মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারী হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক, হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন
Published: 11th, August 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন গ্রামের নারীরা। গ্রেপ্তার আতঙ্কে এক মাসের বেশি সময় ধরে কড়ইবাড়ি গ্রাম পুরুষশূন্য বলে দাবি করেছেন মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শতাধিক নারী। এ সময় তাঁরা দুই সন্তানসহ নারী হত্যাকে ‘গণপিটুনি’ ও নিহত রোকসানা বেগম ওরফে রুবিকে ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ বলে দাবি করেছেন।
সোমবার সকালে কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কের কড়ইবাড়ি এলাকায় এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন গ্রামের নারীরা। তাঁদের অভিযোগ, গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদের নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত না হলেও তাঁদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হয়রানি করা হচ্ছে। এর আগে ৫ আগস্ট একই দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন গ্রামের নারীরা।
গত ৩ জুলাই সকালে উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে মব সৃষ্টি করে একই পরিবারের তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ঘটে। তাঁরা হলেন কড়ইবাড়ি গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার (২৯)। পরদিন ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০–২৫ জনকে আসামি করে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানায় মামলা করেন রোকসানা বেগমের বড় মেয়ে রিক্তা আক্তার। মামলার প্রধান আসামি আকুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ। এর মধ্যে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের এক মাস আট দিন পার হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা সায়েরা বানু বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই একটি পক্ষ এখানে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। গ্রামের পুরুষেরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ফিরছেন না। এতে পুরো গ্রাম এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। ঘটনার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরীহ গ্রামবাসীকে হয়রানি করছে। আমরা এই অবস্থার অবসান চাই। নিরীহ মানুষের হয়রানি বন্ধ হোক।’
কড়ইবাড়ি গ্রামের রুমা বেগম বলেন, ‘এক মাসের বেশি সময় ধরে পুরুষেরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। এতে অর্থকষ্টে পড়েছি আমরা। শিশুসন্তানদের নিয়ে অনেকটাই মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক। নিরপরাধ মানুষেরা গ্রামে ফিরে আসুক। আমাদের প্রতিটি দিনই এখন আতঙ্কে কাটে।’
গ্রামবাসীর নিরাপত্তাহীনতা প্রসঙ্গে বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের মামলাটি বর্তমানে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। এলাকায় শান্তি–শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রতি রাতেই কড়ইবাড়ি এলাকাসহ আশপাশের গ্রামে পুলিশের চারটি টহল দল কাজ করছে। এ ছাড়া নিরপরাধ কোনো মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। আমরা পুলিশের পোশাক পরেই ডিউটিতে বের হই। তবে সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য কোনো সংস্থার লোকজন আসেন কি না, সেটি আমার জানা নেই।’
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নয়ন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘নিরীহ একজন মানুষকেও হয়রানি করা হয়নি। আমরা শুরু থেকেই মামলাটি নিয়ে সতর্ক। গ্রামবাসীর আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। যাঁরা এ ঘটনায় জড়িত নন, তাঁরা গ্রামে ফিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন। ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন রপর ধ র আতঙ ক কড়ইব ড় ঘটন য় হয়র ন
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তঃসত্ত্বা নারীকে মারধরের অভিযোগ, নওগাঁয় ইউএনওর অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন
নওগাঁর ধামুইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার রহমান ও ধামুইরহাট পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সালামের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ দুজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আজ বুধবার দুপুরে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের শাস্তি ও ইউএনওর অপসারণের দাবিতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, উপজেলার মঙ্গলকোঠা আবাসিক এলাকায় ধামুইরহাট পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে পৌরসভার লোকজনের সঙ্গে এলাকাবাসীর বাগ্বিতণ্ডা হয়। ময়লা ফেলতে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে ইউএনও শাহরিয়ার রহমান ও পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সালাম ঘটনাস্থলে যান। এ সময় ওই দুই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে মঙ্গলকোঠা এলাকার এক অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ দুই নারীকে মারধর করেন।
গৃহবধূ সামিরন খাতুন বলেন, ‘পৌরসভার লোকজন গাড়িতে করে আমাদের এলাকায় ময়লা ফেলতে এলে এলাকার সবাই মিলে বাধা দিই। বসতবাড়ির আশপাশে ময়লা ফেললে সমস্যা হবে বলে ইউএনওকে ময়লা না ফেলতে এলাকাবাসী অনুরোধ করেন। কিন্তু ইউএনও আমাদের কথা না শুনে আমাকেসহ মিতুকে (অন্তঃসত্ত্বা নারী) নিজেই লাঠি দিয়ে মারধর করেন। আমরা ইউএনওর অপসারণসহ তাঁর কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
মানববন্ধনে স্থানীয় আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘ইউএনও আমার গর্ভবতী স্ত্রীর গায়ে তুলেছে সবার সামনে। একজন ইউএনওর আচরণ এমন হলে আমরা বিচার কার কাছে পাব?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও শাহরিয়ার রহমান বলেন, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা একটি খাস জমিতে ময়লা ফেলতে গেলে স্থানীয় কয়েকজন বাধা দেন এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের গালমন্দ করে তাড়িয়ে দেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনি ওই এলাকায় গেলে এলাকার কিছু লোক তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। সেখানে কয়েকজন অবৈধ দখলদার নারী-পুরুষ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন। একপর্যায়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আনসারদের গায়ে হাত তোলেন। নারীদের মারধরের অভিযোগের বিষয়ে তিনি দাবি করেন, ‘সেখানে কারও গায়ে হাত তোলা হয়নি। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।’
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, আজ মানববন্ধন করে কিছু লোক ইউএনওর বিরুদ্ধে নারীকে মারধরের অভিযোগ করেন। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।