Prothomalo:
2025-10-19@10:35:29 GMT

আবু তালহা (রা)-এর অবাক জীবন

Published: 19th, October 2025 GMT

শহরে প্রবেশ করেন এক মুসাফির। চিন্তার ছাপ চেহারায়। পথচারীদের সাহায্যে তিনি মসজিদে নববিতে চলে আসেন। নবীজি (সা.) মসজিদেই ছিলেন৷ সঙ্গে সাহাবিরা৷ সামনে এগিয়ে যান মুসাফির। নবীজিকে সালাম করে বিনয়ের সঙ্গে জানান, ‘অনেক দূর থেকে এসেছি। মদিনায় কেউ পরিচিত নেই। থাকারও কোনো ব্যবস্থাপত্র হয়নি। আমাকে সাহায্য করুন, আল্লাহর রাসুল!’

নবীজি (সা.

) তখনই সম্মানিতা স্ত্রীদের ঘরে খোঁজ লাগান—তাদের কারও ঘরে খাবার কিছু আছে কি না! একে একে সকলেই জানান, ‘ঘরে আজ খাবার কিছুই নেই!’

এবার সাহাবিদের দিকে ফিরে নবীজি (সা.) বলেন, ‘কেউ কী আছ, যে আল্লাহর এই বান্দাকে মেহমান বানাতে পারবে?’

নবীজির আহ্বানে এক সাহাবি দাঁড়িয়ে যান। জ্যোতির্ময় চেহারা৷ সবিনয়ে বলেন, ‘মেহমানকে আমি বাড়ি নিয়ে যাব।’

এটুকু বলে তখনই বেরিয়ে পড়েন। বাড়ি গিয়ে মেহমানের কথা জানিয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘ঘরে খাবার কিছু আছে?’

পরিকল্পনা মতো হয় সবকিছু। বাচ্চাদের নানান বাহানায় ঘুম পাড়িয়ে দেন ওদের মা। তারপর মেহমানের সামনে খাবার দিয়ে বাতি নিভিয়ে দেওয়া হয়। খেয়ে ওঠেন মেহমান।

স্ত্রী জবাব দেন, ‘বাচ্চাদের জন্য সামান্য রান্না করেছি। এছাড়া কিছু নেই।’

সাহাবি বলেন, ‘কোনো অসুবিধা নেই। বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও৷ ওরা ঘুমিয়ে গেলে ওদের খাবার দিয়েই মেহমানকে আপ্যায়ন করব। তুমি বাতি ঠিক করার বাহানায় সময় নষ্ট করবে। অন্ধকারে একাই খেয়ে উঠবে মেহমান৷ বুঝতে পারবে না কিছুই। আমরাও খাবার খাচ্ছি এমন শব্দে অভিনয় করে যাব।’

পরিকল্পনা মতো হয় সবকিছু। বাচ্চাদের নানান বাহানায় ঘুম পাড়িয়ে দেন ওদের মা। তারপর মেহমানের সামনে খাবার দিয়ে বাতি নিভিয়ে দেওয়া হয়। খেয়ে ওঠেন মেহমান। শুয়েও পড়েন। মেজবান দুজনই ক্ষুধার্ত থেকে যান। সঙ্গে ঘুমন্ত বাচ্চারাও৷

পরদিন সকালে মেজবান সাহাবি নবীজি (সা.)-এর দরবারে হাজির হলে তিনি বলেন, ‘রাতে তোমরা মেহমানকে যেভাবে আপ্যায়ন করেছ, আল্লাহ খুব খুশি হয়েছেন। ওহি পাঠিয়েছেন—‘তারা নিজেরা  ক্ষুধার্ত থেকে হলেও অপরকে প্রাধান্য দেয়।’

নবীজির মুখ থেকে এমন কথা শুনে খুশির অন্ত ছিল না সেই সাহাবির৷ আল্লাহ তায়ালা যার ব্যাপারে এমন মন্তব্য করেন, তার সৌভাগ্য আর কে আটকায়!

আরও পড়ুনবীর সাহাবি জারদ ইবনে উমর (রা.)৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

একদিনের ঘটনা৷ সেদিনের সেই মেহমান সাহাবি আজও উপস্থিত৷ নবীজি (সা.) সামনে বসে আছেন। তখনই এই বার্তা নিয়ে আসেন ফেরেশতা জিবরিল—‘কখনোই প্রতিদান পাবে না; নিজের প্রিয় জিনিস যদি না আল্লাহর পথে খরচ করো।’

মেজবান সাহাবি একটা বাগানের মালিক ছিলেন। বাগানটি মসজিদে নববির সামনেই। যেমন বড়, তেমনই ফলবান। একটি কূপও আছে বাগানের ভেতর৷ নাম ‘বিরে হা’৷ বেশ স্বচ্ছ ও সুমিষ্ট তার পানি। অনেক তৃপ্তি নিয়ে সেই পান করেন নবীজি (সা.)। মদিনার বুকে এমন এক টুকরো জমি থাকা অনেক বড় ব্যাপার ছিল তখন। কিন্তু নবীজির মুখে সদ্য নাজিল হওয়া আয়াত শুনে সাহাবি দাঁড়িয়ে যান। বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আমার কাছে অনেক প্রিয় এই বাগান। বাগানটি আমি আল্লাহর রাস্তায় দান করছি। ঘোষণাটা যদি গোপন হতো, তাহলে আমি গোপনেই দান করে দিতাম!’

সেই সাহাবির কথায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে নবীজি (সা.)-এর চেহারা। তার জন্য দোয়া করে বলেন—‘বাগানটিকে তুমি তোমার উত্তরাধিকারদের ভেতর বণ্টন করে দাও।’

তিনি তখনই কাজটি সম্পন্ন করেন।

এই মহান সাহাবির নাম আবু তালহা যায়েদ ইবনে সাহল আনসারি (রা.)। তিনি ছিলেন বনু নাজ্জার নামের খাযরাজের এক বংশের সন্তান৷ সেই বংশকে নবীজি (সা.) খাযরাজের তাবৎ শাখা গোত্রের ভেতর শ্রেষ্ঠ আখ্যা দিয়েছেন৷

ইসলাম গ্রহণের আগে তারা ছিলেন মূর্তিপূজক। তাদের ঘরে ঘরে ছিল খড়কুটোর তৈরি মূর্তি। তারা সেগুলোর পূজা করতে৷ ছিল ভোজনরসিক। খানাপিনার আয়োজনগুলোতে তাদের উপস্থিতি ছিল ইর্ষণীয়। বনু নাজ্জারের একজন নারী ছিলেন বিধবা। নাম উম্মু সুলাইম। তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন আবু তালহা। নারীটি ছিলেন মুসলিম। আগেই ইসলাম কবুল করে নিয়েছেন। ইসলামের আলো দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছিল মদিনায়। নবীজি (সা.) মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.)-কে ইসলামের ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারের জন্য আগেই মদিনা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

ইসলাম গ্রহণের আগে তারা ছিলেন মূর্তিপূজক। তাদের ঘরে ঘরে ছিল খড়কুটোর তৈরি মূর্তি। তারা সেগুলোর পূজা করতে৷ ছিল ভোজনরসিক। খানাপিনার আয়োজনগুলোতে তাদের উপস্থিতি ছিল ইর্ষণীয়।

উম্মু সুলাইম তখন আগের স্বামীর ঘরের এক সন্তানের মা৷ ছেলেটির নাম আনাস ইবনে মালেক৷ একমাত্র সন্তান আনাসকে নিয়েই কাটছিল তার দিন। ততদিনে রোদ-বাতাসে বেড়ে উঠেছেন আনাস৷ সেজন্য বিয়েতে তার কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। জবাবে উম্মু সুলাইম আবু তালহা যায়েদ ইবনে সাহল আনসারি (রা.)-কে বলেন, ‘আমি আল্লাহর সত্য নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর ঈমান এনেছি৷ কিন্তু তুমি তো এখনো খড়কুটোর তৈরি মূর্তিরই পূজা করো। আফসোস, আমি এক আল্লাহর ইবাদাতকারী আর তুমি মূর্তির পূজারী। আমাদের কীভাবে বিয়ে হতে পারে?’

