যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার ব্যাটন রুজের এক কোণে ১০০ ফুট উঁচু এক প্রাচীন ওকগাছের বুকজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে অদ্ভুত স্থাপনা—তিনতলা এক গাছবাড়ি। দাম প্রায় চার লাখ ডলার। তবে এটিকে ‘বাড়ি’ বলা কিছুটা ভুল হবে; বরং এটি এক কোটিপতির স্বপ্নের আশ্রয়।

এর মালিক টড গ্রেভস, রাইজিং কেইন্স চিকেন ফিঙ্গার্সের প্রতিষ্ঠাতা। হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘জাদুর মতো কিছু জিনিস থাকা দারুণ মজা।’ তাঁর কণ্ঠে যেন শিশুসুলভ উচ্ছ্বাস। সেই স্বপ্নের বাড়ির বসার ঘরে ফ্ল্যাট-স্ক্রিন টিভির পাশে দাঁড়িয়ে এ কথা বলেন তিনি। ঘরজুড়ে কাঠের গন্ধ ছড়িয়ে—সূর্যালোকের সঙ্গে যেন মিশে গেছে সেই গন্ধ।

সেই গাছবাড়িতে আছে নানা চমক। স্লাইড আর দৃশ্য দেখার জন্য উঁচু জায়গা তো আছেই, সঙ্গে আছে ৪৫০ বর্গফুটের খোলা ডেক আর ৪০০ বর্গফুটের আবাসিক অংশ। আছে আরামদায়ক ফ্যামিলি রুম, প্রশস্ত শোবার ঘর ও বাথরুম। ছাদের কাঠ এসেছে পুরোনো এক সেলাই কারখানা থেকে, রঙিন কাচের জানালা উদ্ধার করা হয়েছে নিউ অরলিন্সের ধ্বংসস্তূপ থেকে—হারিকেন ক্যাটরিনার পর।

সবচেয়ে অনন্য হয়তো সেই স্কাইলাইটের নিচে ঝুলে থাকা ডিস্কো বল—গ্রেভসের ৯০০টির বেশি রেস্টুরেন্টে এই প্রতীক ব্যবহৃত হয়েছে। আলোর প্রতিফলনে মনে হয়, গাছের ভেতরে যেন ছোট্ট এক পৃথিবী জেগে উঠেছে।

আর একটি ৭০ ফুট দীর্ঘ দুলন্ত সেতু (ইউওয়াক-স্টাইলের) এই গাছবাড়িটিকে লেকসাইড ভিউ প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ওখানে দাঁড়িয়ে লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির পুরো ক্যাম্পাস দেখা যায়।

ছোটবেলায় নিজেও গাছবাড়ি ও দুর্গ বানিয়েছেন। তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রেভস ওয়াশিংটন-ভিত্তিক নেলসন ট্রিহাউস অ্যান্ড সাপ্লাইয়ের নেলসনের সঙ্গে যুক্ত হন। নেলসন তাঁর অ্যানিমেল প্ল্যানেট সিরিজ ট্রিহাউস মাস্টার্সের ২০১৫ সালের একটি পর্বে এই প্রকল্পটি দেখান—তখন এটি ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় কাজ। গ্রেভসের হিসাব অনুযায়ী, এই গাছবাড়ির পেছনে প্রায় ৪ লাখ ডলার (আজকের হিসাবে প্রায় ৫ দশমিক ৫ লাখ ডলার বা প্রায় সাত কোটি টাকা) খরচ হয়েছিল। এটির তাঁর মূল বাড়ি আর ৫ হাজার বর্গফুটের অতিথিশালার মাঝখানে অবস্থিত। অর্থাৎ এটি যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের বাড়ির গড় মূল্যের কাছাকাছি। কিন্তু ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের সম্পদের মালিক গ্রেভসের জন্য এই ব্যয় ছিল তাঁর সম্পদের মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য ২ শতাংশ—প্রায় নগণ্য।

এই গাছবাড়ি শুধু খেয়ালের বিষয় নয়, ব্যবসারও অংশ। আমি এখানে এসে ভাবতে পারি, মাথা পরিষ্কার রাখতে পারি, বলেন ৫৩ বছর বয়সী গ্রেভস। এতে আমি নিজের কাজ আরও ভালোভাবে করতে পারি।

