিন্তু পরিতাপের বিষয় আজও বাঙালিরা চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে এই মিল-মনুর দোলাচলে আটকা পড়ে আছেন।

বাঙালি ভদ্রলোকদের মধ্যে পূর্বের জমিদার বংশধরদের প্রাধান্য ছিল, যারা অর্থের জন্য গ্রামীণ জমিদারীর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। পাশাপাশি নতুন করে গড়ে ওঠা পেশাজীবী শ্রেণির মধ্যে ব্যারিস্টার, আমলা, অধ্যাপক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আর এদের নিচে ছিলেন বাঙালি মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত, যারা মূলত স্কুল-কলেজের শিক্ষক, উকিল, শহর-গ্রামের ডাক্তার, কেরানি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এই রকম একটা ভদ্রলোক শ্রেণির মাঝে সাহিত্যিক হিসেবে রবীন্দ্রনাথের পথ চলার সূচনা। বলা বাহুল্য, তার সেই সাহিত্যিক পরিভ্রমণ শুরু থেকেই যথেষ্ট প্রতিকুলতায় পূর্ণ ছিল। শুরু থেকেই রবীন্দ্রনাথ বাঙালি ভদ্রলোকদের কূটসমালোচনার শিকার হতে থাকেন। সেই সমালোচনা সাহিত্যের দোষ-ত্রুটি ধরার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ব্যক্তি আক্রমণের পর্যায়ে চলে যেত। সমালোচনার নামে কেউ কেউ নিয়ম করে নিন্দা করতেন। বিদ্যাসাগরের দৌহিত্র সুরেশচন্দ্র সমাজপতি নিজ সম্পাদিত ‘সাহিত্য’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের প্রচুর সমালোচনা করেছেন। ১৩০০ থেকে ১৩২৭ সাল পর্যন্ত তিনি ২১৫টির মতো প্রবন্ধ লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথের বৈরী সমালোচনা করে। 

১৩১৭ বঙ্গাব্দে ‘সাহিত্য’ পত্রিকায় তিনি রবীন্দ্রনাথের ভাষা সম্পর্কে তীব্র আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে লিখলেন, ‘রবীন্দ্রবাবু বাঙ্গালা ভাষাকে কোন পাতালে লইয়া যাইতে চান, তাহা আমরা অনুমান করিতে পারিতেছি না।’ 'নষ্টনীড়' ও ‘চোখের বালি’কে তার অশ্লীল মনে হয়েছে। তরুণী বিধবা বিনোদিনীর পুনঃবিবাহের আকাঙ্ক্ষাকে তিনি অনৈতিক ও সামাজিক আদর্শের অজুহাতে অপরাধ হিসেবে রায় দিয়েছেন। যার মাতামহ সমাজে বিধবা বিবাহের প্রচলন করেছিলেন, তাঁর দৌহিত্র সাহিত্যে বিধবা বিবাহের বক্তব্যকে মেনে নিতে পারছেন না। এই অনুদারতাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে! উত্তর প্রজন্মের প্রতিনিধিরা পূর্ব প্রজন্ম থেকে তাহলে কতটা এগিয়েছিল? 

সমালোচকদের এই দলে মোহিতলাল মজুমদার, সজনীকান্ত দাশ, ডিএল রায়ও ছিলেন। রবীন্দ্রনাথসহ তৎকালীন আরো কয়েকজন বাঙালি কবির বিরুদ্ধে ডিএল রায় অস্পষ্টতার অভিযোগ এনেছিলেন। ১৩১৩ বঙ্গাব্দে ’প্রবাসী’ পত্রিকায় ‘কাব্যের অভিব্যক্তি’ শিরোনামে তিনি লিখলেন, ‘বঙ্গের অস্পষ্ট কবিগণ বড়োই অধিক শেলি, ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও ব্রাউনিং-এর দোহাই দেন। এই ইংরাজ কবিগণ স্থানে স্থানে দুর্বোধ্য বটে। কিন্তু (ব্রাউনিং ছাড়া) তাঁহাদের কাব্যের মূল বা কেন্দ্রস্থ ভাব ধরিতে কষ্ট হয় না। কিন্তু আমাদের বঙ্গীয় কবিগণের কাব্যের কোনও ভাবই ধরা যায় না। আমাদের দেশের এই অস্পষ্ট কবিদের অগ্রণী শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’ এরপর আবার রবীন্দ্রভক্তদের আক্রমণ করে ১৩১৩ বঙ্গাব্দের বঙ্গদর্শনে ‘কাব্যের উপভোগ’ প্রবন্ধে লিখলেন, ‘...রবিবাবু যা’ই লেখেন তাতেই তাধিন-তাকি-ধিন-তাকি ম্যাও এঁও-ওঁও- বলে কোরাস দিতে পারি না, রবীন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গে বন্ধুত্বের খাতিরেও নয়।’

কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এই বিতর্কে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ করে লিখলেন, ‘কিন্তু দ্বিজেন্দ্রবাবু এ কথা মনে রাখিবেন, এই ক্ষোভের দ্বারাতেও আমি তাঁহার বা তাঁহার বন্ধুদের সম্মানহানি করিতে চাহি নাই।’ কিন্তু দ্বিজেন্দ্রলালের মাথায় যেন তীব্র রবিবিরোধিতার ভূত চেপে বসেছিল। ১৩১৬ বঙ্গাব্দে ‘সাহিত্য’ পত্রিকায় ‘কাব্যের নীতি’ রচনায় তিনি রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গানগুলি, যেমন, ‘তুমি যেও না এখনি’ ‘কেন যামিনী না যেতে জাগালে না’ ইত্যাদি গান লম্পট বা অভিসারিকার গান বলে অভিহিত করেন। তার মতে, ‘রবিবাবুর কবিতায় বৈষ্ণব কবিদিগের ভক্তিটুকু নাই, লালসাটুকু বেশ আছে। ... নারীজাতিকে দেখিয়া কেবল তাঁহার ‘মরমে গুমরি মরিছে কামনা কত’ …। তিনি ‘চিত্রাঙ্গদা’-কে পুড়িয়ে ফেলতে বললেন এবং রবীন্দ্রনাথকে ‘অশ্লীলতম’ প্রমাণ করতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করলেন না। তবে পিতার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছিলেন পুত্র দিলীপকুমার রায়। পিতা যে ভুল করেছিলেন তা তিনি পরে স্বীকার করেছেন, ‘যাঁকে তিনি এত শ্রদ্ধা করতেন সেই রবীন্দ্রনাথের বন্ধুত্ব তিনি হারালেন ঝোঁকের মাথায় তাঁকে অন্যায় আক্রমণ করে।’

সজনীকান্তের নিন্দুক হিসেবে খ্যাতি আছে। রবীন্দ্র-স্নেহধন্য হয়েও তিনি তাঁকে রেহাই দেননি। ‘শনিবারের চিঠি’তে নিয়মিত সমালোচনা প্রকাশের পাশাপাশি একবার কবিকে নিয়ে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দে ‘জয়ন্তী’ সংখ্যা বের করেছিলেন, যার প্রায় পুরোটাই বিদ্বেষ ও নিন্দায় পরিপূর্ণ ছিল। সেই বিদ্বেষের তীব্রতা এতটাই ছিল যে স্বয়ং সজনীকান্ত তার আত্মস্মৃতিতে লিখছেন, ‘মোটের উপর আমাদের প্রতিহিংসাপরবশতা শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করিয়া গেল।’

তবে রবীন্দ্রনাথের প্রথম কূট-সমালোচনা করেছিলেন কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ। রবিরাহু ছদ্মনামে ১৮৮৮ সালের ১৭ এপ্রিল ‘কড়ি ও কোমল’-এর প্যারোডি লিখে ‘মিঠেকড়া’ নাম দিয়ে প্রকাশ করেন। রবীন্দ্র কবিতা নিয়ে এটাই ছিল প্রথম প্যারোডি। 
‘একে রবি তায় কবি,
তায় মথুরায় ছবি
তায় প্রাণ খায় খাবি
বাঁশরি বাজে না তায়।

