বাংলাদেশের শহুরে জীবন যেমন নানা সুযোগ এনে দিয়েছে, তেমনি সমস্যারও অন্ত নেই। ঝকঝকে ভবন, আধুনিক অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সবকিছুই মানুষকে শহরমুখী করছে। কিন্তু এই আকর্ষণের আড়ালে সবচেয়ে বড় সংকট হলো ভাড়া বাড়ির ক্রমবর্ধমান চাপ। ঢাকার মতো মহানগরে, যেখানে কাজ, শিক্ষা ও ব্যবসার সুযোগ সবচেয়ে বেশি, সেখানে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে এ সমস্যা গভীরভাবে প্রভাবিত করছে।

প্রতিবছর ভাড়া বাড়ছে, কিন্তু আয়ের হার তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। একজন চাকরিজীবীর বেতনের অর্ধেক বা তার বেশিই চলে যায় ভাড়ার পেছনে। এরপর বাজার, বিদ্যুৎ-গ্যাস, চিকিৎসা ও সন্তানের পড়াশোনা সামলাতে গিয়ে পরিবারগুলোকে কঠিন চাপে পড়তে হয়। কেউ খরচ কমিয়ে চালায়, কেউ ঋণ নেয়। এ কারণে মানসিক অশান্তি বাড়ে, পারিবারিক দ্বন্দ্বও তৈরি হয়।

শহরে নতুন আসা শিক্ষার্থী বা চাকরিজীবীদের অবস্থা আরও দুর্বিষহ। নিরাপদ ও সাশ্রয়ী বাসা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ভালো এলাকায় থাকতে হলে মোটা অগ্রিম টাকা গুনতে হয়। অনেকে কয়েকজন মিলে ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়, খরচ ভাগ করে। কিন্তু ঘন ঘন বাসাবদল, নতুন এলাকায় মানিয়ে নেওয়া কিংবা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক—সবই একেকটা চাপ।

এ কারণে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের ক্রমে শহরের প্রান্তিক বা অস্বাস্থ্যকর এলাকায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এসব এলাকায় স্কুল-কলেজ দূরে, পরিবেশ খারাপ, নিরাপত্তা অনিশ্চিত। এতে শিশুদের পড়াশোনার মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বড়রা মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। জীবনযাত্রার মান পুরোপুরি নেমে যায়।

বাস্তব অভিজ্ঞতা
রাকিব নামের এক তরুণ চাকরিজীবী ঢাকায় একটি কক্ষে থাকেন। বেতনের অর্ধেক চলে যায় ভাড়ায়। বাকি টাকা দিয়ে বাজার, বিদ্যুৎ-গ্যাস, চিকিৎসা সব সামলাতে গিয়ে প্রতিদিন নতুন চাপে পড়েন। মানসিক চাপ এত বেড়ে যায় যে ঘুম কম হয়, কাজে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

শিরিন, একজন কলেজছাত্রী। পড়াশোনার জন্য শহরে এসে এক বন্ধুর সঙ্গে ফ্ল্যাট শেয়ার করেন। ভাড়া ও খরচ সামলাতে গিয়ে প্রায়ই তাঁকে খাবার বা বইয়ের খরচ বাদ দিতে হয়। এতে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে।

তিন সন্তানের জনক মাহমুদ পরিবার নিয়ে শহরের কেন্দ্রে ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকেন। নিয়মিত ভাড়া বাড়ানোর কারণে স্কুল, চিকিৎসা ও দৈনন্দিন ব্যয় সামলানো দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবারে স্থিতি নেই, চাপ কেবল বাড়ছেই।

সামাজিক ও মানসিক প্রভাব
ভাড়া সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক ও মানসিক দিক থেকেও ভয়াবহ। পরিবারগুলো ঘন ঘন বাসাবদলের চিন্তায় থাকে। শিশুদের পড়াশোনা ব্যাহত হয়, বড়রা কাজে মনোযোগ হারান। ভিড় ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে ছোট জায়গায় একসঙ্গে গাদাগাদি করে থাকে, যা স্বাধীনতা কমায় এবং পারিবারিক টানাপোড়েন বাড়ায়।

