পুঁজিবাদ নাকি সমাজতন্ত্র, কোন পথে হাঁটবে ভারত
Published: 24th, September 2025 GMT
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে গ্যালাপের এক জরিপে জনমতের বড় পরিবর্তন ধরা পড়েছে। দেখা গেছে, এখন মাত্র ৫৪ শতাংশ মার্কিন পুঁজিবাদকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন, যা এই জরিপ শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে কম। অন্যদিকে সমাজতন্ত্রের প্রতি সমর্থন বেড়েছে। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের মধ্যে সমাজতন্ত্রের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব বেড়েছে। বামপন্থার উত্থানের প্রতীক হয়ে উঠেছেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে এগিয়ে থাকা প্রার্থী জোহরান মামদানি। নিজেকে তিনি বলছেন ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’। ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে জয়ী হয়ে মামদানি হয়ে উঠেছেন অভিবাসী সমাজ ও শহরের নিম্নবিত্ত মানুষের কণ্ঠস্বর।
বিভাজনটা স্পষ্ট; রিপাবলিকানরা যেখানে পুঁজিবাদের পক্ষপাতী, ডেমোক্র্যাটরা তুলনামূলকভাবে সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকছেন। তবে গভীরে আছে প্রজন্মভিত্তিক ক্ষোভ। তরুণ মার্কিনদের অনেকের কাছে পুঁজিবাদ মানে এক বিশেষ সুবিধাভোগী ব্যবস্থা। তাঁরা মনে করেন, পুঁজিবাদ কেবল ধনীদের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য নয়।
এ বিতর্ক শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু তার প্রতিধ্বনি এখন ভারতসহ সারা বিশ্বে শোনা যাচ্ছে। ভারতের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও জটিল। কারণ, এখানে ‘পুঁজিবাদ’ আর ‘সমাজতন্ত্র’ কেবল আদর্শ বা ধারণা নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস। স্বাধীনতার পর ভারতের অর্থনীতি গড়ে ওঠে নেহরুবাদী সমাজতন্ত্রের ছাঁচে।
এই মডেলে গণতন্ত্র বজায় থাকলেও অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল প্রধান। এই মডেলে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ত হয়, উন্নয়ন এগোয় পরিকল্পিত অর্থনীতির মাধ্যমে, আর বিদেশি বিনিয়োগে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এর লক্ষ্য ছিল দেশকে আত্মনির্ভর করা ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা; অর্থাৎ ভারতের সমাজতন্ত্র ছিল বাস্তববাদী। এটি খাঁটি মতবাদ নয়; বরং জাতীয় স্বার্থ আর সমতার প্রয়োজনে গড়া।
কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সেই কাঠামোয় ফাটল ধরা স্পষ্ট হয়। অতিরিক্ত আমলাতন্ত্র, রাজস্বঘাটতি আর বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে দেশ ‘লাইসেন্স-পারমিট-কোটা রাজ’ ভাঙতে বাধ্য হয়। ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক সংস্কার ভারতকে নিয়ে যায় নতুন যুগে। বাজারনির্ভর প্রবৃদ্ধি, বিদেশি বিনিয়োগ আর বেসরকারি উদ্যোগের যুগে। সন্দেহের চোখে দেখা পুঁজিবাদই হয়ে ওঠে অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের চালিকা শক্তি। মধ্যবিত্ত প্রসারিত হয়। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিপুল অগ্রগতি ঘটে। আর ভারত বৈশ্বিক অঙ্গনে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে।