মজার বিষয় হলো, প্রথমে গ্রেভসের দুই সন্তান আর আশপাশের বাচ্চাদের জন্য বানানো এই গাছবাড়ি এখন শহরে আসা সেলিব্রিটিদের প্রিয় আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। এই গাছবাড়িতে তিনি র‍্যাপার নেলি, এনএফএল তারকা জা’মার চেইস ও বাস্কেটবল তারকা শাকিল ও’নিলকে গ্রেভসকে আতিথ্য দিয়েছেন। ও’নিল এতটাই অনুপ্রাণিত হয়েছেন যে তিনি নিজের জন্য জর্জিয়ায় ‘স্পিকইজি’ থিমের গাছবাড়ি তৈরি করিয়েছেন।

‘আপনি অনেকের বাড়িতে যেতে পারেন, কিন্তু এমন গাছবাড়িতে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ তেমন একটা মেলে না’, বলেন গ্রেভস। র‍্যাপার স্নুপ ডগ যখন ব্যাটন রুজে শো করতে এসেছিলেন, তিনিও আগে এই গাছবাড়ি ঘুরে গেছেন। গ্রেভসের হিসাবে, তারকাদের আগমন আর ট্রিহাউস মাস্টার্সের পুনঃপ্রচারের কল্যাণে তিনি গাছবাড়িতে খরচ করা অর্থের চেয়ে বেশি উপার্জন করেছেন।

গ্রেভসের এই রোমাঞ্চপ্রিয়তা সেখানেই থেমে নেই। বলেন, যেসব জিনিসের পেছনে ভালো গল্প আছে, সেগুলোই তাঁর পছন্দ। তাঁর নিজের জীবনের গল্পও এক রকম অভিযানকাহিনি। শুধু চিকেন ফিঙ্গার বিক্রির জন্য রেস্তোরাঁ করবেন—তাঁর এই বুদ্ধি যখন নেয়নি, তখন অর্থ জোগাড় করতে তিনি বয়লারমেকার বা স্যামন মাছ ধরার কাজ করেছেন। সেই উপার্জন দিয়েই তিনি রাইজিং কেইন্স গড়ে তোলেন—হয়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী। সেই সুবাদে ঢুকে পড়েন দেশটির শীর্ষ ৫০ ধনীর কাতারে।

অর্থ ব্যবহারে কিছু অদ্ভুত শখ আছে গ্রেভসের। তিনি কিনেছেন নানা অদ্ভুত জিনিস—৬ কোটি ৬০ লাখ বছর পুরোনো ট্রাইসেরাটপসের (একধরনের ডাইনোসর) কঙ্কাল, রেইডার্স অব দ্য লস্ট আর্ক চলচ্চিত্রে হ্যারিসন ফোর্ডের জ্যাকেট, এমনকি এলভিস প্রেসলির রোদচশমা।

গ্রেভস বলেন, ‘আজই নেপোলিয়নের ব্যবহৃত টুপি নিলামে কিনেছি।’ ৩৫ ফুট উঁচু গাছবাড়ির বারান্দা থেকে নিজের এস্টেটের দিকে তাকিয়ে বলেন, এগুলোই আমাকে স্বপ্ন দেখায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অগ্নিনির্বাপণে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে: উপদেষ্টা

ফায়ার সার্ভিসকে অনুমতি না দেওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বিলম্ব হয়েছে—অভিযোগটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন বেসরকারি বিমান, পরিবহন ও পর্যটন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

রবিবার রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার অভিযোগটি সঠিক নয়। বিমানবন্দরের ভেতরে অগ্নিনির্বাপণে যারা ছিলেন, তারা ঘটনার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই কাজ শুরু করেন। আপনারা জানেন, এটি একটি কেপিআইভুক্ত এলাকা, এখানে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমদানি কার্গোতে পণ্যগুলো একত্র হয়। সেগুলো পুড়ে ধ্বংস হয়েছে। আগুনে কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা অর্থমূল্য ও ওজনের ভিত্তিতে নির্ধারণের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি খাতভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতিরও হিসাব করা হচ্ছে।’

এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। এ সময় অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ, ক্ষয়ক্ষতি ও যাত্রীদের ভোগান্তি নিয়ে কথা বলেন তিনি। 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন// 

সম্পর্কিত নিবন্ধ