যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যভান্ডার থেকে পানি–সম্পর্কিত দুর্যোগের আগাম তথ্য জানতে পারবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই হচ্ছে।

শনিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সিপিডি ক্লাইমেট উইক-২০২৫’–এর প্লেনারি সেশনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ তথ্য জানান পানিসম্পদ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

দুর্যোগ মোকাবিলায় তথ্যের ঘাটতি উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের মেট অফিস আমাদের অনুরোধে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তাদের রিয়েল-টাইম ডেটায় প্রবেশাধিকার দিতে সম্মত হয়েছে। এতে আকস্মিক বন্যার মতো ঝুঁকিগুলো আমরা আগেভাগে বুঝতে পারব।’

এ প্রসঙ্গে নিজেদের সামর্থ্যের ঘাটতির দিকটি দেখিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘প্রশ্ন হলো যে দেশ বারবার পানি-সম্পর্কিত দুর্যোগের মুখে পড়ে, তারা এখনো নিজস্ব রিয়েল-টাইম ডেটা সংগ্রহব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি কেন?’

অন্যের দোষ না দিয়ে নিজেদের সক্ষমতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা সব সময় অন্যদের দোষ দিই, তারা তথ্য দেয় না। কিন্তু যেহেতু তথ্য আমাদের বাঁচার প্রশ্ন, আমাদের নিজস্ব সক্ষমতাও তৈরি করতে হবে। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই আমরা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছি, যা কাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হবে।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে জলবায়ু–সম্পর্কিত প্রভাবের দিকে ইঙ্গিত করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা এমন এক সমস্যার কথা বলছি, যেটি সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা যেমন দরকার, তেমনি আমাদের নিজেদের নীতিমালা ও কর্মকৌশল পুনর্বিবেচনা করাও জরুরি। এখন যদি অভিযোজনের জন্য যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, তা আমাদের কাছে না আসে, তাহলে কী করব? এ অর্থ না পেলেও আমাদের নিজেদের স্বার্থ, ভূখণ্ড, অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য ও মানুষকে রক্ষা করতেই হবে।’

উন্নত বিশ্বের কার্বন নির্গমন না কমানোর পাশাপাশি প্রতিশ্রুত অর্থায়ন না করার বিষয়টি তুলে ধরে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে প্রযুক্তিই কি সমাধান দিতে পারবে? যারা প্রযুক্তি ধরে রেখেছে, তারাই যদি নিজেদের নিঃসরণ কমাতে না পারে, তাহলে তাদের কাছ থেকে প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের কতটা উপকার হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকে।’

কার্বন নির্গমন কমানোর জাতীয় দলিল, যেটাকে এনডিসি (ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশন) বলা হয়, সেটা সম্প্রতি বাংলাদেশ হালনাগাদ করে জাতিসংঘে জমা দিয়েছে বলে জানান পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এনডিসি চূড়ান্ত করার পর আমি পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলেছি একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরির জন্য। কারণ, পরিবেশ অধিদপ্তর সরাসরি নিঃসরণ কমাবে না। বিদ্যুৎ, সড়ক পরিবহন, কৃষি—এই খাতগুলোকেই কাজটা করতে হবে। আমি তাদের বলেছি প্রতিশ্রুতি পূরণে কীভাবে এগোব, সে বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে। কাজটি বড় ও জটিল হওয়ায় যাকে দায়িত্ব দিয়েছি, সে এখন আমার সামনে আসে না!’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের উপদেষ্টা আইনুন নিশাত অনুষ্ঠানে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় মিটিগেশন (প্রশমন) করে আমরা কিছু করতে পারব না। আমাদের যেটা করতে হবে, সেটা হলো অভিযোজন (অ্যাডাপটেশন)। জলবায়ু তহবিলে যেটা আছে, সেটা নেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের নাই। এখানে আমাদের কাজ করতে হবে।’

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ তহবিল কীভাবে সংগ্রহ করতে হবে, তা নিয়ে কাজ করছে জানিয়ে আইনুন নিশাত বলেন, ইআরডি সে জন্য এক হাজার ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে।

