পরীমণির কণ্ঠে সেই দুঃসহ মুহূর্তের গল্প
Published: 11th, October 2025 GMT
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা পরীমণি—আলো-ঝলমলে ক্যামেরার সামনে যিনি ছিলেন গ্ল্যামারের প্রতীক, তিনিই জীবনের এক ভয়াবহ অধ্যায় পার করেছেন বন্দি হয়ে। সেই দুঃসময়, ভয়, আর অসহায়তার স্মৃতি এখনও যেন তার মনের ভেতর গেঁথে আছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সেই সময়ের ভারি পাতা খুললেন তিনি।
অনুষ্ঠানে পরীমণির সঙ্গে আলাপচারিতার একপর্যায়ে উঠে আসে তার জেলজীবনের স্মৃতি। ২০২১ সালের ৫ আগস্ট, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় বনানীর বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই দিনটির কথা বলতে গিয়ে পরীমণির চোখে-মুখে ভেসে ওঠে এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ— ব্যথা, বিস্ময় আর কৃতজ্ঞতা।
“আমার জীবনটা তখন খুব ছোট এক পৃথিবী ছিল—নানুভাই, আমার ছোট কুকুর পুটু, বন্ধুদের আড্ডা আর কাজ—এই নিয়েই সব”-স্মৃতিচারণ করেন পরীমণি।
পরী বলেন, “যেদিন আমাকে নিতে এল, পুটু চিল্লাচ্ছে, আমি বুঝাতে পারছিলাম না ওকে। একটা বোবা প্রাণী, জানে না আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, কেন নিয়ে যাচ্ছে—আমারও কোনো উত্তর ছিল না।”
একটু থেমে হাসতে হাসতে বলেন, “উনি (নানু) তখন জায়নামাজে বসা। আমি কীভাবে বলি-‘তোমার নাতিকে মাদক মামলায় ধরে নিয়ে যাচ্ছে’! এটা মুখে আনা যায়?”
কণ্ঠ নরম হয়ে আসে পরীর, “তখন মনে হয়েছিল, আমি যেন দেশান্তরী হলাম নিজের দেশেই। আমার সমস্ত স্বাধীনতা আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হলো।”
পরীমণির এই স্বীকারোক্তি শুধু একজন শিল্পীর নয়, এক নারীর সাহস ও টিকে থাকার গল্প। কঠিন সময় পেরিয়ে তিনি এখন নতুন জীবনের পথে। শরিফুল রাজের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর দুই সন্তানকে নিয়েই চলছে তার সংসার।
বর্তমানে তিনি ‘সিঙ্গেল মাদার’ হিসেবে সন্তানদের মানুষ করছেন, পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন নিজের অনলাইনভিত্তিক ব্র্যান্ড ‘বডি’। মাতৃত্বকালীন ও নবজাতকের যত্নে প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে এই উদ্যোগ। অভিনয়ের বাইরেও পরীমণির জীবনযাত্রা, চিন্তাভাবনা ও কর্মকাণ্ডে এখন ফুটে ওঠে এক দৃঢ় ও পরিপক্ব নারীর রূপ— যিনি ঝড় পেরিয়ে নিজের আলোয় জ্বলে উঠেছেন নতুনভাবে।
ঢাকা/রাহাত//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষকদের এভাবে পেটানো জাতির জন্য লজ্জাজনক
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘একটা নতুন দেশ গড়তে যাচ্ছি আমরা। এত মানুষ রক্ত দিয়েছেন, তারপরও অপমানিত হওয়ার জন্য নয়। শিক্ষক কেন, একটা সাধারণ মানুষকেও রাস্তার মধ্যে কুকুরের মতো পেটাবেন, এই রকম দেশ চাই না।’
আজ সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের তিন দফা দাবিতে চলা অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে এ কথাগুলো বলেন মাহমুদুর রহমান।
নিজের রাজনৈতিক লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘দেশ আমরা বদলাব বলে লড়াই করছি। এখনো যে লড়াই করছি, তা কোনো দলের পরিবর্তে দল কিংবা মানুষের পরিবর্তে মানুষকে ক্ষমতায় বসানোর লড়াই নয়। আমরা সমগ্র মানুষ, ২০ কোটি মানুষের ভাগ্য বদলাবার লড়াই করি।’
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষক–কর্মচারীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটার সমালোচনা করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রী সাহেবরা প্রতিদিন কে কতক্ষণ লেট করে অফিসে আসেন, সেই হিসাব তো চাইনি। তাহলে ৫ মিনিটের মধ্যে শিক্ষকদের লাঠিপেটা করা আর যা–ই হোক, মানুষের কাজ তো হতে পারে না। এটা এই জাতির জন্য একটা কলঙ্ক।’
দুই দিন পার হলেও আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারের কোনো প্রতিনিধি যোগাযোগ না করার সমালোচনা করেন মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়ার জন্য যে ভাতা দেওয়া হয়, তা দিয়ে একেবারে গ্রাম এলাকাতেও একটা বাসা পাওয়া যায় না।’
শিক্ষকদের দাবি মানা না হলে রাজনৈতিক দলগুলোও শিক্ষকদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেবে বলে জানান মাহমুদুর রহমান। এ সময় তিনি গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দলের পক্ষ থেকে শিক্ষক–কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের এই আন্দোলনের সঙ্গে আমরা আছি।’
শিক্ষক–কর্মচারীদের আন্দোলনের সফলতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘এমন একটি সরকার চাই, যে সরকার সত্যি সত্যি জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। আজকের লড়াই শুধু শিক্ষকদের নয়, এই লড়াই শিক্ষকদের মুক্তির লড়াই। শিক্ষাকে উন্নত করার লড়াই।’
এর আগে বিকেলে শিক্ষক–কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন প্রমুখ।