… ব্যাকরণ হারায়েছে
শুধু এক বাঁশি আছে,
ভয় হয় কবি পাছে
হারাইয়া ফেলে তাই’

১৮৯৯ সালে ‘সাহিত্য’ পত্রিকার জুন সংখ্যায় ‘প্রণয়ের পরিণাম’ নামে এক গল্প ছাপা হয়। লিখেছিলেন হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ। রুচিহীন এই গল্পটি ছিল রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর পরিবারকে আক্রমণ করে লেখা। পাঠকের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে রবীন্দ্রনাথের জীবনের কিছু বাস্তব ঘটনা, ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে এক কাহিনী ফাঁদা হয়েছিল। গল্পটিতে রবীন্দ্রনাথকে ‘বড়োঘরের ছোট ছেলে বলে’ উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এ বেলায়ও রবীন্দ্রনাথ তাঁর কোমল স্বভাবের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো প্রতিবাদ করেননি। বর্তমানের রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়রা হয়তো এদের দেখেই উৎসাহিত হয়ে থাকবেন।

১৯১১ সালে রবীন্দ্রনাথের ‘অচলায়তন’ পড়ে পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘... রবীন্দ্রনাথ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে হিন্দু ধর্মকে আক্রমণ করিয়াছেন। আজকাল অনেক ব্রাহ্ম ও কালাপাহাড় লেখক সাহিত্যের অন্তরাল হইতে প্রচ্ছন্নভাবে হিন্দুধর্মকে আক্রমণ করিতেছেন। ...’
‘নারায়ণ’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় বিপিনচন্দ্র পাল ‘স্ত্রীর পত্র’র পাল্টা একটি গল্প লেখেন। ‘মৃণালের কথা’ শিরোনামের গল্পে রবীন্দ্রনাথকে তীব্র কটাক্ষ করলেন। গল্পে বলা হল, ‘রবি ঠাকুরের লেখা পড়েই নাকি ভাল ভাল গৃহস্থ বধূরা বিগড়ে যাচ্ছে, রবি ঠাকুর আদর্শ ও চরিত্রবান স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা কুৎসা রটিয়ে সাধ্বী স্ত্রীর মন বিষিয়ে দিচ্ছেন।’

সাহিত্যিকদের সাথে রাজনীতিক বিপিন পাল, চিত্তরঞ্জন দাশরাও ছিলেন। এরা মনে করতেন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য কুশলতা দুর্বল। শুধু অভিজাত ও প্রভাবশালী দ্বারকানাথ ঠাকুরের নাতি হওয়ার কারণেই তিনি সর্বত্র সমাদর পান। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এই প্রথাপ্রেমী মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত বাঙালিদের সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন। ব্রাহ্ম সমাজের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত থাকার সুবাদে অনেক আগে থেকেই ঠাকুর পরিবার পৌত্তলিক আরাধনার আচার-অনুষ্ঠান থেকে দূরে ছিলেন। ফলে বাঙালি ভদ্রলোক সমাজের সাথে তাদের কিছুটা বিচ্ছিন্নতা ছিল। এরা শুধু রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের বিরূপ সমালোচনা করেই ক্ষান্ত ছিলেন না, তাঁর পরিবারের ব্রাহ্ম আদর্শে দীক্ষিত নারী সদস্যদের তীব্রভাষায় আক্রমণ করতেন। তাদের লেখাপড়া শেখা, খোলামনে সর্বত্র বিচরণ, এমনকি পোশাক পরিধানের বিষয়টি নিয়েও এরা নিন্দা করতেন। পিতৃতান্ত্রিক আদর্শে মানস গড়ে তোলা এই বাঙালি ভদ্রলোকেরা এগুলোকে স্বাগত জানাতে পারেননি।

বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনের সময়, ৪৫ বছর বয়সী রবীন্দ্রনাথ রাজনৈতিক নেতার মর্যাদা লাভ করেন। দেশাত্মবোধক গান রচনা, হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে রাখি বন্ধনের মতো কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মধ্যবিত্তদের মধ্যে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়। কিন্তু তা সাময়িক সময়ের জন্য। ‘স্বদেশী সমাজ’ (১৯০৪) লেখার কারণে রাজনীতিবিদরা তাঁর ওপর আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি সেখানে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ নিয়ে  যেমন কথা বলেছেন তেমনি আত্মনির্ভরশীলতার মাধ্যমে শক্তিশালী স্বদেশ গড়ে তোলা সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেছেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ উৎখাতের নামে পাশ্চাত্যের উদার মানবতাবাদী দর্শন বাতিল করে দেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন তিনি। এরপর ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর এই ভদ্রলোকেরা ছড়াতে লাগলেন যে, রবীন্দ্রনাথ তাঁর পাশ্চাত্যের বন্ধুদের দিয়ে সুপারিশ করিয়ে ও প্রভাব খাটিয়ে এই পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু সমাজে এদের ভূমিকা কী ছিল?

১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পর রবীন্দ্রনাথ চার্লস এন্ড্রজকে দিয়ে গান্ধীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন, তিনি যেন তাঁর সাথে পাঞ্জাবে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে অংশ নেন। গান্ধী বলে পাঠিয়েছিলেন যে, তিনি এখন সরকারকে বিব্রত করতে চান না। আহত রবীন্দ্রনাথ গেলেন চিত্তরঞ্জন দাশের কাছে। একটি প্রতিবাদ সভা ডাকতে অনুরোধ করলেন যেখানে তিনিও বক্তৃতা করবেন বলে জানালেন। সব শুনে চিত্তরঞ্জন দাশ তাঁকেই সভা আহ্বানের অনুরোধ করে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন। প্রতিবাদে কাউকে সম্পৃক্ত করতে না পেরে ব্রটিশের দেওয়া ‘নাইটহুড’ পরিত্যাগ করে তিনি নিজের প্রতিবাদটি জানালেন।

১৯৩০ এর দশকে সমাজে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে গেল, আর তা সাহিত্য ও রাজনীতি দুটোর ক্ষেত্রেই। উচ্চ মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকেরা, যারা মূলত ছিলেন ব্যারিস্টার, সরকারি উচ্চপদস্থ চাকুরিজীবী, জমিদারদের বংশধর, তারা নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের প্রতিনিধিদের হাতে কর্তৃত্ব ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। বামপন্থার উত্থান ও তাতে ব্যাপক শ্রমিক শ্রেণির মানুষের যোগদান অনেক কিছু বদলে দিল, যাতে সোভিয়েত বিপ্লবের প্রভাব ছিল। তখন বাঙালি সংস্কৃতির মাঠে তরুণ ও শিক্ষিত ভদ্রলোকদের আগমন ঘটল যারা এই রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হলো। তার আগেই গড়ে ওঠা ‘কল্লোল গোষ্ঠী’র সদস্যরা মূলত ফ্রয়েড, কান্ট, জয়েস, হ্যামসুন, এলিয়ট প্রমুখের সাহিত্য ভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, আর ‘পরিচয় গোষ্ঠী’ মার্ক্সবাদের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এই দুই শ্রেণির কাছেই অপ্রিয় ছিলেন। ‘কল্লোল’-এর প্রধান লেখকদের একজন বুদ্ধদেব বসু তো খোলাখুলিই বলেছেন, ‘যাকে কল্লোলযুগ বলা হয় তার প্রধান লক্ষণই বিদ্রোহ, আর সে বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্যই রবীন্দ্রনাথ’। কল্লোলের আরেক রূপকার অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত বলেন, ‘ভাবতুম রবীন্দ্রনাথই বাংলা সাহিত্যের শেষ, তারপরে আর পথ নেই। তিনি সবকিছুর চরম পরিপূর্ণতা।  কিন্তু 'কল্লোল' এসে আস্তে আস্তে সে ভাব কেটে যেতে লাগল।’ বলা হয়ে থাকে রবীন্দ্রোত্তর কাব্যভাষা নির্মাণে কল্লোল গোষ্ঠী সচেতনতার সাথে কাজ করেছে, কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে তখন 'রবীন্দ্রোত্তর' কথার বদলে 'রবীন্দ্র-ধুত্তোর' শব্দটি বেশি প্রচলিত ছিল। 

