৪৪ বছর আগের কথা। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মিসরের যুদ্ধজয়ের বার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে কায়রোয় একটি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত সে কুচকাওয়াজ পরিদর্শনে যান। মিসরীয় সেনাবাহিনীর কয়েকজন বিপথগামী সদস্য সেখানে ওঁৎ পেতে ছিলেন।

কুচকাওয়াজে সবাই যখন আকাশে ফ্লাইপাস্ট দেখতে ব্যস্ত, তখনই আনোয়ার সাদাতের কাছাকাছি পৌঁছে যান ওই সেনারা। এরপর গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে তাঁরা সাদাতকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। সেখানে উপস্থিত মিসরের সরকারি কর্মকর্তাদের নিশানা করেও গ্রেনেড ছুড়ে মারা হয়। সাদাতকে চারবার গুলি করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান। ওই হামলায় আরও ১০ জন নিহত হন। ১৯৮১ সালের ৬ অক্টোবরের ঘটনা এটি।

আনোয়ার সাদাতের ওপর হামলা হতে পারে বলে আগে থেকেই আশঙ্কা করেছিলেন স্ত্রী জেহান সাদাত। বিবিসির উইটনেস হিস্ট্রিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মূলত আনোয়ার সাদাত যেদিন ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেন, সেদিন থেকেই স্বামীর নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছিল।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের বার্ষিকী উদ্‌যাপনের প্রসঙ্গ টেনে জেহান বলেন, ‘সেই দিনটা ছিল তাঁর (আনোয়ার সাদাত) কাছে খুবই প্রিয় একটি দিন। এ দিনটিকে নিয়ে তিনি গর্ব করতেন। আমি সেদিন তাঁকে বুলেট–প্রতিরোধী বর্ম পরতে বললাম; কিন্তু তিনি আমার কথা শুনলেন না। তিনি বললেন, বুলেট তো আমার মাথায়ও লাগতে পারে। তাহলে কি আমাকে মাথায়ও কিছু পরতে হবে? নিজের নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর যেন কোনো মাথাব্যথাই ছিল না। কোনো কিছু না পরেই তিনি চলে গেলেন।’

আনোয়ার সাদাতের ওপর হামলা হতে পারে বলে আগে থেকেই আশঙ্কা করেছিলেন স্ত্রী জেহান সাদাত। বিবিসির উইটনেস হিস্ট্রিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, মূলত আনোয়ার সাদাত যেদিন ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেন, সেদিন থেকেই স্বামীর নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছিল।

জেহান সাদাত নিজেও ওই কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আনোয়ার সাদাত যে জায়গাটিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, তার থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরত্বে অবস্থান করছিলেন তিনি।

আনোয়ার সাদাতের ভাইয়ের ছেলে তালাত সাদাতও ২০১১ সালে সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ঘটনার দিন তাঁর চাচা ভেবেছিলেন, হামলাকারীরা কুচকাওয়াজেরই অংশ। তাই তিনি স্যালুটের জন্য উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। আর তখনই ওই সেনাসদস্যরা তাঁকে গুলি করেন।

তালাত আরও বলেছিলেন, তাঁর চাচা কখনো বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরতেন না। তিনি সব সময় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতেন, ‘আমি আমার সন্তানদের মধ্যেই আছি।’

জন্ম ও বেড়ে ওঠা

১৯১৮ সালে মিসরের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় আনোয়ার সাদাতের। তাঁর ভাই-বোনের সংখ্যা ১৩। ১৯৩৮ সালে কায়রো মিলিটারি একাডেমি থেকে স্নাতক করেন সাদাত। এরপর মিসরের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কর্মজীবনের শুরুতে তাঁকে সুদানে নিযুক্ত করা হয়। সেখানে জামাল আবদেল নাসের তাঁর সহকর্মী ছিলেন। এ নাসের পরবর্তী সময়ে মিসরের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।

সাদাত ও নাসের আরও কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে একটি বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলেন। তাঁরা এর নাম দেন ‘ফ্রি অফিসার্স মুভমেন্ট’। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মিসরকে মুক্ত করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তিনি ব্রিটিশ বাহিনীকে উৎখাত করতে জার্মানির সঙ্গে মিলে পরিকল্পনা করেন। ১৯৪২ সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুই বছর পর মুক্তি পান সাদাত। তবে আবার ১৯৪৬ সালে আটক হন। ব্রিটিশপন্থী এক মন্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় তখন। ১৯৪৮ সালে এ অভিযোগ থেকে খালাস পান সাদাত।