অভিযোজন করতে গিয়ে ঋণে জর্জরিত যাতে হতে না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব শাহ আবদুল সাদি বলেন, ‘অ্যাডাপটেশন অনুদান হতে হবে, যাতে ঋণে জর্জরিত হতে না হয়। এটা হতে হবে ৫০ শতাংশ অভিযোজন, আর ৫০ প্রশমন। এ জন্য আমাদের চিন্তার পুনর্গঠন দরকার।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান শাখার পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় বৈশ্বিক যে তহবিল, সেটা পেতে বাংলাদেশকে ভারসাম্যপূর্ণ প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে যে অগ্রাধিকার পাওয়ার সুযোগ আছে, তা কাজে লাগাতে হবে।

নীতি–সংক্রান্ত নথি তৈরি হলেও সেগুলোর বাস্তবায়নের জটিলতা কাটানোর ওপর জোর দিয়ে সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী মো.

শামসুদ্দেোহা বলেন, ‘আমাদের অর্থায়ন, প্রযুক্তি ও সক্ষমতা নির্মাণ নিশ্চিত করা জরুরি। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে আলোচনায় গেলে তারা বলে, তোমরা তোমাদের পলিসি পেপারগুলো বাস্তবায়ন করো। যখন আমরা টাকার কথা বলি, তখন তারা বলে যে বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে এসব বাস্তবায়ন করতে। এটা একটা সংকটের বড় জায়গা।’

বৈশ্বিকভাবে জলবায়ুর যে অর্থায়ন হয়, তার ৯৫ শতাংশ ঋণ জানিয়ে শামসুদ্দোহা বলেন, সরকারের উচিত হবে অনুদাননির্ভর অর্থায়ন নিশ্চিতে জোর দেওয়া। একটা কোটা সেট করা উচিত, যাতে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ অনুদাননির্ভর অর্থায়ন পাওয়া যায়।

সিপিডির প্রধান নির্বাহী ফাহমিদা খাতুনের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী এ ক্লাইমেট উইকের শুরু হয়েছে। প্লেনারি সেশন পরিচালনা করেন সিপিডির বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য খুশী কবির।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর জ য র হ স ন বল ন উপদ ষ ট র জওয় ন আম দ র পর ব শ জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

রাকসুতে পরাজিতদের মিলনমেলা, সম্প্রিতির ক্যাম্পাস গড়ার প্রত্যয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীদের উদ্যোগে মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছে।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলাদেশ মাঠে এ আয়োজন করেন। এতে তারা বিভিন্ন খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

আরো পড়ুন:

রাকসু: হল সংসদে শিবিরের আধিপত্য, ছাত্রদলের শূন্য

শেষ পর্যায়ে রাকসুর সংস্কার কাজ, রবিবার থেকেই বসতে পারবেন নির্বাচিতরা

ছাত্রদল সমর্থিত পরাজিত ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, “আমরা এখানে এক হয়েছি একটি উদ্দেশ্য নিয়ে, যাতে একসঙ্গে আমাদের ক্যাম্পাস সুন্দর, নিরাপদ, সহাদ্যপূর্ণ ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে পারি। আমাদের এই আয়োজন সকল পরাজিত প্রার্থীদের নিয়ে, কারণ পরাজিত হলেও আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেক হোল্ডার। যারা বিজয়ী হয়েছেন তারা যেন আগামী ১ বছর তাদের ইশতেহারগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে, সেগুলো জবাবদিহিতা ও তদারকি করার দায়িত্ব আমাদের।”

তিনি আরো বলেন, “আমি আমার বিজয় ভিপি প্রার্থীকে বলতে চাই, মুস্তাকুর রহমান জাহিদ ভাই বলেছিলেন, ‘আমরা যেই জয়ী হই, সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করব।’ তিনি যেন তার কথা রাখেন। আমরা সবাই একসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে সুন্দর করে গড়তে চাই।”

পরাজিত স্বতন্ত্র এজিএস পদপ্রার্থী শাহ পরান বলেন, “কিছু মানুষ ছড়িয়েছে যে, আমরা হেরে গিয়ে কান্নাকাটি করতেছি।  ওই কান্নার স্বরটা দেখানোর জন্যই আমাদের এই আয়োজন। আমাদের এই আয়োজনটা মূলত সবাই যেন একত্রিত হতে পারে, তার জন্য। আমরা আয়োজনের মধ্যে খেলাধুলা খাওয়া-দাওয়ার গান বাজনা করব।”

এ সময় বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ কেন্দ্র ও বিভিন্ন হলের পরাজিত প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
 

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