সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও নারী কেন ন্যায্য হিস্যা পাবে না
Published: 7th, August 2025 GMT
সাধারণভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনকেই গণতন্ত্র বলে। কোনো একটি বৃহৎ পরিসরে, যেমন রাষ্ট্রে জনমতের সংখ্যাগরিষ্ঠতা মাপা সহজ নয়। তাই বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে মানুষ। মাপার নিক্তি যেমনই হোক না কেন, মূল প্রতিপাদ্য থাকে সবচেয়ে বেশি মানুষের মত ও তাঁদের প্রতিনিধি বেছে নেওয়া। এর আলোকে সবচেয়ে প্রচলিত ও জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো দেশকে সংসদীয় আসনে বিভক্ত করে তাতে সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের চর্চা।
সাধারণ হিসাবে যাদের কোনো কিছু পাওয়ার কথা নয়, সেটা তাদের জন্য সংরক্ষিত রাখাকেই কোটা বা ইতিবাচক বৈষম্য বলে। আর যেটা স্বাভাবিকভাবেই পাওয়ার কথা, সেটাকে বলে ন্যায্য হিস্যা। মোটকথা, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য যা বরাদ্দ থাকে, তাকে কেউ কোটা বলে না, বলে অধিকার।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে দেশের নারী-পুরুষের অনুপাত হলো ৫০ দশমিক ৯৩ ও ৪৯ দশমিক শূন্য ৭। নিকটতম পূর্ণ সংখ্যায় দেখালে জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারী ও ৪৯ শতাংশ পুরুষ। সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন, ন্যায্য হিস্যা আর দেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যাধিক্য—সবকিছু একত্রে বিবেচনায় নিলে দেশের ৫১ শতাংশ সংসদ সদস্য নারী হওয়াই স্বাভাবিক। সে হিসাবে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ সংসদ সদস্য নারী হওয়া উচিত ছিল!
সংখ্যাগরিষ্ঠের রাজনৈতিক আধিপত্য ফলানোর রীতি অনুসারে যেহেতু জনসংখ্যায় নারী বেশি, সেহেতু কিছু ব্যতিক্রম বাদে ৩০০ আসনেই নারী ভোটারও বেশি হওয়ার কথা। এমন একটা দৃশ্যের কথা ভাবা যাক: কোনো এক ‘স্নিগ্ধ’ নির্বাচনী ভোরে দেশের নারীরা যদি নিজেদের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বঞ্চিত বর্গ হিসেবে ধরে এই বলে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন যে তাঁরা কেবল একজন নারীকেই ভোট দেবেন। তাহলে আক্ষরিক অর্থেই পুরুষদের ‘হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিয়ে’ ৩০০ জন এমপিই নারী নির্বাচিত হবেন!
কিন্তু রাষ্ট্রের এই সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে বাস্তবে কীভাবে দেখা হয় বা কতটুকু স্থান দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক পরিসরে? সদ্য সমাপ্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে জাতীয় সংসদে নারীদের সরাসরি নির্বাচন বা প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে যা হলো, সেটাকে অনেকে উল্টো যাত্রার সঙ্গে তুলনা করেছেন। জাতীয় সংসদে শুধু পুরুষদের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয় না, নারী-পুরুষনির্বিশেষে সব মানুষের জন্য। অথচ সেসব আইনে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ, অর্থাৎ নারীর মতামত দেওয়ার সুযোগ না থাকা কোনো ইতিবাচক ঘটনা নয়।
সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করেছিল, স্থানীয় সরকারব্যবস্থার আদলে প্রতি তিনটি সাধারণ আসনের জন্য একটি নারী আসন নির্ধারণ করে তা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের মতে, প্রতিটি আসনে একজন পুরুষের পাশাপাশি একজন নারীও নির্বাচিত হওয়া উচিত। অন্যদিকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সংসদে অতিরিক্ত ১০০ আসন সংযোজন করে সেগুলো নারীদের জন্য ঘূর্ণমানভাবে সংরক্ষণের প্রস্তাব দেয়।
সংসদে নারী আসনের ব্যাপারে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত যা চলছে, তা হলো ‘সংরক্ষিত আসন’, যা ক্রমে ক্রমে বেড়ে বর্তমানে ৫০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে মনোনীত হন। এতে জনগণ সরাসরি ভোট দিয়ে এই নারী সদস্যদের নির্বাচিত করতে পারেন না। এটাকে নাগরিক সমাজ ও নারী অধিকারকর্মীরা বহুদিন ধরেই অগণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমূলক বলে আসছেন। কিন্তু জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যধারায় এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রশ্নে মতৈক্য তো দূরে থাক, এতই মতভিন্নতা দেখা গেল যে শেষে নারীদের পক্ষ থেকে জানাতে হয়, এই মতভেদের তোড়ে যেন বিদ্যমান সংরক্ষণব্যবস্থাও ভেস্তে না যায়!
