গাজীপুর-৬ ও নরসিংদী-৫—এ দুটি আসন ছাড়া জাতীয় সংসদের বাকি ২৯৮টি আসনের প্রার্থী ঠিক করে প্রায় চার মাস আগেই নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এখন কেন্দ্রভিত্তিক প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। এর অংশ হিসেবে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করা হচ্ছে।

আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে এ কার্যক্রমগুলো শেষ হবে বলে জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

দলীয় সূত্র বলছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের লক্ষ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনায় ন্যায় ও সমতাভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করা। এ লক্ষ্য সামনে রেখে দলটি পুরোদমে নির্বাচনমুখী তৎপরতা চালাচ্ছে।

যদিও জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন এবং নির্বাচনের পদ্ধতি (সংখ্যানুপাতিক বা পিআর) নিয়ে বিএনপি, জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইতিমধ্যে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ ছয়টি দল অভিন্ন দাবিতে মাঠের কর্মসূচি শুরু করেছে। যার কারণে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছেন অনেকে।

জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, জেলা–উপজেলার নেতাদের ভোট এবং কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ২৯৮টি আসনে প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে। তাঁরা এলাকায় কাজ করলেও এই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত নয়। সমমনা দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হলে কিছু আসন থেকে প্রার্থী সরিয়ে নেওয়া হবে।

৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী তরুণ নেতৃত্বকে সামনে আনার চেষ্টা করছে দলটি। একই সঙ্গে বিতর্কে না জড়িয়ে নীরবে প্রচার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক প্রচার এবং স্থানীয় উন্নয়নকেন্দ্রিক প্রতিশ্রুতি বা জনসম্পৃক্ত কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিচ্ছে।এবার তরুণ প্রার্থী বেশি

অতীতে জামায়াতে মূলত প্রবীণ নেতৃত্বের আধিপত্য ছিল স্পষ্ট। কিন্তু এবার পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দলের আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী তরুণ নেতৃত্বকে সামনে আনার চেষ্টা করছে দলটি। একই সঙ্গে বিতর্কে না জড়িয়ে নীরবে প্রচার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক প্রচার এবং স্থানীয় উন্নয়নকেন্দ্রিক প্রতিশ্রুতি বা জনসম্পৃক্ত কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

জামায়াতের তরুণ প্রার্থীদের একজন দলের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার। তাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মুশফিকুর রহমান এবং তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রহমানের (সানি) ভাই কবির আহমেদ ভূঁইয়া। সেখানে বিএনপির দুটি শক্তিশালী পক্ষ সক্রিয় রয়েছে।

কসবা থেকে আতাউর রহমান সরকার গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘একসময় তো আমরা আমরাই বৈঠক করতাম, সভা করতাম, সাধারণ মানুষ আসত না। এখন আমরা গ্রামে গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক করছি, কেন্দ্রভিত্তিক সভা করছি। আলহামদুলিল্লাহ, মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি, যা চিন্তাও করিনি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলাকায় বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা, সমস্যাগ্রস্ত মানুষের সাহায্য করা, মসজিদে মসজিদে নামাজ পড়ে মুসল্লিদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, কুশল বিনিময় করা—এ কাজগুলো গুরুত্ব দিয়ে করছেন জামায়াতের প্রার্থীরা।

আমিরসহ নির্বাহী পরিষদের ১৫ জন প্রার্থী

দলীয় হিসাবে দেখা যায়, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ২০ জন সদস্যের মধ্যে এবার পাঁচজন ছাড়া সবাই নির্বাচন করবেন। এই পাঁচজন হলেন আ ন ম শামসুল ইসলাম, আবদুর রব, এটি এম মা’ছুম, আবদুল হালিম ও এহসানুল মাহবুব জোবায়ের।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের যে ১৫ জন সদস্য নির্বাচন করছেন, তাঁদের মধ্যে দলের আমির ডা.

