বিএনপিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিপরীতে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা সফল হবে না বলে মনে করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানী গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন আহমদ এই মন্তব্য করেন।

গত শুক্রবার জুলাই সনদ সইয়ের দিনে দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। তাঁদের নিয়ে বক্তব্যের জন্য সালাহউদ্দিন আহমদকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এ বিষয়টি স্পষ্ট করতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সালাউদ্দিন আহমদ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যের কাছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, তাঁরা কি মনে করেন, জুলাই স্পিড (চেতনা) বা জুলাই নিয়ে বিএনপির যে অবস্থান, সেটাকে একধরনের বিপরীতমুখী দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে? কিংবা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিপরীত অবস্থানে আছে বিএনপি, সেটা বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে?

জবাবে সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত তাঁদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিএনপির ৪২২ জন নিহত হয়েছেন। তাঁরা ছবিসহ তাঁদের নেতা-কর্মীদের তালিকা প্রকাশ করেছেন। এই সংখ্যা আরও বেশি হবে, যারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। শহীদ হয়েছেন। দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপির যে ভূমিকা, যে সংগ্রাম, যে ত্যাগ, সেই রক্তের সিঁড়ি বেয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। এখানে শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর অবিরাম সংগ্রাম-আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে রক্তের সোপান তৈরি হয়েছে। শাপলা চত্বরের যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, সেটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সেটা মনে রাখতে হবে। যেকোনো একটি রাজনৈতিক দল নয়, সব রাজনৈতিক দল, যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অবদান রেখেছে, অবিরাম সংগ্রাম করেছে, তাদের সবার অবদানে গণ-অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে একটা ফ্যাসিবাদী শাসকের পতন হয়েছে বলে যদি মনে করা হয়, তবে তা সঠিক নয়। এটা হচ্ছে ১৬ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল। সুতরাং বিএনপিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিপরীতে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা সফল হবে না বলেই তাঁর মনে হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, গতকাল শনিবার একটি রাজনৈতিক দলের সংবাদ সম্মেলনে তাঁর একটি বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়েছে। তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। তিনি এটাকে স্বাগত জানান। এভাবেই রাজনৈতিক চর্চা হওয়া উচিত। গণতান্ত্রিক চর্চা হওয়া উচিত। যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গেই তারা কথাগুলো বলেছে। তিনি মনে করছেন, এই বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, গত শুক্রবার জুলাই জাতীয় সনদের ঐতিহাসিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বেলা ১১ টা-১২টার দিকে কিছু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার মাঠে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেছিলেন, ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামের একটি সংগঠন তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেছিল। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গেও কথা বলেছে। তাদের একটা যৌক্তিক দাবি ছিল। সেই যৌক্তিক দাবি পূরণের জন্য তিনি নিজেও স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। কথা বলেছিলেন। সেটা ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সঠিকভাবে অ্যাড্রেস করেছেন। সেটা প্রেসে বলেছেন। সংশোধন করেছেন। এরপরে তাদের অসন্তোষ থাকার কথা নয়। যেসব বিশৃঙ্খলা হয়েছে, তাঁরা খোঁজ নিয়েছেন। এটা তদন্তাধীন আছে। দেখা গেছে, এখানে জুলাই যোদ্ধাদের নামে কিছুসংখ্যক ছাত্র নামধারী, সেটা ইন্টারভিউতে তিনি দেখেছেন, কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক ঢুকেছে। সেটা ফ্যাসিস্ট সরকারের ফ্যাসিস্ট বাহিনী বলে তিনি মনে করেন। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী যে এখনো সব জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, সেটা সেদিন দৃশ্যমান হয়েছে। এখানে কোনো জুলাই যোদ্ধা, জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত কোনো সংগঠন অথবা কোনো ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে না। এটা ছিল তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্য।

সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, এই কথার মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, সংগঠন ও শক্তিকে সম্মানিত করার চেষ্টা করেছেন। যাতে কোনোক্রমে কেউ যেন জুলাই যোদ্ধাদের এসব কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত করতে না পারে। তাদের সম্মানহানি না হয়। কারণ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান জাতীয় জীবনের জন্য শক্তি। সামনে এই জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য তাঁরা সমুন্নত রাখতে চান। জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। জাতি বিনির্মাণ করতে চান। সে জন্য তাঁরা সব সময় তাদের সম্মানের চোখে দেখেছেন, দেখবেন, দেখতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, তাঁর বক্তব্য হলো, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান জাতীয় জীবনের একটি লিডিং ফোর্স, ড্রাইভিং ফোর্স। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের মধ্যে কোনো রকমের কোনো কলঙ্ক দাগ স্থাপন হোক, তা তাঁরা কখনোই চাইতে পারেন না। যেকোনো বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় সবাই যেন এ বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করেন। তাঁরা সবাইকে সেই আহ্বান জানান।

সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, তাঁর বক্তব্য ‘কাটিং’ করে বিভিন্নভাবে অপব্যাখ্যা দেওয়া থেকে সবমহলকে বিরত থাকার জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।

বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে বলে মনে করেন কি না—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমি মনে করি না বিকৃত করা হয়েছে। তবে আংশিক বক্তব্যটা কাট করে তারা কথা বলেছে বলে আমার মনে হয়। কারণ আমি আমার বক্তব্যের শেষ লাইনে বলেছি যে, ওখানে কোনো জুলাই যোদ্ধা, জুলাই অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত কোনো সংগঠন অথবা ব্যক্তি ওই বিশৃঙ্খল ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে না।’

সাম্প্রতিক সময়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো কীভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্ন করেন সাংবাদিক। জবাবে সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, বিষয়গুলো তদন্তাধীন আছে। সরকারও সম্ভবত একটা তদন্ত দল করেছে। তাদের ফাইন্ডিংস কী আসে, দেখা যাক। তবে তাঁর মনে হয়, কিছু কিছু ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। দেশে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য হয়তোবা এগুলো করা হয়ে থাকতে পারে। কোনো কোনো গোষ্ঠী, হয়তো পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররা, পতিত ফ্যাসিবাদ এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তবে সেটা তদন্ত করার আগে বলা যাবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ড় কর ন র ব এনপ র কর ছ ন কম ট র র জন য র একট সদস য স গঠন তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের মানুষ পিআর বোঝে না, চায়ও না: মেজর (অব.) হাফিজ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশের মানুষ পিআর বোঝে না, আর সেটি চায়ও না। এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট দিতে চায়।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার খাসের হাট এলাকায় শম্ভুপুর ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ দেশটাকে লুটেপুটে খেয়ে গেছে। দেশের প্রবাসী শ্রমিকেরা বিদেশ থেকে কষ্টার্জিত যে টাকা পাঠাতেন, তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হতো। কিন্তু সেই অর্থ শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা ও ছেলে জয় মিলে বিদেশে পাচার করেছেন। আওয়ামী লীগই দেশে গুম, খুন ও নির্যাতনের রাজনীতি শুরু করেছিল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য স্থানীয় নেতাদের সতর্ক করে বলেন, কেউ চরের ভূমিহীন মানুষের জমি দখল বা লুটপাট করলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

সভায় শম্ভুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ওমর আসাদ ও শম্ভুপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আর রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাকসু: হল সংসদে শিবিরের আধিপত্য, ছাত্রদলের শূন্য
  • জুলাই যোদ্ধাদের ‘স্বৈরাচারের দোসর’ বলা গুরুতর অসৌজন্যতা: জামায়াত আমির
  • নাহিদের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানে যা বললেন সালাহউদ্দিন
  • জুলাই সনদ: আশা করি স্বাক্ষর করবে, নির্বাচনে বড় প্রভাব পড়বে না: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • দিনাজপুর সীমান্তে বিজিবি-গ্রামবাসীর সংঘর্ষ
  • জুলাই সনদ স্বাক্ষর বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা: মির্জা ফখরুল
  • ২৫ রাজনৈতিক দলের যেসব নেতারা অংশ নিলেন
  • কুলাউড়ায় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী যুবক নিহত
  • দেশের মানুষ পিআর বোঝে না, চায়ও না: মেজর (অব.) হাফিজ