এরপর কমিশন সর্বশেষ যে প্রস্তাব দেয়, তা হলো আগের ৫০ সংরক্ষিত আসন রেখেই সাধারণ আসনে আগামী নির্বাচনে কমপক্ষে ৫ ভাগ আসনে নারীকে মনোনয়ন দেওয়া এবং এভাবে তা ৩৩ ভাগে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত ৫ ভাগ হারে বাড়াতে হবে। কিন্তু এতেও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা আপত্তি দেওয়া হয়েছে। এটা নাগরিক ও নারী সমাজে গভীর ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দেয়। নারীনেত্রীরা ‘ভোট দেবেন না’ বলেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ‘ভোট দেব না’কে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে চাপ সৃষ্টি করার পরামর্শ দিতে দেখা গেছে। (প্রথম আলো, ২ আগস্ট ২০২৫)
এ ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বে আইনসভায় নারীর সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী প্রথম দেশ রুয়ান্ডার অভিজ্ঞতা থেকে পাঠ নিতে পারি। সর্বশেষ নির্বাচনে সে দেশের নিম্নকক্ষ চেম্বার অব ডেপুটিজে ৬৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং উচ্চকক্ষ সিনেটে ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ আসনে নারী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ প্রশ্নে এমা রুবাগুমিয়া ফুরাহা নামের রুয়ান্ডার একজন নারী আইনপ্রণেতা বলেন, ‘পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমরা নারীরা রুয়ান্ডার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি। এখন যদি আমাদের বাদ দেওয়া হতো, তবে কীভাবে আমরা উন্নয়ন নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে কথা বলতাম? আজ আমরা যে আইনই বিবেচনা করি, তাতে লিঙ্গসমতার বিষয়টি সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়—পরিবার–সংক্রান্ত বিষয়ে তো বটেই, বাজেট ও দরপত্র আহ্বানেও।’ (ফরাসি সাময়িকী লা মদে, ২০২৪)
সাংবিধানিক সংরক্ষণের ভেতর দিয়েই এটা সম্ভব হয়েছে। হুতু-তুতসিদের মধ্যে সংঘটিত ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ ও গণহত্যার পর ২০০৩ সালে গৃহীত রুয়ান্ডার সংবিধানে সংসদীয় আসনসহ সব রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণী পদে নারীদের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়। ২০০৩ সালের নির্বাচনে নারীরা সংসদের ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ আসন পেয়েছিলেন। ২০০৮ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশ এবং ২০১৩ সালে এটি বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করে, যা ছিল ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ। একটি প্রবলভাবে হিংসাবিদীর্ণ ও রক্ষণশীল রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করে একটি স্থিতিশীল, লিঙ্গসাম্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে উন্নীত করার অভিযাত্রায় দেশটির নারীরাই প্রধান ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
নারীদের সরাসরি জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করার বিষয়টি দয়াদাক্ষিণ্য বা অনুরোধ-উপরোধের বিষয় নয়, গুরুতর রাজনৈতিক বিষয়। তাই এ প্রশ্নের ফয়সালা রাজনৈতিকভাবেই হতে হবে। এখানে ন্যায্যতা কোনো গ্যারান্টি দিতে পারে না। কিন্তু রাজনীতি তো ক্ষমতা আর ক্ষমতা তো যুক্তি বা ন্যায্যতা দিয়ে চলে না। এখানে রাজপথে ক্ষমতা দেখাতে হয়। রাজনৈতিক দলগুলো কেবল রাজপথ থেকে দেখানো শক্তি বা শোডাউন আর ক্ষমতাকাঠামোর চাপ—এ দুই ক্ষমতাকেই পরোয়া করে। তাই প্রাথমিকভাব এ বিষয়ে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা পাওয়ার প্রশ্নে নারীদের রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হওয়া ভিন্ন কোনো পথ নেই।
