অমিত শাহ বড় মীরজাফর হয়ে উঠতে পারেন, আশঙ্কা মমতার
Published: 8th, October 2025 GMT
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেন তার মন্ত্রিসভার ‘নাম্বার ২’ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ওপরে বেশি বিশ্বাস না করেন; না হলে তিনিই একদিন বড় মীরজাফর হয়ে উঠতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন, তার আগে এ রাজ্যে ভোটার তালিকায় ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (এসআইআর) করতে চায় নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এর প্রস্তুতিসম্পর্কিত যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করতে বলেছেন। আর তা নিয়েই কেন্দ্রকে প্রবল নিশানা মমতার।
আরো পড়ুন:
মোদির ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার চোরের সর্দার-গাদ্দার: মমতা
বিজেপি নেতাদের পিঁপড়ার মতো টিপে মেরে ফেলার হুমকি মমতার
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন বলেছে ১৫ দিনের মধ্যে এসআইআর করতে। কিন্তু আপনারাই বলুন একদিকে বর্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, উৎসবের মধ্যে ১৫ দিনের মধ্যে কখনো এসআইআর করা যায়? ওরা কি মনে করে? এটা কি বিজেপির কমিশন? নাকি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, নাগরিক অধিকার রক্ষার কমিশন?”
“আসলে এটা পুরোটাই অমিত শাহর খেলা। তিনি নিজেই অ্যাক্টিং প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা পালন করছেন। প্রধানমন্ত্রী সব কিছুই জানেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ পারি, প্রধানমন্ত্রী যেন সবসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বিশ্বাস না করেন। নাহলে তিনি একদিন বড় মীরজাফর হয়ে যেতে পারেন, প্রথম থেকে খেয়াল রাখুন। কারণ সকালবেলা গোটা দিনের পূর্বাভাস দেয়,” বলেন মমতা।
উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়িসহ বন্যা ও ধসকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকালে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা। সে সময় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অমিত শাহর দিকে তোপ দাগেন তিনি।
বিপর্যস্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বণ্টন করতে এসে, আর্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এসে সোমবার হামলার শিকার হন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা পরিদর্শনে যাওয়ার পথে তাদের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ ওঠে। ভাঙচুর করা হয় তাদের গাড়ি। ব্যাপক মারধর করা হয় দুই বিজেপি নেতাকে।
এরই প্রতিবাদে মঙ্গলবার ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বিক্ষোভে নামে বিজেপি। এসময়ই তৃণমূলের একটি দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। তার প্রতিবাদে বুধবার সকালে তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল কলকাতা থেকে আগরতলা যায়। যদিও আগরতলা বিমানবন্দরে নামার পরে তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আর এ নিয়ে সরব হন তৃণমূল নেত্রী মমতা।
তিনি বলেন, “সংসদ সদস্য, বিধায়কসহ পাঁচজনের একটা প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তাদেরকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ট্যাক্সিতে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমাদের দলীয় কর্মীরা বাইক নিয়ে এলেও তাতে চড়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারপরে তারা আমার নির্দেশমতো হেঁটে দলীয় কার্যালয় থেকে যাওয়া শুরু করে। যদি তাদের হেঁটেও যেতে না দেয়, তাহলে আমি নিজে সেখানে যাব। আমি দেখতে চাই, ওদের অডাসিটি কতটা।”
নাগরাকাটাতে বিজেপির সাংসদ ও বিধায়কের ওপর হামলা প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “ওদের দলের সাংসদ-বিধায়ক যদি এলাকায় না যাযন, যদি সেখানে তাদের সম্মান না দেয়; তবে আমাদের ভুলটা কোথায়? যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তবে আইন তার নিজের পথে চলবে।”
ক্ষোভ ঝেড়ে মমতা বলেন, “বন্যা এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সময় মানুষের মধ্যে রাগ থাকে, ক্ষোভ থাকে। তখন কোনো রাজনৈতিক নেতার যাওয়া উচিত নয়। তারা যদি চল্লিশটা গাড়ির কনভয় নিয়ে বিজেপি নেতারা চলে যায়.
বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ এনে মমতা অভিযোগ করেন, “বিহারের বিধানসভা নির্বাচন আছে বলে আসন্ন ছট পুজা উপলক্ষে সেখানে বিমান ভাড়ায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। এতে আমি খুশি। আমার কোনো দুঃখ নেই, কারণ এখানে ছট পুজা হয়। কিন্তু উত্তরবঙ্গে একটা দুর্যোগ হয়ে যাওয়ার পরে বাগডোগরা থেকে যারা কলকাতায় আসছেন, তাদের বিমান ভাড়া ১৮ হাজার রুপি করে দেওয়া হয়েছে আজকে। আর যারা বিমান পাচ্ছেন না, কলকাতা থেকে দিল্লি হয়ে ঘুরে যাচ্ছেন; তাদের ক্ষেত্রে বিমান ভাড়া প্রায় ৪২ হাজার রুপি। আপনারা কল্পনা করতে পারেন ? এটা কি পক্ষপাতিত্ব নয়?”
