এশিয়ার কিংবদন্তি বক্সার সিঙ্গাপুরের আরবিন্দ লালওয়ানি এখন ঢাকায়। 

শুক্রবার বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটির জুলকান ইনডোর এরিনার উদ্যোগে বাংলাদেশি বক্সারদের দুই দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তিনি যোগ দিয়েছেন। 

এ প্রসঙ্গে আরবিন্দ লালওয়ানি বলেন, “জুলকান এরিনার সুযোগ সুবিধা বিশ্বমানের। এই সুযোগ-সুবিধা দেখে আমি মুগ্ধ! সিঙ্গাপুরের ক্লাবগুলোতেও এ রকম আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নেই। বিশ্বে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে তুলনা করলেও এই ক্লাব উপরের দিকেই থাকবে। ভালো মানের বক্সার তৈরি করতে হলে সব কিছুই উন্নত হতে হবে। জুলকান অ্যারেনা এক কথায় দারুণ!’’

লালওয়ানি আরও বলেন, ‘‘এ ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশের বক্সিংয়ের মান ও সক্ষমতার মান পাল্টে দিতে পারে।’’

এই উদ্যোগকে ঘিরে আয়োজকেরা আশাবাদী যে বসুন্ধরার এই প্রচেষ্টা বাংলাদেশের বক্সিংয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মেজর মোঃ মোহসিনুল করিম বলেন, ‘‘আমাদের মূল লক্ষ্য বক্সিংকে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলায় পরিণত করা। আমরা চাই আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণরা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাক।’’

এ দিকে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ঘিরে স্থানীয় প্রশিক্ষক ও খেলোয়াড়দের মধ্যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। বক্সিংকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পথে আরবিন্দ লালওয়ানির এই সফর নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন তারা। 

উল্লেখ্য, আরবিন্দ লালওয়ানি সরাসরি মোহাম্মদ আলীর ট্রেইনার এঞ্জেলো ডান্ডির অধীনে অনুশীলন করেছেন।

ঢাকা/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বক স র

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যানসার রোগীদের পাশে

সময়টা ২০১৩ সাল। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করে স্নাতকোত্তরের বিষয় নিয়ে ভাবছিলেন ডা. ফাহমিদা আলম। অনেকগুলো বিষয় নিয়ে ভাবছিলেন। তবে মূল লক্ষ্য ছিল এমন বিষয়, যেখানে শুধু রোগীদের সেবা নয়, তাঁদের পাশেও থাকা যায়। আর সে মুহূর্তেই তাঁর শাশুড়ির ক্যানসার ধরা পড়ে।

ডা. ফাহমিদা আলম বলেন, ‘তখন চট্টগ্রামে তেমন কোনো নারী ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। আমি তখন দেখেছিলাম শাশুড়ির কোনো নারী ক্যানসার বিশেষজ্ঞকে দেখাতে না পারার দুঃখ। তখনই অনকোলজি নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমার সিদ্ধান্তে সব সময় পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন আমার স্বামী।’

ডা. ফাহমিদা আলম বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। ২০২১ সালে অনকোলজিতে এফসিপিএস করেছেন। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের ইনস্টিটিউট অব প্যালিয়েটিভ মেডিসিন থেকে প্যালিয়টিভ কেয়ারের উপর ফ্যালোশিপ করেছেন।

 চট্টগ্রামে যে কজন নারী ক্যানসার বিশেষজ্ঞ আছেন, তাঁর মধ্যে অন্যতম ফাহমিদা আলম। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনকোলজি ও রেডিওথেরাপি বিভাগে আছেন দীর্ঘদিন ধরে। তিনি বিশ্বাস করেন, ক্যানসার হলেও বেঁচে ফেরা সম্ভব।  

 ক্যানসার বিশেষজ্ঞ হওয়ার যাত্রাটা কেমন ছিল—এটা জানতে কথা হয় ফাহমিদা আলমের সঙ্গে। পেশাগত ব্যস্ততা আর পরিবারকে সময় দেওয়ার এক ফাঁকে মুঠোফোনেই জানালেন বিস্তারিত। জানালেন ক্যানসার নিয়ে তাঁর ভাবনা, গবেষণা ও চিন্তা নিয়ে। জানালেন কীভাবে ছোটবেলায় দেখা স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

চিকিৎসক হওয়ার পেছনে প্রথম অনুপ্রেরণা ফাহমিদা আলমের মা-বাবা। ফাহমিদা আলম বলেন, ‘আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশ হাজীপাড়া এলাকায়। ছোটবেলা থেকে মানুষের পাশে থাকতে ভালোবাসি। আমার মা-বাবা সব সময় চেয়েছেন আমি এমন এক পথে চলি, যেখানে জ্ঞান ও মানবিকতা একসঙ্গে কাজ করে। তাঁদের কথা আমাকে চিকিৎসা পেশার দিকে আগ্রহী করে তোলে। আজও যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিই, তাঁদের মূল্যবোধই আমাকে পথ দেখায়।’