এ ক্ষেত্রে একটি ন্যায্য প্রস্তাব এমন হতে পারে যে সংসদীয় আসনের মধ্যে নারী ভোটারসংখ্যা বিবেচনায় শীর্ষ ১০০ আসনে শুধু নারীরাই প্রার্থী হতে পারবেন। যেকোনো জাতীয় নির্বাচনের মৌসুমে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে সব আসনের নারী ভোটারদের একটা সারণি করলেই বেরিয়ে আসবে, কোন ১০০ আসনে নারী ভোটার বেশি। পরবর্তী নির্বাচনী মৌসুমে একইভাবে তালিকা করে ১০০ নারী আসন চিহ্নিত হবে।
নারী আসন নিয়ে চলমান তর্কবিতর্কে সীমিত হলেও নারীদের যে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তাতে একটি ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে—দেশে গণতন্ত্রের পরিসর বাড়ছে এবং প্রতিনিধিত্ব নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীদের জন্য সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করা হলে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নারীদের ভূমিকা আরও স্বীকৃতি পাবে, যা আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী ও টেকসই করবে। সংসদে নারীদের নিছক হাজির থাকা নয়; বরং সরাসরি নির্বাচিত, প্রকৃতভাবে ক্ষমতায়িত আইনপ্রণেতার সরব উপস্থিতি কাম্য; যাঁরা জবাবদিহি করবেন শুধু দল বা নেতৃত্বের কাছে নয়, সরাসরি নাগরিকদের কাছে।
মিল্লাত হোসেন আইন ও সংবিধানবিষয়ক লেখক
*মতামত লেখকের নিজস্ব
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র জন য প রস ত ব র জন ত ক ব যবস থ স রক ষ ক ষমত সদস য আসন র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমতি ছাড়াই মেটার বিজ্ঞাপনে স্কুলশিক্ষার্থীদের ছবি
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। মেটা তার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিজ্ঞাপনে স্কুলছাত্রীদের ছবি ব্যবহার করছে বলে সমালোচনা চলছে। স্কুলগামী কিশোরী শিক্ষার্থীদের ছবি ব্যবহার করছে মেটা। জানা গেছে, এসব ছবি ৩৭ বছর বয়সী পুরুষদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক অভিভাবক বিষয়টিকে ভয়ানক ও বিব্রতকর বলে মনে করছেন।
দেখা গেছে, ৩৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে মেটার খুদে ব্লগ লেখার সাইট থ্রেডসে যোগ দেওয়ার বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হচ্ছে। ইনস্টাগ্রামে এই বিজ্ঞাপন দেখা যায়। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের পোস্টে ১৩ বছর বয়সী স্কুল ইউনিফর্ম পরা নারী শিক্ষার্থীর মুখ ও নাম দেখা যায়।
মেটা শিশুদের ছবি ব্যবহার করেছে; কারণ, তাদের অভিভাবকেরাই স্কুলে থেকে ফেরার পরে তোলা এসব ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন। অভিভাবকেরা অবশ্য মেটার বিজ্ঞাপনের নিয়ম জানতেন না। একজন মা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট প্রাইভেট করা ছিল। প্রাইভেট থাকার পরেও বিভিন্ন পোস্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে থ্রেডসে চলে গেছে। আরেক অভিভাবক জানান, তিনি তাঁর মেয়ের ছবিটি একটি পাবলিক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছিলেন। সেই ছবি পরে অপরিচিত ব্যক্তির কাছে শিশুর ছবিসহ সাজেশন হিসেবে দেখানো হচ্ছিল। এসব ছবি দেখা এক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন, এমন পোস্ট উদ্দেশ্যমূলকভাবে উসকানিমূলক। এতে সংশ্লিষ্ট শিশু ও তাদের পরিবারকে শোষণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ছবিতে থাকা ১৩ বছর বয়সী এক মেয়েশিশুর বাবা এই ঘটনাকে পুরোপুরি ভয়ানক বলে অভিহিত করেছেন। বিভিন্ন ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সব স্কুলছাত্রীই ছোট স্কার্ট পরে আছে। তাদের পা হয় উন্মুক্ত বা স্টকিং পরা সবাই। সেই বাবা জানান, আমার শেয়ার করা একটি ছবি ফেসবুকের মতো এমন একটি বিশাল কোম্পানি যৌনতাপূর্ণ উপায়ে পণ্যের বিপণনের জন্য ব্যবহার করেছে। বিষয়টি দেখে আমি খুবই বিরক্ত বোধ করেছি।
মেটা অবশ্য জানিয়েছে, এসব ছবি তাদের নীতি লঙ্ঘন করে না। মেটার ভাষ্যে, যেসব ছবি কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ও মানদণ্ড মেনে জনসম্মুখে শেয়ার করা হয়, তা ব্যবহার করে অন্যদের থ্রেডস ভিজিট করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। মেটার সিস্টেম কিশোর-কিশোরীদের মাধ্যমে শেয়ার করা থ্রেডস পোস্ট সুপারিশ করে না। যেসব ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, তা আসলে প্রাপ্তবয়স্কদের অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন দেখা এক ব্যক্তি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শুধু স্কুলছাত্রীদের ছবি দিয়েই প্রচারমূলক পোস্ট পাঠানো হচ্ছে। কোনো স্কুল ইউনিফর্ম পরা ছেলের ছবি দেখা যায়নি। এখানে যৌনতার একটি দিক আছে বলে মনে হচ্ছে।
১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর মা জানান, আমার মেয়ের স্কুলে যাওয়ার একটি সাধারণ ছবি প্রকাশ করেছি। আমার কোনো ধারণাই ছিল না ইনস্টাগ্রাম থেকে তা নিয়ে প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি অনেক জঘন্য। সে একজন নাবালিকা মাত্র। এ ধরনের কাজে কখনোই আমি সম্মতি দিতাম না। টাকার বিনিময়েও আমি স্কুল ইউনিফর্ম পরা মেয়ের ছবি দিয়ে অনলাইন মাধ্যমে লোক আকর্ষণ করার অনুমতি দিতাম না। যিনি এই অভিযোগ করেছেন সেই মায়ের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২৬৭ জন ফলোয়ার আছেন। আর তাঁর সন্তানের পোস্টটি প্রায় ৭ হাজার ভিউ পেয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই ফলোয়ার নয়। অর্ধেক দর্শক ৪৪ বছরের বেশি বয়সী ও ৯০ শতাংশই পুরুষ।
আরেকজন মা অভিযোগ করে বলেন, মেটা এমন কিছু করছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। আমাদের কিছু না জানিয়ে এসব হচ্ছে। মেটা কনটেন্ট তৈরি করতে চায়। এটি খুবই ঘৃণ্য কাজ। থ্রেডসে বিজ্ঞাপনটি কে তৈরি করেছে? প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য মাধ্যমের প্রচারে শিশুদের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে কেন?
মেটা জানিয়েছে, এ ধরনের পোস্টকে রেকমেন্ডেশন টুলের মাধ্যমে অন্যদের সামনে প্রদর্শন করা হচ্ছে। কোম্পানির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, শেয়ার করা ছবি আমাদের নীতি লঙ্ঘন করে না। এসব ছবি অভিভাবকেরা জনসমক্ষে পোস্ট করেছেন। আমাদের ব্যবস্থায় টিনএজারদের নিজেরা শেয়ার করা ছবি থ্রেডস পোস্টে সুপারিশ করা হয় না। ব্যবহারকারীরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন মেটা তাদের পাবলিক পোস্টকে ইনস্টাগ্রামে সুপারিশ করবে কি না।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনের থাকা ৩৭ বছর বয়সী ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী জানান, কয়েক দিন ধরে আমাকে থ্রেডসে যাওয়ার জন্য মেটার বিজ্ঞাপন বারবার দেখানো হয়। সেখানে শুধু অভিভাবকের পোস্ট করা স্কুল ইউনিফর্ম পরা মেয়েদের ছবি ছিল। কিছু ছবিতে তাদের নামও দেখা যাচ্ছিল। একজন বাবা হিসেবে, আমি মনে করি মেটার এ ধরনের পোস্ট প্রাপ্তবয়স্কদের লক্ষ্য করে প্রচারের জন্য উপযুক্ত নয়।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান