আঁধার তখনো কাটেনি। কুয়াশার আবছায়ায় চারদিকে শুধু ঝপাৎ ঝপাৎ শব্দ। একটু একটু করে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করে ভোরের সূর্য। লাল আভা ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃতিতে। এর মধ্যেই নানা বয়সের মানুষ বাঁধের জলে একের পর এক ফেলছেন জাল। ছড়িয়ে পড়ছে ঝপাৎ ঝপাৎ শব্দ।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সুক নদীর ওপরের বুড়ির বাঁধ (জলকপাট) এলাকায় আজ শনিবার এ চিত্র দেখা যায়। এখানে আরও কয়েক দিন চলবে মাছ ধরার উৎসব।

প্রতিবছর আশ্বিনের শেষে জলকপাটটি খুলে দেওয়া হয়। পানি কমে গেলে আশপাশের গ্রামের মানুষ জাল নিয়ে মেতে ওঠেন মাছ ধরার উৎসবে। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন এলাকার লোকজন। মাছ তেমন না পেলেও তাঁদের মধ্যে উৎসাহের কমতি থাকে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ঠাকুরগাঁও কার্যালয় ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে কৃষিজমিতে সম্পূরক সেচ সুবিধার জন্য ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং ইউনিয়নের সীমানায় ১৯৫১–৫২ অর্থবছরে বুড়ির বাঁধ সেচ প্রকল্প হাতে নেয় পাউবো। আর ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে সেচ খাল নির্মাণ করা হয়। এর পর থেকেই বাঁধে আটকে থাকা পানিতে প্রতিবছর বিভিন্ন জাতের দেশি প্রজাতির মাছের পোনা ছাড়ে মৎস্য বিভাগ। আর এটা সমিতির মাধ্যমে দেখভাল করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ। এরপর কার্তিক মাসে এ সময় বাঁধের পানি ছেড়ে দিয়ে সবার জন্য মাছ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। জলকপাট নির্মাণের পর থেকেই উৎসবের এ রেওয়াজ চলে আসছে।

আজ ভোরে গিয়ে দেখা যায়, এলাকাজুড়ে মানুষের কোলাহল। কেউ বাঁধে দাঁড়িয়ে, আবার কেউ কোমর পানিতে নেমে জাল ফেলছেন। কখনো কখনো একজনের জাল অন্যজনের জালের ওপর পড়ছে। আর তা নিয়ে তাদের মধ্যে চলছে খুনসুটি। পানি থেকে জাল তোলার পর দেখা যায়, প্রায় সময়ই মাছ নেই। কেউ কেউ দু-তিনটি করে ছোট মাছ পাচ্ছেন। তবু তাঁদের উৎসাহের কমতি নেই।

গতকাল শুক্রবার রাতেই মাছ ধরতে এসেছেন সদর উপজেলার পূর্ব শুখানপুকুরী গ্রামের মো.

শ্রাবণসহ পাঁচজন। তাঁরা পালা করে জাল ফেলছেন। বিশ্রাম নিতে নিতে শ্রাবণ বলেন, ‘চার–পাঁচ বছর ধরে আমরা এই বাঁধের পানিতে মাছ ধরতে আসি। হইহুল্লোড় করে দিন কেটে যায়। কোনো বছরই বেশি মাছ পাই না। তবু আসি।’

ঘণ্টা তিনেক জাল ফেলছেন সদর উপজেলার দেবীগঞ্জ এলাকার চন্দন রায়। আধা কেজি ছোট মাছ পেয়েছেন। এতেই তিনি বেশ খুশি। তিনি বললেন, ‘এইঠে মাছ মারিবা আইচ্ছি। মাছ উঠুক আর না উঠুক, হামার আনন্দখানই মেলা।’

একটানা চারবার জাল ফেললেন পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বলরাম গ্রামের সুরঞ্জন রায়। জালে মাছ না পাওয়ায় হতাশ তিনি। পাশে থলে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা গোপীনাথ তাঁকে সান্তনা দিয়ে বললেন, ‘জাল ফেলেক, এইবার বড় মাছখান ধরা পড়িবে।’ গোপীর কথা শুনে সুরঞ্জনও জাল সাজিয়ে নিয়ে ছুড়ে দিলেন। পরে তুলতেই জালে দুটি পুঁটি মাছ দেখে তাঁর আর আনন্দ ধরে না।

