জুলাই সনদে আইনি ভিত্তি না থাকলে জাতির সঙ্গে প্রহসন হবে: নাহিদ ইসলাম
Published: 18th, October 2025 GMT
জুলাই সনদের কোনো আইনি ভিত্তি না থাকলে সেটি শুধুই আনুষ্ঠানিকতার রূপ নেয় এবং সেটি জাতির সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা হিসেবেই গণ্য হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকার বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আরো পড়ুন:
নির্বাচনের পূর্বেই শেখ হাসিনার বিচার করতে হবে: মুকুল
শিক্ষকদের অনশনস্থলে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে এনসিপি
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা আগেও বলেছি, আজকেও বলছি—যদি এই সনদের পেছনে আইনি ভিত্তি না থাকে, তাহলে এর কোনো বাস্তব মূল্য থাকবে না। কেবল আনুষ্ঠানিকতা করে, জাতিকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। এমনটি হলে এটি এক ধরনের প্রহসন হয়ে দাঁড়াবে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ দলের শীর্ষ নেতারা।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “৯০-এর দশকে গণ-আন্দোলনের সময় তিন দলের মধ্যে যে রাজনৈতিক সমঝোতা হয়েছিল, তার প্রতিফলন সংবিধানে হয়নি।” এবারও সেই একই ধরনের প্রতারণার শঙ্কা করছেন তিনি।
তার অভিযোগ, দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে পুরোনো ফ্যাসিস্ট কাঠামোকে টিকিয়ে রাখার নানা চেষ্টা চলছে। এ কাঠামোর সুবিধাভোগীদের চাপেই কিছু রাজনৈতিক দল আপস করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার চাপেই সরকার সংস্কার, ঐকমত্য কমিশন গঠন এবং জুলাই সনদ পর্যন্ত এসেছে। কিন্তু এখন যদি আইনি ভিত্তি দেওয়া না হয়, তাহলে এই অর্জনও মূল্যহীন হবে।”
নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট করে বলেন,“ রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিবর্তন করলেই গণতন্ত্র ফিরে আসবে না—বরং পুরোনো কাঠামো ভেঙে প্রকৃত সংস্কারের মধ্য দিয়েই যেতে হবে।”
পুলিশি সহিংসতা ও সনদ স্বাক্ষর নিয়ে সমালোচনা
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ মঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের কথা তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলেন, “শহীদ পরিবারের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অপমানজনক। জনগণের কোনো প্রত্যাশার প্রতিফলন অনুষ্ঠানে আমরা দেখিনি।”
তিনি বলেন, “যদি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস (অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) একটি আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি না দেন, তাহলে এটি জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছার প্রতিফলন হবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন জানান, এনসিপি জুলাই সনদের আইনগত স্বীকৃতির দাবিতে রাজপথে কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে। তিনি বলেন, “অনেক রাজনৈতিক দল এই সনদকে শুধুই একটি রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল হিসেবে রাখতে চেয়েছে, কিন্তু আমরা আইনি ভিত্তির দাবি জানিয়েছি শুরু থেকেই।”
গতকাল অনুষ্ঠিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৪টি দল স্বাক্ষর করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও সই করেছেন।
তবে এনসিপি এতে অংশ নেয়নি ও সই করেনি। এছাড়া চারটি বাম দল—সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ সনদে সই করেনি। গণফোরাম অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থাকলেও সই থেকে বিরত ছিল।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল ১৭ অক্টোবর সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সংঘর্ষে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত ২৭ জন আহত হন।
ঢাকা/এএএম/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এনস প ন হ দ ইসল ম জ ল ই সনদ র জন ত ক এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না হলে জাতির সঙ্গে প্রহসন হবে: নাহিদ ইসলাম
জুলাই সনদ স্বাক্ষরকে কেবলই আনুষ্ঠানিকতা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
নাহিদ ইসলাম বলেন, 'এটা আমরা এর আগেও বলেছি। আজকেও পুনর্ব্যক্ত করেছি। যদি এর (জুলাই সনদ) কোনো আইনি ভিত্তি না হয়, এর মূল্য, এর কোনো অর্থ তৈরি হবে না। ফলে আমরা এই আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিইনি এবং যদি এর আইনি ভিত্তি তৈরি না হয় এটার কেবল আনুষ্ঠানিকতাও থাকবে না, এটি একটি গণপ্রতারণা এবং জাতির সঙ্গে একটি প্রহসন হবে।'
আজ শনিবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। এ সময় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