তবু যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভারতেও এখন অনেকে পুঁজিবাদের উজ্জ্বল রূপটিকে প্রশ্ন করছেন। বৈষম্য বেড়েছে। কর্মসংস্থান ছাড়াই প্রবৃদ্ধি ঘটছে। আর অল্প কিছু করপোরেট গোষ্ঠীর হাতে বিপুল সম্পদ জমা হচ্ছে। উদারনীতির প্রতিশ্রুতি ছিল সবার সমৃদ্ধি, কিন্তু বাস্তবে এসেছে অনিশ্চয়তা। কৃষকেরা করপোরেট প্রভাবের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। গিগ কর্মীরা মৌলিক সুরক্ষা চাইছেন। তরুণেরা ডিগ্রি নিয়েও চাকরি পাচ্ছেন না। তাঁদের মনে হচ্ছে, এ ব্যবস্থা ধনীদের জন্য বানানো।
তবে ভারতের বাস্তবতা শুধু পুঁজিবাদ-সমাজতন্ত্র দ্বন্দ্বে সীমাবদ্ধ নয়। দেশ আজ পুরোপুরি পুঁজিবাদীও নয়, আবার সমাজতান্ত্রিকও নয়; বরং এক জটিল মিশ্রণ। এখানে যেমন বেসরকারি হাসপাতাল আছে, তেমনি সরকারি স্বাস্থ্যসেবাও আছে। বহুজাতিক করপোরেশন আছে, আবার ভর্তুকি দেওয়া খাদ্যশস্যও আছে। বিলিয়নিয়ার আছে, আবার সামাজিক সুরক্ষার কর্মসূচিও আছে।
এই মিশ্রণ আসলে কাকতালীয় নয়; বরং এটি এক বাস্তব স্বীকারোক্তি। অসীম স্বাধীন পুঁজিবাদ কিংবা কঠোর মতবাদী সমাজতন্ত্র—কোনোটাই ভারতের বহুমাত্রিক সমাজের চাহিদা মেটাতে পারে না। বাস্তবের তাগিদেই ভারত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্যনিরাপত্তার মতো খাতে অনেক আগেই সামাজিকীকরণের পথ নিয়েছে। লক্ষ্য বাজারকে ধ্বংস করা নয়; বরং মানবিকতার ছোঁয়ায় তাকে নরম করা।
ভারতে বিতর্কটা আরও জটিল। কারণ, এখানে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উপাদান জড়িয়ে আছে। অর্থনৈতিক আলোচনায় প্রায়ই পরিচয় রাজনীতি, আঞ্চলিক আকাঙ্ক্ষা আর ঐতিহাসিক ক্ষোভ মিশে যায়। ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ কথাটার অর্থ রাজ্যভেদে ভিন্ন। জাত, ধর্ম, সম্প্রদায় অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখে। আবার ঔপনিবেশিকতার উত্তরাধিকারও আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোয় গভীর ক্ষত তৈরি করেছে।
তবু এ বিতর্ক আশাবাদ জাগায়। এটি প্রমাণ করে মানুষ বর্তমান অবস্থা মেনে নিতে রাজি নয়। তারা বিশ্বাস করে সমাজ আরও ভালো হতে পারে, অর্থনীতি সবার জন্য কাজ করতে পারে, পরিবর্তন সম্ভব। যাদের বাজারে প্রবেশাধিকার নেই, তাদের কাছে বাজারের জাদু অর্থহীন। তারা বঞ্চনার অভিজ্ঞতা জানে। তারা জানে, স্বপ্ন দেখার মানে কী।
শেষ পর্যন্ত আসল বিষয় হলো অভিজ্ঞতা। আজকের সমাজ মূলত মিশ্র—গঠনে পুঁজিবাদী, চেতনায় সমাজতান্ত্রিক। চ্যালেঞ্জ হলো একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে বেছে নেওয়া নয়; বরং এমন এক ব্যবস্থা তৈরি করা, যেখানে দক্ষতার সঙ্গে সহমর্মিতা, উদ্ভাবনের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তি থাকবে। বহুত্ববাদ ও বাস্তববাদের কারণে ভারত এ আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়ার বিশেষ অবস্থানে আছে।
শশী থারুর ভারতের লোকসভায় কংগ্রেস দলীয় এমপি ও দেশটির সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইটি অনুষদের ডিনস অ্যাওয়ার্ড, পেলেন ৪৪ শিক্ষার্থী ও ৩০ শিক্ষক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (আইটি) অনুষদের শিক্ষার্থীদের তিন বছরের (২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সাল) এবং শিক্ষকদের পাঁচ বছরের (২০২১, ২০২২, ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সাল) ডিনস অ্যাওয়ার্ড ৬ নভেম্বর প্রদান করা হয়েছে। অনুষদের পাঁচটি বিভাগের মোট ৪৪ জন শিক্ষার্থী ডিনস অ্যাওয়ার্ড পান। এ ছাড়া দেশে বা বিদেশে প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থ এবং স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত মৌলিক প্রবন্ধের জন্য ৩০ জন শিক্ষককে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক উপমা কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সোনালি ব্যাগের উদ্ভাবক ও বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের সাবেক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বিজ্ঞানী মোবারক আহমেদ খান ডিনস অ্যাওয়ার্ডে স্পিকার হিসেবে বক্তব্য দেন। বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নাম ঘোষণা করেন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক উপমা কবির।