উম্মু সুলাইমের কথাগুলো ঝড় তোলে আবু তালহার হৃদয়ে৷ ভাবাভাবি চলে কিছুদিন৷ তারপর একদিন হুট করে উম্মু সুলাইমের কাছে গিয়ে ইসলাম কবুল করেন আবু তালহা। এতটাই খুশি হন উম্মু সুলাইম, তখনই  বলে ফেলেন, ‘এখন আমি তোমাকে বিয়ে করতে প্রস্তত। আমার কোনো মোহর লাগবে না। তোমার ইসলামগ্রহণই আমার মোহর।’

এবার উম্মু সুলাইম ছেলেকে বলেন, ‘ছেলে আমার! আবু তালহার সঙ্গে আমার বিয়ে পড়িয়ে দাও।’

আনাস (রা.)-এর হাতে সম্পন্ন হয় আবু তালহা ইবনে যায়েদ (রা.)-এর বিবাহ৷ এই বিয়ের প্রসঙ্গ এলে আনাস (রা.) বলতেন, ‘আবু তালহা (রা.)-এর সঙ্গে এক অভাবিত মোহরে হয়েছিল আমার মায়ের বিয়েটা।’

নবুয়ত লাভের ১৩তম বছর। নবীজি (সা.)-এর সামনে বসে আছেন আবু তালহা। বাইয়াত সম্পন্ন করে আবু তালহা (রা.) ও উপস্থিত আনসাররা বলেন, ‘আমরা আমাদের জীবন, সম্পদ ও সন্তানদের মতো গুরুত্ব দিয়ে নবীজি (সা.)-এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।’

আরও পড়ুনইসলামের শত্রু আবু জাহেলের মা আসমা (রা.) সাহাবি ছিলেন ১০ জানুয়ারি ২০২৫

ইসলামের ইতিহাসে এই বাইয়াতের গুরুত্ব অনেক। হিজরতের পর নবীজি (সা.) যখন মুহাজির ও আনসারদের ভেতর ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক গড়ে দেন; আবু তালহার ভাই হন আবু উবাইদা ইবনুল জাররা (রা.)।

দ্বিতীয় হিজরি৷ বদর যুদ্ধ। তিনিও ছিলেন ৩১৩ জনের একজন। মানে তিনি বদরি সাহাবিদের দলভুক্ত হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন৷ উহুদ যুদ্ধে মুসলিমরা যখন সাময়িকভাবে পিছু হটে, তখন নবীজি (সা.)-এর সামনে ঢাল নিয়ে দাঁড়ান আবু তালহা (রা.)। পাশাপাশি  শত্রুপক্ষের উপর ছুড়ে যান তিরের পর তির। সেদিন তার হাতেই বিধ্বস্ত হয় শত্রুপক্ষের তিন তিনটি কামান। সেই সঙ্গীন মুহূর্তে নবীজি (সা.) যখনই মাথা উঁচু করে সামনের গতিবিধি বুঝতে চেষ্টা করছিলেন, তখনই ভেসে আসছিল আবু তালহার সতর্কবার্তা—‘আমার পিতা-মাতা আপনার ওপর কুরবান হোক! মাথা উঁচু করবেন না৷ তির লেগে যাবে৷ আমার বুক আপনার ঢাল৷ চিন্তার কিছু নেই৷’