সমাধান কী হতে পারে
সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প: সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে কম খরচের নিরাপদ ফ্ল্যাট বা সরকারি আবাসন বাড়াতে হবে।

আইনগত সুরক্ষা: ভাড়াটিয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বাড়িওয়ালারা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়াতে না পারেন।

মানুষকেন্দ্রিক পরিকল্পনা: নতুন ফ্ল্যাট তৈরি যথেষ্ট নয়; বিদ্যমান আবাসনব্যবস্থায়ও নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা জরুরি।

ভাড়াটিয়া সমিতি: ভাড়াটিয়াদের অধিকার রক্ষায় স্থানীয় কমিটি বা সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।

শেষ কথা
শহুরে জীবনের এই ভাড়া সংকট অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিকভাবে মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করছে। এখনই প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও নীতিগত পদক্ষেপ। নিরাপদ, স্থিতিশীল ও সাশ্রয়ী আবাসন নিশ্চিত করা গেলে শহরের মানুষ আবার শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে। শিশুরা ভালো শিক্ষা পাবে, পরিবারে স্থিরতা আসবে, মানসিক চাপ কমবে। শহর হবে আরও সুন্দর, মানবিক ও সবার জন্য বাসযোগ্য।

আরশী আক্তার গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এল ক য় পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলিম বিশ্বে জ্ঞানচর্চার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার উপায়

আধুনিক জীবনের ঝড়ঝঞ্ঝার মধ্যে মুসলিম বিশ্ব দাঁড়িয়ে আছে আরও এক গভীর প্রশ্ন নিয়ে—আমরা কীভাবে আমাদের জ্ঞানের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনব? কীভাবে আমরা পশ্চিমা চিন্তার আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের পথ খুঁজব?

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলিম পণ্ডিতরা জ্ঞানের আলো জ্বেলেছেন, বিশ্বকে শিখিয়েছেন; কিন্তু ঔপনিবেশিকতার ছায়ায় আমাদের জ্ঞানের সেই সোনালি ঐতিহ্য কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।

জ্ঞানের ওপর আধিপত্য

গত শতাব্দীতে মুসলিম ও অমুসলিম চিন্তাবিদেরা ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। বই, প্রবন্ধ ও সেমিনারে এই আলোচনা এতটাই ভারী হয়ে উঠেছে যে মনে হয়, আমরা একই জায়গায় আটকে আছি।

মুসলিমরা এই বিতর্কে ঢুকেছিলেন তাঁদের হারানো মর্যাদা ফিরে পাওয়ার আশায়; কিন্তু আমরা কোথায় ভুল করলাম? ঔপনিবেশিকতাকে দোষারোপ করে আমরা কত দূর এগোলাম?

আমার মনে হয়, কোনো কারণে আলোচনা আমাদের ভুল পথে নিয়ে গেছে—আমরা সত্যিকারের সংস্কারের বদলে পৃষ্ঠপোষকতায় মেতে উঠেছি। ফুটবল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ, আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণ, সংগীত উৎসব বা ফর্মুলা ওয়ান রেসের মতো কাজে বিলিয়ন ডলার খরচ করেছি।

শিক্ষার কথা ভাবলেও আমরা পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয় আমদানি করেছি; কিন্তু নিজেদের জ্ঞানের ঐতিহ্যের গভীরতায় ফিরে যাইনি।

আমরা সত্যিকারের সংস্কারের বদলে পৃষ্ঠপোষকতায় মেতে উঠেছি। ফুটবল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ, আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণ, সংগীত উৎসব বা ফর্মুলা ওয়ান রেসের মতো কাজে বিলিয়ন ডলার খরচ করেছি।

ইসমাইল আল-ফারুকির ‘জ্ঞানের ইসলামীকরণ’ ধারণা একসময় আমাদের হৃদয়ে আলো জ্বেলেছিল। তিনি বলেছিলেন, সব শাখার জ্ঞানকে ইসলামি নীতির সঙ্গে মিলিয়ে একটি একেশ্বরবাদী বিশ্বদৃষ্টি গড়তে হবে; কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গি এখন কোথায় যেন ম্লান হয়ে গেছে। (ইসমাইল আল-ফারুকি, ইসলামাইজেশন অব নলেজ, পৃ. ৩৫, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট, হেরন্ডন, ১৯৮২)

আমাদের প্রশ্ন করতে হবে—আমরা কি সত্যিই আমাদের জ্ঞানের ঐতিহ্য ফিরে পেতে চাই, নাকি পশ্চিমের ছায়ায় হাঁটতে চাই?

আরও পড়ুনইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় মুসলিম নারীর করণীয়২৬ আগস্ট ২০২৫পশ্চিমা জ্ঞানের শৃঙ্খল

পশ্চিমা জগৎ জ্ঞানেরও আধিপত্য স্থাপন করেছে, এমনকি যেসব ক্ষেত্রে তাদের নেতৃত্বের বৈধতা কম, সেখানেও তাদের ছায়া আছে।

উদাহরণস্বরূপ বলি, আমেরিকার ইলিনয়ে একটি প্রদর্শনীতে কোরআনের একটি দুর্লভ পাণ্ডুলিপির প্রেক্ষাপট বর্ণনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একজন অমুসলিম নারীকে। দারুল কাসিমের একজন ছাত্র যখন তাঁর ভুল সংশোধন করতে চাইলেন। তিনি উত্তর দিলেন, ‘এখানে আমিই দায়িত্বে।’

আরেকটি ঘটনায় দেখা যায়, একজন মুসলিম পণ্ডিতের আরবি ব্যাকরণের পাণ্ডুলিপি পশ্চিমা প্রকাশক প্রত্যাখ্যান করলেন। কারণ, তিনি পশ্চিমা উৎস উল্লেখ করেননি।

এ ঘটনাগুলো দেখায়, পশ্চিমা একাডেমিক গেটকিপিং আমাদের জ্ঞানের ইতিহাসকে তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যায় ঢেলে সাজাচ্ছে।

এই ইউরোপকেন্দ্রিক আধিপত্য আমাদের জ্ঞানের মূল থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। আমাদের পাণ্ডুলিপি, আমাদের ইতিহাস, আমাদের গল্প—এগুলোকে অন্যরা তাঁদের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করছেন।

পেরুভিয়ান পণ্ডিত আনিবাল কুইজানো বলেন, ডিকলোনাইজেশন মানে জ্ঞানের ওপর ইউরোপকেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করা। আমাদের জ্ঞানের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের নিজেদের জ্ঞানতত্ত্ব পুনর্গঠন করতে হবে (আনিবাল কুইজানো, ‘কলোনিয়ালিটি অব পাওয়ার’, পৃ. ৫৩০, নেপান্টলা, ডারহাম, ২০০০)।

আমেরিকার ইলিনয়ে একটি প্রদর্শনীতে কোরআনের একটি দুর্লভ পাণ্ডুলিপির প্রেক্ষাপট বর্ণনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একজন অমুসলিম নারীকে। দারুল কাসিমের একজন ছাত্র যখন তাঁর ভুল সংশোধন করতে চাইলেন। তিনি উত্তর দিলেন, ‘এখানে আমিই দায়িত্বে।’ইসলামি জ্ঞানতত্ত্বের পথ

ইসলামি জ্ঞানতত্ত্ব তিনটি মূল উৎসকে স্বীকৃতি দেয়: পঞ্চেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞান, মানুষের বুদ্ধি থেকে উদ্ভূত জ্ঞান এবং নবীর মাধ্যমে আসা প্রত্যাদেশের মতো সত্য প্রতিবেদন। এ তিনটি উৎস মানুষের জ্ঞানের সব শাখাকে ঘিরে রাখে।

ইসলামে জ্ঞান কখনো আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। কারণ, তিনিই সব জ্ঞানের মূল উৎস। পশ্চিমা ঐতিহ্য আধুনিকতার নামে জ্ঞানকে আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে; কিন্তু ইসলাম বলে, সত্যিকারের সৃজনশীলতা আল্লাহর জ্ঞানকে সম্মান করা থেকে আসে। (সুরা আলাক, আয়াত: ১-৫)

