ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেন তার মন্ত্রিসভার ‘নাম্বার ২’ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ওপরে বেশি বিশ্বাস না করেন; না হলে তিনিই একদিন বড় মীরজাফর হয়ে উঠতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন, তার আগে এ রাজ্যে ভোটার তালিকায় ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (এসআইআর) করতে চায় নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এর প্রস্তুতিসম্পর্কিত যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করতে বলেছেন। আর তা নিয়েই কেন্দ্রকে প্রবল নিশানা মমতার। 

আরো পড়ুন:

মোদির ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার চোরের সর্দার-গাদ্দার: মমতা

বিজেপি নেতাদের পিঁপড়ার মতো টিপে মেরে ফেলার হুমকি মমতার

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন বলেছে ১৫ দিনের মধ্যে এসআইআর করতে। কিন্তু আপনারাই বলুন একদিকে বর্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, উৎসবের মধ্যে ১৫ দিনের মধ্যে কখনো এসআইআর করা যায়? ওরা কি মনে করে? এটা কি বিজেপির কমিশন? নাকি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, নাগরিক অধিকার রক্ষার কমিশন?”

“আসলে এটা পুরোটাই অমিত শাহর খেলা। তিনি নিজেই অ্যাক্টিং প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা পালন করছেন। প্রধানমন্ত্রী সব কিছুই জানেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ পারি, প্রধানমন্ত্রী যেন সবসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বিশ্বাস না করেন। নাহলে তিনি একদিন বড় মীরজাফর হয়ে যেতে পারেন, প্রথম থেকে খেয়াল রাখুন। কারণ সকালবেলা গোটা দিনের পূর্বাভাস দেয়,” বলেন মমতা। 

উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়িসহ বন্যা ও ধসকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকালে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা। সে সময় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অমিত শাহর দিকে তোপ দাগেন তিনি।

বিপর্যস্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বণ্টন করতে এসে, আর্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এসে সোমবার হামলার শিকার হন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা পরিদর্শনে যাওয়ার পথে তাদের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ ওঠে। ভাঙচুর করা হয় তাদের গাড়ি। ব্যাপক মারধর করা হয় দুই বিজেপি নেতাকে।

এরই প্রতিবাদে মঙ্গলবার ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বিক্ষোভে নামে বিজেপি। এসময়ই তৃণমূলের একটি দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। তার প্রতিবাদে বুধবার সকালে তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল কলকাতা থেকে আগরতলা যায়। যদিও আগরতলা বিমানবন্দরে নামার পরে তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আর এ নিয়ে সরব হন তৃণমূল নেত্রী মমতা। 

তিনি বলেন, “সংসদ সদস্য, বিধায়কসহ পাঁচজনের একটা প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তাদেরকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ট্যাক্সিতে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমাদের দলীয় কর্মীরা বাইক নিয়ে এলেও তাতে চড়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারপরে তারা আমার নির্দেশমতো হেঁটে দলীয় কার্যালয় থেকে যাওয়া শুরু করে। যদি তাদের হেঁটেও যেতে না দেয়, তাহলে আমি নিজে সেখানে যাব। আমি দেখতে চাই, ওদের অডাসিটি কতটা।” 

নাগরাকাটাতে বিজেপির সাংসদ ও বিধায়কের ওপর হামলা প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “ওদের দলের সাংসদ-বিধায়ক যদি এলাকায় না যাযন, যদি সেখানে তাদের সম্মান না দেয়; তবে আমাদের ভুলটা কোথায়? যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তবে আইন তার নিজের পথে চলবে।”

ক্ষোভ ঝেড়ে মমতা বলেন, “বন্যা এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সময় মানুষের মধ্যে রাগ থাকে, ক্ষোভ থাকে। তখন কোনো  রাজনৈতিক নেতার যাওয়া উচিত নয়। তারা যদি চল্লিশটা গাড়ির কনভয় নিয়ে বিজেপি নেতারা চলে যায়.

.. তখন কি পুলিশ তাদের পিছনে পিছন যাবে, নাকি দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করবে?”

বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ এনে মমতা অভিযোগ করেন, “বিহারের বিধানসভা নির্বাচন আছে বলে আসন্ন ছট পুজা উপলক্ষে সেখানে বিমান ভাড়ায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। এতে আমি খুশি। আমার কোনো দুঃখ নেই, কারণ এখানে ছট পুজা হয়। কিন্তু উত্তরবঙ্গে একটা দুর্যোগ হয়ে যাওয়ার পরে বাগডোগরা থেকে যারা কলকাতায় আসছেন, তাদের বিমান ভাড়া ১৮ হাজার রুপি করে দেওয়া হয়েছে আজকে। আর যারা বিমান পাচ্ছেন না, কলকাতা থেকে দিল্লি হয়ে ঘুরে যাচ্ছেন; তাদের ক্ষেত্রে বিমান ভাড়া প্রায় ৪২ হাজার রুপি। আপনারা কল্পনা করতে পারেন ? এটা কি পক্ষপাতিত্ব নয়?” 

মমতার ভাষায়, “এটা একটা ভয়ানক সরকারের ভয়ানক আচরণ। এদের সবসময় রাজ্যকে নিকেশ করে দেওয়ার মনোভাব। তারা কেবল ভোটে জিতেছে, এ ছাড়া কিচ্ছু নয়।” 

ওড়িশার কটকে গোষ্ঠী সংঘর্ষ নিয়ে মমতা বলেন, “এরা (বিজেপি) সকলকে হুমকি দেয়, আর বড় বড় কথা বলে। আজকে কটক জ্বলছে, দেখুন কী রকম হামলা হয়েছে, সেখানে বিজেপি, বজরং দল এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটিয়েছে। এরা দেশকে শেষ করে দেবে। আমি অনেক সরকার দেখেছি কিন্তু এই ধরনের ঔদ্ধত্যতার এবং একনায়কতন্ত্রের সরকার কখনো দেখিনি। তাদের মনে রাখা উচিত তারা এখন ক্ষমতায় আছে কিন্তু আগামীকাল ক্ষমতায় নাও থাকতে পারে। কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়।”

ঢাকা/সুচরিতা/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মন ত র কলক ত মমত র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অমিত শাহ বড় মীরজাফর হয়ে উঠতে পারেন, আশঙ্কা মমতার

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেন তার মন্ত্রিসভার ‘নাম্বার ২’ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ওপরে বেশি বিশ্বাস না করেন; না হলে তিনিই একদিন বড় মীরজাফর হয়ে উঠতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন, তার আগে এ রাজ্যে ভোটার তালিকায় ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (এসআইআর) করতে চায় নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এর প্রস্তুতিসম্পর্কিত যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করতে বলেছেন। আর তা নিয়েই কেন্দ্রকে প্রবল নিশানা মমতার। 

আরো পড়ুন:

মোদির ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার চোরের সর্দার-গাদ্দার: মমতা

বিজেপি নেতাদের পিঁপড়ার মতো টিপে মেরে ফেলার হুমকি মমতার

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন বলেছে ১৫ দিনের মধ্যে এসআইআর করতে। কিন্তু আপনারাই বলুন একদিকে বর্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, উৎসবের মধ্যে ১৫ দিনের মধ্যে কখনো এসআইআর করা যায়? ওরা কি মনে করে? এটা কি বিজেপির কমিশন? নাকি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, নাগরিক অধিকার রক্ষার কমিশন?”

“আসলে এটা পুরোটাই অমিত শাহর খেলা। তিনি নিজেই অ্যাক্টিং প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা পালন করছেন। প্রধানমন্ত্রী সব কিছুই জানেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ পারি, প্রধানমন্ত্রী যেন সবসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বিশ্বাস না করেন। নাহলে তিনি একদিন বড় মীরজাফর হয়ে যেতে পারেন, প্রথম থেকে খেয়াল রাখুন। কারণ সকালবেলা গোটা দিনের পূর্বাভাস দেয়,” বলেন মমতা। 

উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়িসহ বন্যা ও ধসকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকালে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা। সে সময় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অমিত শাহর দিকে তোপ দাগেন তিনি।