শফিকুর রহমান ঢাকা-১৫ এবং সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনা-৫ আসনে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান রাজশাহী-১, এ টি এম আজহারুল ইসলাম রংপুর-২ ও সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কুমিল্লা-১১ আসনে প্রার্থী হবেন। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ-৪ ও এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ কক্সবাজার-২ আসনে, কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ ময়মনসিংহ-৫, মো. ইজ্জত উল্লাহ সাতক্ষীরা-১, সাইফুল আলম খান মিলন ঢাকা-১২, নুরুল ইসলাম বুলবুল (ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির) চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন (ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির) সিলেট-৬, মুহাম্মদ মোবারক হোসাইন ঢাকা-১৩, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল বরিশাল-৫ ও অধ্যক্ষ সাহাবুদ্দিন বগুড়া-১ আসনে নির্বাচন করবেন।

একসময় তো আমরা আমরাই বৈঠক করতাম, সভা করতাম, সাধারণ মানুষ আসত না। এখন আমরা গ্রামে গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক করছি, কেন্দ্রভিত্তিক সভা করছি। আলহামদুলিল্লাহ, মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি, যা চিন্তাও করিনি।ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকারআলোচিত প্রার্থী

বিগত সময়ে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে বিভিন্নভাবে আলোচিত ছিলেন, এমন নেতাদের অনেককে এবার প্রার্থী করছে জামায়াত। তাঁদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম মাসুদ, শিশির মনির, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী (ঠাকুরগাঁও) অন্যতম।

ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ পটুয়াখালী-২ আসনে প্রার্থী হবেন। উদ্দীপনামূলক বক্তব্যের জন্য পরিচিত মাসুদ দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষের তরুণ আইনজীবী হিসেবে আলোচিত ছিলেন শিশির মনির। তাঁকে জামায়াত এবার সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে প্রার্থী করছে। আসনটিতে দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগের সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০১০ সালে শিশির মনির আলোচিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের অভ্যন্তরীণ বিরোধে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকের পদত্যাগের ঘটনায়। ২০০৯ সালে শিশির মনির ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি ছিলেন। সভাপতি ছিলেন মুহাম্মদ রেজাউল করিম। পরের দফায় শিশির মনির ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি করা হয়নি। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগ করেছিলেন। শিশির মনিরও সংগঠন থেকে দীর্ঘদিন দূরে ছিলেন। পরে তাঁকে সংগঠনে যুক্ত করা হয়।

বিগত সময়ে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে বিভিন্নভাবে আলোচিত ছিলেন, এমন নেতাদের অনেককে এবার প্রার্থী করছে জামায়াত। তাঁদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম মাসুদ, শিশির মনির, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী (ঠাকুরগাঁও) অন্যতম।

ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সেই মুহাম্মদ রেজাউল করিমও এবার লক্ষ্মীপুর-৩ (পৌরসভা ও চন্দ্রগঞ্জ) আসনে জামায়াতের প্রার্থী। যেখানে বিএনপির প্রার্থী দলের যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি)। রেজাউল করিম জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি।

ঠাকুরগাঁও-১ আসনে প্রার্থী হবেন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদী। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাঁকে টানা ৫৯ দিন রিমান্ডে রাখা হয়েছিল। তাঁকে সংগঠনে নির্যাতিত নেতা মনে করা হয়। এ আসনটিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন করেন।

আলোচিত ইসলামি বক্তা আমির হামযাকে কুষ্টিয়া-৩ আসনে প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে। সম্প্রতি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে আজান দেওয়া নিয়ে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মদের ছড়াছড়ি নিয়ে অসত্য বক্তব্য দিয়ে বিতর্কিত হন। যদিও পরবর্তী সময়ে তিনি এসব বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আমির হামযার সঙ্গে তাঁরা বসেছিলেন। দলের আমির তাঁকে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক করেছেন। তিনি কুষ্টিয়া-৩ আসনে নির্বাচন করবেন।

ট্রাইব্যুনালে আব্বার (দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী) মামলা চলমান থাকা অবস্থায় আমি নির্বাচন করেছি। তখন আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী পেয়েছিলেন পাঁচ হাজার ভোট। আমি ২৫ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছি। আমি আস্থা রাখছি, পিরোজপুর সদর, জিয়ানগর ও নাজিরপুরের মানুষ আমাকে তাঁদের পাশে রাখবেন।মাসুদ সাঈদীদণ্ডিতদের সন্তানেরাও প্রার্থী