নবীজিকে বাঁচাতে গিয়ে তার এক হাত অবশ হয়ে যায়৷ তার জজবা দেখে নবীজি (সা.) বলেন, ‘আবু তালহার আওয়াজ, হাজার মানুষের আওয়াজ থেকে উত্তম।’

উহুদের পর সবগুলো বড় যুদ্ধেই অংশ নিয়েছেন আবু তালহা (রা.)। খাইবার যুদ্ধের প্রাক্কালে একবার তার উট নবীজি (সা.)-এর উটের সাথে তাল মিলিয়ে চলছিল। খাইবার যুদ্ধে বিজয়ের পর ফেরার পথে তার উটের বাহনটির সাথে নবীজির বাহনের সংঘর্ষ হয়। গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ে যান নবীজি ও সাফিয়া (রা.)। আবু তালহা (রা.) সাথে সাথে উট থেকে লাফিয়ে নেমে নবীজির কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন, ‘বেশি চোট লাগেনি তো?’

জবাবে নবীজি বলেন, ‘না, সঙ্গীনির খবর নাও।’

মুখে রুমাল চেপে সাফিয়া (রা.)-এর কাছে যান আবু তালহা (রা.)। তার সামানপত্র গুছিয়ে দেন। তাকেও চড়িয়ে দেন বাহনে।

মক্কা বিজয়ের সময় নবীজি (সা.)-এর সঙ্গী ছিল ১০ হাজার সাহাবি। তাদেরও একজন ছিলেন আবু তালহা (রা.)। হুনাইন যুদ্ধে তিনি অভাবনীয় বীরত্ব দেখিয়েছেন৷ তার বীরত্ব দেখে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে কাফেররা৷ সেদিন ২০জনের মতো মুশরিককে জাহান্নামে পাঠিয়েছেন।

দশম হিজরি। বিদায় হজের শেষদিক। মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলেন নবীজি (সা.)। মাথার বা-দিকের চুলগুলো আবু তালহাকে দিয়ে দেন। এমন দান পেয়ে খুশিতে ফেটে পড়েন আবু তালহা (রা.)।

নবিজি (সা.) তাকে অনেক ভালোবাসতেন। তার এক ছেলের নাম ছিল আবু উমায়ের। একটি পাখি পুষতো ছোট্ট আবু উমায়ের। পাখিটি মারা যায়। অনেক কষ্ট পায় আবু উমায়ের। নবীজি (সা.) দেখতে যান তাকে। আদর করে বলেন, ‘ওহে আবু উমায়ের, কী হয়েছে তোমার নুগাইরের?’ নুগাইর মানে ছোট পাখি।

হেসে ফেলে আবু উমায়ের৷ চেহারা থেকে কেটে যায় দুঃখের মেঘ। তখন থেকে নবীজি (সা.)-এর বলা এই বাক্যটি কিংবদন্তি হয়ে পড়ে। আবু তালহা (রা.)-এর এই ছেলেটি শৈশবেই মারা যায়৷

নবীজি (সা.)-এর ইন্তিকালের সংবাদে অন্য সাহাবিদের মতো ব্যথাভারে নুয়ে পড়েন আবু তালহা (রা.)। তবুও নবীজির কবর খুড়েছিলেন। কিছুদিন পর তিনি সিরিয়া চলে যান।

আবু তালহা (রা.) তখন ঘরের বাইরে। রাতে বাসায় ফিরলে উম্মু সুলাইম (রা.) তাকে খাবার খেতে দেন৷ ছেলের মৃত্যুর কথা গোপন রেখে বলেন, ‘যদি তোমাকে কোনো জিনিস দান করে ফেরত চাওয়া হয়, তুমি কী তা দিতে অস্বীকার করবে?’

