আগামী ৫ থেকে ৭ বছরে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের হালকা প্রকৌশল যন্ত্রপাতি রপ্তানির সম্ভাবনা আছে। বর্তমানে এ খাতে রপ্তানি আয় বছরে ৭০-৮০ কোটি ডলার।

আজ শনিবার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনে ‘রোড টু মেড ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড অ্যাগ্রো মেশিনারি ফেয়ার ২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ। সেখানে তিনি এ কথা বলেন।

মাসরুর রিয়াজ আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৮০ হাজার মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট আছে। স্থানীয় বাজারের আকার প্রায় ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার এবং খাতটির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৮ শতাংশ।

একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, জাতীয় শিল্পনীতিতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রাংশ ও হালকা প্রকৌশল—এই তিনটি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এই খাতগুলো উৎপাদনশীল শিল্পের বিকাশ, রপ্তানির বহুমুখীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

কৃষি ও অটোমোবাইলস খাত নিয়ে এ ধরনের মেলার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। পাশাপাশি এই খাতে নতুন ব্যবসায়িক সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেন আদিলুর রহমান খান।

তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনে চলমান দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল আছে। পাশাপাশি শিল্পসহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল আছে আরও ১২ টি। বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও এগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী।

শিল্পনীতির লক্ষ্য

আদিলুর রহমান খান বলেন, জাতীয় শিল্পনীতির লক্ষ্য হলো দেশের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। ইতিমধ্যে নীতিসহায়তা, কর ছাড় ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার এ কাজ এগিয়ে নিতে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, যান্ত্রিকীকরণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিযন্ত্র আমদানি, খুচরা যন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণসহ পূর্ণাঙ্গ সরবরাহ ব্যবস্থার চাহিদা তৈরি হবে। বর্তমানে দেশের কৃষিযন্ত্রের মাত্র ২০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়, বাকি ৮০ শতাংশ আমদানি-নির্ভর। সঠিক নীতি, অর্থায়ন, দক্ষ জনবল ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করা গেলে এই ২০ শতাংশ অচিরেই ৪০ থেকে ৬০ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব।

এম মাশরুর রিয়াজ আরও বলেন, কৃষি উৎপাদনে আরেকটি বড় সংকট হলো অবকাঠামো ও যান্ত্রিক ঘাটতির কারণে ফসলের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়া। বিশেষ করে ফল ও শাকসবজিতে এ অপচয় বেশি। ফলে খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার ও রপ্তানি সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও লজিস্টিকস উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।

হালকা প্রকৌশলের সম্ভাবনা

হালকা প্রকৌশলের সম্ভাবনা নিয়ে এম মাশরুর রিয়াজ আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৮০ হাজার মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট আছে। স্থানীয় বাজারের আকার প্রায় ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার এবং খাতটির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৮ শতাংশ। বর্তমানে এ খাতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়। আগামী ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে তা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার সম্ভাবনা রয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে। কৃষি, প্রবাসী আয় ও গার্মেন্টস খাত অর্থনীতির মূল স্তম্ভ হলেও নতুন কর্মসংস্থান ও টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য হালকা প্রকৌশল শিল্পে গুরুত্ব দিতে হবে।

আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী আরও বলেন, বিশ্বে এগ্রিকালচার মেশিনারি খাতের বাজার ১ দশমিক ৯৭ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি ডলারের। বাংলাদেশ এখনো সেই বাজারে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি। স্থানীয় বাজারেই হালকা প্রকৌশলের সম্ভাবনা প্রায় ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার। এর অর্ধেকও আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। অটোমোবাইল শিল্পের উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, স্থানীয় উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো ওবায়দুর রহমান, র‍্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক এম আবু ইউসুফ ও এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আরও বল ন অন ষ ঠ ন র রহম ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

উড়োজাহাজ খাতে প্রতিযোগিতায় স্বচ্ছতা ও বৈষম্য বিলোপের তাগিদ ইইউ রাষ্ট্রদূতের

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িং এবং ইউরোপের এয়ারবাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে হঠাৎ এয়ারবাসের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছিল। আর চলতি বছর পাল্টা শুল্কের দর–কষাকষির ইস্যুতে বোয়িং অন্যতম শর্ত হিসেবে সামনে এসেছে।

এমন এক প্রেক্ষাপটে ঢাকায় এক আলোচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার উড়োজাহাজ খাতে ব্যবসায় স্বচ্ছতা ও বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি সব পক্ষের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন। এই খাতে ‘অন্য অংশীদারদের’ তুলনায় ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলোকে যাতে কম গুরুত্ব দেওয়া না হয়, সে বিষয়টি বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতে বলেছেন।

মঙ্গলবার ঢাকায় ফ্রান্স-জার্মান দূতাবাসে ‘বাংলাদেশের এভিয়েশন গ্রোথ’ শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি এ অভিমত দেন। আলোচনায় মাইকেল মিলার ছাড়াও যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যঁ-মার্ক সেরে-শার্লে, জার্মান রাষ্ট্রদূত রুডিগার লটজ এবং এয়ারবাসের কমার্শিয়াল সেলস ডিরেক্টর (চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ, বাংলাদেশ) রাফায়েল গোমেজ নয়া অংশ নেন।

ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি এ দেশে এয়ারবাসের উপস্থিতির বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতে জোর দিচ্ছি। আমি খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই, স্বচ্ছতা এবং বৈষম্যহীনতার দীর্ঘদিনের আশ্বাস পূরণ করে এটিকে যেন বিমানের বহরকে আধুনিকীকরণ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ দেশের উড়োজাহাজ খাতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখা উচিত।’

ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যঁ-মার্ক সেরে-শার্লে বলেন, ফ্রান্স ও ইউরোপের উড়োজাহাজ শিল্পের কেন্দ্রে অবস্থান করছে এয়ারবাস। প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও উদ্ভাবনের অনন্য সমন্বয়ই এটিকে বিশ্বজুড়ে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর এক বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই খাতে বাংলাদেশের বিকাশ পর্বে এয়ারবাস হতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তাঁর মতে, বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল সংযোগ ও ভৌগোলিক অবস্থান এই দেশকে আকাশপথে যোগাযোগের আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। বিমান বাংলাদেশের বহরে এয়ারবাস যুক্ত হলে এর স্থিতিশীলতা ও প্রতিযোগিতার সক্ষমতা আরও বাড়বে।

জার্মান রাষ্ট্রদূত রুডিগার লটজ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বাড়ছে, মধ্যবিত্ত শ্রেণি সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিমানের এখন প্রয়োজন আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব উড়োজাহাজ, যেখানে এয়ারবাস শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আকাশপথে যোগাযোগের আঞ্চলিক কেন্দ্র হওয়ার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য সব সময় পাশে থাকবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বাণিজ্যিক যোগ্যতার ভিত্তিতে ইইউর অর্থনৈতিক উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সুযোগ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা সবার জন্য সমান সুযোগ প্রত্যাশা করি। এর অর্থ হলো বাংলাদেশকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অপারেটরদের অন্যান্য বাণিজ্যিক অংশীদারদের তুলনায় কম সুবিধা দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, বোয়িং ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ২৫টি উড়োজাহাজ বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে, আর এয়ারবাস দিয়েছে ১৪টির। এর মধ্যে রয়েছে ১০টি এ৩৫০ ও ৪টি এ৩২০ নিও।

সম্পর্কিত নিবন্ধ