দেশে বর্তমানে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নারী রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। তবে সে অনুপাতে চিকিৎসক কম। ফাহমিদা আলম বলেন, শুরুটা সহজ ছিল না। দীর্ঘ সময়ের পড়াশোনা, ক্লিনিক্যাল চাপ এবং আবেগপ্রবণ ভারী কিছু মুহূর্ত—সবই ছিল।

পেশা ও পরিবারের মধ্যে সময় দিতে গিয়ে অনেক সময় হাঁপিয়ে ওঠেন ফাহমিদা আলম। তবে একজন স্ত্রী, একজন মা ও একজন চিকিৎসক—সব দায়িত্বই সামলাচ্ছেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, ‘একজন নারী চিকিৎসক হিসেবে পেশা ও পরিবারকে একসঙ্গে সামলানোও চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে শিক্ষক, সহকর্মী ও পরিবারের সহযোগিতা এবং নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসাই আমাকে টিকিয়ে রেখেছে।’

কিছুটা হালকা আলাপের পর আবার ক্যানসারে ফেরা। পুরো আলাপে ফাহমিদা আলম জানান, গবেষণা হলেও বড় চ্যালেঞ্জ হলো দেরিতে রোগ ধরা পড়া ও চিকিৎসার খরচ। খরচের কারণেই অধিকাংশ পরিবার হাল ছেড়ে দেয়। রোগীও আশা ছেড়ে দেন। 

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ক্যানসার রোগী ভর্তি হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এর মধ্যে রোগী শনাক্ত হচ্ছেন ফুসফুস, স্তন, জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে।

ফাহমিদা আলম যোগ করলেন, ‘অনেক রোগী তখন আসেন, যখন রোগ অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্তকরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা অবকাঠামো সম্প্রসারণ অত্যন্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি মানসিক সহায়তা ব্যবস্থাও আরও শক্তিশালী করা দরকার।’

ক্যানসার রোগীদের অধিকাংশই শনাক্তের পর ঘাবড়ে যান। অনেকেই চিকিৎসকের কাছে আসেন না। তাঁদের জন্য ফাহমিদা আলমের পরামর্শ, ক্যানসার মানেই শেষ নয়। সময়মতো চিকিৎসা, ইতিবাচক মানসিকতা এবং পরিবার-চিকিৎসক-রোগী—এই তিনটি উপাদান একসঙ্গে কাজ করলে ফল অনেক ভালো হয়। আর সবচেয়ে জরুরি হলো, ভয় না পেয়ে চিকিৎসার পথে এগিয়ে আসা।

এই চিকিৎসকের কাছে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম, যেটি তাঁর জীবনে প্রভাব ফেলেছে। তিনি জানান ডা. দৃষ্টি শর্মা কেকার কথা। অবশ্য জানতে চাওয়ার আগেই তিনি জানালেন, গত এপ্রিল মাসে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন তিনি। খুব কাছের এ বান্ধবীর শেষ দেড় মাস খুব কাছ থেকে দেখেছেন ফাহমিদা আলম। 

‘সত্যি বলতে, ক্যানসার চিকিৎসা মানে শুধু ওষুধ নয়—এটা আবেগেরও লড়াই। সে যে চতুর্থ স্টেজের ফুসফুস ক্যানসারের রোগী ছিল। আমি তার চোখে আমার প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও নির্ভরতা দেখতে পেতাম। এখনো কানে বাজে, “আমি জানি আমি হয়তো বাঁচব না, কিন্তু তুই আমার শেষ দিনগুলোকে ভয়হীন করে দিয়েছিস।” তার এই কথাটা আজও মনে পড়ে, আর প্রতিদিন নতুন করে দায়িত্ববোধ জাগায়’, বলছিলেন ফাহমিদা। 

কাছের বান্ধবীর বিদায়ের ঘটনা মনে পড়ায় কিছুটা আবেগপ্রবণ হলেন এই চিকিৎসক। তবে সব সামলে নিয়ে নিজের লক্ষ্যের কথা জানালেন। তিনি বলেন, দেশে ক্যানসার রোগীদের অনেকেই মানসিক ও সামাজিকভাবেই পিছিয়ে পড়েন। তাঁদের তুলে আনার দায়িত্ব নিতে চান তিনি। 

ডা. ফাহমিদা আলম বলেন, ‘আমার স্বপ্ন বাংলাদেশে এমন ক্যানসার কেয়ার তৈরি করা, যেখানে রোগী চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক ও সামাজিক সহায়তাও এক জায়গায় পাবেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