বিশ্ব অর্থনীতিতে ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব এখনো তেমন একটা পড়েনি: আইএমএফ
Published: 15th, October 2025 GMT
মার্কিন শুল্কবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বজুড়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল, বাস্তবে তার প্রভাব এখন পর্যন্ত অনেকটাই সীমিত। তবু তার কোনো প্রভাব পড়েনি—এমনটা ভাবার সময় আসেনি। তেমনটা ভাবা হলে বিষয়টি ভুল হবে—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আইএমএফ ২০২৫ সালের জন্য বৈশ্বিক ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কিছুটা বাড়িছে। সংস্থাটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কবৃদ্ধির মাত্রা প্রত্যাশার চেয়ে কম হওয়ায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
ওয়াশিংটনের হিসাবমতে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে বাণিজ্যচুক্তিগুলো করেছে, সেগুলোর ফলে শুল্কহার এপ্রিলের চেয়ে কম—বেশির ভাগ দেশের জন্য তা ১০ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।
আইএমএফের নতুন পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। জুলাই মাসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, চলতি বছর প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও মহামারির আগের গড় প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭ শতাংশের তুলনায় কমই হবে। সংস্থাটির ধারণা, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ২ দশমিক ১ শতাংশ।
আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ের-অলিভিয়ার গুরিঞ্চাস ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র একাধিক দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তারা ছাড় দিয়েছে। অন্যদিকে বেশির ভাগ দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ থেকে বিরত আছে। তাঁর ভাষায়, ব্যবসায়ীরাও সময় নষ্ট করেননি—শুল্কবৃদ্ধির আগেই আমদানি বাড়িয়েছেন, সরবরাহব্যবস্থা নতুন করে সাজিয়েছেন।
গুরিঞ্চাস সতর্ক করেছেন, বাণিজ্য–উত্তেজনা এখনো প্রশমিত হয়নি। এসব চুক্তি কতটা টিকবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। সেই সঙ্গে মার্কিন আমদানিকারকেরা শেষ পর্যন্ত বাড়তি খরচের বোঝা ভোক্তার ঘাড়েই চাপিয়ে দিতে পারেন। তাঁর মন্তব্য, অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, পুরো চিত্র ফুটে উঠতে সময় লাগে।
চলতি বছর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র যেন এক বিশৃঙ্খল বাণিজ্যযুদ্ধের ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে আছে। কখনো শুল্ক বাড়ানো, কখনো তা স্থগিত রাখা, আবার কখনো হঠাৎ নতুন চুক্তি—এই ওঠানামার মধ্যে বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
এর মধ্যে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য–সম্পর্ক আবারও টান টান হয়ে উঠেছে। বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ে বিবাদের জেরে ট্রাম্প চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। ১ নভেম্বর থেকে তা কার্যকর হবে—এমন দিনক্ষণও ঠিক করে রেখেছেন তিনি। বর্তমানে চীনের পণ্যে শুল্ক আছে ৩০ শতাংশ। নতুন করে ১০০ শতাংশ শুল্ক যোগ হলে মোট শুল্কভার দাঁড়াবে ১৩০ শতাংশ।
গুরিঞ্চাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অভিবাসননীতির কারণে দেশটির শ্রমবাজারে চাপ পড়ছে। এ কারণে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা দেখছি, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে বিদেশে জন্ম নেওয়া কর্মীর সংখ্যা দ্রুত কমছে—শুল্কবৃদ্ধির সঙ্গে এ বিষয়ও সরবরাহ খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
গুরিঞ্চাসের মন্তব্য যেন বিশ্ব অর্থনীতির সারকথাই তুলে ধরে—যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেলে সেই অভিঘাত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমিত থাকে না; পৃথিবীর সবার ওপর তার প্রভাব পড়ে। কেননা, বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর জিডিপির মূল উৎস হচ্ছে রপ্তানি। সেই রপ্তানির মূল গন্তব্য আবার যুক্তরাষ্ট্র।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র প রব দ ধ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অপেক্ষায় আছেন উদ্যোক্তারা: জিইডির প্রতিবেদন
নতুন ব্যবসা চালু করতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অপেক্ষায় আছেন বহু উদ্যোক্তা। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সর্বশেষ মাসিক অর্থনৈতিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
জিইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচন যদি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক গতিপথ ঠিক করে এবং নতুন সরকার এসে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা, আর্থিক ও ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা, জ্বালানি নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ অব্যাহত রাখে, তাহলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ফিরে পাবে।
জিইডির ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় অর্থনীতি নিয়ে সতর্ক আশাবাদ দেখিয়েছে জিইডি। জিইডি বলছে, একদিকে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে স্থায়ী মূল্যস্ফীতি, ব্যবসায়িক আত্মবিশ্বাস ও দুর্বল ব্যাংকিং খাত স্থানীয় চাহিদা ও বেসরকারি বিনিয়োগকে সীমিত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ভালো অবস্থায়
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আগের তুলনায় ভালো হয়েছে বলে মনে করছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। এ ছাড়া প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক প্রবাহ বেড়েছে, যা দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অবস্থান ভালো হওয়ার বড় কারণ।
জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে চলতি বছরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বা বহির্বাণিজ্যের সূচকে অস্থিরতা ছিল। রপ্তানি আয়ের সূচকও ওঠানামা করেছে। বিশেষ করে ২০২৫ সালের এপ্রিল ও জুনে রপ্তানি আয়ে পতন দেখা যায়। তবে অক্টোবরে এই সূচকের অবস্থানে উন্নতি দেখা যায়। তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানির সূচকে বছরের অর্ধেক সময় পর্যন্ত ধীরগতি দেখা গেলেও পরবর্তী সময়ে উন্নতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের নভেম্বরে মোট রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৫ সালের অক্টোবরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে। এর কারণ খাদ্যের দাম স্থিতিশীল হচ্ছে ও সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ সরবরাহের শৃঙ্খলে স্থিতিশীলতা ও আমদানি করা পণ্যের চাপ কম থাকায় চলতি বছরের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমার বড় কারণ হচ্ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরের ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবরে ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ৪৭ শতাংশ
খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে চাল। জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ছিল ৪৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় সামান্য কম। আর মাছ ও মাংসের ভূমিকা ছিল যথাক্রমে ৩৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তবে পর্যাপ্ত মৌসুমি সরবরাহ ভালো থাকায় সবজির দাম কম ছিল। তাই সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে সবজি।