আবু তালহা জবাব দেন, ‘না, এমনটা করা তো ইনসাফ পরিপন্থী।’

উম্মু সুলাইম বলেন, ‘তবে আমাদের ছেলের ব্যাপারে তোমাকে ধৈর্য ধরতে হবে; আল্লাহ তার প্রদেয় আমানত নিয়ে নিয়েছেন।’

ইন্নালিল্লাহ পড়েন আবু তালহা (রা.)৷ সকালে উঠে চলে আসেন নবীজির কাছে৷ সবিস্তারে শোনান রাতের ঘটনা৷ সব শুনে নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তোমাকে এই সন্তানের বদলা দেবেন।’

সেই ঘটনার পরই জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল্লাহ ইবনে আবু তালহা।

একদিন নিজের একটি বাগানে নামাজ পড়ছিলেন আবু তালহা৷ হঠাৎ একটি পাখি এসে তার মথায় বসে ঠোকরাতে থাকে। তিনি রাকাত সংখ্যা ভুলে যান। তখনি ছুটে যান নবীজির কাছে৷ ঘটনা শুনিয়ে বলেন, ‘আমি আমার এই বাগানটি আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিচ্ছি। এই বাগানের জন্যই আজ আমার নামাজে বিঘ্ন ঘটেছে!’

নবীজি (সা.)-এর ইন্তিকালের সংবাদে অন্য সাহাবিদের মতো ব্যথাভারে নুয়ে পড়েন আবু তালহা (রা.)। তবুও নবীজির কবর খুড়েছিলেন। কিছুদিন পর তিনি সিরিয়া চলে যান। আবু বকর ও উমর (রা.)-এর খেলাফতকালেও যথারীতি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন৷ তখন বয়স ৭০। একদিন কোরআন পড়ছিলেন। পড়তে পড়তে সুরা বারাআতের এই আয়াতে এসে আটকে যান—‘গা ঝাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ো। জীবন ও সম্পদ কুরানির মাধ্যমে করো আল্লাহর পথে জিহাদ।’

তখনই জিহাদের জন্য তৈরি হয়ে পড়েন। বাড়িতে বলেন, ‘সফরের সামান প্রস্তুত করো৷’

তারা বলেন, ‘আপনি এই বয়সে যুদ্ধে যাবেন! আপনার বদলে আমরা যাই।’

তিনি রাজি হননি৷ উল্টো বেরিয়ে পড়েন। তখন সমুদ্রে একটা অভিযান চলছিল। তিনি সেখানে অংশ নেন। যুদ্ধের মাঝপথেই ইন্তিকাল করেন। সাতদিন পর একটি দ্বীপের উপকন্ঠে পৌঁছে জাহাজ। এই কদিন জাহাজেই ছিল তার লাশ। একটুও পরিবর্তন হয়নি। সম্পূর্ণ অবিকৃত। সেই অজানা দ্বীপেই তাকে দাফন করা হয়। ৫১ হিজরিতে তিনি ইন্তিকাল করেন। তখন ছিল মুয়াবিয়া (রা.)-এর শাসনামল।

সূত্র : রওশন সিতারে, আব্দুল্লাহ ফারানি, পৃষ্ঠা : ২১৯-২২৮

জাবির মাহমুদ : লেখক, অনুবাদক

আরও পড়ুনআবু মুসা (রা.) ছিলেন জ্ঞানী সাহাবি০১ ডিসেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নব জ র ক ইন ত ক ল ইসল ম র উপস থ ত সন ত ন ব গ নট ত লহ র আল ল হ ন নব জ দ ন কর র ভ তর র জন য র স মন আনস র

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লা বিভাগের দাবিতে হাজারো মোটরসাইকেল নিয়ে মহাসড়কে শোভাযাত্রা

কুমিল্লা বিভাগের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হাজারো মোটরসাইকেল নিয়ে শোভাযাত্রা করেছেন তরুণেরা। আজ শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকার হোটেল নুরজাহানের সামনে থেকে এ শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি মহাসড়কের কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আলেখারচর হয়ে আবার পদুয়ার বাজারে আসে। পরে সেখান থেকে নগরের কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে এসে শেষ হয়।