বিপর্যস্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বণ্টন করতে এসে, আর্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এসে সোমবার হামলার শিকার হন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা পরিদর্শনে যাওয়ার পথে তাদের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ ওঠে। ভাঙচুর করা হয় তাদের গাড়ি। ব্যাপক মারধর করা হয় দুই বিজেপি নেতাকে।

এরই প্রতিবাদে মঙ্গলবার ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বিক্ষোভে নামে বিজেপি। এসময়ই তৃণমূলের একটি দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। তার প্রতিবাদে বুধবার সকালে তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল কলকাতা থেকে আগরতলা যায়। যদিও আগরতলা বিমানবন্দরে নামার পরে তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আর এ নিয়ে সরব হন তৃণমূল নেত্রী মমতা। 

তিনি বলেন, “সংসদ সদস্য, বিধায়কসহ পাঁচজনের একটা প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তাদেরকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ট্যাক্সিতে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমাদের দলীয় কর্মীরা বাইক নিয়ে এলেও তাতে চড়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারপরে তারা আমার নির্দেশমতো হেঁটে দলীয় কার্যালয় থেকে যাওয়া শুরু করে। যদি তাদের হেঁটেও যেতে না দেয়, তাহলে আমি নিজে সেখানে যাব। আমি দেখতে চাই, ওদের অডাসিটি কতটা।” 

নাগরাকাটাতে বিজেপির সাংসদ ও বিধায়কের ওপর হামলা প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “ওদের দলের সাংসদ-বিধায়ক যদি এলাকায় না যাযন, যদি সেখানে তাদের সম্মান না দেয়; তবে আমাদের ভুলটা কোথায়? যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তবে আইন তার নিজের পথে চলবে।”

ক্ষোভ ঝেড়ে মমতা বলেন, “বন্যা এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সময় মানুষের মধ্যে রাগ থাকে, ক্ষোভ থাকে। তখন কোনো  রাজনৈতিক নেতার যাওয়া উচিত নয়। তারা যদি চল্লিশটা গাড়ির কনভয় নিয়ে বিজেপি নেতারা চলে যায়... তখন কি পুলিশ তাদের পিছনে পিছন যাবে, নাকি দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করবে?”

বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ এনে মমতা অভিযোগ করেন, “বিহারের বিধানসভা নির্বাচন আছে বলে আসন্ন ছট পুজা উপলক্ষে সেখানে বিমান ভাড়ায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। এতে আমি খুশি। আমার কোনো দুঃখ নেই, কারণ এখানে ছট পুজা হয়। কিন্তু উত্তরবঙ্গে একটা দুর্যোগ হয়ে যাওয়ার পরে বাগডোগরা থেকে যারা কলকাতায় আসছেন, তাদের বিমান ভাড়া ১৮ হাজার রুপি করে দেওয়া হয়েছে আজকে। আর যারা বিমান পাচ্ছেন না, কলকাতা থেকে দিল্লি হয়ে ঘুরে যাচ্ছেন; তাদের ক্ষেত্রে বিমান ভাড়া প্রায় ৪২ হাজার রুপি। আপনারা কল্পনা করতে পারেন ? এটা কি পক্ষপাতিত্ব নয়?” 

মমতার ভাষায়, “এটা একটা ভয়ানক সরকারের ভয়ানক আচরণ। এদের সবসময় রাজ্যকে নিকেশ করে দেওয়ার মনোভাব। তারা কেবল ভোটে জিতেছে, এ ছাড়া কিচ্ছু নয়।” 

ওড়িশার কটকে গোষ্ঠী সংঘর্ষ নিয়ে মমতা বলেন, “এরা (বিজেপি) সকলকে হুমকি দেয়, আর বড় বড় কথা বলে। আজকে কটক জ্বলছে, দেখুন কী রকম হামলা হয়েছে, সেখানে বিজেপি, বজরং দল এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটিয়েছে। এরা দেশকে শেষ করে দেবে। আমি অনেক সরকার দেখেছি কিন্তু এই ধরনের ঔদ্ধত্যতার এবং একনায়কতন্ত্রের সরকার কখনো দেখিনি। তাদের মনে রাখা উচিত তারা এখন ক্ষমতায় আছে কিন্তু আগামীকাল ক্ষমতায় নাও থাকতে পারে। কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়।”

ঢাকা/সুচরিতা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