ইতিহাসে মুসলিমরা এই জ্ঞানের উৎসগুলো আয়ত্ত করে বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ইসলামি স্বর্ণযুগে (অষ্টম-চতুর্দশ শতাব্দী) বাগদাদের বাইত আল-হিকমা বিভিন্ন সংস্কৃতির জ্ঞানের মিলনস্থল ছিল।

ইবনে সিনা ও আল-ফারাবির মতো পণ্ডিতেরা বিজ্ঞান, দর্শন আর ধর্মের সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন; কিন্তু আজ আমরা এই ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। আমাদের জ্ঞানের গল্প এখন অন্যরা লিখছে, আমাদের কণ্ঠকে নিশ্চুপ করে দিয়ে। (সৈয়দ হোসাইন নসর, সায়েন্স অ্যান্ড সিভিলাইজেশন ইন ইসলাম, পৃ. ৫৬, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, কেমব্রিজ, ১৯৬৮)

ধর্মনিরপেক্ষ বনাম ইসলামি জ্ঞান: একটি মিথ্যা দ্বন্দ্ব

আজ মুসলিম বিশ্বে একটি গভীর দ্বন্দ্ব রয়েছে—ইসলামি আর ধর্মনিরপেক্ষ জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য কীভাবে করব? অনেকে মনে করেন, পশ্চিমা রেনেসাঁর মতো একটি পুনর্জাগরণ দরকার, যেখানে আখিরাত বা পরকালের চিন্তা বাদ দেওয়া হবে; কিন্তু মুসলিমরা আখিরাতে বিশ্বাসী, আর এই বিশ্বাসই আমাদের জ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিকে গঠন করে।

এই দ্বন্দ্ব মিথ্যা। কারণ, ইসলামি শরিয়া আমাদের দুনিয়ার কাজকে আখিরাতের সঙ্গে যুক্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, মুসলিমরা দান করেন কেবল মানুষের প্রয়োজন মেটানোর জন্য নয়, বরং আখিরাতের পুরস্কারের আশায়। এই দান কেবল মানবিক নয়, গভীরভাবে ধর্মীয়। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬১)।

ইসলামি জ্ঞানতত্ত্ব জ্ঞানকে ধর্মনিরপেক্ষ বা পবিত্র বলে ভাগ করে না। এটি জ্ঞানকে নাফি’ (উপকারী) এবং আনফা’ (অধিক উপকারী) হিসেবে দেখে। নাফি’ জ্ঞান এই দুনিয়ায় মানুষের উপকার করে, যেমন নুহ (আ.)-কে আল্লাহ জাহাজ নির্মাণের জ্ঞান দিয়েছিলেন, আর দাউদ (আ.)-কে লোহা দিয়ে বর্ম তৈরির শিল্প শিখিয়েছিলেন। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮০)

আনফা’ জ্ঞান পরকালে উপকার করে, যেমন কোরআন তিলাওয়াত, ইবাদতের জ্ঞান বা আল্লাহর সেবার জ্ঞান। মাদ্রাসা, মসজিদ বা জাকাত ফাউন্ডেশন এই আনফা’ জ্ঞানের অংশ।

আরও পড়ুননিপীড়িতদের পাশে দাঁড়ানো ইসলামে ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব২৩ আগস্ট ২০২৫জ্ঞানের একতা

ইসলামের তাওহিদ শুধু আল্লাহর একত্ব নয়, জ্ঞানের একত্বও। আমাদের জ্ঞানকে ধর্মনিরপেক্ষ বা পবিত্র বলে ভাগ করার দরকার নেই। তাওহিদ আমাদের শেখায়, সব জ্ঞান আল্লাহ থেকে আসে, আর তা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য উপকারী হতে পারে।

আজকের যুগে, যখন সমান্তরাল বিশ্বের ধারণা বিজ্ঞানীরা গ্রহণ করছেন, তখন পরকালে বিশ্বাস করা অযৌক্তিক নয়। আমাদের জ্ঞানকে তার সঠিক উপযোগিতা অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে—দুনিয়ার জন্য যা উপকারী, আর আখিরাতের জন্য যা অধিক উপকারী। (এম এ খোলওয়াড়িয়া, ‘ডিকলোনাইজিং নলেজ,’ পৃ. ১৮, আল–জাজিরা, দোহা, ২০২৫)

