সৌরবলয় সম্পর্কে জানতে গত বুধবার ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ইন্টারস্টেলার ম্যাপিং অ্যান্ড অ্যাক্সিলারেশন প্রোব (আইম্যাপ) মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। মহাকাশযানটি সূর্যের প্রতিরক্ষামূলক বুদ্‌বুদ হিসেবে কাজ করা হেলিওস্ফিয়ার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে। নাসার তথ্যমতে হেলিওস্ফিয়ার ক্ষতিকারক মহাকাশের বিকিরণ থেকে সৌরজগৎকে রক্ষা করছে। কীভাবে রক্ষা করছে, তা জানার জন্য বুদ্‌বুদের প্রান্ত পরীক্ষা করবে আইম্যাপ। আমাদের সৌরজগৎকে ছাড়িয়ে মহাকাশের সঙ্গে কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে, তা-ও জানার চেষ্টা করবে। এই মিশনের মাধ্যমে সূর্য কীভাবে আমাদের রক্ষা করে এবং আমাদের সৌরজগৎ কীভাবে ছায়াপথের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত, তা জানা যাবে।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, হেলিওস্ফিয়ার সূর্য ও সৌরজগৎকে ঘিরে থাকা অদৃশ্য প্রতিরক্ষামূলক বুদ্‌বুদ। সূর্যের সৌরবায়ু নির্গমনের ফলে এই বুদ্‌বুদ তৈরি হয়। এটি মূলত মহাজাগতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে। সূর্য থেকে চার্জযুক্ত কণার একটি প্রবাহ সৌরজগৎকে ঘিরে এই বলয় তৈরি করেছে। সূর্য থেকে সৌরকণা বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে আন্তনাক্ষত্রিক মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন নক্ষত্রের মধ্যে বিদ্যমান গ্যাস, ধুলা ও বিকিরণের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এই মিথস্ক্রিয়ার কারণে সৌরজগতের চারপাশে একটি বুদ্‌বুদের মতো অঞ্চল তৈরি হয়েছে। পৃথিবী ও অন্যান্য সৌরগ্রহকে মহাজাগতিক বিকিরণ থেকে রক্ষা করে যাচ্ছে এই বুদ্‌বুদ। মিল্কিওয়ে থেকে আসা বিভিন্ন মহাজাগতিক রশ্মি ক্ষতিকারক হতে পারে। হেলিওস্ফিয়ার সেই সব মহাজাগতিক রশ্মিকে ঢাল হিসেবে ঠেকিয়ে দিচ্ছে।

আইম্যাপ সূর্যের কার্যকলাপ হেলিওস্ফিয়ারকে কীভাবে প্রভাবিত করে, তা পরীক্ষা করা হবে এই অভিযানে। এ জন্য গ্যাস, ধুলা ও মহাজাগতিক বিকিরণে ভরা আমাদের সৌরজগতের বাইরের স্থানের সঙ্গে হেলিওস্ফিয়ার কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে, তা জানার পাশাপাশি সৌরবায়ু ও সৌরকণাকে রিয়েল টাইমে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এই মিশনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মহাকাশের আবহাওয়া জানার চেষ্টা করবেন। আইম্যাপের মাধ্যমে সংগৃহীত সব তথ্য আইম্যাপ অ্যাকটিভ লিংক ইন রিয়েল-টাইম সিস্টেমে রাখা হবে। এটি মহাকাশ আবহাওয়ার পূর্বাভাস উন্নত করার জন্য একটি টুল।

আইম্যাপ মহাকাশযানটি বিকিরণ শনাক্ত থেকে শুরু করে চৌম্বকক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করতে পারে। আর তাই আইম্যাপকে প্রথমে পৃথিবী-সূর্য ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টে (এল১) রাখা হবে। এই অবস্থান পৃথিবী থেকে সূর্যের দিকে প্রায় এক কোটি মাইল দূরে অবস্থিত। এই অবস্থান থেকে সূর্যের কার্যকলাপ ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করা যাবে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীতে পৌঁছানোর প্রায় ৩০ মিনিট আগে সৌরঝড় বা বিকিরণের বিস্ফোরণ শনাক্ত করা যাবে এই অবস্থান থেকে।

