আইএসপি ইন্ডাস্ট্রি কি মৃত্যুশয্যায়
Published: 19th, October 2025 GMT
ইন্টারনেট এখন সবকিছুর লাইফলাইন। আপনি যে বিকাশে টাকা পাঠাচ্ছেন অথবা দারাজে কেনাকাটা করছেন, এর পেছনে আছে একটি বিশাল ইন্টার নেটওয়ার্কিং সিস্টেম।
একজন গ্রাহক যখন তাঁর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন অথবা কেনাকাটা করছেন, সেটা শুরুতে মোবাইল ডেটা অথবা ওয়াই–ফাইয়ের মাধ্যমে গেলেও পরের বিকাশ বা দারাজের মতো সার্ভিস প্রোভাইডারদের ডেটা সেন্টারে আইএসপি সংযোগের ম্যাট্রিক্সটা অনেক কমপ্লেক্স। ওই ডেটা সেন্টারগুলোর সঙ্গে যে সংযোগগুলো আছে, সেটা যদি ঠিকমতো রিকোয়েস্ট না নিতে পারে, তাহলে শতকোটি টাকার বিজনেস লস হয় কয়েক মিনিটেই।
বাংলাদেশে আইএসপি ইন্ডাস্ট্রি গত বছরগুলোতে অনেক চড়াই-উতরাই পার করলেও এখন সেটা চলে এসেছে প্রায় মৃত্যুশয্যায়। মোবাইল অপারেটরদের সিমভিত্তিক ফিক্সড ওয়াই–ফাই সার্ভিস, অন্যদিকে স্টারলিংকের চ্যালেঞ্জের ধকল নিতে না নিতেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে এসেছে ‘ডিডস’।
ডিডস হলো ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অব সার্ভিস’, মানে সার্ভিস ‘ডিনাই’ করে দেওয়া। অর্থাৎ আপনার বাসা ও অফিসের সিস্টেম দেখাবে ইন্টারনেট আছে, কিন্তু আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন না। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে আপনার সামনে রাস্তা আছে, কিন্তু হাজার হাজার গাড়ি জ্যাম লাগিয়ে রেখেছে বলে গাড়ি চালানো দূরের কথা, আপনি হাঁটতেই পারছেন না।
আরও পড়ুনআইএসপি: স্কেলে টিকে থাকার লড়াই১৬ জুন ২০২৫ডিডস বন্ধ না হলে কী হতে পারে? অনেক আইএসপি ডিডস প্রটেকশনের জন্য শতকোটি টাকার ইনভেস্টমেন্ট করতে বাধ্য হবে, যেগুলো আসলে প্রান্তিক গ্রাহকের ইন্টারনেট খরচ বেশ বাড়াবে। এর পাশাপাশি এই বিশাল ইনভেস্টমেন্টের চাপে অনেক ছোট আইএসপি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।ইন্টারনেট চলে প্যাকেট সিস্টেমে। মানে ইন্টারনেটের তথ্যগুলো ছোট ছোট প্যাকেটে ভরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। এর মধ্যে কোটি ডিভাইস থাকে, যেগুলো এই প্যাকেটগুলোকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সবচেয়ে স্বল্প দূরত্বে রাউটিং করতে পারে।
এখন যেই কম্পিউটার অথবা রাউটার, (ধরা যাক) এক লাখ প্যাকেট নিয়ে কাজ করতে পারে, সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হলো এক কোটি প্যাকেট। তাহলে সেই রাউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম সেই লোড না নিতে পেরে বন্ধ হয়ে যাবে। অনেকটা এমন, একটা দরজা দিয়ে একজন মানুষ সহজে ঢুকতে পারে, কিন্তু হাজার মানুষ একসঙ্গে ঢুকতে গেলে দরজাই ভেঙে পড়বে। এই অ্যাটাকে গ্রাহক অভিজ্ঞতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এই ডিডস অনেক কারণেই হতে পারে। একটা দেশের অর্থনীতি বসিয়ে দেওয়ার জন্য এ ধরনের ডিডস অ্যাটাক চলছে বহুদিন ধরেই। সাইবার ওয়ারফেয়ারের যুগে একটা দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম, সরকারি সার্ভিস, বিমানবন্দর, এমনকি হাসপাতালগুলোকেও অচল করে দেওয়া যায় এ ধরনের অ্যাটাকের মাধ্যমে।
এর পাশাপাশি মার্কেটে অতিমাত্রায় প্রতিযোগিতার কারণে নিজেদের মধ্যেও এ ধরনের যুদ্ধ হয় কমবেশি। কোনো নেটওয়ার্ককে মাঝেমধ্যে বসিয়ে দিলে সেই নেটওয়ার্কের গ্রাহক অসন্তুষ্ট হয়ে চলে যান অন্য জায়গায়। এতে গ্রাহক অভিজ্ঞতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় এবং গ্রাহক নতুন অপারেটরে গিয়েও একই সমস্যার মধ্য দিয়ে যান। দিন শেষে গ্রাহক স্বার্থ সম্পূর্ণভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়।
সমাধান কী? রেগুলেটরকে ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে বসতে হবে। এর পাশাপাশি পৃথিবীর বহু দেশে এটির ব্যাপারে শক্ত কিছু আইন আছে। যেহেতু বেশির ভাগ অ্যাটাক ‘অ্যানোনিমাসলি’ হয়, সেখানে কে অ্যাটাক করেছে অথবা কাকে করেছে, সেই জায়গার ঘুরপাক না খেয়ে মার্কেট ইন্টেলিজেন্স, ডেটা অ্যানালাইসিস এখানে খুব সাহায্য করে। সিঙ্গাপুরের ‘কম্পিউটার মিসইউজ অ্যাক্ট ১৯৯৩’ সেটার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ। ওখানে ডিডস অ্যাটাক করলে কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