মুসলিমরা দান করেন কেবল মানুষের প্রয়োজন মেটানোর জন্য নয়, বরং আখিরাতের পুরস্কারের আশায়। এই দান কেবল মানবিক নয়, গভীরভাবে ধর্মীয়।পুনর্জাগরণের পথ

ইসমাইল আল-ফারুকির জ্ঞানের ইসলামীকরণ ছিল একটি শুরু; কিন্তু আমাদের আরও গভীরে যেতে হবে। আমাদের জ্ঞানতত্ত্বকে পুনর্গঠন করতে হবে ইউরোপকেন্দ্রিক কাঠামো থেকে মুক্ত হয়ে। এটি কেবল রাজনীতি বা অর্থনীতির বিষয় নয়; বরং জ্ঞানের মূল ভিত্তির বিষয়।

আমাদের ঐতিহ্যে ফিরে যেতে হবে—ইবনে রুশদ, আল-গাজ্জালির মতো পণ্ডিতদের কাছে, যাঁরা জ্ঞানকে আল্লাহর আলোর সঙ্গে মিলিয়েছিলেন। আমাদের মাদ্রাসাগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে, যেখানে বিজ্ঞান, দর্শন আর ধর্ম একসঙ্গে ফুটে উঠবে।

আজকের ডিজিটাল যুগে ইসলামি জীবনধারা অ্যাপগুলো আমাদের ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। ‘মুসলিম প্রো’র মতো অ্যাপ নামাজের সময়, কোরআন পাঠ আর দোয়ার সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু এই অ্যাপগুলো শুধু সরঞ্জাম নয়, এগুলো আমাদের জ্ঞানের ঐতিহ্যকে জাগিয়ে তোলার একটি পথও বটে।

আমাদের হৃদয়ে এই বিশ্বাস জাগাতে হবে যে আমাদের জ্ঞান আমাদের নিজস্ব—এটি আল্লাহর দেওয়া আলো, যা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কেই আলোকিত করতে পারে। (মুহাম্মদ হামিদুল্লাহ, ইনট্রোডাকশন টু ইসলাম, পৃ. ৭৮, দার আল-আন্দালুস, লন্ডন, ১৯৬৯)

মুসলিম বিশ্বের সামনে একটি সুযোগ—নিজেদের জ্ঞানের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার, ইউরোপকেন্দ্রিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার। আমাদের ঐতিহ্য কেবল অতীত নয়, এটি আমাদের হৃদয়ের আলো, যা নতুন সময়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। কোরআন আমাদের জ্ঞানের পথে ডাকে। (সুরা তাহা, আয়াত: ১১৪)

তাওহিদ আমাদের শেখায়, জ্ঞান এক—এটি আল্লাহ থেকে আসে, আর এটি আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের পথ দেখায়। আমাদের এই আলোকে আঁকড়ে ধরতে হবে, আমাদের গল্প নিজেদের কণ্ঠে বলতে হবে। এই পথে আমরা কেবল জ্ঞানই ফিরে পাব না, আমাদের হৃদয়ে শান্তি আর মর্যাদাও ফিরিয়ে আনব।

সূত্র: আলজাজিরা ডট কম

আরও পড়ুনবিশ্বে ইসলামের শান্তিপূর্ণ প্রসার১৪ মার্চ ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডাকাতি হওয়া ২৩ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩
  • রাজনৈতিক ‘অস্ত্র’ না হয়ে প্রভাবমুক্ত হোক পুলিশ
  • গকসু নির্বাচন: জাহিদের প্রচারণায় সবুজের ডাক
  • রাকসুতে দুঃখ ঘোচাতে চায় ছাত্রদল, জয় ধরে রাখতে মরিয়া শিবির
  • শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব
  • চুয়াডাঙ্গায় আবাসিক হোটেল থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার
  • অনুমতি ছাড়াই মেটার বিজ্ঞাপনে স্কুলশিক্ষার্থীদের ছবি
  • নরসিংদীতে ব্রহ্মপুত্র থেকে পাঁচ মামলার আসামির লাশ উদ্ধার
  • মুসলিম বিশ্বে জ্ঞানচর্চার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার উপায়