রবীন্দ্রনাথ যখন ছবি আঁকা শুরু করলেন তখন সে ছবি খুব জনসমক্ষে আনতেন না এবং তাঁর ছবির প্রথম প্রদর্শনী তিনি দেশের বাইরে আয়োজন করেছিলেন। তাঁর ছবি ভারতের দর্শকরা বুঝতে পারবে এমন বিশ্বাস তাঁর ছিল না এবং তাঁর ধারণা সঠিক ছিল। তাঁর ছবি সম্পর্কে একজন সমালোচকের  বিচিত্র সমালোচনা প্রচণ্ড বিরক্তিই উৎপাদন করেছিল:

‘অগ্রহায়ণ সংখ্যার ‘বঙ্গলক্ষী’তে আর্টপেপারে ব্রোঞ্জ ব্লু কালীতে ছাপা একটি ছবি দেখিয়া ভাবিতেছিলাম, সম্ভবতঃ এটা একটি সদ্য-উৎপাটিত পেঁয়াজ বা গোল মূলা; কিন্তু পরে নীচের লেখা দেখিয়া বুঝিলাম, এখানি কবি-সম্রাট রবীন্দ্রনাথ অঙ্কিত ‘গ্রামের মেয়ে!’ ‘নাম পরতাপ’ মাত্র দিব্যদৃষ্টির উদয় হইল ─ আবিষ্কার করিলাম লীলায়িত হস্তযুগল, কুঞ্চিত লুলিত শাড়ী, ভঙ্গীভরে ধনু-বঙ্কিম দেহযষ্টি ─ বুঝিলাম, গ্রামের মেয়ে বটে! কবির লেখনী যেমন জয়শ্রী বহন করিয়া আনিয়াছে, তুলিকাও তেমনি ভক্তজনকে রঙ্গের খেলা দেখাইয়া মুগ্ধ করুক’ (বঙ্গলক্ষী, ৪ ডিসেম্বর ১৯২৮)।

এসব দেখে বিরক্ত কবি শিল্পী যামিনী রায়কে এক পত্রে জানিয়েছিলেন :
‘আমার স্বদেশের লোকেরা যে আমার চিত্রকলাকে যে ক্ষীণভাবে প্রশংসার আভাস দিয়ে থাকেন আমি সেজন্য তাদের দোষ দেই নে। আমি জানি চিত্রদর্শনের যে অভিজ্ঞতা থাকলে নিজের দৃষ্টির বিচার-শক্তিকে কতৃত্বের সঙ্গে প্রচার করা যায় আমাদের দেশে তার কোন ভূমিকাই হয়নি। সুতরাং চিত্রসৃষ্টির গূঢ় তাৎপর্য বুঝতে পারে না বলেই মুরুব্বিয়ানা করে সমালোচকের আসন বিনা বিতর্কে অধিকার করে বসেন। সেজন্য এদেশে আমাদের রচনা অনেকদিন পর্যন্ত অপরিচিত থাকবে। আমাদের পরিচয় জনতার বাহিরে, তোমাদের নিভৃত অন্তরের মধ্যে।’ 

রবীন্দ্রনাথ উভয় দিকেই সমালোচিত হয়েছেন। মার্ক্সবাদীদের মধ্যে হীরেন মুখার্জি ও বিষ্ণু দে’ কবির কাছাকাছি ছিলেন। তারা কবির যৌক্তিক ও ইতিবাচক সমালোচনা করেছেন। কিন্তু সরোজ দত্ত ও বিনয় ঘোষ অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ছিলেন। তারা রবীন্দ্রনাথকে বুর্জোয়া ভাবাদর্শিক, ভুয়া আন্তর্জাতিকতাবাদী ইত্যাদি বলে নিন্দা করেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর এই সমালোচনা আরও প্রবল হয়েছে। মার্ক্সবাদী ভদ্রলোকেরা তাঁকে যাচ্ছেতাইভাবে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলতে লাগলেন। ভবানী সেন ধারাবাহিকভাবে রবীন্দ্রগুপ্ত ছদ্মনামে লিখে কবিকে ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। 