সূত্র: এনডিটিভি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইম য প আম দ র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সৌরজগতের গ্রহাণু বলয় হারিয়ে যাচ্ছে

বৃহস্পতি ও মঙ্গল গ্রহের মাঝখানে থাকা গ্রহাণু বলয় থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন উপাদান হারিয়ে যাচ্ছে। মহাকর্ষীয় শক্তি ও ঘন ঘন সংঘর্ষের কারণে এই মহাজাগতিক অঞ্চলটি ছোট হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন উরুগুয়ের ইউনিভার্সিড্যাড দে লা রিপাবলিকার জুলিয়ো ফার্নান্দেজের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী। এই ক্ষয় পৃথিবীর অতীত ও ভবিষ্যতের উল্কাপিণ্ডের আঘাতের ঝুঁকির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানের গ্রহাণু বলয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার উপাদান হারাচ্ছে। ৪৬০ কোটি বছর আগে সৌরজগতের জন্মের সময় এই অঞ্চলে একটি গ্রহ তৈরির সম্ভাবনা থাকলেও, তা হয়নি। মূলত বৃহস্পতি গ্রহের শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণের কারণে তা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতি গ্রহ মহাজাগতিক বস্তুকে একত্র হওয়ার সুযোগ না দিয়ে উল্টো সংঘর্ষ ঘটিয়ে সেগুলোকে ভেঙে ফেলে।

বর্তমানে এই গ্রহাণু বলয়ে চাঁদের ভরের মাত্র প্রায় ৩ শতাংশ উপাদান অবশিষ্ট আছে। বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে এসব উপাদান। বৃহস্পতি, শনি ও মঙ্গল গ্রহের মহাকর্ষীয় প্রভাবের কারণে এই মহাজাগতিক শিলার কক্ষপথ ক্রমেই প্রভাবিত হচ্ছে। কিছু শিলা সৌরজগতের ভেতরের দিকে থাকা পৃথিবীর কক্ষপথের কাছে চলে আসছে। আবার কিছু শিলা বৃহস্পতির দিকে ছিটকে যাচ্ছে। কিছু শিলা সংঘর্ষের ফলে ধুলায় পরিণত হচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, বলয়টি প্রতিবছর প্রায় শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য ৮৮ শতাংশ হারে ছোট হচ্ছে। এই হিসাব শুধু বলয়ের সেই অংশের জন্য, যেখানে এখনো সংঘর্ষ ঘটছে। এই হার ছোট মনে হলেও শত শত কোটি বছর ধরে এর বিশাল প্রভাব তৈরি হচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া উপাদানের প্রায় ২০ শতাংশ অপেক্ষাকৃত বড় খণ্ড হিসেবে ছিটকে যায়। সেসব বড় খণ্ডকে আমরা কখনো কখনো পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করতে দেখি উল্কাপিণ্ড হিসেবে। অবশিষ্ট ৮০ শতাংশ সূক্ষ্ম ধুলায় পরিণত হয়। সেই ধুলার কারণে সূর্যাস্তের পরে বা সূর্যোদয়ের আগে আমাদের পৃথিবীর আকাশে এক ক্ষীণ আভা সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুনসৌরজগতের শেষ সীমানায় কী আছে১১ আগস্ট ২০২৫

গ্রহাণু বলয়কে আমাদের সৌরজগতের একটি স্থায়ী অংশ মনে হলেও নতুন গবেষণা বলছে, এটি ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই গবেষণায় সেরেস, ভেস্টা ও প্যালাসের মতো বড় ও স্থিতিশীল গ্রহাণুকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বলয় এলাকার চলমান ক্ষয়ের প্রক্রিয়া বোঝার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর অতীত ইতিহাস নিয়ে আরও ভালোভাবে গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছেন।

সূত্র: এনডিটিভি

আরও পড়ুনপৃথিবী কি সত্যিই সৌরজগৎ থেকে বেরিয়ে যাবে২৩ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সৌরজগতের গ্রহাণু বলয় হারিয়ে যাচ্ছে