মমতার ভাষায়, “এটা একটা ভয়ানক সরকারের ভয়ানক আচরণ। এদের সবসময় রাজ্যকে নিকেশ করে দেওয়ার মনোভাব। তারা কেবল ভোটে জিতেছে, এ ছাড়া কিচ্ছু নয়।”
ওড়িশার কটকে গোষ্ঠী সংঘর্ষ নিয়ে মমতা বলেন, “এরা (বিজেপি) সকলকে হুমকি দেয়, আর বড় বড় কথা বলে। আজকে কটক জ্বলছে, দেখুন কী রকম হামলা হয়েছে, সেখানে বিজেপি, বজরং দল এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটিয়েছে। এরা দেশকে শেষ করে দেবে। আমি অনেক সরকার দেখেছি কিন্তু এই ধরনের ঔদ্ধত্যতার এবং একনায়কতন্ত্রের সরকার কখনো দেখিনি। তাদের মনে রাখা উচিত তারা এখন ক্ষমতায় আছে কিন্তু আগামীকাল ক্ষমতায় নাও থাকতে পারে। কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়।”
ঢাকা/সুচরিতা/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মন ত র কলক ত মমত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমাকে আঘাত করলে ভারত হেলিয়ে দেব’ চরম হুঁশিয়ারি মমতার
‘‘আমাকে আঘাত করলে আমি সারা ভারত হেলিয়ে দেব।’’ এসআইআর ইস্যুতে বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনকে এভাবেই হুঁশিয়ারি দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ঠাকুরনগরে ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর-বিরোধী জনসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। তার দাবি, বাংলা দখলের পরিকল্পনা করতে গিয়ে গুজরাটের শক্ত ঘাঁটি হারাবেন মোদী।
সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বা ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। ঠিক এমন সময় আবারও বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি হুঙ্কার দিয়ে বলেন, ‘‘আমার বাংলায় আঘাত করলে, মানুষকে আঘাত করলে, আমি মনে করি আমায় আঘাত করা হয়েছে। আমাকে আঘাত করলে আমি সারা ভারত হেলিয়ে দেব। এটা মাথায় রেখো। ভোটের পরে আমিও একটু দেশটা চষে বেড়াব।’’
‘‘কী ভাবছ নিজেদের, কেউকেটা হয়ে গেছ? চিরকাল কেউ সরকারে থাকে না। ২০২৯ বড় ভয়ঙ্কর! তোমাদের সরকার থাকবে না। সেদিন কোথায় পালাবে? এখন থেকে জায়গা ঠিক করে রেখে দাও।’’ যোগ করেন মমতা।
এ সময় তিনি বিজেপি গুজরাটে পরাজিত হতে চলেছে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের রাজ্য গুজরাটে ১৯৯০ সাল থেকে বিজেপি নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এ প্রসঙ্গে মমতা তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন।
বিজেপির বিরুদ্ধে মমতার আক্রমণের মূল লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, আসাম এবং কেরালায় নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশনের মাধ্যমে ভোটার তালিকা সংশোধনের এই প্রক্রিয়া। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কেন এত তাড়াহুড়ো করে এসআইআর করা হচ্ছে? নির্বাচনের ঠিক আগে কেন এসআইআর করার প্রয়োজন পড়ল?’’
তৃণমূলের পাশাপাশি অন্যান্য বিরোধী দলগুলোরও অভিযোগ- এই প্রক্রিয়ার আড়ালে বিজেপি বিরোধী-সমর্থক প্রান্তিক এবং নিপীড়িত সম্প্রদায়ের ভোটারদের অনুপ্রবেশকারী অজুহাতে তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে।
মমতা বলেন, ‘‘আমি পরিষ্কার বলতে এসেছি, আপনারা যারা এখানকার প্রকৃত ভোটার, আগে ভোট দিয়েছেন, এমনকি ২০২৪-এও, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন কোন লিস্টে? ২০২৪-এর লিস্টে। তাহলে সেই লিস্ট যদি বাতিল হয়ে যায়, তাহলে তো সরকারও বাতিল হয়ে যাওয়া উচিত। তুমি এতদিন এসআইআর করার সময় পেলে না? ভোটের দুই মাস আগে তোমার মাথায় সুড়সুড়ি! নাকি, কাকে বাদ দেবে আর কাকে বাদ দেবে না! আর এলাকায় গিয়ে ধর্মের নামে ফর্ম বিক্রি করতে হচ্ছে। এতদিন কী করছিলে? ভোট এলে তোমার এসব মনে পড়ে?’’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘যদি সত্যিই সীমান্ত এলাকায় এত কাল অবৈধ অভিবাসীরা থেকে থাকেন, তবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাহারার দায়িত্ব কার ছিল? বিমানবন্দর এবং কাস্টমস সবই তো কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে। যতদিন আমি আছি, ততদিন আমি তাদের আপনাদের ছুঁড়ে ফেলতে দেব না।’’
ভোটার তালিকা এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে বারবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মমতা। গত সপ্তাহে এসআইআর প্রক্রিয়া স্থগিতের অনুরোধও জানান তিনি। তার অভিযোগ, পরিকল্পনাহীন এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের তিনজন বুথ লেভেল অফিসারের মৃত্যুর খবর মিলেছে এবং অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলেও জানা গেছে।
মমতার দাবি, এসআইআরের কাজের চাপেই এ ঘটনা ঘটছে।
ঢাকা/তারা//