এর আগে দুপুরে জুমার নামাজের পর থেকেই কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মোটরসাইকেল নিয়ে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় জড়ো হন তরুণেরা। তাঁরা এটিকে কুমিল্লার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বলে দাবি করেছেন। তাঁদের দাবি, অরাজনৈতিক এ শোভাযাত্রায় কুমিল্লার প্রতি ভালোবাসা থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বাইকার জড়ো হন।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া তরুণেরা বলছেন, একটি বিভাগ হওয়ার জন্য যাবতীয় যোগ্যতা থাকার পরও যুগের পর যুগ ধরে কুমিল্লাকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। যখনই কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণার সময় হয়, তখনই শুরু হয়ে যায় ষড়যন্ত্র। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে যখন কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই শুরু হয়েছে নতুন ষড়যন্ত্র। তবে এবার আর ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। বিভাগ ছাড়া ঘরে ফিরবে না কুমিল্লাবাসী।

শোভাযাত্রার সময় তরুণদের ‘দাবি মোদের একটাই, কুমিল্লার নামে বিভাগ চাই’, ‘তুমি কে আমি কে, কুমিল্লা কুমিল্লা’, ‘মিল্লা জিল্লা, কুমিল্লা কুমিল্লা’, ‘কুমিল্লা বিভাগ, কুমিল্লা বিভাগ’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। কারও কারও হাতে, মোটরসাইকেলে ও বুকে ছিল জাতীয় পতাকা। এই মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাকে স্বাগত জানিয়ে অনেকেই দোকানপাটের সামনে দাঁড়িয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম (মিঠু) বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা অতীতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দায়িত্বে থেকে তাঁর ব্যক্তিগত আক্রোশে কুমিল্লা নামে বিভাগ হতে দেননি। শেখ হাসিনা কুমিল্লাকে ‘কু’ বলে অপমান করেছেন। এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে যখন কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই শুরু হয়েছে নতুন ষড়যন্ত্র। তবে কুমিল্লাবাসীর দাবির মুখে কোনো ষড়যন্ত্রই টিকবে না। এই কুমিল্লা ছিল ত্রিপুরার রাজধানী। টালবাহানা করে কুমিল্লাকে আর দাবিয়ে রাখার সুযোগ নেই।

শিহাব উদ্দিন নামের এক তরুণ বলেন, হাজারো ঐতিহ্যে ভরা কুমিল্লা যখনই বিভাগ ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে যায়, তখনই নানা মহল থেকে ষড়যন্ত্র শুরু করে। নোয়াখালীসহ বৃহত্তর কুমিল্লার ছয়টি জেলার বিভিন্ন দপ্তরের ৪২টি আঞ্চলিক কার্যালয় কুমিল্লায়। অবিলম্বে কুমিল্লা নামে বিভাগ চাই। দ্রুত বিভাগের ঘোষণা না এলে কঠোর কর্মসূচি পালন করবে কুমিল্লার মানুষ।

দেলোয়ার হোসেন নামের আরেকজন বলেন, ‘আজ কুমিল্লার তরুণেরা পাঁচ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল নিয়ে শোভাযাত্রা করেছেন। এটা কুমিল্লার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা। এটা থেকেই বোঝা যায় যে কুমিল্লার তরুণ সমাজ বিভাগের দাবিতে কতটা ঐক্যবদ্ধ। আমাদের আর ষড়যন্ত্র করে দাবিয়ে রাখা যাবে না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিভাগ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনসিপিকে ‘শাপলা’ প্রতীক দিতে আইনি বাধা নেই: সারজিস
  • কুমিল্লা বিভাগের দাবিতে হাজারো মোটরসাইকেল নিয়ে মহাসড়কে শোভাযাত্রা
  • বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে তিনি হয়েছিলেন ‘গুরু মা’