বামদলের এই বুদ্ধিজীবীদের OM (Official Marxists) বলা হতো, যারা সবকিছু দলীয় মতাদর্শের খোলনলচের মধ্যে ফেলে বিচার করতেন। আর সবসময় এমন করতে গেলে অনেক ইতিবাচক দিক খুঁজে পাওয়া যায় না, ভবানী সেনও পাননি। ১৯৬০ এর দশকে রবীন্দ্রনাথের বিরূপ সমালোচনা কিছুটা কমে আসে এবং অনেকে তাদের পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসে ভুল স্বীকার করেন। কিন্তু ১৯৭০ সাল থেকে মার্ক্সবাদীরা আবার তাঁর পেছনে উঠেপড়ে লাগে। সরোজ দত্ত এবার শশাঙ্ক ছদ্মনামে কবির বিরুদ্ধে লিখতে লাগলেন। মজার ব্যাপার হলো, ১৯৫০ সালের দিকে ভবানী সেন রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করতেন, সরোজ দত্ত সেই একই অভিযোগ নতুন করে করতে লাগলেন। তবে ভবানী সেন ভুল স্বীকার করলেও সরোজ দত্ত সে সুযোগ পাননি ১৯৭০ সালে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার কারণে। 

তবে এ প্রসঙ্গে একটি অদ্ভুত পর্যবেক্ষণ ভাবনার খোরাক জোগায়। বাঙালি ভদ্রলোকদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাস উভয়ই ব্যক্তিকেন্দ্রিক যা সামন্ততান্ত্রিক ঐতিহ্যের গুরু-উপাসনার মতো। উনিশ শতকে রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ ও ঋষি অরবিন্দ ছিলেন ধর্মীয় গুরুর মর্যাদায়, আর গান্ধী, সুভাষ বোস, স্টালিন, মাও সে তুং, চারু মজুমদার প্রমুখ রাজনৈতিক গুরুর আসনে। একবিংশ শতাব্দীতে অনেক গুরু, কিন্তু সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে শুধু রবীন্দ্রনাথ। আহ্লাদ করে ভক্তরা তাঁকে ‘গুরুদেব’ বলেও ডাকেন। এরা তাঁর গান শোনেন, জন্মদিন পালন করেন এবং পাশ্চাত্যে তাঁকে বাঙালি সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে প্রচার করেন। কিন্তু এরাই আবার ব্যক্তি-পারিবারিক-সামাজিক জীবনে প্রাচীন সামন্ততান্ত্রিক প্রথা চালু রাখেন। জাতপাতের বিভাজন ও অস্পৃশ্যতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলান না। কখনো জেমস মিল ও মনুর মধ্যে, আবার কখনো মিল ও মার্ক্সের মধ্যে সমঝোতা করে চলতে পছন্দ করেন। কেউ কেউ তাঁর পূজা পর্যায়ের গানের অসাধারণ ভক্ত, কিন্তু নারী অধিকার, পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ, প্রচলিত সামাজিক প্রথার বিরোধিতা, অস্পৃশ্যতা, প্রান্তিক মানুষের সমস্যা, শ্রেণি-বিভাজনের বিরুদ্ধে কবির অবস্থানের তীব্র বিরোধিতা করেন। 