মিসরীয় সেনাবাহিনীর একটি ছোট দল এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ওই সেনারা চরমপন্থী ইসলামি গোষ্ঠী ‘ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁরা সাদাতের নীতি, বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি প্রচেষ্টার বিরোধী ছিলেন। হামলাকারীদের নেতৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট খালেদ ইসলামবুলি।

কারামুক্ত হওয়ার পর কিছুদিন সাধারণ জীবনযাপন করেন সাদাত। এরপর আবারও ফ্রি অফিসার্স মুভমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হন। তত দিনে এর সদস্য সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গেছে। ১৯৫২ সালে রাজা প্রথম ফারুককে উৎখাতে পরিচালিত অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন সাদাত।

এরপর মিসরের নতুন সরকারের প্রেসিডেন্ট হন নাসের। আর সাদাত সরকারের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।

মিসরের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

৮৬ বল পর টি-টোয়েন্টিতে ছক্কা মারলেন জাকের

দরকারি সময়েই ব্যাটে রান পেয়েছেন জাকের আলী। আফগানিস্তানের ১৪৭ রান তাড়ায় বাংলাদেশ টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়েছে ২৪ রানের মধ্যে। এরপর শামীম হোসেনের সঙ্গে জাকের আলীর ৫৬ রানের জুটিই বাংলাদেশকে জয়ের পথ থেকে বিচ্যুত হতে দেয়নি। শেষ পর্যন্ত ৫ বল আর ২ উইকেট হাতে রেখে জয়ও এসেছে।

গতকাল শারজায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে জাকের করেছেন ২৫ বলে ৩৩ রান। আর মাঝারি মানের এই ইনিংসেই ছক্কার খরা ঘুচিয়েছেন জাকের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ছক্কা মেরেছেন ৭ ইনিংস আর ৮৬ বল পর।

শারজায় কাল জাকের ছক্কা মেরেছেন দুটি। এর মধ্যে প্রথমটি এসেছে ইনিংসের অষ্টম ওভারে মোহাম্মদ নবীর দ্বিতীয় বলে। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে লং অন বাউন্ডারির ওপর দিয়ে বড় ছক্কা মেরেছেন জাকের। এর আগে তিনি সর্বশেষ ছক্কা মেরেছেন ৩ সেপ্টেম্বর সিলেটে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। বোলার ছিলেন কাইল ক্লেইন।

এরপর এশিয়া কাপ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ মিলিয়ে টানা ৭ ইনিংসে কোনো ছক্কা মারতে পারেননি জাকের। শুধু বলের হিসাব করলে টানা ৮৬ বল ছক্কাবিহীন ছিলেন জাকের, যদিও বেশির ভাগ সময়ই ব্যাট করেছেন ইনিংসের দশম ওভারের পরে।

গতকাল ছক্কার দীর্ঘ খরা কাটানোর পর আরেকটি মারতে দেরি হয়নি। পরের ওভারে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে মেরেছেন আরেকটি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে জাকেরের ছক্কা এখন ৪০টি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ষষ্ঠ। ৪০ ছক্কা আছে তানজিদেরও, তবে ম্যাচ কম খেলেছেন তিনি (৩৮ ইনিংস)। জাকের খেলেছেন ৩৯ ইনিংস।

জাকের–শামীমের জুটিতেই জয়ের পথে থাকে বাংলাদেশ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ.লীগ নেতার জামিন, শেরপুরে আদালত ও ডিসি কার্যালয়ের ফটকে বিক্ষোভ
  • যুক্তরাজ্যে রাতের বেলায় মসজিদে ঢুকে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা
  • উহুদের অখ্যাত বীর আবু রুহুম গিফারি
  • দেশে ফিরেছেন নুরুল হক
  • ৩৪ ছক্কায় দেড় লাখ টাকার বল হারালেন অস্ট্রেলিয়ার হারজাস
  • নির্বাচন না পেছালে ক্রিকেট বর্জনের হুমকি ঢাকার ক্লাবগুলোর
  • দুই কোচের টানাটানির মধ্যে নতুন করে ইয়ামালের চোট
  • চুরির অভিযোগে সালিসের পর গাছে ঝুলছিল যুবকের লাশ
  • ৮৬ বল পর টি-টোয়েন্টিতে ছক্কা মারলেন জাকের