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় ফাঁসিতে দণ্ডিত নেতাদের সন্তানদের মধ্য থেকেও এবার প্রার্থী করা হচ্ছে। সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে নাজিবুর রহমান মোমিন (পাবনা-১), দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী (পিরোজপুর-১) ও বড় ছেলে শামীম সাঈদী (পিরোজপুর-২) এবং মীর কাসেম আলীর ছেলে আইনজীবী মীর আহমদ বিন আরমান (ঢাকা-১৪) আসনে প্রার্থী হবেন। ইতিমধ্যে তাঁরা নির্বাচনী এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রমসহ প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এঁদের মধ্যে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী ২০১৪ সালে পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে আব্বার (দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী) মামলা চলমান থাকা অবস্থায় আমি নির্বাচন করেছি। তখন আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী পেয়েছিলেন পাঁচ হাজার ভোট। আমি ২৫ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছি। আমি আস্থা রাখছি, পিরোজপুর সদর, জিয়ানগর ও নাজিরপুরের মানুষ আমাকে তাঁদের পাশে রাখবেন।’

কথা বলে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধের মামলায় দণ্ডিত জামায়াতের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের চতুর্থ ছেলে হাসান ইমাম ওয়াফি শেরপুর-১ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে বাবার দল জামায়াতের সঙ্গে তাঁর সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। তিনি আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) থেকে নির্বাচন করতে চান বলে গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। এবি পাটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ-সম্পর্ক রয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রার্থী না দেওয়া সেই দুটি আসন

জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের পর গাজীপুর জেলায় একটি আসন বেড়েছে। গাজীপুরে আগে পাঁচটি আসন ছিল, এবার ছয়টি। নতুন করে গঠিত গাজীপুর-৬ আসনে জামায়াত এখনো প্রার্থী ঠিক করেনি। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায় থেকে আপত্তি ওঠায় নরসিংদী-৫ আসনের প্রার্থী পরিবর্তন করা হতে পারে। এর বাইরে আগের সীমানা ধরে খুলনার বাগেরহাট জেলায় চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল। নতুন সীমানা পুনর্নির্ধারণে বাগেরহাটে একটি আসন কমে তিনটি হয়েছে। সেখানে একজন প্রার্থী কমে যাবে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, গাজীপুর-৬ ও নরসিংদী-৫ আসনের প্রার্থী মনোনয়নপ্রক্রিয়া চলছে। খুব শিগগির নাম ঘোষণা করা হবে।

প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ দুটি আসনে

আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে প্রথমবারের মতো জামায়াত নিয়ম ভেঙে দলের বাইরের জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের প্রার্থী করার চিন্তা করছে। এমনকি অমুসলিম প্রার্থীকেও বিবেচনায় নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এমন কিছু হলে সেটি হবে দলটির জন্য ব্যতিক্রম ঘটনা।

এই ব্যতিক্রম ঘটনা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে এই প্রথমবার জামায়াতের ঐতিহ্য ভেঙে অন্তত দুটি আসনে দলের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ প্রকাশ্যে এসেছে। আসন দুটি হচ্ছে পাবনা-৫ ও ময়মনসিংহ-৬। এই দুটি আসনে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে, বিক্ষোভও হয়েছে।

পাবনা-৫ আসনে স্থানীয় জামায়াতের একাংশ দলের মনোনীত প্রার্থী ইকবাল হোসেনকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছে। তারা দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য আবদুর রহিমকে প্রার্থী করার দাবি জানান। ময়মনসিংহ-৬ আসনে কামরুল হাসান মিলনকে প্রার্থী ঘোষণার পর দলের একটি অংশ সাবেক জেলা আমির জসিম উদ্দিনকে প্রার্থী করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় জসিম উদ্দিনের সব সাংগঠনিক পদ স্থগিত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম-১৫ আসন নিয়েও অসন্তোষ দেখা গেছে। সেখানে জামায়াত শাহজাহান চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

জামায়াতের দায়িত্বশীল একজন নেতা জানান, বিক্ষোভের মুখে প্রার্থী পরিবর্তন করা হলে সংগঠনে খারাপ নজির স্থাপিত হতে পারে, তাই প্রার্থী পরিবর্তন করা হবে না।

দলের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র জানিয়েছে, রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনের সব কটি, খুলনার ৩৫ আসনের সব, রাজশাহীর ১১টি, বরিশালের ৩টি, চট্টগ্রামের ১২টি, সিলেটের ৩টি, ময়মনসিংহের ২টি এবং ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে কয়েকটিতে তাঁরা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।কী আভাস পাচ্ছেন নেতারা

জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, গত কয়েক মাসের কার্যক্রমে তাঁরা মাঠ থেকে যে আভাস-ইঙ্গিত পাচ্ছেন, তাতে তাঁরা বেশ আশাবাদী। নিজস্ব জরিপসহ বিভিন্ন সংস্থার জনমত জরিপও তাঁদের আশাবাদী করছে। দলের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র জানিয়েছে, রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনের সব কটি, খুলনার ৩৫ আসনের সব, রাজশাহীর ১১টি, বরিশালের ৩টি, চট্টগ্রামের ১২টি, সিলেটের ৩টি, ময়মনসিংহের ২টি এবং ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে কয়েকটিতে তাঁরা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।

১৯৯৬ সালের পর এককভাবে নির্বাচন করেনি জামায়াত। এবার তারা ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনতে চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা গড়তে চাইছে। তবে এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েই এগোচ্ছে দলটি।

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিন এই প্রতিবেদক মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান। দু-একজন ছাড়া অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাকে কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সবাই নিজ নিজ এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে গেছেন।

সভা–সমাবেশ তো আমরা আগেও করেছি। এখন আগের চেয়ে এখন কয়েক গুণ বেশি মানুষের উপস্থিতি দেখতে পাচ্ছি। মানুষ সরকার, রাষ্ট্র, শাসক, নেতা—সবই নতুন চাইছে। তারা বলছে, যা দেখেছি তা যেন আর না আসে। জামায়াতকে পরীক্ষা করা হয়নি। তাদের কাছে এটা দেখার বাকি আছে। আমরাও সেই পরীক্ষাটা দিতে প্রস্তুতমিয়া গোলাম পরওয়ার

গতকাল শুক্রবার সকালে খুলনা থেকে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন জামায়াতের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার। মাঠের পরিস্থিতি ‘এবার যথেষ্ট ব্যতিক্রম’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সভা–সমাবেশ তো আমরা আগেও করেছি। এখন আগের চেয়ে এখন কয়েক গুণ বেশি মানুষের উপস্থিতি দেখতে পাচ্ছি। মানুষ সরকার, রাষ্ট্র, শাসক, নেতা—সবই নতুন চাইছে। তারা বলছে, যা দেখেছি তা যেন আর না আসে। জামায়াতকে পরীক্ষা করা হয়নি। তাদের কাছে এটা দেখার বাকি আছে। আমরাও সেই পরীক্ষাটা দিতে প্রস্তুত।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াত বহুমুখী প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এই প্রস্তুতি রাজনীতি ও ভোটের মাঠে কতটা প্রভাব ফেলে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল ম পরওয় র আল চ ত ছ ল ন প রথম আল ক শ শ র মন র ক ল ইসল ম আসন র সব উর রহম ন প রস ত ত ম হ ম মদ আসন র স ব এনপ র র রহম ন ৫ আসন র রহম ন র পর ক ষ ন স ঈদ র অন ক উদ দ ন এল ক য় ন র সব এই প র র আম র মন ন ত র জন য আওয় ম ৩ আসন করত ম সরক র গঠন ক ১ আসন স গঠন সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

জুবিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাঠাল সিঙ্গাপুর

গত বৃহস্পতিবার শোনা গিয়েছিল, স্কুবা ডাইভিং নয়, বরং সাঁতার কাটতে গিয়েই পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে জুবিন গার্গের। গতকাল শুক্রবার সেই গুঞ্জনের সত্যতা মিলল। সিঙ্গাপুর সরকার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তুলে দিল গায়কের স্ত্রী গরিমা শইকীয়া গার্গের হাতে। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, স্কুবা ডাইভিং করার সময় নয়, সিঙ্গাপুরের একটি দ্বীপে সাঁতার কাটতে গিয়ে ডুবে মারা গেছেন তিনি।

সিঙ্গাপুর পুলিশ (এসপিএফ) প্রয়াত গায়কের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং তার ওপর ভিত্তি করে তৈরি প্রাথমিক অনুসন্ধানের একটি অনুলিপি ভারতীয় হাইকমিশনের হাতে তুলে দিয়েছে। পাশাপাশি, সিঙ্গাপুর পুলিশ জুবিনের স্ত্রী গরিমার সঙ্গেও কথা বলে। প্রসঙ্গত, ভারত-সিঙ্গাপুর কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০তম বার্ষিকী এবং ভারত ‘আসিয়ান’ পর্যটনের বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন গায়ক।

জুবিন গার্গ

সম্পর্কিত নিবন্ধ