এই ভদ্রলোকেরা কখনোই তাকে সঠিকভাবে মানবিক উদারবাদের নিক্তিতে ওজন করেননি। বাংলাদেশে তাঁর বিরোধিতার আরেক চেহারা আছে যা নিয়ে আরেকবার লিখতে হবে। এই রচনার কলেবর বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে সত্য হলো, রবীন্দ্রনাথকে আমরা আমাদের জীবনের সাথে সঠিকভাবে জুড়তে পারিনি। কিন্তু এতো নিন্দা যিনি সয়েছেন তাঁর প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? এত বিরূপ সমালোচনার মুখে অবিচল কবি বলেছেন, ‘বিদ্বেষে কোনো সুখ নাই, কোনো শ্লাঘা নাই .. জীবন প্রদীপের তেল তো খুব বেশি নয়, সবই যদি রোষে দ্বেষে হুহু শব্দে জ্বালাইয়া ফেলি, তবে ভালোবাসার কাজে এবং ভগবানের আরতির বেলায় কি করিব...?’ কিন্তু এত উদারতা এই সমাজ ধারণ করতে পারেনি, এখনো পারে না। তাই একজন উদারবাদী, সুচেতনায় ঋদ্ধ মানুষ গ্রহণ-বর্জনের সংকটের মাঝে পড়ে অবমূল্যায়িত হতে থাকেন। এ সত্য মেনে নিয়ে তাঁকে অনুধাবনের নতুন প্রচেষ্টার সূচনা হোক― সেই প্রত্যাশা রইল। 
    

তারা//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র ক সব দ ন রব ন দ র র জন ত ক র পর ব র কর ছ ল ন কল ল ল কর ছ ন বল ছ ন ভ বন র জ বন র আম দ র ক র কর ল গল ন প রক শ ণ করত আদর শ করল ন প রথম শতক র করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

জবি রেজিস্ট্রারের অসদাচরণের প্রতিবাদে মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) রেজিস্ট্রারের অসদাচরণ ও শিক্ষককে অপমান করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (৩ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা, জগন্নাথে হবে না’, ‘এক দুই তিন চার, রেজিস্ট্রার গদি ছাড়’, ‘স্বৈরাচারের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

আরো পড়ুন:

২ দিনের মধ্যে চাকসুর তফসিল ঘোষণা না করলে চবি শাটডাউনের হুঁশিয়ারি

রাবির সাবেক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’র অভিযোগ

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম খলিল বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, আমরা কোনো যৌক্তিক প্রশ্ন বা সমস্যা নিয়ে রেজিস্ট্রার অফিসে গেলে সহানুভূতির পরিবর্তে তিনি অপমানজনক ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানান। একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার এমন আচরণ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এমনকি আমাদের বিভাগের স্যারের সঙ্গেও একই রকম অসদাচরণ করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলতে চাই, জুলাই পরবর্তী সময়ে এ ধরনের স্বৈরাচারী আচরণ মেনে নেওয়া হবে না।”

একই বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা তিনি এখন ক্ষেপে যাওয়া বাছুরের মতো আচরণ করছেন। তিনি যদি ক্ষেপতেই চান, তাহলে মাঠে যাক। স্বৈরাচারের দোসরদের ঠিকানা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে না।”

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষক ইউজিসি ফান্ডেড স্কলারশিপ পাওয়ার পর শর্ত অনুযায়ী একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তিপত্রে রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর নিতে গেলে অপমানজনক আচরণের শিকার হন। স্বাক্ষর দিতে গড়িমসি, লাঞ্চের অজুহাত দেখিয়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে যাওয়া এবং দ্রুত চাইলে আরো দেরি হবে বলে মন্তব্য করে শিক্ষককে বারবার হয়রানি করেন রেজিস্ট্রার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে অপমান করা মানে পুরো শিক্ষার্থী সমাজকেই অসম্মান করা উল্লেখ করে তারা দ্রুত এই ঘটনার তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুদ্ধেও মানবিকতা মহানবী (সা.) অনন্য শিক্ষা
  • আরপিও সংশোধন নিয়ে ইসির নবম কমিশন সভা বৃহস্পতিবার
  • শরণার্থীদের জন্য মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা
  • ‘ভাই’ বলায় সাংবাদিকের উপর ক্ষেপলেন এসিল্যান্ড
  • আমানত রক্ষা করা ইসলামের সামাজিকতার সৌন্দর্য
  • সুনামগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে দুর্ভোগ চরমে
  • আল-আকসায় ঢুকে প্রার্থনা করলেন ইসরায়েলি মন্ত্রী
  • জবি রেজিস্ট্রারের অসদাচরণের প্রতিবাদে মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা