দায়িত্ব ছেড়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সালাহউদ্দিন
Published: 5th, November 2025 GMT
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করছেন মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। আদতে সিনিয়র সহকারী কোচ হলেও সালাহউদ্দিন প্রভাব খাটিয়ে প্রধান কোচ ফিল সিমন্সকে দর্শক বানিয়ে দল নিজের মতো করে পরিচালনা করছিলেন।
কিন্তু তার কাজ নিয়ে প্রবল সমালোচনা হচ্ছিল। যে আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে তাকে নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তার কাছাকাছিও যেতে পারেননি তিনি। সহকারী কোচের পাশাপাশি ব্যাটিং কোচেরও দায়িত্ব সামলে যাচ্ছিলেন। উল্টো তার সময়ে ব্যাটিং হয়েছে আরো ছন্নছড়া। পরিকল্পনার ঘাটতি, পারফরম্যান্স গড়পড়তা এবং নেতৃত্বের গুনাবলিতে একেবারে তলানিতে অবস্থান করছিলেন এসিসি ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া থেকে লেভেল থ্রি কোচিং প্রশিক্ষণ নেওয়া সালাহউদ্দিন।
স্থানীয় কোচদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিচ্ছেন তিনি। তবে তার গ্রহণযোগ্যতা, সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। সালাহউদ্দিনের মেয়াদ ছিল ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন দুই টেস্ট ও তিন টি-টোয়েন্টির হোম সিরিজের পর আর এই দায়িত্বে থাকছেন না মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। নিজ থেকেই সরে যাচ্ছেন তিনি।
বিসিবিতে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দিতে আজ সকালে মিরপুরে হাজির হয়েছেন। সকাল সাড়ে দশটার কিছু সময় পর ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগে যান। সেখানে নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তাকে না পেয়ে প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন সুজনের কাছে জমা দিয়ে আসেন। বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরে কথাবার্তাই নাকি বন্ধ সালাহউদ্দিনের।
কেন নিজ থেকেই সরে গেলেন সালাহউদ্দিন? জানা গেছে, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে কোচিং পদ থেকে সালাহউদ্দিন সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানান। তবে ভেতরের খবর, সমর্থক এবং গণমাধ্যমের সমালোচনা নিতে পারছিলেন না তিনি। যে কারণে নিজের কাজ উপভোগ করতে পারছিলেন না। এজন্য এক মাসের টার্মিনেশন পিরিয়ড শেষে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান সালাহউদ্দিন।
বিসিবিতে যোগদানের আগে মাসকো সাকিব ক্রিকেট একাডেমি, বিপিএল, ঢাকা লিগের একাধিক ক্লাবকে কোচিং করিয়েছেন তিনি। সামনে হয়তো তাকে আবার ঢাকা লিগে দেখা যেতে পারে।
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ল হউদ দ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় ঢাবিতে মানবেন্দ্র লারমাকে স্মরণ
সাবেক আইনপ্রণেতা ও বিপ্লবী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এক স্মরণসভায় তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
স্মরণসভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এম এন লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।
মানবেন্দ্র লারমা গরিব মেহনতি মানুষের নেতা উল্লেখ করে স্মরণসভায় সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘তিনি কেবল পাহাড়ি মানুষের নেতা ছিলেন না। বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সমগ্র নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। তিনি বাহাত্তরের সংবিধানে আদিবাসী, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সে সময় সংসদে দাড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন যে তিনি একজন চাকমা, একজন চাকমা কোনো দিন বাঙালি হতে পারেন না।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘জুলাই সনদে আজকে আদিবাসী মানুষের কথা বলা নেই। অথচ কেবল মুখে বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। বিগত সময়ের দলীয় সরকার নাহয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি। কিন্তু গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পাহাড়ি আদিবাসীরা কমপক্ষে দুটি সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিভাবে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো উচ্চারণ করেনি।’
ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান যে চেতনা নিয়ে শুরু হয়েছিল, আজ সেই চেতনা মৌলবাদী শক্তির কাছে লুট হয়ে গেছে। সত্তরের দশকে নতুন বাংলাদেশে মহান নেতা মানবেন্দ্র লারমা সেই স্বপ্ন দেখছিলেন, যে স্বপ্ন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার, গরিব মেহনতি তথা নিপীড়িত পাহাড়ি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বুনেছিলেন।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে নিপীড়িত মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়নি, নারী-পুরুষের বৈষম্য বিলোপ এবং মেহনতি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়নি। সে সময় শোষিত মানুষের বন্ধু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাঁদের হয়ে কথা বলেছেন। তিনি সংবিধান প্রণয়নের সময় শ্রমিক, গরিব ও আদিবাসী নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছিলেন।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের যত রাজনৈতিক দল আছে, তারা অন্য জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো মানসিকতা এখনো তৈরি করতে পারেনি। ভোটের আগে মুখে বললেও তা বাস্তবে বাস্তবায়ন করে না।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জাতির জন্য ছাত্রজীবন থেকে অধিকারের কথা বলেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সংবিধান যখন বাঙালি বলে আদিবাসী মানুষের পরিচয় করে দিতে চেয়েছিল, সেই সময় গণপরিষদে এম এন লারমা প্রতিবাদ করেছিলেন।’
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন লেখক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, সাংবাদিক সাইফুর রহমান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও নারীনেত্রী শিরিন হক। স্মরণসভা শেষে গান, কবিতা পাঠ ও প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।