৯০ এর গণ-অভ্যুত্থানের পরেও তিন দলের জোটের যে রূপরেখা সেই রাজনৈতিক সমঝোতা রক্ষা করা হয়নি বলেন নাহিদ ইসলাম। সংবিধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিবর্তন করতে চাইলে আইনি ভিত্তি প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘এই ৭২ এর সংবিধান যাতে পরিবর্তন না হয়, পুরোনো ফ্যাসিস্ট কাঠামো যাতে রয়ে যায়--তার জন্য নানান অপচেষ্টা কিন্তু দেশের ভেতরে, দেশের বাইরে থেকে করা হচ্ছে।'
বিগত ফ্যাসিস্ট কাঠামোর সুবিধাভোগীদের চাপের কারণে কিছু কিছু রাজনৈতিক দল আপস করেছে বলে মন্তব্য করেন এনসিপির নেতা নাহিদ ইসলাম। ফ্যাসিস্ট কাঠামো টিকিয়ে রাখতে, অক্ষুণ্ন রাখতে নানাভাবে চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং আরও কিছু রাজনৈতিক দল এবং অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার চাপেই কিন্তু সরকার এই ঐকমত্য কমিশন গঠন, সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা এবং জুলাই সনদ পর্যন্ত, এত দূর এসেছে।’
৯০ এর পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশে দেখতে চান না বলে জানান নাহিদ। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আমাদের এই উপলব্ধি ছিল যে আমাদের লড়াইটা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয় কেবল, একটা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিবর্তন হলেই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সমস্যার সমাধান হবে না। বরং এই সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে ৯০ এর গণ-অভ্যুত্থানের পরে এই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে যেভাবে প্রতারণা করা হয়েছিল, গণ-অভ্যুত্থানকে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে যেভাবে জাতীয় নেতারা এবং সেই সময় রাজনৈতিক দলগুলো পকেটভর্তি করেছিল--আমরা এবার সেটা হতে দেব না।’
গতকাল শুক্রবার জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, 'সেখানে জুলাই যোদ্ধা যারা ছিলেন, শহীদ পরিবারকে কীভাবে অবমাননা করা হয়েছে এবং জনগণের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক, কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না, জনগণের আকাঙ্ক্ষার কোনো বাস্তবায়ন বা প্রতিফলন গতকালকের অনুষ্ঠানে ঘটেছে বলে আমরা মনে করি না।'
নাহিদ ইসলাম বলেন, 'এটি তখনই ঘটবে, জুলাই গণ-অভুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার সার্বভৌম অভিপ্রায় হিসেবে যখন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস (প্রধান উপদেষ্টা) একটি আদেশ জারির মাধ্যমে এর (জুলাই জাতীয় সনদ) আইনি ভিত্তি তৈরি করবে এবং সেই ভিত্তি অনুসারে গণভোট এবং পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ এবং গণপরিষদ একটি নতুন সংবিধান তৈরি করবে।'
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন জানান, এনসিপি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবিতে রাজপথে কর্মসূচি নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনে আমরা জোরালো ভূমিকা পালন করেছি। যদিও শুরুতে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে অনেক দলই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। শুধুমাত্র এটাকে একটা জেন্টেলম্যান অ্যাগ্রিমেন্ট, একটা রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল হিসেবেই রাখার পক্ষপাতী ছিলেন।' গতকাল ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার বিচার দাবি করেছে এনসিপি।
গতকাল দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে হটিয়ে দেওয়ার পর ‘জুলাই যোদ্ধারা’ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান, ভাঙচুর করেন পুলিশের বাসসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি, আগুন জ্বালান সড়কে। দুই ঘণ্টা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর বৃষ্টির মধ্যে বিকেলের আগে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বিক্ষুব্ধদের ঢিল ছোড়াছুড়ি, পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ এবং সাউন্ড গ্রেনেড ফাটানোর মধ্যে উভয় পক্ষের অন্তত ২৭ জন আহত হন।
নানা অনিশ্চয়তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সই হয়েছে নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে তৈরি এই সনদে গতকাল সই করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট। পাশাপাশি সনদে সই করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা।
তবে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অনুষ্ঠানে যায়নি, সনদে সইও করেনি। এ ছাড়া চারটি বাম দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ জুলাই সনদে সই করেনি। আর গণফোরাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও সই করেনি সনদে। অবশ্য দলগুলো চাইলে পরেও সনদে সই করতে পারবে।