সুরঞ্জন বলতে লাগলেন, ‘বহনি করিতেই শরীরের শক্তিখান শেষ, অ্যালা রিচার্জ করিবা হবে।’ এ কথা বলেই একটা পোটলা থেকে খাবার বের করে খেতে বসে গেলেন তিনি। একটি বাটিতে একটি রুটি আর আলু ভাজি তুলে তিনি এ প্রতিবেদকের দিকে এগিয়ে দিলেন।

আগে রুই, কাতলা, বোয়াল, পুঁটি, শোল, ট্যাংরা, খলসেসহ অনেক ধরনের মাছ পাওয়া যেত বলে জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসিন আলী। তিনি বলেন, এখন মাছ ধরার মানুষের সংখ্যা বেশি হলেও জালে মাছ পড়ছে কম।
তাঁর কথা শুনে বকশেরহাট এলাকার আবদুল আলিম বললেন, ‘আগত জাল ফেললেই কত রকমের মাছ পাইতাম। কিন্তু অ্যালা মাছই নাই। জাল ফেললে কচুরিপানার ওপর পড়ছে। বাঁধের সাব গেট খুলে না দেওয়ায় পানির সঙ্গে কচুরিপানা বের হতে পারছে না।’

কার্তিক মাসে বাঁধের পানি ছেড়ে দিয়ে সবার জন্য মাছ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। জলকপাট নির্মাণের পর থেকেই উৎসবের এ রেওয়াজ চলে আসছে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল র র উপজ ল র জলকপ ট

এছাড়াও পড়ুন:

আনন্দে ভরপুর উৎসবে ‘ভালো মানুষ’ হওয়ার প্রত্যয়

আপনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তিনটি লক্ষ্য লিখে জিতে নিন আকর্ষণীয় পুরস্কার। এ জন্য শিক্ষার্থীদের পূরণ করতে দেওয়া ফরমগুলো একটি বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থী লাবীবা কবীর লিখেছেন, ভালো মানুষ হওয়া, ভালো মানুষ হওয়া, ভালো মানুষ হওয়া। মুসলিমা খাতুন লিখেছেন, ভালো এবং সৎ মানুষ হওয়া, বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। মেহেরিন সুবহা লিখেছেন, মাকে খুশি রাখা।

রাজশাহীতে উচ্চমাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এমন আয়োজন রাখা হয়েছিল। নগরের শহীদ জিয়া শিশুপার্কে ‘প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি-প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব-২০২৫’ নামের এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এটি ছিল পঞ্চম আয়োজন।

রোববার সকাল ৯টায় রাজশাহীতে বইছিল হিমেল হওয়া। এর ভেতেরই শিক্ষার্থীরা সময়মতো এসে পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে যান। প্রথম আলোর আয়োজনে ও প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির পৃষ্ঠপোষকতায় ‘স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে, একসাথে’ স্লোগান নিয়ে দিনভর এ আয়োজন ছিল আনন্দে ভরপুর।

সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে উৎসবের শুরু হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ। এরপর শুরু হয় ক্যারিয়ার গাইডলাইন, উচ্চশিক্ষার পরামর্শ, কী পড়ব, কোথায় পড়বসহ নানা বিষয় নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক পর্ব। এই পর্বে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রফেশনাল ফেলো জাহিদ হোসাইন খানের সঞ্চালনায় কথা বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম (এমবিবিএস ৬৩ ব্যাচ), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) আইপিই বিভাগের শিক্ষার্থী নির্জরা দেবনাথ (প্রথা), শরীফ আব্দুল্লাহ (নাবিল), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী নিলয় সাহা (নীল) এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ফুয়াদ পাবলো।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ–৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেলফি তোলেন শিল্পীরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমার বাবা শিল্পী কামরুল হাসান
  • আনন্দে ভরপুর উৎসবে ‘ভালো মানুষ’ হওয়ার প্রত্যয়