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে কোথায় পড়বেন: সিদ্ধান্ত নিতে মনে রাখুন ‘থ্রি–সি’৫ ঘণ্টা আগেডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ৪৪ জন শিক্ষার্থী হলেন-জগন্নাথ বিশ্বাস, মো. নিজাম উদ্দিন তানিম, শ্রাবণী সরকার, নাজমুল হাসান নাঈম, আফসানা আনজুম আঁখি, নুসাইবা এহসান, আসমা ইয়াসমিন খান রিমু, মেহরিন ফাত্তাহা, কায়সারী ফেরদৌস, মোহাম্মদ আজমাঈন ফাতিন (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং), নিশাত তামান্না আদিবা, এহসানুল হক, মো. শাহিদুল ইসলাম, মো. আহসানুল হক মামুন, মো. আবদুল হাসনাত, সাহাল জুবায়ের, তাইমিমা মাহবুব, ফাইরুজ তাহিয়া, ফাতেমা-তুজ-জহুরা (ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল), মো. আমিনুল কাদের বুলবুল, শাবাব মুর্শেদ, রাহিব হাসান, জহির সাদিক মনন, তাহমিদ মোসাদ্দেক, মহিদুল হক মৃদুল, আবদুল্লাহ ইবনে হানিফ আরিয়ান, মাবসুর ফাতিন বিন হোসাইন, ইত্তেহাদ সালেহ চৌধুরী, সৌমিক শাফকাত অভ্র (কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল), এইচ রাইনাদ খান রোহান, কে এম সৌরভ, মো. নবীর হোসেন, মো. ফাহিম ফরায়েজি, তাসফিয়া রহমান রিভা, মাহমুদুল হাসান তামিম, জেরিন তাহসিন আনজুম, তাসনুভা তামিসা অর্পি, ফারহান লাবিব অর্ণব (নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং), মিকদাম-আল-মাদ রৌন, আবদুল মোনাফ চৌধুরী, হুমায়রা রশিদ, সানিয়া কায়েনাত চৌধুরী, মো. এহতেশামুল হক, আতিক তাজওয়ার (রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং)।
আরও পড়ুনপ্রাথমিক শিক্ষকদের তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু৩ ঘণ্টা আগেডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ৩০ জন শিক্ষক হলেনঅধ্যাপক মো. আবদুর রাজ্জাক (২০২১, ২০২৩, ২০২৫), মো. তানভীর আলম (২০২৪) (কম্পিউটার বিজ্ঞান অ্যান্ড প্রকৌশল), আবুল খায়ের মল্লিক (২০২১, ২০২৩), অধ্যাপক মো. নুরনবী (২০২৪), তাসলিম উর রশিদ (২০২২, ২০২৩), অধ্যাপক মো. আশরাফুল ইসলাম মোল্লা (২০২৪), সাদিত বিহঙ্গ মালিথা (২০২১) (ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল), সেঁজুতি রহমান (২০২১, ২০২৩, ২০২৪) (রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং), মো. আরিফুল ইসলাম (২০২৩), মো. সিফাত-ই- আরমান ভূঁইয়া (২০২৩, ২০২৫), মো. মেহেদী হাসান (২০২৪), মো. হোসাইন শাহাদাত (২০২১), অনিমেষ পাল (২০২১, ২০২৫), অধ্যাপক আফরোজা শেলি (২০২২, ২০২৫) (নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং), মাইনুল হোসেন (২০২২, ২০২৪, ২০২৫), শেখ মো. মাহমুদুল ইসলাম (২০২২, ২০২৩), মো. আহসান হাবীব (২০২৫), ইমতিয়াজ আহমেদ (২০২৪) (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘মেধাকে মূল্যায়ন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। মেধার অন্যতম ভিত্তি হলো পরিশ্রম। মনে রাখতে হবে, সাফল্যের পেছনে অনেকের অবদান থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের যে পরম্পরা, তা তোমরা ধরে রেখেছো। এটাই আমাদের গর্ব।’
আরও পড়ুনপ্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা-গণিত: প্রশ্ন নম্বর-৩০৮ নভেম্বর ২০২৫