দ্বিতীয় প্রস্তাব বিতর্কিত। তবে ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাতে অনেক সময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয় সরকারকে। এ ডিডসের কারণে শুধু ব্যবসায় বিশাল ধস নয়, গ্রাহক স্বার্থ পুরোপুরি উপেক্ষিত হচ্ছে। গত সরকারের আমলে কনটেন্ট ব্লকিংয়ের নামে বেশ কিছু প্রযুক্তি কেনা হয়েছিল, যেগুলো এখন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ওই ডিভাইসগুলোকে নতুন করে কনফিগার করে কনটেন্ট ব্লকিংয়ের পরিবর্তে এ ধরনের ম্যাসিভ লেভেলের ডিডস প্রটেকশনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
হিসাবমতে, এতে মূলত অ্যাটাকগুলো যেই রাস্তায় আসে (ইন্টারনেটের প্রায় ২০ শতাংশ ট্রানজিট), সেগুলো ঠিকমতো বন্ধ করা যাবে। এতে ভৌগোলিক সাইবার যুদ্ধে দেশকে সুরক্ষা দেওয়া যাবে।
ডিডস বন্ধ না হলে কী হতে পারে? অনেক আইএসপি ডিডস প্রটেকশনের জন্য শতকোটি টাকার ইনভেস্টমেন্ট করতে বাধ্য হবে, যেগুলো আসলে প্রান্তিক গ্রাহকের ইন্টারনেট খরচ বেশ বাড়াবে। এর পাশাপাশি এই বিশাল ইনভেস্টমেন্টের চাপে অনেক ছোট আইএসপি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এতে সরকারের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। এ অনাচার লম্বা সময় ধরে চলতে থাকলে অনেক আইএসপি ব্যবসা বাঁচাতে নিজের হাতে আইন তুলে নিতে বাধ্য হবে। অর্থাৎ তারাও অ্যাটাকের সক্ষমতা তৈরি করার চেষ্টা করবে, যেটার ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে। তখন এমন একটা ডিজিটাল অরাজকতার পরিস্থিতি তৈরি হবে, যেখানে সবাই সবাইকে অ্যাটাক করবে আর শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও গ্রাহক স্বার্থ।
বর্তমান ব্যবসাবান্ধব সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই ডিজিটাল অরাজকতা থেকে আইএসপি ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাতে পারবে।
রকিবুল হাসান টেলিকম, অটোমেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক লেখক, একটি আইএসপির প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইন ড স ট র এর প শ প শ এ ধরন র র জন য গ র হক ইন ট র ব যবস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিমানবন্দরের আগুন নেভাতে গিয়ে আহত ১৪ জন সিএমএইচে
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন নেভাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৪ সদস্যকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বিমানবন্দরে আগুনে এখন পর্যন্ত বিমানবাহিনীর একজন, ফায়ার সার্ভিসের তিনজন, পুলিশের একজন, আনসারের ১০ জন সদস্য সিএমএইচে চিকিৎসাধীন।
আগুন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আইএসপিআর জানায়, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে।
আইএসপিআর আরো জানায়, গতকাল আনুমানিক দুপুর আড়াইটায় হজরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটে। মুহূর্তে আগুন বিকট আকার ধারণ করলে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সহ সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বিতভাবে অগ্নিনির্বাপন এবং উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া, আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
কার্গো ভিলেজে রক্ষিত দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ আগুনের মাত্রা কে তীব্রতর করে দেয়। অগ্নি নির্বাপনকালে রাসায়নিক পদার্থের ধোঁয়া ও আগুনের তীব্রতায় ১০ জন আনসার সদস্য, ৩ জন ফায়ার ফাইটার এবং ১ জন পুলিশ সদস্য প্রবল শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সিএমএইচ ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। যেকোনো দুর্যোগে জনগণের পাশে থেকে সহায়তা প্রদান করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা প্রস্তুত ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা